বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, মাওলানা মুশতাক আহমদ কারিমী লিখিত বই ব্যাংকের সুদ কি হালাল এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
ইসলাম বিশ্বজনীন ও কালজয়ী ধর্ম। এর আহকাম ও নির্দেশাবলী ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ। ইসলাম শান্তি, সন্ধি ও নিরাপত্তার ধর্ম। ইসলাম ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রীতি, মিলন, সহানুভূতি ও সমবেদনার ধর্ম। ইসলাম উন্নয়ন ও বদান্যতার ধর্ম। যার আহকাম ও নীতিমালায় রয়েছে সরলতা ও উদারতা। সঙ্কীর্ণতা, কঠিনতা, জটিলতা ও কষ্ট-সমষ্টির নাম ইসলাম নয়। সভ্যতা ও সংস্কৃতির কোন কোণকে ইসলাম তার অনুসারীদের বিবেকে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে না। বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থ-বিনিয়োগ করার সঠিক পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।
ব্যাংকের সুদ কি হালাল pdf
নিষেধ করে না শিল্প, কারিগরি ও কৃষিকার্যে উৎকর্ষ সাধন ও বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনকে বরং ইসলাম তো এই ধরনের কর্মসমূহকে মুসলিম জনগণের সাফল্যের সোপান এবং সুখ ও কল্যাণ লাভের উপকরণরূপে নির্ধারণ করেছে। ইসলাম সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীকে সুস্পষ্টভাবে উৎসাহ দান করে এবং এই শিক্ষা দেয় যে, মানুষের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপার্জন তাই; যা সে নিজ হাত দ্বারা করে থাকে। (বুখারী, মিশকাত ২৭৫৯)।
কিন্তু বর্তমান যুগে উপার্জনের বিভিন্ন নিত্য-নতুন পদ্ধতি ও প্রণালী আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এরই জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, ব্যাংক প্রভৃতি; যে সব প্রতিষ্ঠান আজকের সকল অর্থনৈতিক আইন-কানুনের উপর নিজের কব্জা ও অধিকার জমিয়ে বসে আছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার লেন-দেন ও তার নিয়ম-নীতি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করাও আমাদের জন্য জরুরী হয়ে গেছে।
ফকীহগণ বলেন, যে ব্যক্তি তার সমসাময়িক যুগের লোকেদের অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে না; অর্থাৎ তার নিজের যুগের লোকেদের জীবন-পদ্ধতি, তাদের সাময়িক পরিস্থিতি ও জীবিকা নির্বাহের ধারা তথা তাদের প্রকৃতি ও রুচি সম্বন্ধে যে অবগত নয় সে অজ্ঞ ও জাহিল। (শরহে উকুদে রসমিল মুফতী ৯৮ পৃঃ) একজন আলেমের জন্য যেমন কুরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন আহকাম জানা জরুরী ঠিক তেমনিই তার সমসাময়িক কালের আচরিত প্রথা ও ট্রেডিশন এবং সমকালীন মানুষের অবস্থা সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ ও জরুরী। এ ছাড়া শরীয়তের বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েলের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে তিনি পৌঁছাতে পারেন না।
ব্যাংকের সুদ কি হালাল pdf
হানাফী মাযহাবের ফকীহ গণের মধ্যে এক ফকীহ ইমাম মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ ফিকহী মাসায়েল লিপিবদ্ধ করার সময় নিয়মিত বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নিকট বসতেন, তাদের লেনদেনের রীতি ধারা বুঝতেন এবং মার্কেটে কোন ধরনের বাণিজ্য-নীতি প্রচলিত তা লক্ষ্য করতেন। কারণ ঐ শ্রেণীর জ্ঞান লাভ একজন আলেমের জন্য এবং বিশেষ করে একজন মুফতীর জন্য ফরয। যাতে করে ঐ শ্রেণীর কোন সমস্যা বা প্রশ্ন তাঁর নিকট এলে তিনি তার প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে দস্তুরমত অবগত হন। নচেৎ এ ছাড়া তিনি কোন সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই পারেন না। পরন্তু একথাও বলা হয়েছে যে, যখন কোন সমাজে কোন অবৈধ কাজ-কারবার শুরু হয় তখন আলেম ও মুফতীর কর্তব্য কেবল সেই কাজ বা কারবার হারাম ও অবৈধ ফতোয়া দেওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় না।
ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন স্বপ্নের বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করা হল তখন সাত বছর খরা বা অনাবৃষ্টি আসবে এ খবর তো পরে বললেন; কিন্তু তার পূর্বেই তিনি ঐ খরার কবল হতে মুক্তি লাভের উপায় বলে দিলেন; বললেন, তোমরা খেতের যে শস্য সংগ্রহ করবে তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা ভক্ষণ করবে তা ব্যতীত বাকী শস্যকে শীষ সমেত রেখে দেবে। (সূরা ইউসুফ ৪৭ আঘাত)
উক্ত আয়াত হতে এ কথাই বুঝা যায় যে, সৎ পথের আহ্বায়কের জন্য কোন হারাম কাজকে কেবল হারাম চিহ্নিত করে দেওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং তার সঙ্গে সাধ্যমত ঐ হারাম কাজ থেকে মুক্তি লাভের বিকল্প পথও বলে দেওয়া আবশ্যক। আর সেই পথ তিনি তখনই বলতে পারেন যখন তিনি ঐ কাজের প্রকৃতত্ব সম্বন্ধে যথার্থ অবগত হবেন।
ব্যাংকের সুদ কি হালাল pdf
উক্ত কথার প্রতি লক্ষ্য রেখে এ কাজ জরুরী মনে করা হয়েছে যে, সব জীবিকা নির্বাহ পদ্ধতি এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত সেই সকল জ্ঞাতব্য-বিষয় একত্রে সঞ্চিত হোক যার প্রয়োজনীয়তা অনুরূপ কোন সমস্যার সমাধান দানের সময় একজন আলেমের নিকট দেখা দিতে পারে।
যেহেতু ব্যাংক তথা অন্যান্য অর্থ-বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংস্থা ও কোম্পানীর ভিত্তিই পুঁজিপতি ত্ব ও সুদের উপর যেহেতু সুদের প্রকৃত ত্ব ও মূলতত্ত্ব জেনে নেওয়া জরুরী। উদাহরণ স্বরূপ মনে করুন, এক ব্যক্তি নিজের পকেট থেকে মাত্র ১০ লাখ টাকা কোন ব্যবসায় লাগাল। আর ৯০ লাখ টাকার লোন নিল ব্যাংক থেকে। এভাবে সে এক কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা করল। ধরে নিন, ঐ ব্যবসায় তার ৫০ শতাংশ লাভ হল এবং এক কোটি টাকা দেড় কোটি টাকায় পরিণত হল।
এবারে ঐ পুঁজিপতি ৫০ লাখ টাকার লাভ থেকে মাত্র ১৫ লাখ টাকা সুদ হিসাবে ব্যাংককে দেবে। যা থেকে ব্যাংক নিজের লাভ রেখে বড় জোর ১০ অথবা ১২ লাখ টাকা সেই শত শত জনগণের মাঝে বন্টন করবে যাদের আমানত তার নিকট জমা (ডিপোজিট) আছে। যার স্পষ্ট পরিণতি এই যে, উক্ত ব্যবসায় যে সমস্ত শত শত লোকের ৯০ লাখের পুঁজি বিনিয়োগ করা ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে যাদের পুঁজির বলে এত পরিমাণ লাভ অর্জন সম্ভব হল, তাদের ভাগে এল মাত্র ১০ অথবা ১২ লাখ টাকা।
ব্যাংকের সুদ কি হালাল pdf
পক্ষান্তরে যে পুঁজিপতি কেবলমাত্র ১০ লাখ টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল তার ভাগে ঐ ব্যবসার লাভ স্বরূপ গেল ৩৫ লাখ টাকা! পরন্ত মজার কথা এই যে, উক্ত ১৫ লাখ টাকা যা ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে এবং তার মাধ্যমে যে (১০ বা ১২ লাখ) টাকা জনসাধারণের নিকট পৌঁছেছে সেই টাকাকে পুঁজিপতি নিজের উৎপাদন বাবদ মূল খরচের মধ্যে গণ্য করে, আর যে টাকা অবশেষে তার পকেটে পড়ে না বরং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেটে পড়ে। কারণ ঐ ব্যবসায়ী পুঁজিপতি যে সমস্ত পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করেছে তার মূল্য নির্ধারণ কালে ব্যাংককে প্রদত্ত সুদের অর্ধকেও সে ঐ মূল্যের মধ্যে শামিল করে।
আর এইভাবে বাস্তব পক্ষে তার নিজের পকেট থেকে একটি পয়সাও খরচ হয় না। পক্ষান্তরে যদি তার ঐ ব্যবসা কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা কোন দুর্ঘটনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ বহন করে বীমা কোম্পানি। আর ঐ বীমা কোম্পানীতেও সঞ্চিত থাকে হাজার হাজার জনসাধারণের অর্থ, যারা মাসিক বা বাৎসরিক হিসাবে নিজেদের উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ যেখানে জমা করে থাকে। অথচ না তাদের কোন বাণিজ্যশালায় আগুন লাগে, আর না-ই তারা কোন দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। সুতরাং সাধারণতঃ তারা অর্থ জমাই করে যায়, ছাড়ানোর পালা খুব কমই পড়ে।
অপর দিকে এমনও পুঁজিপতি আছে, যার ব্যবসায়ে খুব বড় নোকসান ঘটে। গেলে সে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। যার ফলে সে ব্যাংকের দেউলিয়া হয়ে যায়। এমত পরিস্থিতিতে ঐ পুঁজিপতিদের তো খুব কম অঙ্কের টাকাই নষ্ট হয়। কিন্তু পূর্ণ নোকসান সেই অর্থ জমা কর্তাদের হয়।
ব্যাংকের সুদ কি হালাল pdf
