বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আল্লামা জালালুদ্দিন মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ আল মহল্লী ও আল্লামা জালালুদ্দিন আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর আস সুয়ূতী রহঃ কর্তৃক রচিত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে জালালাইন সব খন্ড এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
তাফসীরে জালালাইন বাংলা ইসলামিয়া কুতুবখানা pdf
ইসলামিয়া কুতুবখানা কর্তৃক প্রকাশিত তাফসীরে জালালাইন এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে নামের উপর ক্লিক করুন।
পবিত্র কুরআনের তাফসীর জানার ক্ষেত্রে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী ও জালালুদ্দিন মহল্লী (র.) প্রণীত তাফসীরে জালালাইন গ্রন্থটি একটি প্রাথমিক ও পূর্ণাঙ্গ বাহন। রচনাকাল থেকেই সকল ধারার মাদরাসা ও কুরআন গবেষণা কেন্দ্রে এ মূল্যবান তাফসীরটি সমভাবে সমাদৃত। কারণ বাহ্যিক বিচারে এটি অতি সংক্ষিপ্ত তাফসীর হলেও গীর দৃষ্টিতে এটি সকল তাফসীরের সারনির্যাস।
হাজার হাজার পৃষ্ঠা ব্যাপী রচিত কোনো তাফসীর গ্রন্থের অনেক পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করে অতি কষ্টে যে তথ্যের খোঁজ পাওয়া যায়, তাফসীরে জালালাইনের আয়াতের ফাঁকে ফাঁকে স্থান পাওয়া এক দুই শব্দেই তা মিলে যায় যেন মহাসমুদ্রকে ক্ষুদ্র পেয়ালায় ভরে দেওয়া হয়েছে। একাধিক সম্ভাবনাময় বাচ্চার মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও প্রাধান্য প্রাপ্ত ব্যাখ্যাটি কোনো প্রকার অনুসন্ধান ছাড়াই অনায়াসে পাওয়া যায়। তাফসীর গ্রন্থসমূহের ব্যাপক অধ্যয়ন করলে এ সত্যটি সহজে অনুধাবন করা যাবে।
ছাত্রজীবন থেকেই তাফসীরে জালালাইনের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের খ্যাতিমান উত্তাদ, মুহাক্কিক আলেম মাওলানা আহমদ মায়মূন সাহেবের উৎসাহ-উদ্দীপনায় জালালাইনের সর্ববৃহৎ আরবী শরাহ আল্লামা সুলাইমান জামাল প্রণীত ‘হাশিয়াতুল জামাল’ মুতালার সুযোগ হয়েছিল। একটু আধটু যাই বুঝেছিলাম তাতে এ অনুভূতি হয়েছিল যে, উর্দু কামালাইন আর আরবি হাশিয়াতুল জামাল কিছুতেই একটি অপরটির বিকল্প হতে পারে না। দুটি ভিন্ন ভিন্ন বস্তু।
কিতাব ‘হল’ করতে হলে হাশিয়াতুল জামালের কোনো তুলনা হয় না। ফারাগাতের কয়েক বছর পর আল্লাহ তা’আলার মেহেরবানিতে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা দেওভোগে দরসি খেদমতের সুযোগ হয়। প্রথম বছরই আমার দায়িত্বে আসে সেই প্রিয় কিতাব তাফসীরে জালালাইনের প্রথম খণ্ড। আরবি-উর্দু শরাহ ও নানা তাফসীর গ্রন্থের সাহায্যে এক বছর যথাসম্ভব শ্রম দিয়ে পড়ালাম।
পরের বছর চিন্তায় এলো সহায়ক গ্রন্থাবলি থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তগুলো যদি সুবিন্যস্তভাবে সংকলন করে রাখা যায় তাহলে ভবিষ্যতে মুতালা করতে সহজ হবে। এ চিন্তা থেকেই প্রথমে উলূমুল কুরআন তথা কুরআন ও তাফসীর সংক্রান্ত একটি ভূমিকা তৈরি করি, যা ‘মুকাদ্দামায়ে জালালাইন’ নামে ভিন্নভাবে ছাপা হয়েছে। তারপর মূল কিতাবের ব্যাখ্যা ও তাকরীর লিখতে শুরু করি। হাশিয়াতুল জামাল, হাশিয়াতুস সাবী, কামালাইন, তাফসীরে উসমানী, তাফসীরে মাজেদী, তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন [মুফতী শফী (র.)] ও মা’আরিফুল কুরআন -(আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (র.)) ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থ ধারাবাহিক অধ্যয়নের মাধ্যমে অধ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকে অল্প বিস্তর করে লেখা চলতে থাকল।
কিছুদিন পর বাজারে এলো আরেকটি উর্দু শরাহ জামালাইন। তাও সংগ্রহ করলাম! যেহেতু কোনো একটি উর্দু শরাহ অনুবাদ করে প্রকাশ করার ইচ্ছা আমার ছিল না, তাই সবগুলো শরাহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করে যে কথা ও বিশ্লেষণগুলো যথার্থ পরিচ্ছন্ন ও ছাত্রদের জন্য উপযোগী এবং জরুরি মনে হয়েছে, সেগুলোই কেবল সযত্নে সহজে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এভাবে দীর্ঘ তিন বছরে তিলে তিলে সম্পন্ন হয় প্রথম তিন পারার ব্যাখ্যা।
এ বিষয়ে বাংলা বাজারস্থ স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া কুতুবখানার স্বত্বাধিকারী মাওলানা মোস্তফা সাহেবের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর জানতে পারলাম যে, তিনি একাধিক লেখকের যৌথ প্রয়াসে তাফসীরুল জালালাইনের বাংলা ব্যাখ্যা গ্রন্থ ছাপানোর উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে তার উদ্যোগে ঢাকাস্থ বড় কাটারা মাদরাসার সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আমিরুল ইসলাম ফরদাবাদী [দা. বা.] প্রথম পারার এবং দারুল উলূম পাটলি মাদ্রাসা, সুনামগঞ্জ -এর মুহাদ্দিস, মাওলানা হাবিবুর রহমান হবিগঞ্জী [দা. বা.] চতুর্থ পারা ও পঞ্চম পারার অর্ধাংশের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন।
এদিকে আমি প্রথম তিন পারার পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলাম। আর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রথম পাঁচ পারা একত্রে এক ভলিয়মে প্রকাশ করা! সেক্ষেত্রে আমাদের তিনজনের পাণ্ডুলিপি একত্রে মিলালে সাড়ে চার পারা হয়ে যায়! অবশিষ্ট রইল পঞ্চম পারার বাকি অর্ধাংশের কাজ! অবশেষে ইসলামিয়া কুতুবখানার স্বত্বাধিকারীর অনুরোধে পঞ্চম পারার অসমাপ্ত কাজটুকু আমাকেই সম্পন্ন করতে হয়েছে।
এরপর আমাদের তিনজনের লেখা পাণ্ডুলিপিকে ইসলামিয়া সম্পাদনা পর্ষদের সুদক্ষ সম্পাদক মণ্ডলীর কাছে অর্পণ করা হয়! তাঁরা এতে প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন ও সংশোধন করে কিতাবটিকে যথাসাধ্য সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার শেষ চেষ্টাটুকু করেছেন! এ বিষয়ে তাদের বিচক্ষণতা পূর্ণ দূরদৃষ্টি, বিজ্ঞতাসুলভ পদক্ষেপ ও সুন্দর পরামর্শের জন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ! আল্লাহ তাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন!
আশা করি কিতাবটি ছাত্র-শিক্ষক উভয়েরই যথেষ্ট উপকারে আসবে। কিতাবটিকে নিখুঁত ও নির্ভুল করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে! তথাপি তথ্যগত কোনো ভুল কারো দৃষ্টিগোচর হলে তা আমাদেরকে অবগতির বিনীত অনুরোধ রইল। পরবর্তী সংস্করণে তা শুধরে দেব ইনশাআল্লাহ!
কিতাবটি প্রকাশনার এ আনন্দঘন মুহূর্তে আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি সেই সব উস্তাদগণের কথা, যাঁদের কাছে আমি ‘তাফসীরে জালালাইন’ পড়েছি! আল্লাহ আসাতেযায়ে কেরামকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন!
আল্লাহ এ কিতাবটিকে কবুল করুন! কিতাবটির লেখক মণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও প্রকাশকসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের নাজাতের উছিলা হিসেবে কবুল করে নিন! আমিন!