ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সহীহ হাদিসের আলোকে

ইমাম-মাহদীর-আবির্ভাব

ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সহীহ হাদিসের আলোকে

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকে আলোচনা করব ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সম্পর্কে সহীহ হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে সেই সম্পর্কে। এবং হাদিস গুলি থেকে কি কি বিষয় স্পষ্ট হয় সে সম্পর্কে।

আবূ সাঈদ আল খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরে নতুন কোন দুর্ঘটনা ঘটবে। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে মাহ্দীর আগমন ঘটবে, সে পাঁচ অথবা সাত অথবা নয় বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকবে (যাইদ সন্দেহে পতিত হয়েছে যে, উর্ধ্বতন বর্ণনাকারী কোন সংখ্যাটি বলেছেন)। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, এই সংখ্যায় কি বুঝায়? তিনি বললেনঃ বছর। মানুষ তার নিকট এসে বলবে, হে মাহদী! আমাকে কিছু দান করুন, আমাকে কিছু দান করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর সে তার কাপড় বা থলেতে যেটুকু পরিমাণ বহন করে নিতে পারবে তিনি তাকে সেটুকু পরিমাণ দান করবেন। 

জামে আত তিরমিজি ২২৩২, ইবনু মাজাহ ৪০৮৩।

হাদিসটি হাসান

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমার বংশ হতে মাহ্দীর আবির্ভাব হবে, সে হবে প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট। তখনকার দুনিয়া যেরূপে যুলুমে ভরে যাবে, সে তার বিপরীতে তা ইনসাফে ভরে দিবে, আর সে সাত বছর রাজত্ব করবে।

সুনানে আবু দাউদ ৪২৮৫।

হাদিসটি হাসান

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মাহদী আমার উম্মাত থেকেই আবির্ভুত হবে। তিনি কমপক্ষে সাত বছর অন্যথায় নয় বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। তার যুগে আমার উম্মাত অযাচিত প্রাচুর্যের অধিকারী হবে ইতোপূর্বে কখনো তদ্রুপ হয়নি। পৃথিবী তার সর্ব প্রকার খাদ্যসম্ভার পর্যাপ্ত উৎপন্ন করবে এবং কিছুই প্রতিরোধ করে রাখবে না। সম্পদের স্তুপ গড়ে উঠবে। লোকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে মাহদী, আমাকে দান করুন। তিনি বলবেন, তোমার যতো প্রয়োজন নিয়ে যাও।

সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৮৩, তিরমিযী ২২৩২, আবূ দাউদ ৪২৮৫, রাওদুন নাদীর ৬৪৭।

হাদিসটি হাসান

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মাহদী আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে; আল্লাহ তাআলা তাকে একরাতে খিলাফতের যোগ্য করবেন।

সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৮৫, আহমাদ ৬৪৬, সহীহাহ ২৩৭১, রাওদুন নাদীর ২/৫৩।

হাদিসটি হাসান

উম্মু সালামাহ রাঃ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ মাহ্দী আমার পরিজন হতে ফাতিমার সন্তানদের বংশ হতে আবির্ভূত হবে।

সুনানে আবু দাউদ ৪২৮৪।

হাদিসটি সহিহ

ইমাম মাহদী সম্পর্কে যে পাঁচটি হাদিস উল্লেখ করলাম তা থেকে আটটি বিষয় আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১. উম্মাতের মাঝে মাহদীর আগমন ঘটবে।

২. তিনি হবেন প্রশস্ত ললাট ও উন্নত নাকবিশিষ্ট।

৩. তিনি রাসুল সঃ এর পরিজন হতে ফাতিমার সন্তানদের বংশ হতে আবির্ভূত হবেন।

৪. দুনিয়া যুলুমে ভরে যাবে।

৫. আল্লাহ তাআলা তাকে একরাতে খিলাফতের যোগ্য করবেন।

৬. তিনি তার বিপরীতে তা ইনসাফে ভরে দিবেন।

৭. তার যুগে উম্মাত অযাচিত প্রাচুর্যের অধিকারী হবে ইতোপূর্বে কখনও তদ্রুপ হয়নি; পৃথিবী তার সর্ব প্রকার খাদ্য সম্ভার পর্যাপ্ত উৎপন্ন করবে এবং কিছুই প্রতিরোধ করে রাখবে না; সম্পদের স্তুপ গড়ে উঠবে; লোকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে মাহদী, আমাকে দান করুন; তিনি বলবেন, তোমার যতো প্রয়োজন নিয়ে যাও।

৮. তিনি ৫ বা ৭ বা ৯ বছর রাজত্ব করবেন। 

ইমাম মাহদী কবে আসবেন এই মর্মে স্পষ্ট কিছু কুরআন বা হাদিসে বর্ণিত হয়নি; তবে হাদিস থেকে এতটুকু বুঝা যাচ্ছে যে, যখন পৃথিবী যুলুমে ভরে যাবে তখন ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে।

আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পৃথিবী যুলুম অত্যাচারে, ফিতনা ফাসাদে ভরে গেছে। আর মুসলিমদের খিলাফাত ধ্বংস হয়ে গেছে। মুসলিমরা আজ  নেতৃত্বহীন। তাই আমরা মুসলিমরা আজ নিপিড়ীত, নিষ্পেশিত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত। মুসলিমদের আমীর বা খলীফা না থাকার কারনে আমরা মুসলিমরা আজ দলে দলে বিভক্ত। এই পরিস্থিতিতে আমরা অনুভব করছি আসলেই আমাদের মাঝে ইমাম মাহদীর আগমনটা খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি যত খারাপ ততটা খারাপেই ইমাম মাহদীর আগমন  ঘটবে কি না তা স্পষ্ট নয়। হতে পারে এর চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতি আসার পরে ইমাম মাহদীর আগমন  ঘটবে।

কিয়ামতের আলামত দুই প্রকার। একটি ছোট আলামত আর অপরটি বড় আলামত। ছোট আলামতগুলি আগে প্রকাশিত হবে আর বড় আলামতগুলি পরে প্রকাশিত হবে। ছোট আলামতগুলির মধ্যে ইমাম মাহদীর আগমন  সবচেয়ে শেষে ঘটবে আর  বাকিগুলি আগে ঘটবে। বাকিগুলির মধ্যে প্রায়ই ঘটে গেছে কতক বাকি আছে। হতে পারে বাকিগুলি খুব তাড়াতাড়িই ঘটে যাবে। আবার অনেক সময়ও লাগতে পারে । তাই ইমাম মাহদীর আগমন  ঘটতে অনেক দেরিও হতে পারে।

আমাদের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আমারা বলতে পারি যে, খুব তাড়াতাড়িই ইমাম মাহদীর আগমন  ঘটতে পারে।  ইমাম মাহদীর আগমন তো যেকোন সময়ই ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা জানি না সেটা কখন। সেটা আল্লাহই ভাল জানেন।

সুতরাং দিন তারিখ বা সাল নির্ধারণ করা আমাদের কাজ নয়। আমরা বলতে পারি না যে, এই সময়ে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে। যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন তখনই তিনি মাহদীকে প্রেরণ করবেন। আর সেই বিষয়টা কেবলমাত্র তিনিই জানেন। ইমাম মাহদী কবে আসবেন এটা মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হল, তিনি আত্মপ্রকাশ করলে আমাদেরকে তার আনুগত্য করতে হবে। তিনি আসবেন এই অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। তার আগমনের পূর্বে আমাদের কতক দায়িত্ব রয়েছে। সেগুলি বুঝে তারপর দায়িত্বগুলি পালন করতে হবে। ইমাম মাহদীর আগমনের পূর্বে আমাদের কি দায়িত্ব রয়েছে সেগুলি নিয়ে অন্য আরেক সময় আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ, আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন, আল্লাহুম্মা আমীন।

Tags: ইমাম মাহদী আগমনের আলামত, ইমাম মাহদী (আ )-এর আত্মপ্রকাশ, ইমাম মাহদী কে, ইমাম মাহদী দেখতে কেমন হবে, ইমাম মাহদী কে চেনার উপায়, ইমাম মাহদী আসার আলামত, ইমাম মাহদী কবে আসবেন, ইমাম মাহদীর আগমন, ইমাম মাহদীর আগমনের সাল, ইমাম মাহদীর পরিচয়, ইমাম মাহদীর আগমন সন্নিকটে, ইমাম মাহদীর আগমন সম্পর্কে হাদিস, ইমাম মাহদীর আগমন কোথায় হবে, ইমাম মাহদীর আগমনের আলামত, ইমাম মাহদীর আগমনের লক্ষণ,ইমাম মাহদীর আবির্ভাব, ইমাম মাহদির আগমন, ইমাম মাহদি আসার আলামত,ইমাম মাহদির আগমনের আলামত, ইমাম মাহদি কে,ইমাম মাহদি কোন বংশের হবেন, ইমাম মাহদি কবে আসবে, ইমাম মাহদির পরিচয়, ইমাম মাহাদীর আগমন, ইমাম মাহাদী কে, ইমাম মাহাদী আসার আলামত, ইমাম মাহাদী আগমনের আলামত, ইমাম মাহাদী সম্পর্কিত হাদিস, ইমাম মাহাদী কোন দেশে আসবে, imam mahdi bangla, imam mahdi agomon, imam mahdi hadith, mahdi meaning, mahdi name meaning in bengali, 

youtube video