বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, মুহাম্মদ ইকবাল কিলানী লিখিত বই রোজার মাসায়েল এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
লেখক | মুহাম্মদ ইকবাল কিলানী |
ধরন | বিষয়ভিত্তিক তাফসীর |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশক | * |
প্রকাশকাল | * |
পৃষ্ঠা | ৬৬ |
ফাইল সাইজ | ৩.৬ MB |
ফাইল টাইপ |
রোযার মাস কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাস, আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ রহমত ও বরকতসমূহের মাস, ধৈর্য্যের মাস, রিজিক বৃদ্ধির মাস, সহানুভূতি ও সহনশীলতার মাস, জান্নাতে প্রবেশ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি অর্জনের মাস। রমযান মাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য সুষ্ট চিন্তাধারা, জিকির, তাসবীহ-তাহলীল, তেলাওয়াত, নফল ইবাদত সমূহ, ছদকা-খয়রাত ইত্যাদি ইবাদত আদায়ের আন্তর্জাতিক মওসুম। যাতে প্রত্যেক মুসলমান নিজ নিজ ঈমান ও তাকওয়া মতে উপকৃত হয়ে হৃদয়ের প্রশান্তি ও চোখের শীতলতা অর্জন করে থাকে।
রোজার মাসায়েল pdf
ইবাদতের এই আন্তর্জাতিক বসন্তকালের সঠিক দৃশ্য যদি কেউ দেখতে চায় তাহলে এই পবিত্র মাসের বরকতপূর্ণ রাঙ দিনে বায়তুল্লাহ শরীফে গিয়ে দেখতে পারে। যেখানে দিনে জিকিরের মাহফিল, তেলাওয়াতে কোরআনের মজলিস, মাসায়েল ও ইসলামী বিধি-বিধান বর্ণনার হালকা, তাওয়াফকারীদের আশেকী ভিড় এবং রাত্রে কিয়ামুল্লায়লের হৃদয়স্পর্শী ও ঈমান বৃদ্ধিকর দৃশ্য পাপীর চেয়ে পাপীর হৃদয়েও ইবাদতের আগ্রহ সৃষ্টি করে। রমযানুল মোবারকের শেষ দশ তারিখে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের হেরম শরীফে উপস্থিতিতে সৌন্দর্য্য আরো বেড়ে যায়।
একটু ভেবে দেখুন ‘মাতাফ’ (অর্থাৎ আল্লাহর ঘরের চতুর্পার্শ্বে তাওয়াফ করার জায়গা) এর কিছু অংশ বাদ দিয়ে বাকী সম্পূর্ণ মাতাফ, মসজিদুল হারামের দৈর্ঘ্য প্রস্থের বিশাল দেউড়ী, প্রথম তালা এবং তার উপরের ছাদ ইত্যাদি সব জায়গা লোকে ভরে গেছে কোথাও তিল পরিমাণ জায়গাও খালী নেই। অর্ধ রাতের নিরব নিস্তব্ধ মুহূর্ত, চোখের সামনে কালো রেশমী গেলাফে ঢাকা আল্লাহর ঘর, উপরে খোলা আসমান এবং আকাশের অন্তিম প্রশস্ততা, প্রথম আসমানে আল্লাহপাকের উপস্থিত হওয়ার ভাবনা, আল্লাহর নূর এবং তাজাপ্পীর এই হৃদয়স্পর্শী পরিবেশে যখন ইমামে হেরম তেলাওয়াত করেন মনে হয় যেন এক্ষণি কোরআন অবতীর্ণ হইতেছে। ইমামে কাবার হৃদয় নিংড়ানো কণ্ঠ শুনলে মনে হয় যেন আকাশ চিরে সোজা আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে।
“হে আমাদের প্রভু! আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিওনা, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপমোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের মাওলা। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।”
রোজার মাসায়েল pdf download
“হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রাসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে তুমি অপমাণিত করোনা। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ কর না।”
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার এতটুকু ভয় দাও, যার দ্বারা তুমি আমাদের মধ্যে ও আমাদের গুনাহের মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়ে যাও।”
খতমে কোরআনের সময় বিশেষ দোয়ার জন্য যখন হেরম শরীফের ইমাম আল্লাহর দরবারে হাত তুলেন তখন সম্পূর্ণ হেরম মানুষের কান্নাকাটি ও আহাজারী এবং অশ্রুজলে ভরে যায়। ইমামে হেরমের অনুনয় বিনয়পূর্ণ, অশ্রুজলে ভেজা কণ্ঠে থেমে থেমে বলতে শুনা যায়-
“হে আল্লাহ! আমাদের রব! আমাদেরকে খালী হাতে ফিরাইওনা।”
অতঃপর সেই আত্মভোলা পরিবেশে নিজের জন্য, নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য, মুজাহেদীনে ইসলামের জন্য, মুসলিম বিশ্বের শাসকবর্গের জন্য, যুবকদের জন্য, ইসলামের সারবুলন্দির জন্য, জীবিত-মৃত সকল মুসলমানদের মাগফিরাতের জন্য অনেক অনেক দোয়া করা হয়। মন চায় যেন এই অমূল্য ঘটিকা এবং বরকতপূর্ণ মুহুর্ত আরো দীর্ঘ হোক। কে জানে কোন সৌভাগ্যবানের নছীবে এই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলো দ্বিতীয় বার আসবে?
দিল সাক্ষ্য প্রদান করে যে, অনন্ত দয়ালু ও অসীম মেহেরবান আল্লাহ নিজের দুর্বল, মুখাপেক্ষী ও গরীব বান্দাদেরকে দেখতেছেন অতি মহাব্বত ও মায়া দয়ার দৃষ্টিতে, সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টির মধ্যে নেই কোন পর্দা, খালেক কখনো তার মাখলুকের হাত খালী ফেরত দিবে না। ইবাদত-সাধনার এই আগ্রহ ও অনুরাগ এবং ঈমান-একীনের এই ভঙ্গিসমূহ ইবাদতের এই বসন্তকালের সাথে সম্পৃক্ত। ইবাদতের এসকল গুরুত্বের আসল উদ্দেশ্য কি? তা আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার” (আল বাকারা। ১৮৩)।
রোজার মাসায়েল pdf free download
রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেছেন-“রোযা গুনাহসমূহ থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ। রোযাদার কোন অশ্লীল কথাবার্তা বলবেনা, কোন অনর্থক কাজ করবে না। যদি কেউ তাকে গালী দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া- বিবাদ করে তখন সে বলবে আমি রোযাদার।” (বুখারী শরীফ)
নিঃসন্দেহে পুণ্য অর্জন বড় ছাওয়াবের কাজ, কিন্তু তার সাথে সাথে পাপ থেকে বাঁচা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। কারণ মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে আছে-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাহাবায়ে কেরাম (রজিঃ)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা তোমরা জান কি মুফলিস তথা মিসকীন কাকে বলা হয়? ছাহাবায়ে কেরাম (রাজিঃ) আরজ করলেন, ‘যার হাতে দিনার- দেরহাম তথা টাকা-পয়সা নেই সেই মুফলিস।’
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমার উম্মতের মধ্যে মুফলিস সেই ব্যক্তি যে রোজ হাশরে নামাজ, রোযা ও যাকাত ইত্যাদি আমলসমূহ নিয়ে আসবে, কিন্তু কাউকে গালী দিয়েছে, কারো উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে অথবা কাউকে মেরেছে ইত্যাদি। সুতরাং তার সকল নেকী মজলুমদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। যদি নেকী শেষ হয়ে যায় তাহলে মজলুমদের গুনাহ তার আমলনামায় দিয়ে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”
এ হাদীস দ্বারা একথার আন্দাজ করা দুষ্কর হয় না যে, বদী তথা পাপ ছোট হোক বা বড় হোক তা থেকে বাঁচা কত জরুরী। রমযানুল মোবারকের মাস এই দৃষ্টিকোণেও অনেক ফজিলত বহনকারী যে, এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে গুনাহসমূহ থেকে বাঁচার প্রশিক্ষণ দেয়া। এই উদ্দেশ্য অর্জনার্থে শয়তানগণকে শৃংখলিত করা হয় যেন, যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে বাঁচতে চায় তার জন্য কোন বাধা সৃষ্টি না হয়। এটা বাস্তব সত্য যে, রহমত ও বরকতের এই পবিত্র মাসে স্বল্প চেষ্টা এবং ইচ্ছাও প্রত্যেক মানুষের প্রকৃতিকে নেকীর প্রতি আগ্রহী এবং গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য উদ্বুদ্ধ করে তুলে।
রোজার মাসায়েল pdf ডাউনলোড
অতএব যে ব্যক্তি সারা মাস দিনের বেলায় খানা-পিনা ছাড়ার সাথে সাথে রাত্রে নামাজ পড়ে আল্লাহর ইবাদতের অনুভূতিকে পাকাপোক্ত করেছে, শরীরের অদমনীয় প্রবৃত্তিকে দমন করে আত্মশুদ্ধিকে আঁকড়ে ধরেছে, নিজের মধ্যে বিদ্যমান পশুত্বের চাহিদাগুলোকে দমন করে আধ্যাত্মিক শক্তিগুলোকে সতেজ করেছে, গুনাহ এবং পাপ থেকে তাওবা করে নেকী ও পুণ্যের রাস্তায় চলার দৃঢ় পণ করেছে সে ব্যক্তি রোযার উদ্দেশ্য অর্জনের সৌভাগ্য লাভ করেছে এবং পবিত্র মাসের বরকতসমূহ থেকে নিজের অংশ অর্জনে ধন্য হয়েছে।
রোযার মাসায়েল “কিতাবুস সিয়াম’ এ আমি রোযার সেই সকল মাসায়েল বর্ণনা করেছি, যা সহীহ শুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। প্রথম সংস্করণে কিছু দুর্বল হাদীস রয়ে গিয়েছিল, যে সম্পর্কে আমার কিছু বন্ধুরা আমাকে সতর্ক করেছিল। বর্তমান সংস্করণে তা বাদ দেয়া হয়েছে। এখন আল্হামদুলিল্লাহ সকল হাদীস সহীহ বা হাসান স্তরের। মাসায়েল হিসেবে প্রথম সংস্করণ অসম্পূর্ণ ছিল, বর্তমান সংস্করণে প্রয়োজনীয় মাসায়েল যোগ করা হয়েছে। জ্ঞানপ্রেমী ভাইদের পক্ষ থেকে ছোট বড় যে কোন ভুলের সংশোধনীবাণী আমরা সাদরে গ্রহণ করব এবং তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
কিতাবের শেষে রোযার ব্যাপারে কতিপয় দুর্বল ও জাল হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। এসকল হাদীস, তারগীব তথা ভাল কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তারহীব তথা গুনাহের কাজে ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারে হলেও বাস্তব কথা হল যে কাজের ফজীলত বা তারগীব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হবেনা, এরূপভাবে যে কাজের ভীতি প্রদর্শন বা তারহীব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হবেনা তা কোনদিন দ্বীনের অংশ হতে পারেনা। প্রত্যেক কাজের তারগীব এবং তারহীব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এরশাদাত রয়েছে। সুতরাং এর উপর অন্য কিছু সংযোজন করা আল্লাহতায়ালার হুকুম আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়োনা’ এর বিরোধিতা বৈ কিছু নয়। তাই যে হাদীস দুর্বল বা জাল হওয়া প্রমাণিত হয় তা কখনো বর্ণনা করা উচিত নয়।
রোজার মাসায়েল pdf বই ডাউনলোড
আমার এসকল চেষ্টার উদ্দেশ্য হল যেন, জনসাধারণের মধ্যে সরাসরি হাদীস শরীফ পড়া এবং জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। শুধু মুখে শুনা কথার উপর ভিত্তি না করে হাদীসে রাসূলকেই যেন নিজের আমলের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। সকল মুসলমানের কাছে ধর্ম শুধু তাই, যা আল্লাহ ও রাসুল বলেছেন, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন অথবা অনুমতি প্রদান করেছেন।
এই মৌলিক ভিত্তিকে সামনে রেখে আমি দ্বীনি মাসায়েলকে সহীহ শুদ্ধ হাদীসের উদ্ধৃতি সহকারে সুন্দর, সরল ও সাধারণ বোধগম্য ভাষায় প্রকাশ করার ফায়সালা করেছি। ‘কিতাবুস সিয়াম’ এর প্রথম প্রয়াস, যা ১৪০৫ হিজরী সালে (উর্দূ ভাষায়) প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে ১৪০৮ হিজরী সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ বেরুচ্ছে।
আমি আমার হাকীকি মালিকের সামনে মাথা নত যে, তিনি আমার স্বল্প জ্ঞানতা এবং সব রকমের দুর্বলতার পরেও “কিতাবুস সিয়ামের’ দ্বিতীয় সংস্করণ বের করার তৌফিক দান করেছেন। তাঁর ফজল ও ইহসান না হলে কিছুই করা সম্ভব হত না ৷
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা আমাকে একাজে সহযোগিতা করেছেন, আমি তাদের শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আল্লাহপাক এই পুস্তককে প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত সবার এবং সকল পাঠক-পাঠিকার নাজাতের উসীলা বানান। আমীন
রোজার মাসায়েল pdf – মুহাম্মদ ইকবাল কিলানী