এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমজান pdf – ড. রাগিব সারজানি
কেন পড়বেন ‘এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমযান প্রিয় পাঠক, নিশ্চিত করেই আপনার যাপিত জীবনে অনেকগুলো রমযান মাস গত হয়েছে। সামনে দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি ‘মাহে রমযান’। মুমিন বান্দার জীবনে তো মাহে রমযান আগমন করে পুষ্পিত বসন্তের সুবাসিত ফল্গুধারা নিয়ে, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এবং অসামান্য অর্জন ও প্রাপ্তির সুযোগ নিয়ে।
এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমজান pdf
কিন্তু কেবল যথার্থ প্রস্তুতির অভাবে অনেক সময় মাহে রমযানের প্রথম দিকের দিনগুলো অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় আমাদের মাঝে থাকে না রোযার গুরুত্ব-অনুভব, তেলাওয়াতে কোরআনের অনির্বচনীয় স্বাদ এবং কিয়ামুল লাইল ও তারাবীহ নামাযে বিনম্রতার অনুভূতি। অথচ মহিমান্বিত এ মাসের প্রতিটি ক্ষণ ও প্রতিটি ভগ্নাংশ মুমিন বান্দার জীবনে অমূল্য সম্পদ। সচেতন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য—বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের ফল্গুধারায় সিক্ত এ মাসে আমলের বিষয়ে সামান্য শিথিলতা না করা।
সাধারণ একজন ক্রীড়াবিদের কথাই চিন্তা করুন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে তার কী পরিমাণ পরিশ্রম ও সাধনা! কী কঠোর প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন। কারণ, সে বিশ্বাস করে- মূল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাইলে এবং খেলাধুলার ময়দানে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে চাইলে পূর্বপ্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। (অথচ বিশ্বাসী মুসলমান হিসেবে আমি-আপনি সকলেই জানি, ক্রীড়াবিদের খেলাধুলা পার্থিব জীবনে হয়তো সামান্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারে; কিন্তু পরকালে ধুলোমলিন হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়!)
তাহলে একজন মুসলমান যদি যথার্থ প্রস্তুতি ও নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন ছাড়াই অবতীর্ণ হয় রমযানের ময়দানে, সে কীভাবে পারবে রমযানের মহা মূল্যবান প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করতে? সময়ের প্রতিটি ভগ্নাংশকে অর্জনের মাধ্যম বানাতে? এ কারণেই আলেম-ওলামা, দাঈ ও খতীবগণসহ উম্মাহর পথপ্রদর্শক ও শ্রেষ্ঠতম কাফেলার সদস্যগণ রমযান মাসে নিজেদের আমলের মান ও পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শাবান মাস হতেই আমলের বিশেষ ধারা ও পদ্ধতি অবলম্বন করেন। শাবানে তারা বেশি বেশি রোযা রাখেন, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করেন, রাতের অধিকাংশ সময় তাহাজ্জুদ ও দোয়া-রোনাযারিতে কাটিয়ে দেন। নিঃসন্দেহে তাদের এই কর্মধারা প্রশংসনীয় ও অনুকরণযোগ্য।
এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমযান pdf
অবশ্য আমার মনে হয়, আমলী এই প্রস্তুতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে আমরা অবচেতন মনে উপেক্ষা করছি। আর তা হচ্ছে রমযানের ‘মানসিক প্রস্তুতি’। মানসিক প্রস্তুতি বলতে আমি বুঝিয়েছি— অধীর আগ্রহে এ মাসের প্রতীক্ষায় থাকা, বরকতে টইটম্বুর দিবস-রজনীগুলোর প্রত্যাশায় বাকি থাকা প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা গুনতে থাকা; আর কত দিন! কত ঘণ্টা, কত মিনিট, কত সেকেন্ড! মনে দুরু দুরু আশঙ্কা—না জানি ‘আজাল’ এর ডাক এসে যায়! কপালে না জোটে রমযান-সান্নিধ্য!
আজাল মানে মৃত্যুর সুনির্ধারিত সময়। ইসলাম আমাদেরকে এ শিক্ষাই প্রদান করে যে, মানবজীবনের হায়াত ও মউত, আগমন ও প্রস্থান প্রতিটি বিষয় আল্লাহ তাআলার ইলমে সুনির্ধারিত। আল্লাহ-নির্ধারিত সেই সময় যখন এসে যায়, তখনই আসে মৃত্যু, শুরু হয় মৃত্যুপরবর্তী জীবন। মানুষের জীবনে ‘অকাল’ মৃত্যু বলে কিছু নেই; আছে শুধু ‘আজাল’!
এ ধরনের আবেগ-অনুভূতি অর্জন করা সত্যিই অনেক কঠিন। বড় ভাগ্যবান তারা, যারা এর অধিকারী হয়েছেন! রমযানের পূর্বেই তারা লাভ করেন মাহে রমযানের হাকীকী লাযযাত ও প্রকৃত স্বাদ-অনুভব! কেবল অনুভবের আনন্দ নয়; তারাই পারেন মাহে রমযানের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে, রমযানকে প্রাপ্তি ও অর্জনের মাধ্যম বানাতে। তবে প্রিয় পাঠক! আমি ভেবে দেখেছি যে, এই পরম দুর্লভ মানসিক অনুভূতি অর্জনের পথ একেবারে সহজ! একান্ত মনে ভাবতে শিখুন, আগত রমযানই এই নশ্বর ধরণীতে আপনার জীবনের শেষ রমযান! তারপর দেখুন, কী প্রবল বাসনা রমযান প্রাপ্তির! কী অবিরাম প্রচেষ্টা একেকটি মুহূর্তকে সদ্ব্যবহারের!
কীভাবে শিখবেন এই ভাবনা? কীভাবে অর্জন করবেন এই আবেগ-অনুভূতি?
তা জানতেই তো আপনি হাতে তুলে নিয়েছেন ‘এটাই হয়তো জীবনের শেষ রমযান’!
তাহলে আসুন, শুরু করি বিসমিল্লাহ বলে!
– ড. রাগিব সারজানি