যাকাত কাদের উপর ফরজ এবং যাকাত কখন ফরজ হয়?

যাকাত কাদের উপর ফরজ, যাকাত কখন ফরজ হয়, যাকাত কখন দিতে হয়, যাকাত কার উপর ফরজ, কাদের উপর যাকাত ফরজ, জাকাত কাদের উপর ফরজ, জাকাত কার উপর ফরজ

যাকাত-কাদের-উপর-ফরজ-এবং-যাকাত-কখন-ফরজ-হয়

যাকাত কাদের উপর ফরজ এবং যাকাত কখন ফরজ হয়?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সেই সম্পদের কিছু অংশ গরীবদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তবে তিনি সকল সম্পদের উপর যাকাত ফরয করেননি। বরং চার প্রকার সম্পদের যাকাত আদায় করার নির্দেশ এসেছে। যা নিম্নরূপ-

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মাল

(২) গৃহপালিত পশু

(৩) শস্য ও ফল

(৪) খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সম্পদ

যে কোন স্বাধীন মুসলিম উক্ত চার প্রকার সম্পদের মধ্যে যেকোন এক প্রকার সম্পদ নিসাব পরিমাণের মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরজ। তবে প্রথম দুই প্রকার তথাঃ (১. স্বর্ণ, রৌপ্য চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মাল ২. গৃহপালিত পশু) সম্পদের জন্য শর্ত হচ্ছে তা এক চান্দ্র বছর সময়কাল তার মালিকানায় থাকতে হবে কিন্তু শেষ দুই প্রকার তথাঃ (৩. শস্য ও ফল ৪. খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সামগ্রী) সম্পদের জন্য এমন কোন শর্ত নেই অর্থাৎ যখন সম্পদের মালিক হবে তখনই যাকাত প্রদান করতে হবে। নিচে উক্ত চার প্রকার সম্পদের বিবরণ এবং তার নিসাব বর্ণনা করা হলোঃ

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মাল

কারো নিকট এক চান্দ্র বছর সময়কাল নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলে অথবা এর বাজারদর সমপরিমাণ চলমান মুদ্রা থাকলে অথবা এর সমপরিমাণ ব্যবসায়িক মাল থাকলে তার উপর যাকাত ফরয। আবার যদি এই চারটি একত্রিত করে নিসাব পরিমাণ হয় তবুও তার উপর যাকাত ফরজ। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তির যদি ঋণ থাকে তবে তা মোট সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে তারপর যদি সেটা নিসাব পরিমাণ হয় তখন তার যাকাত দিতে হবে।

স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত

নিসাব পরিমাণ হলে স্বর্ণ ও রৌপ্যের উপর যাকাত ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা তাই, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করতে। সুতরাং তোমরা যা সঞ্চয় করেছিলে তা আস্বাদন কর। (তওবা ৯/৩৪-৩৫)। 

হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরি করা হবে এবং সে সমুদয়কে জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই তা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তখন পুনরায় তাকে গরম করা হবে (তার সাথে এরূপ করা হবে) সে দিন, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) যতদিন না বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি হয়। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।

মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩, বঙ্গানুবাদ মিশকাত (এমদাদিয়া) ৪/১২৩ পৃঃ।

ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত

ব্যবসায়িক স্বর্ণ অর্থাৎ যে স্বর্ণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে সে স্বর্ণের যাকাত ফরয এবং হারাম কাজে ব্যবহৃত স্বর্ণ যেমন পুরুষের ব্যবহৃত স্বর্ণ এবং কোন প্রাণীর আকৃতিতে বানানো নারীর অলংকার যা ব্যবহার করা হারাম, এরূপ ব্যবহৃত স্বর্ণেরও যাকাত ফরজ। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কারণ স্বর্ণের এরূপ ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। পক্ষান্তরে বৈধ পন্থায় নারীর ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হল, নারীর ব্যবহৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলংকারের যাকাত ফরয। নারীর ব্যবহার্য অলংকারের যাকাত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দুটি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিধান করান? রাবী বলেন, একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী (ছাঃ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।

আবু দাউদ হা/১৫৬৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘গচ্ছিত সম্পদ ও অলংকারের যাকাত’ অনুচ্ছেদ, সনদ হাসান।

অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,

একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে রাসূল (ছাঃ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তা তৈরি করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। 

আবু দাউদ হা/১৫৬৫, সনদ ছহীহ।

চলমান মুদ্রার যাকাত

প্রাথমিক যুগের মানুষ নগদ অর্থ বলতে কিছুই জানত না। তারা পণ্যের বিনিময়ে পণ্য লেনদেন করত। তারপর ধীরে ধীরে নগদ অর্থের ব্যবহার শুরু হয়েছে। সাথে সাথে স্বর্ণ ও রৌপ্য বিশেষ বস্তু হিসাবে গৃহীত হয়েছে। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রেরিত হলেন, তৎকালীন আরব সমাজ স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করত। স্বর্ণ দিয়ে তৈরি হত ‘দিনার’, ও রৌপ্য দিয়ে তৈরি হত ‘দিরহাম’। কিন্তু তা ছোট ও বড় হওয়ায় ওজনের তারতম্য হত। এই কারণে জাহেলী যুগে মক্কার লোকেরা তা গণনার ভিত্তিতে ব্যবহার করত না, বরং তারা ওজনের ভিত্তিতে ব্যবহার করত। মূলত এই কারণেই স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাব যথাক্রমে ২০ দিনার ও ২০০ দিরহামের ওজনের ভিত্তিতে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ ও ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য ধার্য করা হয়েছে। অতএব বর্তমান চলমান মুদ্রাই স্বর্ণ বা রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত হবে।

ব্যবসায়িক মালের যাকাত

যে সকল মাল লাভের আশায় ক্রয়-বিক্রয় করা হয় সে সকল মালের যাকাত ফরয। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং এর নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কর না; অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।

অত্র আয়াতে বর্ণিত : ‘তোমরা যা উপার্জন কর’ দ্বারা ব্যবসায়িক মালকে বুঝানো হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বিক্রয় করা হবে না এমন কোন জিনিস দোকানে থাকলে তার যাকাত আদায় করতে হবে না। যেমন ফ্রিজ যা পণ্যকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে দোকানের আসবাবপত্র যা বিক্রয় করা হয় না, তার যাকাত আদায় করতে হবে না।

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মালের যাকাতের নিসাব

কারো নিকট এক চান্দ্র বছর সময়কাল ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলে অথবা এর বাজারদর সমপরিমাণ চলমান মুদ্রা থাকলে অথবা এর সমপরিমাণ ব্যবসায়িক মাল থাকলে তার উপর যাকাত ফরয। আবার যদি এই চারটি একত্রিত করে নিসাব পরিমাণ হয় তবুও তার উপর যাকাত ফরজ। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তির যদি ঋণ থাকে তবে তা মোট সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে তারপর যদি সেটা নিসাব পরিমাণ হয় তখন তার যাকাত দিতে হবে। উক্ত দুটি ধাতুর নিসাব নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

স্বর্ণের নিসাব

এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বিশ দিনার এর কম স্বর্ণের যাকাত ফরজ নয়। যদি কোন ব্যক্তির নিকট ২০ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ দিনার যাকাত দিতে হবে। এরপর যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে।

আবু দাউদ হা/১৫৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।

উল্লেখ্য যে, হাদীসে বর্ণিত ১ দীনার সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ। অতএব ২০ দিনার সমান ২০ × ৪.২৫ = ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে, ৮৫ ÷ ১১.৬৬ = ৭.২৯ ভরি বা ৭ ভরি ৫ আনা ৫ রতি স্বর্ণ। অর্থাৎ কারো নিকটে উল্লিখিত পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকলে তার উপর উক্ত স্বর্ণের বর্তমান বিক্রয় মূল্যের হিসাবে মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত দেওয়া ফরয।

খাদ সহ স্বর্ণের নিসাব

বর্তমান বাজারে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের সময় খাদ বাদ দিয়ে ওজন করা হয় না; বরং খাদ সহ ওজন করা হয়। অতএব খাদ সহ স্বর্ণ নিসাব পরিমাণ হলে তার উপর যাকাত ফরয।

রৌপ্যের নিসাব

রৌপ্যের নিসাব উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যের যাকাত নেই’।

বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪।

উল্লেখ্য, ১ উকিয়া সমান ৪০ দিরহাম। অতএব ৫ উকিয়া সমান ৪০×৫=২০০ দিরহাম।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

তোমরা প্রতি ৪০ দিরহামে ১ দিরহাম যাকাত আদায় করবে। ২০০ দিরহাম পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের প্রতি কিছুই ফরয নয়। ২০০ দিরহাম পূর্ণ হলে এর যাকাত হবে পাঁচ দিরহাম এবং এর অতিরিক্ত হলে তার যাকাত উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী প্রদান করতে হবে।

আবু দাউদ হা/১৫৭২, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।

অত্র হাদীসে বর্ণিত ২০০ দিরহাম সমান ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে ৫৯৫ গ্রাম সমান ৫৯৫ ÷ ১১.৬৬ = ৫১.০২ ভরি রৌপ্য হয়। উক্ত পরিমাণ রৌপ্য কারো নিকটে এক বছর যাবৎ থাকলে তার উপর বর্তমান বিক্রয় মূল্যের হিসাবে মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত আদায় করা ফরয।

চলমান মুদ্রার নিসাব

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ যে মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করছে সেটা দিরহাম, দীনার, ডলার, টাকা যাই হোক না কেন, তা যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিসাব মূল্যে পৌছে এবং ঐ মুদ্রার উপর এক বৎসর সময়কাল অতিবাহিত হয়, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় এক দীনার সমান দশ দিরহাম হত। সুতরাং বিশ দিনার স্বর্ণ ও দুইশত দিরহাম রৌপ্যের মান সমান ছিল। যার কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাব যথাক্রমে বিশ দিনার ও দুইশত দিরহাম বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব

ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের নিসাব হল, ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ অথবা ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ।

স্বর্ণের নিসাবে টাকার পরিমাণ

হাদীসে বর্ণিত ১ দীনার সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ। অতএব ২০ দিনার সমান ২০ × ৪.২৫ = ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে, ৮৫ গ্রামে হয় ৮৫ ÷ ১১.৬৬ = ৭.২৯ ভরি বা ৭ ভরি ৫ আনা ৫ রতি স্বর্ণ। স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১ গ্রাম = ৫,৮০০ টাকা। অতএব ৮৫ গ্রাম = ৪,৯৩,০০০ টাকা।

রৌপ্যের নিসাবে টাকার পরিমাণ

হাদীসে বর্ণিত ২০০ দিরহাম সমান ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে ৫৯৫ গ্রাম সমান ৫৯৫ ÷ ১১.৬৬ = ৫১.০২ ভরি রৌপ্য। রৌপ্যের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১ গ্রাম = ৯০ টাকা। অতএব ৫৯৫ গ্রাম = ৫৩,৫৫০ টাকা।

নিসাব নির্ধারণ করব স্বর্ণ দ্বারা নাকি রৌপ্য দ্বারা

বর্তমান বিশ্বে নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের মানে বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এখন আমরা কি নগদ চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব স্বর্ণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করব, না রৌপ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করব? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। স্বর্ণের মূল্যমান রূপা অপেক্ষা স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য বিধায় অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তবে যেহেতু যাকাত সম্পদ পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হওয়ার মাধ্যম তাই রৌপ্যের হিসাবেও নগদ চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত প্রদান করা যেতে পারে।

(২) গৃহপালিত পশু

কারো নিকট বিশেষ কিছু গৃহপালিত বিচরণশীল পশু নিসাব পরিমাণ এক বছর সময়কাল পর্যন্ত থাকলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরয। আর পশু গুলো হল, 

(ক) উট

(খ) গরু ও মহিষ

(ঘ) ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক উট, গরু ও ছাগলের অধিকারী ব্যক্তি যে তার যাকাত আদায় করবে না, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তাদেরকে আনা হবে বিরাটকায় ও অতি মোটাতাজা অবস্থায়। তারা দলে দলে তাকে মাড়াতে থাকবে তাদের ক্ষুর দ্বারা এবং মারতে থাকবে তাদের শিং দ্বারা। যখনই তাদের শেষ দল অতিক্রম করবে, পুনরায় প্রথম দল এসে তার সাথে এরূপ করতে থাকবে, যে যাবৎ না মানুষের বিচার ফায়সালা শেষ হয়ে যায়।

বুখারী হা/১৪৬০, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২১ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৯০; মিশকাত হা/১৭৭৫, বঙ্গানুবাদ মিশকাত (এমদাদিয়া) ৪/১২৬ পৃ।

(২) গৃহপালিত পশুর যাকাতের নিসাব

গৃহপালিত পশুর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নিসাব সংখ্যক পশুর মালিক হতে হবে এবং তা এক চান্দ্র বছর সময়কাল মালিকানায় থাকতে হবে। আর তা হল, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ৪০ টি, গরু ৩০ টি এবং উট ৫ টি। উল্লিখিত সংখ্যা হতে কম হলে তার উপর যাকাত ফরজ নয়। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পাঁচের কম সংখ্যক উটের যাকাত নেই। 

বুখারী হা/১৪৪৭, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘রৌপ্যের যাকাত’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৯৭৯। 

অন্য হাদীসে এসেছে, মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আমাকে ইয়ামানের উদ্দেশ্যে পাঠালেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, গরুর যাকাতে প্রত্যেক চল্লিশটিতে একটি ‘মুসিন্নাহ’ (দু’বছর অতিক্রম করে তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু) এবং প্রত্যেক ত্রিশটিতে একটি ‘তাবী’ অথবা ‘তাবীআহ” (এক বছর অতিক্রম করে দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু) গ্রহণ করবে।

তিরমিযী হা/৬২৩; নাসাঈ হা/২৪৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৮০৩; মিশকাত হা/১৮০০, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কারো গৃহপালিত ছাগলের সংখ্যা চল্লিশ হতে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই।

বুখারী হা/১৪৫৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাগলের যাকাত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১৭৯৬। 

(৩) ফসল

যে সকল শস্য ও ফল গুদামজাত করা যায় এবং ওজনে বিক্রি হয় সে সকল শস্য ও ফলের যাকাত ফরয। যেমন- গম, যব, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, জয়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অপরের সদৃশ ও বিসদৃশও। যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল আহার করবে আর ফসল তোলার দিনে তার হক (যাকাত) প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। (আনআম ৬/১৪১)। 

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গম, যব, কিসমিস এবং খেজুর এই চারটি শস্যের যাকাত প্রবর্তন করেছেন।

সুনান দারাকুতনী হা/১৯৩৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৭৯।

অন্য হাদীসে এসেছে, মূসা ইবনে তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক মুয়ায (রাঃ)-এর নিকট প্রেরিত পত্র আমাদের নিকট ছিল। যাতে তিনি গম, যব, কিসমিস ও খেজুরের যাকাত গ্রহণ করেছেন।

মুসনাদে আহমাদ হা/ ২২০৪১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮৭৯।

উল্লিখিত হাদীছদ্বয়ে বর্ণিত চারটি শস্যের যাকাতের কথা বলা হলেও এই চারটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং ওজন ও গুদামজাত সম্ভব সকল শস্যই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধান, ভুট্টা ইত্যাদি।

অতএব গুদামজাত অসম্ভব এমন শস্যের যাকাত ফরয নয়। যেমন শাক-সবজি বা কাঁচা মালের কোন যাকাত (ওশর) নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, শাক-সবজিতে কোন যাকাত (উশর) নেই। 

সহীহ জামেউস সগীর হা/৫৪১১, আলবানী, সনদ ছহীহ।

উল্লেখ্য যে, এ জাতীয় সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ এক বছর অতিক্রম করলে এবং নিসাব পরিমাণ হলে শতকরা ২.৫০ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।

কখন শস্যের যাকাত ফরয?

শস্য যখন পরিপক্ক হবে এবং তা কর্তন করা হবে তখন শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ফসল তোলার দিনে তার হক (যাকাত) প্রদান করবে। (আনআম ৬/১৪১)।

(৩) ফসলের যাকাতের নিসাব

ফসলের যাকাতের নিসাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন ফসলের যাকাত নেই।

বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২০ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪।

১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা’। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান ৬০×৫=৩০০ ছা’। ১ ছা’ সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ছা সমান ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মণ ৩০ কেজি ফসল উৎপন্ন হলে তার উপর যাকাত ফরজ।

এক শস্য অন্য শস্যের নিসাব পূর্ণ করবে কি?

কোন ব্যক্তির ১০ মণ ধান ও ১০ মণ গম উৎপন্ন হলে সে কি উভয় শস্য একত্রিত করে যাকাত আদায় করবে? না-কি পৃথকভাবে কোনটি নিসাব পরিমাণ না হওয়ায় যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে? এ ব্যাপারে ছহীহ মত হল, গম, যব, ধান ইত্যাদি প্রতিটি পৃথক শস্য। অতএব শস্যগুলো পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ হলেই কেবল যাকাত ফরয। অন্যথা ফরয নয়। তবে একই শস্যের বিভিন্ন শ্রেণী একই নেসাবের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিনিকেট, পারিজা, চায়না, স্বর্ণা সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ধান একই নেসাবের অন্তর্ভুক্ত।

সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ২/৪৫ পৃঃ।

(৪) খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সম্পদ

খনিজ সম্পদ, যা আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য সৃষ্টি করে মাটির নিচে রেখেছেন। যেমন- স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা ইত্যাদি। এবং পূর্ববর্তী যুগের মানুষের রাখা সম্পদ, যা মানুষ মাটির ভেতরে পেয়ে থাকে সেগুলোরও যাকাত আদায় করা ফরজ। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর। (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।

অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ভূমি হতে উৎপাদন বলতে শস্য, খনিজ সম্পদ ও মানুষের লুকিয়ে রাখা সম্পদকে বুঝানো হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চতুষ্পদ জন্তুর আঘাত দায়মুক্ত। কূপ (খননে শ্রমিকের মৃত্যুতে মালিক) দায়মুক্ত, খনি (খননে কেউ মারা গেলে মালিক) দায়মুক্ত। রিকার্যে (মানুষের লুকায়িত সম্পদ) এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।

বুখারী হা/১৪৯৯, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২৭ পৃঃ; মুসলিম হা/১৭১০; মিশকাত হা/১৭৯৮।

গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার সময়

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ বলছে যে, গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার জন্য বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়, বরং যখন পাবে তখন তার এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে, এতে কারো দ্বিমত নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গুপ্তধনে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।

এতে তিনি বছর পূর্ণ হওয়ার শর্তারোপ করেন নি।

(৪) খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সম্পদের যাকাতের নিসাব

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ বলে, গুপ্তধনের যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিসাব শর্ত নয়। অধিকাংশ আলিম এ কথা বলেছেন। অতএব, যে জাহিলি যুগের গুপ্তধন পাবে, সে তার এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে, তার পরিমাণ কম হোক বা বেশি হোক।

যাকাত কাদের উপর ফরজ এবং যাকাত কখন ফরজ হয়?

যাকাত কাদের উপর ফরজ, যাকাত কখন ফরজ হয়, যাকাত কখন দিতে হয়, যাকাত কার উপর ফরজ, কাদের উপর যাকাত ফরজ, জাকাত কাদের উপর ফরজ, জাকাত কার উপর ফরজ

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ এবং যাকাতের নিসাব কি?

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি?

যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

যাকাত শব্দের অর্থ কি এবং যাকাত কাকে বলে?

যেভাবে বুঝবেন আপনার ওপর যাকাত ফরজ – Somoy Tv

‘জাকাত’ কখন ও কার ওপর ফরজ – Risingbd.com

যাকাত – উইকিপিডিয়া

জাকাত যাদের ওপর ফরজ – Dhaka Post

যাদের উপর যাকাত ফরজ – ইমাম বাতায়ন