বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইয়াজুজ মাজুজ কারা বা ইয়াজুজ মাজুজ এর পরিচয় এবং ইয়াজুজ মাজুজ কখন আসবে।
ইয়াজুজ মাজুজ এর পরিচয়
উলামাদের কেউ কেউ বলেন, আরবী আজ শব্দ থেকে ইয়াজুজ মাজুজ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে; যার অর্থ হচ্ছে দ্রুতগামী; ইয়াজুজ মাজুজ যখন পৃথিবীতে বের হবে; তখন তারা খুব দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তাদের এই দ্রুতগামীতার জন্য তাদেরকে ইয়াজুজ মাজুজ বলা হয়; আবার কারো কারো মতে; আরবী মওজ শব্দ থেকে ইয়াজুজ মাজুজ শব্দের উৎপত্তি; যার অর্থ হচ্ছে তরঙ্গ বা ঢেউ। ইয়াজুজ মাজুজ যখন পৃথিবীতে বের হবে; তখন তারা এতো বেশি সংখ্যক হবে যে; তারা তরঙ্গ বা ঢেউয়ের মতো ছুটতে থাকবে; এবং সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করবে। এজন্য তাদেরকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। সঠিক কথা এটা হতে পারে যে; আজ শব্দ থেকে ইয়াজুজ আর মওজ শব্দ থেকে মাজুজ শব্দের উৎপত্তি; যার অর্থ হচ্ছে দ্রুতগামী ও তরঙ্গ। ইয়াজুজ মাজুজ যখন বের হবে; তখন তারা খুব দ্রুত ছুটে চলবে তরঙ্গের আকারে। তাই তাদেরকে ইয়াজুজ মাজুজ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
মানুষের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে; ইয়াজুজ মাজুজ কি আদম সন্তান। হ্যা তারা আদম সন্তান; কিন্তু অনেক মুফাসসির যা বলে থাকেন; যে তারা আদম (আ) এর স্বপ্নদোষের বীর্য থেকে সৃষ্ট; তা একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। সঠিক কথা হলো এই যে; নূহ (আ) এর এক সন্তান যার নাম ছিল ইয়াফাস; তার বংশধর হচ্ছে ইয়াজুজ মাজুজ। তাদের আকৃতির ব্যাপারেও অনেক ভিত্তিহীন কথা শুনা যায়; যেগুলোতে আমাদের কান না দেওয়াই উচিত।
মহান আল্লাহ বলেন,
অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন; তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন; যারা তার কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, হে যুলকারনাইন; ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে; আপনি বললে আমরা আপনার জন্য কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে; আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন; তিনি বললেন, আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর; আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব; তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও।
অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল; তখন তিনি বললেন, তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক; অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল; তখন তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো; আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই। অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না; এবং তা ভেদ করতেও সক্ষম হল না। যুলকারনাইন বললেন, এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ; যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেবেন; এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য। আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।
সূরা কাহাফ, আয়াত নং- ৯৩ – ৯৯।
আয়াতগুলি থেকে বুঝা যায়,
ইয়াজুজ ও মাজুজ সম্প্রদায় ভূপৃষ্ঠের নিচে বসবাস করত এবং তারা পৃথিবীর উপরিভাগে এসে অশান্তি সৃষ্টি করত। দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যস্থলে ছিল তাদের প্রবেশ পথ যে পথ দিয়ে তারা উপরে উঠে আসত আবার ভেতরে প্রবেশ করত। কারন পৃথিবীর অভ্যন্তরে আরো ছয়টি জমিন রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তার আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তার গোচরীভূত।
আমরা সপ্তম জমিনে বসবাস করছি আর হতে পারে ইয়াজুজ মাজুজ ষষ্ঠ জমিনে রয়েছে। তাই দেশবাসী যুলকারনাইনকে বলেছিল, ইয়াজুজ ও মাজুজ সম্প্রদায় এবং তাদের মাঝে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিতে যেন তারা তাদের মাঝে আসতে না পারে। প্রাচীরটি মূলত ঐ প্রবেশদ্বারের মুখে ঢাকনা স্বরূপ। যার উপর আরোহণ করা এবং যা ভেদ করা ইয়াজুজ ও মাজুজ সম্প্রদায়ের জন্য সম্ভব নয় কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহ তাদেরকে সেখান থেকে মুক্তি দিবেন। আর সবকিছু আল্লাহই ভাল জানেন।
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন,
এক ব্যক্তি রাসুল (স) কে বলল, আমি ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর দেখেছি। রাসুল (স) বললেন, কেমন দেখেছ? সে বলল জমকালো চাদরের ন্যায়। অন্য বর্ণনায় আছে, সে বলল, ডোরাদার চাদরের ন্যায়, যার একটি ডোরা এবং অপরটি লাল ছিল। রাসুল (স) বললেন, আমিও তাই দেখেছি।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (স) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাআলা বলবেন, হে আদম! তিনি বলবেন, হে রব! আমার সৌভাগ্য, আমি হাজির। তারপর তাকে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বলা হবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমার বংশধর থেকে একদলকে বের করে জাহান্নামের দিকে নিয়ে আস। আদম (আ) বলবেন হে রব! জাহান্নামী দলের পরিমাণ কী? আল্লাহ তায়ালা বলবেন প্রতি হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই, এ সময় গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করবে, শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং তুমি মানুষকে দেখবে মাতাল; অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন। [পরে রাসুল (স) এ আয়াতটি পাঠ করলেন] । এ কথা লোকদের কাছে ভয়ানক মনে হল, এমনকি তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।
এরপর নবী (স) বললেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন তো ইয়াজুজ-মাজূজ থেকে নেয়া হবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন। আবার মানুষদের মধ্যে তোমাদের তুলনা হবে যেমন সাদা গরুর পার্শ্ব মধ্যে যেন একটি কালো পশম অথবা কালো গরুর পার্শ্বে যেন একটি সাদা পশম। আমি অবশ্য আশা রাখি যে, জান্নাতবাসীদের মধ্যে তোমরাই হবে এক-চতুর্থাংশ। (রাবী বলেন) আমরা সবাই খুশীতে বলে উঠলাম, ‘আল্লাহু আকবার’। এরপর রাসুল (স) বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ। আমরা বলে উঠলাম, ‘আল্লাহু আকবার’। তারপর তিনি বললেন, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের অর্ধেক। আমরা বলে উঠলাম, ‘আল্লাহু আকবার’। সহিহ বুখারি।
ইয়াজুজ মাজুজ এর আগমন অবধারিত
মহান আল্লাহ বলেন,
যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত। যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।
সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং- ৯৫ ও ৯৬।
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, যেসব জাতি আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়েছে অর্থাৎ মারা গেছে তারা ফিরে আসবে না অর্থাৎ জীবিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না ইয়াজুজ মাজুজ বের হবে। আর আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন কিয়ামতের দিন। তাই এ কথা স্পষ্ট হয় যে, ইয়াজুজ মাজুজ বের না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না।
আবূ সারীহাহ হুযায়ফাহ বিন আসীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এক হুজরা থেকে আমাদের দিকে উঁকি মেরে তাকালেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেনঃ দশটি নিদর্শন (আলামত) প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, মাসীহ দাজ্জালের আবির্ভাব, ধোঁয়া নির্গত হওয়া, দাব্বাতুল আরদ প্রকাশ পাওয়া, ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব, ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) এর (উর্দ্ধজগত থেকে) অবতরণ, তিনটি ভূমিধ্বস প্রাচ্যদেশে একটি, পাশ্চাত্যে একটি এবং আরব উপদ্বীপে একটি, এডেনের নিম্নভূমি আব্য়ান এর এক কূপ থেকে অগ্ন্যুৎপাত হবে যা মানুষকে হাশরের ময়দানে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। তারা রাতে নিদ্রা গেলে এই আগুন থেমে থাকবে এবং তারা চলতে থাকলে আগুনও তাদের অনুসরণ করবে (তারা দুপুরে বিশ্রাম নিলে, আগুনও তখন তাদের সাথে থেমে থাকবে)। —–ইবনে মাজাহ।
যাইনাব বিনতু জাহশ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন একদিন রাসূল (স) ঘুম হতে জাগ্রত হলেন, তখন তাঁর মুখমন্ডল রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছিল। তিনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতে লাগলেন। তা তিনবার বলার পর তিনি বললেনঃ ঘনিয়ে আসা দুর্যোগে আরবদের দুর্ভাগ্য। আজ ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ ফাঁক হয়ে গেছে। এই বলে তিনি তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে দশ সংখ্যার বৃত্ত করে ইঙ্গিত করেন। যাইনাব (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (স) আমাদের মধ্যে সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা হবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপাচারের বিস্তার ঘটবে। ——বুখারী, মুসলিম ইবনু মাজাহ।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় ইয়াজুজ মাজুজ প্রতিদিন সুড়ঙ্গ পথ খনন করতে থাকে। এমনকি যখন তারা সূর্যের আলোকরশ্মি দেখার মতো অবস্থায় পৌঁছে যায় তখন তাদের নেতা বলে, তোমরা ফিরে চলো, আগামী কাল এসে আমরা খনন কাজ শেষ করবো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা (রাতের মধ্যে) সেই প্রাচীরকে আগের চেয়ে মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। যখন তাদের আবির্ভাবের সময় হবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মানবকুলের মধ্যে পাঠাতে চাইবেন, তখন তারা খনন কাজ করতে থাকবে। শেষে যখন তারা সূর্যরশ্মি দেখার মত অবস্থায় পৌঁছবে তখন তাদের নেতা বলবে, এবার ফিরে চলো, ইনশাআল্লাহ আগামী কাল অবশিষ্ট খনন কাজ সম্পন্ন করবো। তারা ইনশাআল্লাহ শব্দ ব্যবহার করবে।
সেদিন তারা ফিরে যাবে এবং প্রাচীর তাদের রেখে যাওয়া ক্ষীণ অবস্থায় থেকে যাবে। এ অবস্থায় তারা খনন কাজ শেষ করে লোকালয়ে বের হয়ে আসবে এবং সমুদ্রের পানি পান করে শেষ করবে। মানুষ তাদের ভয়ে পালিয়ে দূর্গের মধ্যে আশ্রয় নিবে। তারা আকাশপানে তাদের তীর নিক্ষেপ করবে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে তা তাদের দিকে ফিরে আসবে। তখন তারা বলবে, আমরা পৃথিবীবাসীদের চরমভাবে পরাভূত করেছি এবং আসমানবাসীদের উপরও বিজয়ী হয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ঘাড়ে এক ধরনের কীট সৃষ্টি করবেন। কীটগুলো তাদের হত্যা করবে। রাসুল (সঃ) বলেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! ভূপৃষ্ঠের গবাদি পশুগুলো সেগুলোর গোশত খেয়ে মোটাতাজা হয়ে মাংসল হবে। —–তিরমিযী।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুল (সঃ) বলেছেন, ইয়াজূজ ও মাজূজ বের হওয়ার পরও বাইতুল্লার হজ্জ ও ‘উমরাহ পালিত হবে। —– সহিহ বুখারি।
ইয়াজুজ মাজুজ কখন বের হবে
এটা স্পষ্ট যে, ইয়াজুজ মাজুজ কিয়ামতের একেবারে পূর্ব মূহুর্তে বের হবে। অনেকে মনে করেন ইয়াজুজ মাজুজ বের হয়ে গেছে। তাদের মতে তাতারীরাই হচ্ছে ইয়াজুজ মাজুজ। কিন্তু তাদের এ ধারনা একেবারেই ভুল।
মহান আল্লাহ বলেন,
যুলকারনাইন বললেন, এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য। আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব। (সূরা কাহাফ আয়াত নং ৯৮ ও ৯৯)
নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ঈসা আ. দাজ্জালকে হত্যা করবেন অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করবেন, “আমার বান্দাহদেরকে তূর পাহাড়ে সরিয়ে নাও। কেননা, আমি এমন একদল বান্দা অবতীর্ণ করছি যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই তিনি বলেন, তারপর আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজের দল পাঠাবেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী অনুযায়ী তাদের অবস্থা হলো, “তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি হতে ছুটে আসবে (সূরাঃ আম্বিয়া আয়াত নং ৯৬)। তিনি বলেন, তাদের প্রথম দলটি (সিরিয়ার) তাবারিয়া উপসাগর অতিক্রমকালে এর সমস্ত পানি পান করে শেষ করে ফেলবে।এদের শেষ দলটি এ স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে বলবে, নিশ্চয়ই এই জলাশয়ে কোন সময় পানি ছিল।
তারপর বাইতুল মাকদিসের পাহাড়ে পৌঁছার পর তাদের অভিযান সমাপ্ত হবে। তারা পরস্পর বলবে, আমরা তো দুনিয়ায় বসবাসকারীদের ধ্বংস করেছি, এবার চল আকাশে বসবাসকারীদের ধ্বংস করি। তারা এই বলে আকাশের দিকে তাদের তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তীরসমূহ রক্তে রঞ্জিত করে ফিরত দিবেন। তারপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) ও তাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তারা (খাদ্যভাবে) এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত হবেন যে, তখন তাদের জন্য একটা গরুর মাথা তোমাদের এ যুগের একশত দীনারের চাইতে বেশি উত্তম মনে হবে। তিনি বলেন, তারপর ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীরা আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হয়ে দুআ করবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তখন ইয়াজুজ মাজুজ বাহিনীর ঘাড়ে মহামারীরূপে ‘নাগাফ’ নামক কীটের উৎপত্তি করবেন। তারপর তারা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে যেন একটি প্রাণের মৃত্যু হয়েছে।
তখন ঈসা (আঃ) তার সাথীদের নিয়ে (পাহাড় হতে) নেমে আসবেন।
সেখানে তিনি এমন এক বিঘত পরিমাণ জায়গাও পাবেন না, যেখানে সেগুলোর পঁচা দুর্গন্ধময় রক্ত-মাংস ছড়িয়ে না থাকবে। তারপর তিনি সাথীদের নিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দু‘আ করবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তখন উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি প্রেরণ করবেন। সেই পাখি ওদের লাশগুলো তুলে নিয়ে গভীর গর্তে নিক্ষেপ করবে। এদের পরিত্যক্ত তীর, ধনুক ও তূণীরগুলো মুসলমানগণ সাত বছর পর্যন্ত জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করবে। তারপর আল্লাহ্ তাআলা এমন বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যা সমস্ত ঘর-বাড়ী, স্থলভাগ ও কঠিন মাটির স্তরে গিয়ে পৌছবে এবং সমস্ত পৃথিবী ধুয়েমুছে আয়নার মতো ধকধকে হয়ে উঠবে। তারপর যামীনকে বলা হবে, তোর ফল ও ফসলসমূহ বের করে দে এবং বারকাত ও কল্যাণ ফিরিয়ে দে।
তখন এরূপ পরিস্থিতি হবে যে, একদল লোকের জন্য একটি ডালিম পর্যাপ্ত হবে এবং একদল লোক এর খোসার ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে। দুধেও এরুপ বারকাত হবে যে, বিরাট একটি দলের জন্য একটি উটনীর দুধ, একটি গোত্রের জন্য একটি গাভীর দুধ এবং একটি ছোট দলের জন্য একটি ছাগলের দুধই যথেষ্ট হবে। এমতাবস্থায় কিছুদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর হঠাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা এমন এক বাতাস প্রেরণ করবেন যা সকল ঈমানদারের আত্মা ছিনিয়ে নেবে এবং অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র দুশ্চরিত্রের লোক যারা গাধার মতো প্রকোশ্যে নারী সম্ভোগে লিপ্ত হবে। তারপর তাদের উপর কিয়ামাত সংঘটিত হবে। —–সহিহ মুসলিম।