যাকাত প্রদানের খাত কয়টি বা কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়?

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি, যাকাতের খাত কয়টি, যাকাতের খাতগুলো কি কি, যাকাতের খাত, যাকাত ব্যয়ের খাত কয়টি, যাকাত আদায়ের খাত কয়টি

যাকাত-প্রদানের-খাত-কয়টি-বা-কয়-শ্রেণীর-লোককে-যাকাত-দেওয়া-যায়

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি বা কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যাকাত প্রদানের খাত কয়টি বা কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়।

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআন মাজীদে যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ছাদাক্বা (যাকাত) হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটা আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (তাওবা ৯/৬০)।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। নিচে প্রত্যেকটি খাত আলাদাভাবে আলোচনা করা হল-

(১) ফকির

নিঃসম্বল ভিক্ষা প্রার্থী। যাকে আল্লাহ তাআলা যাকাতের ৮টি খাতের প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। অতএব ফকির যাকাতের মাল পাওয়ার হকদার। আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা যদি প্রকাশ্যে সাদাক্বাহ প্রদান কর তবে উহা ভাল; আর যদি তা গোপনে কর এবং দরিদ্রদেরকে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভালো। (বাক্বারাহ ২/২৭১)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বা (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর তাদের দরিদ্রের মাঝে বন্টন হবে।

বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ বুখারী ২/৭৫ পৃঃ; মুসলিম হা/১৯।

(২) মিসকিন

যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে দ্বিতীয় খাত হিসাবে আল্লাহ তা’আলা মিসকীনকে উল্লেখ করেছেন। আর মিসকীন হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহ্যিকভাবে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়। 

হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এমন ব্যক্তি মিসকীন নয় যে এক মুঠো-দু’মুঠো খাবারের জন্য বা দুই একটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং তাকে তা দেওয়া হলে ফিরে আসে। বরং প্রকৃত মিসকীন হল সেই ব্যক্তি যার প্রয়োজন পূরণ করার মত যথেষ্ট সঙ্গতী নেই। অথচ তাকে চেনাও যায় না যাতে লোকে তাকে ছাদাক্বা করতে পারে এবং সে নিজেও মানুষের নিকট কিছু চায় না।

বুখারী হা/১৪৭৯, ৪৫৩৯; মুসলিম হা/১০৩৯; মিশকাত হা/১৮২৮।

(৩) যাকাত আদায়কারী ও হেফাজতকারী

আল্লাহ তা’আলা যাকাত প্রদানের তৃতীয় খাত হিসাবে ঐ ব্যক্তিকে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি যাকাত আদায়, হেফাজত ও বন্টন এর কাজে নিয়োজিত। অতএব উক্ত ব্যক্তি সম্পদশালী হলেও সে চাইলে যাকাতের অংশ গ্রহণ করতে পারবে।

শারহুল মুমতে ৬/২২৫।

হাদীসে এসেছে, ইবনে সায়েদী আল-মালেকী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত করলেন। যখন আমি কাজ শেষ করলাম এবং তাঁর কাছে পৌছিয়ে দিলাম তখন তিনি নির্দেশ দিলেন আমাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। আমি বললাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি ইহা করেছি। সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট থেকেই এর প্রতিদান নেব। তিনি বললেন, আমি যা দিচ্ছি তা নিয়ে নাও। কেননা আমিও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময় যাকাত আদায়কারীর কাজ করেছি। তখন তিনিও আমাকে পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন আমিও তোমার মত এরূপ কথা বলেছিলাম। রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে কিছু দেওয়া হয়, তখন তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি তা নিজে খাও অথবা ছাদাক্বা কর।

মুসলিম হা/১০৪৫; মিশকাত হা/১৮৫৪।

অন্য হাদীসে এসেছে, আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদে রত ব্যক্তি। (২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে যে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।

আবু দাউদ হা/১৬৩৫; মিশকাত হা/১৮৩৩; আলবানী, সনদ সহীহ; সহীহুল জামে।

(৪) যে ব্যক্তিকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে হয়

ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে অথবা কোন অনিষ্ট বা কাফেরের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে কোন অমুসলিমকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।

শারহুল মুমতে ৬/২২৬।

হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) নবী (ছাঃ)- এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা ইবনে হানযালী যিনি মাজায়েশী গোত্রের লোক ছিলেন। (২) উয়াইনা ইবনে বাদার ফাজারী। (৩) যায়েদ ত্বায়ী, যিনি বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। (৪) আলকামা ইবনে উলাছাহ আমেরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলতে লাগলেন, নবী (ছাঃ) নজদ বাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, আমি তো তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দুটি কোটরাগত, গন্ডদ্বয় ঝুলে পড়া, কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন।

তখন তিনি বললেন, আমিই যদি নাফরমানি করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন, আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ বলে ধারণা করছি। কিন্তু নবী (ছাঃ) তাকে নিষেধ করলেন। অতঃপর যখন অভিযোগকারী লোকটি ফিরে গেল, তখন নবী (ছাঃ) বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন হতে তারা এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমনি ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম। 

বুখারী হা/৩৩৪৪, বঙ্গানুবাদ বুখারী, (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ৩/৩৮০ পৃঃ; মুসলিম হা/১০৬৪।

(৫) দাস (মুক্তির জন্য)

যারা লিখিত কোন চুক্তির বিনিময়ে দাসে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে মালিকের নিকট থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়। অনুরূপভাবে বর্তমানে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে সে ব্যক্তিও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

শারহুল মুমতে ৬/২৩০।

হাদীসে এসেছে, বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, প্রশ্ন তো তুমি অল্প কথায় বলে ফেললে; কিন্তু তুমি অত্যন্ত ব্যাপক বিষয় জানতে চেয়েছ। তুমি একটি প্রাণী আযাদ করে দাও এবং একটি দাস মুক্ত করে দাও। লোকটি বলল, এ উভয়টি কি একই কাজ নয়? তিনি বললেন, না (উভয়টি এক নয়)। কেননা একটি প্রাণী আযাদ করার মানে হল, তুমি একাকী গোটা প্রাণীকে মুক্ত করে দিবে। আর একটি দাস মুক্ত করার অর্থ হল, তার মুক্তির জন্য কিছু মূল্য প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করবে।

এছাড়া জান্নাতে প্রবেশকারী কাজের মধ্যে অন্যতম হল, প্রচুর দুধ প্রদানকারী জানোয়ার দান করা এবং এমন নিকটতম আত্মীয়ের প্রতি অনুগ্রহ করা, যে তোমার উপর অত্যাচারী। যদি তুমি এ সমস্ত কাজ করতে সক্ষম না হও, ক্ষুদার্তকে খাদ্য দান কর এবং পিপাসিতকে পানি পান করাও। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর। আর যদি তোমার দ্বারা এ কাজ করাও সম্ভব না হয়, তবে কল্যাণকর কথা ব্যতীত অন্য কথা থেকে তোমার জিহবাকে সংযত রাখ।

মুসনাদে আহমাদ হা/১৮৬৭০; আদাবুল মুফরাদ হা/৬৯; মিশকাত হা/৩৩৮৪, বঙ্গানুবাদ মিশকাত (এমদাদিয়া) ৭/৩ পৃঃ; আলবানী, সনদ ছহীহ।

উল্লিখিত হাদিসে দাসমুক্তিকে জান্নাত লাভের বিশেষ মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর দাস মুক্তির জন্য যেহেতু প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, সেহেতু আল্লাহ তা’আলা ইসলামী অর্থনীতির প্রধান উৎস যাকাত বন্টনের খাত সমূহের মধ্যে দাসমুক্তিকে উল্লেখ করেছেন।

(৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার ঋণ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাত প্রদান করা যাবে। 

হাদিসে এসেছে, কাবীছা ইবনু মাখারেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি কিছু ঋণের যিম্মাদার হয়েছিলাম। অতএব এ ব্যাপারে কিছু চাওয়ার জন্য আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, (মদীনায় অবস্থান কর যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নিকট যাকাতের মাল না আসে। তখন আমি তা হতে তোমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দান করব।

অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, মনে রেখো হে কাবীছা! তিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল নয়। (১) যে ব্যক্তি কোন ঋণের যিম্মাদার হয়েছে তার জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না সে তা পরিশোধ করে। তারপর তা বন্ধ করে দিবে। (২) যে ব্যক্তি কোন বালা মুছীবতে আক্রান্ত হয়েছে যাতে তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে তার জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূর্ণ করার মত অথবা তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার মত কোন কিছু লাভ করে এবং (৩) যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়েছে এমনকি তার প্রতিবেশীদের মধ্যে জ্ঞান- বুদ্ধি সম্পন্ন তিন জন ব্যক্তি তার দারিদ্র্যের ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করেছে তার জন্য (যাকাতের মাল থেকে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না সে তার জীবিকা নির্বাহের মত অথবা তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার মত কিছু লাভ করে। হে কাবীছা! এরা ব্যতীত যারা (যাকাতের মাল থেকে) চায় তারা হারাম খাচ্ছে।

মুসলিম হা/১০৪৪; মিশকাত হা/১৮৩৭।

(৭) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে রত ব্যক্তি

আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে যে কোন ধরনের প্রচেষ্টা ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ বা আল্লাহর রাস্তার অন্তর্ভুক্ত। জিহাদ, দ্বীনি ইলম অর্জনের যাবতীয় পথ এবং দ্বীন প্রচারের যাবতীয় মাধ্যম এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। 

হাদীসে এসেছে, আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদে রত ব্যক্তি। (২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত থেকে যে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।

আবু দাউদ হা/১৬৩৫; মিশকাত হা/১৮৩৩; আলবানী, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে’ হা/৭২৫০।

(৮) মুসাফির

সফরে গিয়ে যার পাথেয় শেষ হয়ে গেছে সে ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থ প্রদান করে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে যাকাতের অর্থ দান করা যাবে। এক্ষেত্রে উক্ত মুসাফির সম্পদশালী হলেও তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।

বিভিন্ন ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানে যাকাত দেওয়ার বিধান

শক্তিশালী ও কর্মক্ষম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়ার বিধান

শক্তিশালী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির জন্য যাকাতের মাল ভক্ষণ করা বৈধ নয়। 

হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত হালাল নয় এবং সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্যও হালাল নয়।

তিরমিযী হা/৬৫২; নাসাঈ হা/২৫৯৭; ইবনু মাজাহ হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/১৮৩০; আলবানী, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে’ হা/৭২৫১।

অন্য হাদীসে এসেছে, আদী ইবনে খিয়ার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, তারা বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন তিনি সদকা (যাকাত) বণ্টন করছিলেন। তারা উভয়ে তাঁর নিকট (যাকাত) থেকে কিছু চাইলেন। তিনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং নীচু করলেন। তিনি দেখলেন, আমরা দু’জনই স্বাস্থবান। তিনি বললেন, যদি তোমরা চাও আমি তোমাদেরকে দিব। তবে তাতে বিত্তশালীর এবং কোন শক্তিশালী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির অংশ নেই।

আবু দাউদ হা/১৬৩৩; নাসাঈ হা/২৫৯৮; মিশকাত হা/১৮৩২; আলবানী, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে’ হা/১৪১৯।

পিতা-মাতাকে যাকাত দেওয়ার বিধান

পিতা-মাতাকে যাকাতের মাল দেওয়া জায়েয নয়। কেননা সন্তান-সন্ততি ও তার সম্পদ মূলত পিতা-মাতারই। এছাড়া সন্তানের উপর একান্ত কর্তব্য হল, তার সম্পদ থেকে পিতা-মাতার ভরণপোষণ বহন করা। 

হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার সম্পদ ও সন্তান রয়েছে। আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বললেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার জন্য। তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের উত্তম উপার্জন। সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর।

আবু দাউদ হা/৩৫৩০; মিশকাত হা/৩৩৫৪; আলবানী, সনদ সহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪১৪।

নিজের স্বামীকে যাকাত দেওয়ার বিধান

স্ত্রী যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। আর তার স্বামী যদি দরিদ্র হয় তবুও স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে না তাহলে সে তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে। তবে তা থেকে স্ত্রী নিজে এবং তার নিজের সন্তান ভোগ করতে পারবে না। স্বামী নিজে এবং যদি তার অন্য স্ত্রী ও সেই স্ত্রীর সন্তান থাকে তবে তারা সেটা ভোগ করতে পারবে।

হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যয়নব (রাঃ) বলেন, আমি মসজিদে নববীতে ছিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখলাম, তিনি বললেন, তোমরা ছাদাক্বা কর যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়। আর যয়নব (তাঁর স্বামী) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তার কোলের এতিমদের জন্য ব্যয় করতেন (যাকাত দিতেন)। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-কে বললেন, রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন, আমি যদি যাকাতের মাল আপনার জন্য এবং আমার কোলের এতিমদের জন্য ব্যয় করি তাহলে যথেষ্ট হবে কি? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, বরং তুমি নিজেই জিজ্ঞেস কর।

তখন আমি নবী (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। দেখলাম আরেকজন আনসারী মহিলা দরজায় অপেক্ষা করছে, সেও আমার ন্যায় প্রয়োজনবোধে এসেছে। এমতাবস্থায় আমাদের নিকট দিয়ে বেলাল (রাঃ) অতিক্রম করছিলেন। আমরা বললাম, নবী (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন, আমি যদি আমার স্বামী এবং আমার কোলের এতিমদের যাকাত দেই তাহলে কি আমার যাকাত আদায় হবে? আর তাকে (রাসূল সঃ) আমাদের বিষয়ে বল না। বেলাল (রাঃ) গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি বললেন, তারা কারা? বেলাল (রাঃ) বললেন, যয়নব। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কোন যয়নব? বেলাল (রাঃ) বললেন, তিনি হলেন, ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর স্ত্রী। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তার জন্য দু’টি বিনিময় হবে। ছাদাক্বার বিনিময় এবং আত্মীয়তা রক্ষার বিনিময়।

বুখারী হা/১৪৬৬।

নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে যাকাত দেওয়ার বিধান

নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে যাকাতের সম্পদ দেওয়া যাবে না। 

হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাঃ) ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিলেন। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার নিকট একটা দীনার রয়েছে। তিনি বললেন, তা তোমার নিজের জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য একটি আছে। তিনি বললেন, তা তোমার সন্তানের জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য একটা আছে। তিনি বললেন, তা তোমার স্বামী অথবা স্ত্রীর জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য আরো একটি আছে। তিনি বললেন, তা তোমার খাদেমের জন্য ব্যয় কর। লোকটি বলল, আমার নিকট অন্য একটি আছে। তিনি বললেন, সে ব্যাপারে তুমি ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও।

আবু দাউদ হা/১৬৯১; নাসাঈ হা/২৫৩৫; মিশকাত হা/১৯৪০; আলবানী, সনদ হাসান; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৯৫।

উল্লিখিত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, নিজের স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর এবং পিতা হিসেবে সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্বও তার উপর। অতএব নিজের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না।

অমুসলিমদেরকে যাকাত দেওয়ার বিধান

যাকাতের মাল কোন অমুসলিমকে দেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা শুধুমাত্র ধনী মুসলিমদের উপর যাকাত ফরয করা হয়েছে এবং গরীব মুসলিমদের মধ্যে তা বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের সম্পদে ছাদাক্বা (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর তাদের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন হবে।

বুখারী হা/১৩৯৫, ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘যাকাত ওয়াজিব হওয়া’ অনুচ্ছেদ, বঙ্গানুবাদ বুখারী ২/৭৫ পৃঃ; মুসলিম হা/১৯।

যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ ও গোরস্থান তৈরীর বিধান

যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ ও গোরস্থান তৈরী করা বৈধ নয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা যাকাত বিতরণের খাতগুলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, যাদের অন্তর (ইসলামের দিকে) আকর্ষণ করা প্রয়োজন, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থ, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান (তাওবা ৯/৬০)। মসজিদ ও গোরস্থান উক্ত খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নিকটাত্মীয়কে যাকাত দেওয়ার বিধান

কোন নিকটাত্মীয় প্রকৃতপক্ষে যাকাতের হকদার হলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। এমনকি এতে দ্বিগুণ সওয়াব অর্জিত হবে।

হাদীসে এসেছে, সালমান ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসকীনকে ছাদাক্বা দিলে একটা ছাদাক্বা হয়। কিন্তু সে যদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হয়, তবে নেকী দ্বিগুণ হয়। (১) ছাদাক্বার নেকী (২) আত্মীয়তা রক্ষার নেকি’।

মুসনাদে আহমাদ হা/১৬২৭৭; তিরমিযী হা/৬৫৮; মিশকাত হা/১৯৩৯; আলবানী, সনদ ছহীহ।

নির্ধারিত ৮টি খাতে যাকাত বন্টনের পদ্ধতি

আল্লাহ তা’আলা সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত প্রদানের যে ৮টি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তার মধ্যেই যাকাত বণ্টন সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এর বাইরে যাকাত প্রদান করা সিদ্ধ নয়। তবে যাকাতকে সমান ৮ ভাগে ভাগ করতে হবে না। বরং ৮টি খাতের মধ্যে যে খাতগুলো পাওয়া যাবে সেগুলোর মধ্যে প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে কম-বেশী করে যাকাত বণ্টন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে কোন একটি খাতে সম্পূর্ণ যাকাত প্রদান করলেও তা আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, স্বর্ণ, রৌপ্য, চলমান মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত চলমান মুদ্রা অর্থাৎ টাকা দিয়ে দিতে হবে কোন মাল দিয়ে নয়।

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি বা কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়?

যাকাত প্রদানের খাত কয়টি, যাকাতের খাত কয়টি, যাকাতের খাতগুলো কি কি, যাকাতের খাত, যাকাত ব্যয়ের খাত কয়টি, যাকাত আদায়ের খাত কয়টি, যাকাত প্রদানের খাত কয়টি, যাকাতের খাত কয়টি, যাকাতের খাতগুলো কি কি, স্ত্রী কি স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে, কয় শ্রেণীর লোককে যাকাত দেওয়া যায়, যাকাতের মাসারিফ কয়টি, যাকাত প্রদানের খাত কয়টি, যাকাতের খাত কয়টি, যাকাতের খাতগুলো কি কি, যাকাত বন্টনের খাত কয়টি, কয় শ্রেণীর মানুষকে যাকাত দেওয়া যায়, যাকাত প্রদানের খাত কয়টি, যাকাতের খাত কয়টি, যাকাতের খাতগুলো কি কি, যাকাত বিতরণের খাত কয়টি, জাকাতের খাত, জাকাতের হকদার কারা, জাকাতের খাতসমূহ, যাকাত প্রদানের খাত কয়টি, যাকাতের খাত কয়টি, যাকাতের খাতগুলো কি কি, জাকাত কাদের দেয়া যায়

who is eligible for zakat, who are eligible for zakat, zakat eligibility, who is not eligible for zakat, who can receive zakat

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?

যাকাত কাদের উপর ফরজ এবং যাকাত কখন ফরজ হয়?

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ এবং যাকাতের নিসাব কি?

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি?

যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

যাকাত শব্দের অর্থ কি এবং যাকাত কাকে বলে?

যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ – ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

জাকাত প্রদানের খাত কয়টি ও কী কী? – Dhaka Post

যাকাত – উইকিপিডিয়া