যাকাতের হিসাব ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম. Jakat hisab & Zakat rules

যাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, স্বর্ণের যাকাতের হিসাব ২০২৩, যাকাত হিসাব করার নিয়ম, যাকাত হিসাব করার নিয়ম ২০২৩, নগদ টাকার যাকাতের হিসাব, স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২৩, যাকাত প্রদানের নিয়ম, স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম, নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম, জাকাতের হিসাব, zakat rules, zakat on gold per vori in bangladesh, zakat on gold, jakat hisab, jakat er hisab, jakat hisab 2023 bangladesh

যাকাতের-হিসাব-ও-যাকাত-দেওয়ার-নিয়ম.-Jakat-hisab-Zakat-rules

যাকাতের হিসাব ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম. Jakat hisab & Zakat rules

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যাকাতের হিসাব ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম কানুন।

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সেই সম্পদের কিছু অংশ গরীবদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। তবে তিনি সকল সম্পদের উপর যাকাত ফরয করেননি। বরং চার প্রকার সম্পদের যাকাত আদায় করার নির্দেশ এসেছে। যা নিম্নরূপ-

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মাল

(২) গৃহপালিত পশু

(৩) শস্য ও ফল

(৪) খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সম্পদ

যে কোন স্বাধীন মুসলিম উক্ত চার প্রকার সম্পদের মধ্যে যেকোন এক প্রকার সম্পদ নিসাব পরিমাণের মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরজ। তবে প্রথম দুই প্রকার তথাঃ (১. স্বর্ণ, রৌপ্য চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মাল ২. গৃহপালিত পশু) সম্পদের জন্য শর্ত হচ্ছে তা এক চান্দ্র বছর সময়কাল তার মালিকানায় থাকতে হবে কিন্তু শেষ দুই প্রকার তথাঃ (৩. শস্য ও ফল ৪. খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সামগ্রী) সম্পদের জন্য এমন কোন শর্ত নেই অর্থাৎ যখন সম্পদের মালিক হবে তখনই যাকাত প্রদান করতে হবে। নিচে উক্ত চার প্রকার সম্পদের বিবরণ এবং তার নিসাব বর্ণনা করা হলোঃ

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মাল

কারো নিকট এক চান্দ্র বছর সময়কাল নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলে অথবা এর বাজারদর সমপরিমাণ চলমান মুদ্রা থাকলে অথবা এর সমপরিমাণ ব্যবসায়িক মাল থাকলে তার উপর যাকাত ফরয। আবার যদি এই চারটি একত্রিত করে নিসাব পরিমাণ হয় তবুও তার উপর যাকাত ফরজ। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তির যদি ঋণ থাকে তবে তা মোট সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে তারপর যদি সেটা নিসাব পরিমাণ হয় তখন তার যাকাত দিতে হবে।

স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাত

নিসাব পরিমাণ হলে স্বর্ণ ও রৌপ্যের উপর যাকাত ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে, এটা তাই, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করতে। সুতরাং তোমরা যা সঞ্চয় করেছিলে তা আস্বাদন কর। (তওবা ৯/৩৪-৩৫)। 

হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরি করা হবে এবং সে সমুদয়কে জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে এবং তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই তা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তখন পুনরায় তাকে গরম করা হবে (তার সাথে এরূপ করা হবে) সে দিন, যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) যতদিন না বান্দাদের বিচার নিষ্পত্তি হয়। অতঃপর সে তার পথ ধরবে, হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।

মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩, বঙ্গানুবাদ মিশকাত (এমদাদিয়া) ৪/১২৩ পৃঃ।

ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত

ব্যবসায়িক স্বর্ণ অর্থাৎ যে স্বর্ণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে সে স্বর্ণের যাকাত ফরয এবং হারাম কাজে ব্যবহৃত স্বর্ণ যেমন পুরুষের ব্যবহৃত স্বর্ণ এবং কোন প্রাণীর আকৃতিতে বানানো নারীর অলংকার যা ব্যবহার করা হারাম, এরূপ ব্যবহৃত স্বর্ণেরও যাকাত ফরজ। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কারণ স্বর্ণের এরূপ ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। পক্ষান্তরে বৈধ পন্থায় নারীর ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে ছহীহ মত হল, নারীর ব্যবহৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলংকারের যাকাত ফরয। নারীর ব্যবহার্য অলংকারের যাকাত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দুটি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বললেন, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিধান করান? রাবী বলেন, একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী (ছাঃ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য।

আবু দাউদ হা/১৫৬৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘গচ্ছিত সম্পদ ও অলংকারের যাকাত’ অনুচ্ছেদ, সনদ হাসান।

অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,

একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে রাসূল (ছাঃ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তা তৈরি করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। 

আবু দাউদ হা/১৫৬৫, সনদ ছহীহ।

চলমান মুদ্রার যাকাত

প্রাথমিক যুগের মানুষ নগদ অর্থ বলতে কিছুই জানত না। তারা পণ্যের বিনিময়ে পণ্য লেনদেন করত। তারপর ধীরে ধীরে নগদ অর্থের ব্যবহার শুরু হয়েছে। সাথে সাথে স্বর্ণ ও রৌপ্য বিশেষ বস্তু হিসাবে গৃহীত হয়েছে। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রেরিত হলেন, তৎকালীন আরব সমাজ স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করত। স্বর্ণ দিয়ে তৈরি হত ‘দিনার’, ও রৌপ্য দিয়ে তৈরি হত ‘দিরহাম’। কিন্তু তা ছোট ও বড় হওয়ায় ওজনের তারতম্য হত। এই কারণে জাহেলী যুগে মক্কার লোকেরা তা গণনার ভিত্তিতে ব্যবহার করত না, বরং তারা ওজনের ভিত্তিতে ব্যবহার করত। মূলত এই কারণেই স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাব যথাক্রমে ২০ দিনার ও ২০০ দিরহামের ওজনের ভিত্তিতে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ ও ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য ধার্য করা হয়েছে। অতএব বর্তমান চলমান মুদ্রাই স্বর্ণ বা রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত হবে।

ব্যবসায়িক মালের যাকাত

যে সকল মাল লাভের আশায় ক্রয়-বিক্রয় করা হয় সে সকল মালের যাকাত ফরয। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর এবং এর নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প কর না; অথচ তোমরা তা গ্রহণ করবে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।

অত্র আয়াতে বর্ণিত : ‘তোমরা যা উপার্জন কর’ দ্বারা ব্যবসায়িক মালকে বুঝানো হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বিক্রয় করা হবে না এমন কোন জিনিস দোকানে থাকলে তার যাকাত আদায় করতে হবে না। যেমন ফ্রিজ যা পণ্যকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে দোকানের আসবাবপত্র যা বিক্রয় করা হয় না, তার যাকাত আদায় করতে হবে না।

(২) গৃহপালিত পশু

কারো নিকট বিশেষ কিছু গৃহপালিত বিচরণশীল পশু নিসাব পরিমাণ এক বছর সময়কাল পর্যন্ত থাকলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরয। আর পশু গুলো হল, 

(ক) উট

(খ) গরু ও মহিষ

(ঘ) ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক উট, গরু ও ছাগলের অধিকারী ব্যক্তি যে তার যাকাত আদায় করবে না, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন তাদেরকে আনা হবে বিরাটকায় ও অতি মোটাতাজা অবস্থায়। তারা দলে দলে তাকে মাড়াতে থাকবে তাদের ক্ষুর দ্বারা এবং মারতে থাকবে তাদের শিং দ্বারা। যখনই তাদের শেষ দল অতিক্রম করবে, পুনরায় প্রথম দল এসে তার সাথে এরূপ করতে থাকবে, যে যাবৎ না মানুষের বিচার ফায়সালা শেষ হয়ে যায়।

বুখারী হা/১৪৬০, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২১ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৯০; মিশকাত হা/১৭৭৫, বঙ্গানুবাদ মিশকাত (এমদাদিয়া) ৪/১২৬ পৃ।

(৩) শস্য ও ফল

যে সকল শস্য ও ফল গুদামজাত করা যায় এবং ওজনে বিক্রি হয় সে সকল শস্য ও ফলের যাকাত ফরয। যেমন- গম, যব, খেজুর, কিসমিস ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, জয়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন- এগুলো একে অপরের সদৃশ ও বিসদৃশও। যখন তা ফলবান হয় তখন তার ফল আহার করবে আর ফসল তোলার দিনে তার হক (যাকাত) প্রদান করবে এবং অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। (আনআম ৬/১৪১)। 

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গম, যব, কিসমিস এবং খেজুর এই চারটি শস্যের যাকাত প্রবর্তন করেছেন।

সুনান দারাকুতনী হা/১৯৩৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৭৯।

অন্য হাদীসে এসেছে, মূসা ইবনে তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক মুয়ায (রাঃ)-এর নিকট প্রেরিত পত্র আমাদের নিকট ছিল। যাতে তিনি গম, যব, কিসমিস ও খেজুরের যাকাত গ্রহণ করেছেন।

মুসনাদে আহমাদ হা/ ২২০৪১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮৭৯।

উল্লিখিত হাদীছদ্বয়ে বর্ণিত চারটি শস্যের যাকাতের কথা বলা হলেও এই চারটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং ওজন ও গুদামজাত সম্ভব সকল শস্যই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধান, ভুট্টা ইত্যাদি।

অতএব গুদামজাত অসম্ভব এমন শস্যের যাকাত ফরয নয়। যেমন শাক-সবজি বা কাঁচা মালের কোন যাকাত (ওশর) নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, শাক-সবজিতে কোন যাকাত (উশর) নেই। 

সহীহ জামেউস সগীর হা/৫৪১১, আলবানী, সনদ ছহীহ।

উল্লেখ্য যে, এ জাতীয় সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ এক বছর অতিক্রম করলে এবং নিসাব পরিমাণ হলে শতকরা ২.৫০ টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।

কখন শস্যের যাকাত ফরয?

শস্য যখন পরিপক্ক হবে এবং তা কর্তন করা হবে তখন শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ফসল তোলার দিনে তার হক (যাকাত) প্রদান করবে। (আনআম ৬/১৪১)।

(৪) খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সম্পদ

খনিজ সম্পদ, যা আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য সৃষ্টি করে মাটির নিচে রেখেছেন। যেমন- স্বর্ণ, রৌপ্য, তামা ইত্যাদি। এবং পূর্ববর্তী যুগের মানুষের রাখা সম্পদ, যা মানুষ মাটির ভেতরে পেয়ে থাকে সেগুলোরও যাকাত আদায় করা ফরজ। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি হতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করে দেই তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর। (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।

অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ভূমি হতে উৎপাদন বলতে শস্য, খনিজ সম্পদ ও মানুষের লুকিয়ে রাখা সম্পদকে বুঝানো হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চতুষ্পদ জন্তুর আঘাত দায়মুক্ত। কূপ (খননে শ্রমিকের মৃত্যুতে মালিক) দায়মুক্ত, খনি (খননে কেউ মারা গেলে মালিক) দায়মুক্ত। রিকার্যে (মানুষের লুকায়িত সম্পদ) এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।

বুখারী হা/১৪৯৯, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২৭ পৃঃ; মুসলিম হা/১৭১০; মিশকাত হা/১৭৯৮।

গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার সময়

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ বলছে যে, গুপ্তধন থেকে এক পঞ্চমাংশ বের করার জন্য বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়, বরং যখন পাবে তখন তার এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে, এতে কারো দ্বিমত নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গুপ্তধনে এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব।

এতে তিনি বছর পূর্ণ হওয়ার শর্তারোপ করেন নি।

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত নেই

মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু যথা খাবার, পানীয়, আসবাবপত্র, বাহন, পোশাক, ঘরবাড়ি, মার্কেট, জমি, সোনা-রূপা ছাড়া অন্যান্য অলংকারসহ ব্যবহার্য সকল পণ্যের ওপর জাকাত আবশ্যক নয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমদের গোলাম, বাদী, ঘোড়া এগুলোর ওপর জাকাত নেই। ভাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্যের ওপর যাকাত আসবে না। তবে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর নিসাব পূর্ণ হবার পর যাকাত আসবে।

যাকাতের নিসাব

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক মালের যাকাতের নিসাব

কারো নিকট এক চান্দ্র বছর সময়কাল ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলে অথবা এর বাজারদর সমপরিমাণ চলমান মুদ্রা থাকলে অথবা এর সমপরিমাণ ব্যবসায়িক মাল থাকলে তার উপর যাকাত ফরয। আবার যদি এই চারটি একত্রিত করে নিসাব পরিমাণ হয় তবুও তার উপর যাকাত ফরজ। উল্লেখ্য যে, ব্যক্তির যদি ঋণ থাকে তবে তা মোট সম্পত্তি থেকে বাদ দিয়ে তারপর যদি সেটা নিসাব পরিমাণ হয় তখন তার যাকাত দিতে হবে। উক্ত দুটি ধাতুর নিসাব নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

স্বর্ণের নিসাব

এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বিশ দিনার এর কম স্বর্ণের যাকাত ফরজ নয়। যদি কোন ব্যক্তির নিকট ২০ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ দিনার যাকাত দিতে হবে। এরপর যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে।

আবু দাউদ হা/১৫৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।

উল্লেখ্য যে, হাদীসে বর্ণিত ১ দীনার সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ। অতএব ২০ দিনার সমান ২০ × ৪.২৫ = ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে, ৮৫ ÷ ১১.৬৬ = ৭.২৯ ভরি বা ৭ ভরি ৫ আনা ৫ রতি স্বর্ণ। অর্থাৎ কারো নিকটে উল্লিখিত পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকলে তার উপর উক্ত স্বর্ণের বর্তমান বিক্রয় মূল্যের হিসাবে মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত দেওয়া ফরয।

খাদ সহ স্বর্ণের নিসাব

বর্তমান বাজারে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ের সময় খাদ বাদ দিয়ে ওজন করা হয় না; বরং খাদ সহ ওজন করা হয়। অতএব খাদ সহ স্বর্ণ নিসাব পরিমাণ হলে তার উপর যাকাত ফরয।

রৌপ্যের নিসাব

রৌপ্যের নিসাব উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ রৌপ্যের যাকাত নেই’।

বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪।

উল্লেখ্য, ১ উকিয়া সমান ৪০ দিরহাম। অতএব ৫ উকিয়া সমান ৪০×৫=২০০ দিরহাম।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

তোমরা প্রতি ৪০ দিরহামে ১ দিরহাম যাকাত আদায় করবে। ২০০ দিরহাম পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের প্রতি কিছুই ফরয নয়। ২০০ দিরহাম পূর্ণ হলে এর যাকাত হবে পাঁচ দিরহাম এবং এর অতিরিক্ত হলে তার যাকাত উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী প্রদান করতে হবে।

আবু দাউদ হা/১৫৭২, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।

অত্র হাদীসে বর্ণিত ২০০ দিরহাম সমান ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে ৫৯৫ গ্রাম সমান ৫৯৫ ÷ ১১.৬৬ = ৫১.০২ ভরি রৌপ্য হয়। উক্ত পরিমাণ রৌপ্য কারো নিকটে এক বছর যাবৎ থাকলে তার উপর বর্তমান বিক্রয় মূল্যের হিসাবে মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত আদায় করা ফরয।

চলমান মুদ্রার নিসাব

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ যে মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করছে সেটা দিরহাম, দীনার, ডলার, টাকা যাই হোক না কেন, তা যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিসাব মূল্যে পৌছে এবং ঐ মুদ্রার উপর এক বৎসর সময়কাল অতিবাহিত হয়, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় এক দীনার সমান দশ দিরহাম হত। সুতরাং বিশ দিনার স্বর্ণ ও দুইশত দিরহাম রৌপ্যের মান সমান ছিল। যার কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাব যথাক্রমে বিশ দিনার ও দুইশত দিরহাম বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব

ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের নিসাব হল, ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ অথবা ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ।

স্বর্ণের নিসাবে টাকার পরিমাণ

হাদীসে বর্ণিত ১ দীনার সমান ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ। অতএব ২০ দিনার সমান ২০ × ৪.২৫ = ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে, ৮৫ গ্রামে হয় ৮৫ ÷ ১১.৬৬ = ৭.২৯ ভরি বা ৭ ভরি ৫ আনা ৫ রতি স্বর্ণ। স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১ গ্রাম = ৫,৮০০ টাকা। অতএব ৮৫ গ্রাম = ৪,৯৩,০০০ টাকা।

রৌপ্যের নিসাবে টাকার পরিমাণ

হাদীসে বর্ণিত ২০০ দিরহাম সমান ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য। ১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম হলে ৫৯৫ গ্রাম সমান ৫৯৫ ÷ ১১.৬৬ = ৫১.০২ ভরি রৌপ্য। রৌপ্যের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১ গ্রাম = ৯০ টাকা। অতএব ৫৯৫ গ্রাম = ৫৩,৫৫০ টাকা।

নিসাব নির্ধারণ করব স্বর্ণ দ্বারা নাকি রৌপ্য দ্বারা

বর্তমান বিশ্বে নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের মানে বড় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এখন আমরা কি নগদ চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব স্বর্ণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করব, না রৌপ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করব? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। স্বর্ণের মূল্যমান রূপা অপেক্ষা স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য বিধায় অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তবে যেহেতু যাকাত সম্পদ পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হওয়ার মাধ্যম তাই রৌপ্যের হিসাবেও নগদ চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত প্রদান করা যেতে পারে।

(২) গৃহপালিত পশুর যাকাতের নিসাব

গৃহপালিত পশুর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত নিসাব সংখ্যক পশুর মালিক হতে হবে এবং সেটা এক চান্দ্র বছর সময়কাল মালিকানায় থাকতে হবে। আর তা হল, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ৪০ টি, গরু ৩০ টি এবং উট ৫ টি। উল্লিখিত সংখ্যা হতে কম হলে তার উপর যাকাত ফরজ নয়। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পাঁচের কম সংখ্যক উটের যাকাত নেই। 

বুখারী হা/১৪৪৭, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘রৌপ্যের যাকাত’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৯৭৯। 

অন্য হাদীসে এসেছে, মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন আমাকে ইয়ামানের উদ্দেশ্যে পাঠালেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, গরুর যাকাতে প্রত্যেক চল্লিশটিতে একটি ‘মুসিন্নাহ’ (দু’বছর অতিক্রম করে তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু) এবং প্রত্যেক ত্রিশটিতে একটি ‘তাবী’ অথবা ‘তাবীআহ” (এক বছর অতিক্রম করে দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু) গ্রহণ করবে।

তিরমিযী হা/৬২৩; নাসাঈ হা/২৪৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৮০৩; মিশকাত হা/১৮০০, ‘যাকাত’ অধ্যায়, আলবানী, সনদ ছহীহ।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কারো গৃহপালিত ছাগলের সংখ্যা চল্লিশ হতে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই।

বুখারী হা/১৪৫৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাগলের যাকাত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১৭৯৬। 

(৩) ফসলের যাকাতের নিসাব

ফসলের যাকাতের নিসাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাক-এর কম উৎপন্ন ফসলের যাকাত নেই।

বুখারী হা/১৪৮৪, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২০ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৭৯; মিশকাত হা/১৭৯৪।

১ ওয়াসাক সমান ৬০ ছা’। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান ৬০×৫=৩০০ ছা’। ১ ছা’ সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ছা সমান ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মণ ৩০ কেজি ফসল উৎপন্ন হলে তার উপর যাকাত ফরজ।

এক শস্য অন্য শস্যের নিসাব পূর্ণ করবে কি?

কোন ব্যক্তির ১০ মণ ধান ও ১০ মণ গম উৎপন্ন হলে সে কি উভয় শস্য একত্রিত করে যাকাত আদায় করবে? না-কি পৃথকভাবে কোনটি নিসাব পরিমাণ না হওয়ায় যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে? এ ব্যাপারে ছহীহ মত হল, গম, যব, ধান ইত্যাদি প্রতিটি পৃথক শস্য। অতএব শস্যগুলো পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ হলেই কেবল যাকাত ফরয। অন্যথা ফরয নয়। তবে একই শস্যের বিভিন্ন শ্রেণী একই নেসাবের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিনিকেট, পারিজা, চায়না, স্বর্ণা সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ধান একই নেসাবের অন্তর্ভুক্ত।

সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ২/৪৫ পৃঃ।

(৪) খনিজ ও মাটির ভিতরে লুকায়িত সম্পদের নিসাব

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ বলে, গুপ্তধনের যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিসাব শর্ত নয়। অধিকাংশ আলিম এ কথা বলেছেন। অতএব, যে জাহিলি যুগের গুপ্তধন পাবে, সে তার এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে, তার পরিমাণ কম হোক বা বেশি হোক।

যাকাতের পরিমাণ

(১) স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাতের পরিমাণ

স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত বের করার জন্য উক্ত স্বর্ণ ও রৌপ্যের বর্তমান বিক্রয় মূল্য, গচ্ছিত পণ্যের বর্তমান বাজার মূল্য (বর্তমান ক্রয়মূল্য) এবং নগদ মুদ্রা একত্রিত করার পর যদি কোন ঋণ থাকে তবে সেখান থেকে তা বাদ দিয়ে মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত দেওয়া ফরয অর্থাৎ সমস্ত সম্পদ কে ৪০ দ্বারা ভাগ করে এক ভাগ বা মোট সম্পদের ২.৫০% যাকাত দিতে হবে। আর এটাই স্বর্ণ-রৌপ্য ও এর হুকুমে যা আসে তার যাকাত। যেমন কারো নিকট স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্য একত্রে ৪,০০,০০০ টাকার সমপরিমাণ রয়েছে। উক্ত টাকার যাকাত বের করার নিয়ম হল, ৪,০০,০০০ ÷ ৪০ = ১০,০০০ টাকা। উল্লেখিত পদ্ধতিতে ৪,০০,০০০ টাকা থেকে যাকাত হিসাবে ১০,০০০ টাকা দান করতে হবে।

(২) গৃহপালিত পশুর যাকাতের পরিমাণ

এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা দরকার। তা হলো, পশুর যাকাত হিসেবে কেবল পশুই প্রদান করতে হবে, মূল্য নয়।

ক. উটের যাকাতের পরিমাণ

১. উট যদি ৫টির কম হয় তবে তার যাকাত নেই।

২. ৫ – ৯ টি উটের জন্য একটি ছাগী।

৩. ১০ – ১৪ টি উটের জন্য দুটি ছাগী।

৪. ১৫ – ১৯ টি উটের জন্য তিনটি ছাগী।

৫. ২০ – ২৪ টি উটের জন্য চারটি ছাগী।

৬. ২৫ – ৩৫ টি উটের জন্য এমন একটি উটনী যার বয়স ২ বছরে পড়েছে।

৭. ৩৬ – ৪৫ টি উটের জন্য এমন একটি উটনী যার বয়স ৩ বছরে পড়েছে।

৮. ৪৬ – ৬০ টি উটের জন্য চার বছরে পড়েছে এমন একটি উটনী।

৯. ৬০ – ৭৫ টি উটের জন্য পাঁচ বছরে পড়েছে এমন একটি উটনী।

১০. ৭৬ – ৯০ টি উটের জন্য তিন বছরে পড়েছে এমন ২টি উটনী।

১১. ৯১ – ১২০ টি উটের জন্য চার বছরে পড়েছে এমন ২টি উটনী।

এর অতিরিক্ত হলে আবার একই নিয়মে ধর্তব্য।

খ. গরু ও মহিষের যাকাতের পরিমাণ

১. গরু ও মহিষ যদি ৩০ টির কম হয় তবে তার যাকাত নেই।

২. ৩০ – ৩৯ টি গরু ও মহিষের জন্য পূর্ণ এক বছরের একটি গরু/মহিষের বাচ্চা।

৩. ৪০ – ৫৯ টি গরু ও মহিষের জন্য একটি ২ বছরের বাছুর।

৪. ৬০ টির অতিরিক্ত থাকলে প্রতি ৩০ টি গরু ও মহিষের জন্য ১ বছরের এবং প্রতি ৪০ টি গরু ও মহিষের জন্য ২ বছরের একটি বাচ্চা দিতে হবে।

গ. ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার যাকাতের পরিমাণ

১. ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া যদি ৪০ টির কম হয় তবে তার যাকাত নেই।

২. ৪০ – ১২০ টি ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার জন্য একটি ছাগল/ভেড়া।

৩. ১২১ – ২৮০ টি ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার জন্য দুটি ছাগল/ভেড়া।

৪. ২০১ – ৩৯৯ টি ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার জন্য তিনটি ছাগল/ভেড়া।

৫. ৪০০ টি ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার জন্য চারটি ছাগল/ভেড়া।

৬. ৪০০ এর অধিক হলে প্রতি ১০০ টি ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার জন্য ১টি করে ছাগল/ভেড়া।

যাকাত হিসেবে যে ভেড়া/ছাগল দেয়া হবে তার বয়স এক বছরের নিচে হবে না।

(৩) ফসলের যাকাতের পরিমাণ কত

নিসাব পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয। আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ওশর’ (দশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ ওশর’ (বিশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব।

বুখারী হা/১৪৮৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ঐ, বঙ্গানুবাদ ২/১১৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৭৯৭।

বৃষ্টির পানি ও কৃত্রিম সেচ উভয় মাধ্যমে উৎপাদিত শস্যের যাকাতের পরিমাণ

যে শস্য শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি অথবা শুধুমাত্র কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় না। বরং কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু অংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, সে শস্যের যাকাত বের করার নিয়ম হল, যদি বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হয় তাহলে দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশি হলে বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।

আর যদি অর্ধাংশ বৃষ্টির পানিতে এবং অর্ধাংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাহলে দশ ভাগের এক ভাগ এর তিন-চতুর্থাংশ যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ কারো ২০ মণ ধান উৎপন্ন হওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশি হলে তার দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ দুই মণ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে বিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক মণ যাকাত দিতে হবে। আর অর্ধাংশ বৃষ্টির পানি ও অর্ধাংশ নিজের সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হলে তার দশ ভাগের এক ভাগ এর তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ এক মণ বিশ কেজি যাকাত দিতে হবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই।

ইবনু কুদামা, শারহুল কাবীর ২/৫৬৩ পৃঃ; মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, শারহুল মুমতে’ ৬/৭৮ পৃঃ; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/১৭৬ পৃঃ; ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৫৪ পৃঃ; নায়লুল আওতার ৪/২০১ পৃঃ; ইউসুফ কারযাভী, ফিকহুয যাকাত ১/৩৩৩ পৃঃ।

(৪) গুপ্তধনের যাকাতের পরিমাণ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “গুপ্তধনের যাকাত এক পঞ্চমাংশ”। অর্থাৎ যে গুপ্তধন পাবে সে গুপ্তধন থেকে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত দিবে। 

বুখারী হা/১৪৯৯, ‘যাকাত’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/১২৭ পৃঃ; মুসলিম হা/১৭১০; মিশকাত হা/১৭৯৮।

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজীদে যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ছাদাক্বা (যাকাত) হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটা আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (তাওবা ৯/৬০)।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। নিচে প্রত্যেকটি খাত আলাদাভাবে আলোচনা করা হল-

(১) ফকির

নিঃসম্বল ভিক্ষা প্রার্থী। যাকে আল্লাহ তাআলা যাকাতের ৮টি খাতের প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। অতএব ফকির যাকাতের মাল পাওয়ার হকদার। আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা যদি প্রকাশ্যে সাদাক্বাহ প্রদান কর তবে উহা ভাল; আর যদি তা গোপনে কর এবং দরিদ্রদেরকে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভালো। (বাক্বারাহ ২/২৭১)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বা (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর তাদের দরিদ্রের মাঝে বন্টন হবে।

বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ বুখারী ২/৭৫ পৃঃ; মুসলিম হা/১৯।

(২) মিসকিন

যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে দ্বিতীয় খাত হিসাবে আল্লাহ তা’আলা মিসকীনকে উল্লেখ করেছেন। আর মিসকীন হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহ্যিকভাবে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়। 

হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এমন ব্যক্তি মিসকীন নয় যে এক মুঠো-দু’মুঠো খাবারের জন্য বা দুই একটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং তাকে তা দেওয়া হলে ফিরে আসে। বরং প্রকৃত মিসকীন হল সেই ব্যক্তি যার প্রয়োজন পূরণ করার মত যথেষ্ট সঙ্গতী নেই। অথচ তাকে চেনাও যায় না যাতে লোকে তাকে ছাদাক্বা করতে পারে এবং সে নিজেও মানুষের নিকট কিছু চায় না।

বুখারী হা/১৪৭৯, ৪৫৩৯; মুসলিম হা/১০৩৯; মিশকাত হা/১৮২৮।

(৩) যাকাত আদায়কারী ও হেফাজতকারী

আল্লাহ তা’আলা যাকাত প্রদানের তৃতীয় খাত হিসাবে ঐ ব্যক্তিকে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি যাকাত আদায়, হেফাজত ও বন্টন এর কাজে নিয়োজিত। অতএব উক্ত ব্যক্তি সম্পদশালী হলেও সে চাইলে যাকাতের অংশ গ্রহণ করতে পারবে।

শারহুল মুমতে ৬/২২৫।

হাদীসে এসেছে, ইবনে সায়েদী আল-মালেকী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত করলেন। যখন আমি কাজ শেষ করলাম এবং তাঁর কাছে পৌছিয়ে দিলাম তখন তিনি নির্দেশ দিলেন আমাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। আমি বললাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি ইহা করেছি। সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট থেকেই এর প্রতিদান নেব। তিনি বললেন, আমি যা দিচ্ছি তা নিয়ে নাও। কেননা আমিও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময় যাকাত আদায়কারীর কাজ করেছি। তখন তিনিও আমাকে পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন আমিও তোমার মত এরূপ কথা বলেছিলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে কিছু দেওয়া হয়, তখন তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি তা নিজে খাও অথবা ছাদাক্বা কর।

মুসলিম হা/১০৪৫; মিশকাত হা/১৮৫৪।

অন্য হাদীসে এসেছে, আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদে রত ব্যক্তি। (২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছেন।

আবু দাউদ হা/১৬৩৫; মিশকাত হা/১৮৩৩; আলবানী, সনদ সহীহ; সহীহুল জামে।

(৪) যে ব্যক্তিকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে হয়

ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে অথবা কোন অনিষ্ট বা কাফেরের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে কোন অমুসলিমকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।

শারহুল মুমতে ৬/২২৬।

হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) নবী (ছাঃ)- এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা ইবনে হানযালী যিনি মাজায়েশী গোত্রের লোক ছিলেন। (২) উয়াইনা ইবনে বাদার ফাজারী। (৩) যায়েদ ত্বায়ী, যিনি বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। (৪) আলকামা ইবনে উলাছাহ আমেরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলতে লাগলেন, নবী (ছাঃ) নজদ বাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, আমি তো তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দুটি কোটরাগত, গন্ডদ্বয় ঝুলে পড়া, কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন।

তখন তিনি বললেন, আমিই যদি নাফরমানি করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন, আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। (আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ বলে ধারণা করছি। কিন্তু নবী (ছাঃ) তাকে নিষেধ করলেন। অতঃপর যখন অভিযোগকারী লোকটি ফিরে গেল, তখন নবী (ছাঃ) বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন হতে তারা এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমনি ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম। 

বুখারী হা/৩৩৪৪, বঙ্গানুবাদ বুখারী, (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৩/৩৮০ পৃঃ; মুসলিম হা/১০৬৪।

(৫) দাস (মুক্তির জন্য)

যারা লিখিত কোন চুক্তির বিনিময়ে দাসে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে মালিকের নিকট থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়। অনুরূপভাবে বর্তমানে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে সে ব্যক্তিও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

শারহুল মুমতে ৬/২৩০।

হাদীসে এসেছে, বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, প্রশ্ন তো তুমি অল্প কথায় বলে ফেললে; কিন্তু তুমি অত্যন্ত ব্যাপক বিষয় জানতে চেয়েছ। তুমি একটি প্রাণী আযাদ করে দাও এবং একটি দাস মুক্ত করে দাও। লোকটি বলল, এ উভয়টি কি একই কাজ নয়? তিনি বললেন, না (উভয়টি এক নয়)। কেননা একটি প্রাণী আযাদ করার মানে হল, তুমি একাকী গোটা প্রাণীকে মুক্ত করে দিবে। আর একটি দাস মুক্ত করার অর্থ হল, তার মুক্তির জন্য কিছু মূল্য প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করবে।

এছাড়া জান্নাতে প্রবেশকারী কাজের মধ্যে অন্যতম হল, প্রচুর দুধ প্রদানকারী জানোয়ার দান করা এবং এমন নিকটতম আত্মীয়ের প্রতি অনুগ্রহ করা, যে তোমার উপর অত্যাচারী। যদি তুমি এ সমস্ত কাজ করতে সক্ষম না হও, ক্ষুদার্তকে খাদ্য দান কর এবং পিপাসিতকে পানি পান করাও। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর। আর যদি তোমার দ্বারা এ কাজ করাও সম্ভব না হয়, তবে কল্যাণকর কথা ব্যতীত অন্য কথা থেকে তোমার জিহবাকে সংযত রাখ।

মুসনাদে আহমাদ হা/১৮৬৭০; আদাবুল মুফরাদ হা/৬৯; মিশকাত হা/৩৩৮৪, বঙ্গানুবাদ মিশকাত (এমদাদিয়া) ৭/৩ পৃঃ; আলবানী, সনদ ছহীহ।

উল্লিখিত হাদিসে দাসমুক্তিকে জান্নাত লাভের বিশেষ মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর দাস মুক্তির জন্য যেহেতু প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, সেহেতু আল্লাহ তা’আলা ইসলামী অর্থনীতির প্রধান উৎস যাকাত বন্টনের খাত সমূহের মধ্যে দাসমুক্তিকে উল্লেখ করেছেন।

(৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার ঋণ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাত প্রদান করা যাবে। 

হাদিসে এসেছে, কাবীছা ইবনু মাখারেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি কিছু ঋণের যিম্মাদার হয়েছিলাম। অতএব এ ব্যাপারে কিছু চাওয়ার জন্য আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, (মদীনায় অবস্থান কর যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নিকট যাকাতের মাল না আসে। তখন আমি তা হতে তোমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দান করব।

অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, মনে রেখো হে কাবীছা! তিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল নয়। (১) যে ব্যক্তি কোন ঋণের যিম্মাদার হয়েছে তার জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না সে তা পরিশোধ করে। তারপর তা বন্ধ করে দিবে। (২) যে ব্যক্তি কোন বালা মুছীবতে আক্রান্ত হয়েছে যাতে তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে তার জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূর্ণ করার মত অথবা তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার মত কোন কিছু লাভ করে এবং (৩) যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়েছে এমনকি তার প্রতিবেশীদের মধ্যে জ্ঞান- বুদ্ধি সম্পন্ন তিন জন ব্যক্তি তার দারিদ্র্যের ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করেছে তার জন্য (যাকাতের মাল থেকে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না সে তার জীবিকা নির্বাহের মত অথবা তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার মত কিছু লাভ করে। হে কাবীছা! এরা ব্যতীত যারা (যাকাতের মাল থেকে) চায় তারা হারাম খাচ্ছে।

মুসলিম হা/১০৪৪; মিশকাত হা/১৮৩৭।

(৭) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে রত ব্যক্তি

আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে যে কোন ধরনের প্রচেষ্টা ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ বা আল্লাহর রাস্তার অন্তর্ভুক্ত। জিহাদ, দ্বীনি ইলম অর্জনের যাবতীয় পথ এবং দ্বীন প্রচারের যাবতীয় মাধ্যম এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। 

হাদীসে এসেছে, আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদে রত ব্যক্তি। (২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে যে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।

আবু দাউদ হা/১৬৩৫; মিশকাত হা/১৮৩৩; আলবানী, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে’ হা/৭২৫০।

(৮) মুসাফির

সফরে গিয়ে যার পাথেয় শেষ হয়ে গেছে সে ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থ প্রদান করে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে যাকাতের অর্থ দান করা যাবে। এক্ষেত্রে উক্ত মুসাফির সম্পদশালী হলেও তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।

বিভিন্ন ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে যাকাত দেওয়ার বিধান

শক্তিশালী ও কর্মক্ষম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার বিধান

শক্তিশালী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির জন্য যাকাতের মাল ভক্ষণ করা বৈধ নয়। 

হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত হালাল নয় এবং সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্যও হালাল নয়।

তিরমিযী হা/৬৫২; নাসাঈ হা/২৫৯৭; ইবনু মাজাহ হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/১৮৩০; আলবানী, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে’ হা/৭২৫১।

অন্য হাদীসে এসেছে, আদী ইবনে খিয়ার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, তারা বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন তিনি সদকা (যাকাত) বণ্টন করছিলেন। তারা উভয়ে তাঁর নিকট (যাকাত) থেকে কিছু চাইলেন। তিনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং নীচু করলেন। তিনি দেখলেন, আমরা দু’জনই স্বাস্থবান। তিনি বললেন, যদি তোমরা চাও আমি তোমাদেরকে দিব। তবে তাতে বিত্তশালীর এবং কোন শক্তিশালী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির অংশ নেই।

আবু দাউদ হা/১৬৩৩; নাসাঈ হা/২৫৯৮; মিশকাত হা/১৮৩২; আলবানী, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে’ হা/১৪১৯।

পিতা-মাতাকে যাকাত দেওয়ার বিধান

পিতা-মাতাকে যাকাতের মাল দেওয়া জায়েয নয়। কেননা সন্তান-সন্ততি ও তার সম্পদ মূলত পিতা-মাতারই। এছাড়া সন্তানের উপর একান্ত কর্তব্য হল, তার সম্পদ থেকে পিতা-মাতার ভরণপোষণ বহন করা। 

হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার সম্পদ ও সন্তান রয়েছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বললেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার জন্য। তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের উত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর।

আবু দাউদ হা/৩৫৩০; মিশকাত হা/৩৩৫৪; আলবানী, সনদ সহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪১৪।

নিজের স্বামীকে যাকাত দেওয়ার বিধান

স্ত্রী যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। আর তার স্বামী যদি দরিদ্র হয় তবুও স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে না তাহলে সে তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে। তবে তা থেকে স্ত্রী নিজে এবং তার নিজের সন্তান ভোগ করতে পারবে না। স্বামী নিজে এবং যদি তার অন্য স্ত্রী ও সেই স্ত্রীর সন্তান থাকে তবে তারা সেটা ভোগ করতে পারবে।

হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যয়নব (রাঃ) বলেন, আমি মসজিদে নববীতে ছিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখলাম, তিনি বললেন, তোমরা ছাদাক্বা কর যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়। আর যয়নব (তাঁর স্বামী) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তার কোলের এতিমদের জন্য ব্যয় করতেন (যাকাত দিতেন)। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন, আমি যদি যাকাতের মাল আপনার জন্য এবং আমার কোলের এতিমদের জন্য ব্যয় করি তাহলে যথেষ্ট হবে কি? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, বরং তুমি নিজেই জিজ্ঞেস কর।

তখন আমি নবী (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। দেখলাম আরেকজন আনসারী মহিলা দরজায় অপেক্ষা করছে, সেও আমার ন্যায় প্রয়োজনবোধে এসেছে। এমতাবস্থায় আমাদের নিকট দিয়ে বেলাল (রাঃ) অতিক্রম করছিলেন। আমরা বললাম, নবী (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন, আমি যদি আমার স্বামী এবং আমার কোলের এতিমদের যাকাত দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে? আর তাকে (রাসূল সঃ) আমাদের বিষয়ে বল না। বেলাল (রাঃ) গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি বললেন, তারা কারা? বেলাল (রাঃ) বললেন, যয়নব। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কোন যয়নব? বেলাল (রাঃ) বললেন, তিনি হলেন, ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর স্ত্রী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তার জন্য দু’টি বিনিময় হবে। ছাদাক্বার বিনিময় এবং আত্মীয়তা রক্ষার বিনিময়।

বুখারী হা/১৪৬৬।

নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে যাকাত দেওয়ার বিধান

নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে যাকাতের সম্পদ দেওয়া যাবে না। 

হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিলেন। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার নিকট একটা দীনার রয়েছে। তিনি বললেন, তা তোমার নিজের জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য একটি আছে। তিনি বললেন, তা তোমার সন্তানের জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য একটা আছে। তিনি বললেন, তা তোমার স্বামী অথবা স্ত্রীর জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য আরো একটি আছে। তিনি বললেন, তা তোমার খাদেমের জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য একটি আছে। তিনি বললেন, সে ব্যাপারে তুমি ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও।

আবু দাউদ হা/১৬৯১; নাসাঈ হা/২৫৩৫; মিশকাত হা/১৯৪০; আলবানী, সনদ হাসান; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৯৫।

উল্লিখিত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিজের স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর এবং পিতা হিসেবে সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্বও তার উপর। অতএব নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না।

অমুসলিমদেরকে যাকাত দেওয়ার বিধান

যাকাতের মাল কোন অমুসলিমকে দেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা শুধুমাত্র ধনী মুসলিমদের উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে এবং গরীব মুসলিমদের মধ্যে তা বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বা (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর তাদের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন হবে।

বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ বুখারী ২/৭৫ পৃঃ; মুসলিম হা/১৯।

যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ ও গোরস্থান তৈরীর বিধান

যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ ও গোরস্থান তৈরী করা বৈধ নয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা যাকাত বিতরণের খাতগুলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, যাদের অন্তর (ইসলামের দিকে) আকর্ষণ করা প্রয়োজন, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থ, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান (তাওবা ৯/৬০)। মসজিদ ও গোরস্থান উক্ত খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নিকটাত্মীয়কে যাকাত দেওয়ার বিধান

কোন নিকটাত্মীয় প্রকৃতপক্ষে যাকাতের হকদার হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। এমনকি এতে দ্বিগুণ সওয়াব অর্জিত হবে।

হাদীসে এসেছে, সালমান ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসকীনকে ছাদাক্বা দিলে একটা ছাদাক্বা হয়। কিন্তু সে যদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হয়, তবে নেকী দ্বিগুণ হয়। (১) ছাদাক্বার নেকী (২) আত্মীয়তা রক্ষার নেকি’।

মুসনাদে আহমাদ হা/১৬২৭৭; তিরমিযী হা/৬৫৮; মিশকাত হা/১৯৩৯; আলবানী, সনদ ছহীহ।

নির্ধারিত ৮টি খাতে যাকাত বন্টনের পদ্ধতি

আল্লাহ তা’আলা সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত প্রদানের যে ৮টি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার মধ্যেই যাকাত বণ্টন সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এর বাইরে যাকাত প্রদান করা সিদ্ধ নয়। তবে যাকাতকে সমান ৮ ভাগে ভাগ করতে হবে না। বরং ৮টি খাতের মধ্যে যে খাতগুলো পাওয়া যাবে সেগুলোর মধ্যে প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে কম-বেশী করে যাকাত বণ্টন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে কোন একটি খাতে সম্পূর্ণ যাকাত প্রদান করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত চলমান মুদ্রা অর্থাৎ টাকা দিয়ে দিতে হবে কোন মাল দিয়ে নয়।

যাকাতের হিসাব ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম. Jakat hisab & Zakat rules

যাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাতের হিসাব, স্বর্ণের যাকাতের হিসাব ২০২৩, যাকাতের হিসাব, যাকাত হিসাব করার নিয়ম, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাত হিসাব করার নিয়ম ২০২৩, জাকাতের হিসাব, যাকাতের হিসাব, নগদ টাকার যাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২৩, যাকাতের হিসাব, যাকাত প্রদানের নিয়ম, জাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম, নগদ টাকার যাকাত হিসাব করার নিয়ম, যাকাতের হিসাব, জাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, ১ লক্ষ টাকার যাকাত কত ২০২২, সোনার যাকাতের হিসাব ২০২৩, যাকাতের হিসাব, জাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, ১ লাখ টাকায় যাকাত কত, যাকাত এর হিসাব, টাকার যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাতের হিসাব, যাকাতের হিসাব, যাকাতের নিয়ম

স্ত্রী কি স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে, যাকাতের বিধান, যাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাতের হিসাব, সোনার যাকাত দেওয়ার নিয়ম, স্বর্ণের যাকাত, যাকাতের নিয়ম, যাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাতের হিসাব, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, স্বর্ণের যাকাতের হিসাব, যাকাত হিসাব, যাকাতের মাসায়েল, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাতের হিসাব, জাকাতের হিসাব, নগদ টাকার যাকাতের হিসাব ২০২৩, যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২৩, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, যাকাতের হিসাব, জাকাতের হিসাব, জাকাতের হিসাব, জাকাত হিসাব, জাকাতের হিসাব ২০২৩, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাত এর হিসাব, যাকাতের হিসাব, জাকাতের নিয়ম, জাকাতের হিসাব, জাকাত নিয়ম, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, সোনার জাকাত, যাকাতের হিসাব, স্বর্ণের জাকাত, যাকাত দেওয়ার নিয়ম, জাকাতের হিসাব

যাকাতের হিসাব ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম. Jakat hisab & Zakat rules

zakat rules, jakat hisab, jakat er hisab, zakat on gold per vori in bangladesh, zakat on gold, how to calculate zakat, zakat rules bangla, jakat hisab, jakat er hisab, how to calculate zakat on gold, zakat rules, zakat on money, zakat calculation formula, jakat hisab, jakat er hisab, how to calculate zakat on salary, zakat er hisab bangla, zakat rules, how to calculate zakat on cash, jakat hisab, jakat er hisab, zakat for gold, zakat hisab

calculation of zakat, how much zakat on gold, zakat rules, jakat hisab, jakat er hisab, zakat hisab in bangla, how to give zakat, rules of zakat, how to pay zakat, gold zakat, jakat hisab, jakat er hisab, how much zakat to pay, zakat rules, jakat hisab, jakat er hisab, jakat hisab 2023 bangladesh, jakat hisab, jakat er hisab, jakat hisab bangla, jakat dewar niyom, zakat rules, jakat niyom, sorner jakat, jakat hisab, jakat er hisab

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি বা কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়?

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?

যাকাত কাদের উপর ফরজ এবং যাকাত কখন ফরজ হয়?

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ এবং যাকাতের নিসাব কি?

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি?

যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

যাকাত শব্দের অর্থ কি এবং যাকাত কাকে বলে?

যাকাত – উইকিপিডিয়া

জাকাতের হিসাব করবেন যেভাবে – Jugantor

যাকাতের নিসাব ও সম্পদের হিসাব

জাকাতের হিসাবপদ্ধতি – প্রথম আলো

সম্পত্তির কত অংশের ওপর যাকাত দিতে হবে? – BBC News বাংলা

যাকাত: ইসলাম ধর্মের এই অবশ্য পালনীয় নিয়মটি নিয়ে আটটি প্রশ্ন

জাকাত দেয়ার নিয়ম ও সময় – Daily Inqilab

কিভাবে জাকাতের হিসাব বের করবেন – কালের কণ্ঠ