বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে নিফাক শব্দের অর্থ কি, মুনাফিকের সংজ্ঞা কি এবং মুনাফিকের আলামত।
সূচিপত্র
Toggleনিফাক শব্দের অর্থ কি
নিফাক আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল কপটতা, দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা। পারিভাষিক অর্থে যখন অন্তরের কুফুরকে গোপন করে ইসলাম পালন করা হয় তখন তাকে বলে নিফাক। সহজ ভাষায় যখন শুধু অন্তরের কুফুর বিদ্যমান থাকে প্রকাশ্য কুফুর বিদ্যমান থাকে না তখন তাকে বলে নিফাক। আবার এভাবে বলা যায় যে, ঈমানবিহীন ইসলাম পালন করার নামই হচ্ছে নিফাক। ঈমান এবং ইসলাম কি জিনিস আমরা যদি তা ভালভাবে বুঝতে পারি তবেই নিফাক সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে পারব।
ঈমান কি
তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমান। ঈমান অন্তরের বিষয়। এটি অন্তরে অবস্থান করে।
ইসলাম কি
ইসলাম হল এক আল্লাহর বিধানের সামনে আত্মসমর্পণ করা। আর আত্মসমর্পণ হল দুইটি বিষয়ের সমন্বয়। যার একটি হল কথা অর্থাৎ তাওহীদের মৌখিক স্বীকৃতি এবং অপরটি হল কাজ অর্থাৎ কাজেকর্মে তাওহীদের বাস্তবায়ন।
সহজ কথায় এভাবে বলা যায় যে, ঈমান নেই অর্থাৎ অন্তরে তাওহীদের প্রতি দৃঢ় ও পরিপূর্ণ বিশ্বাস নেই অর্থাৎ অন্তরে কোন শিরকে বিশ্বাস আছে অর্থাৎ অন্তরের কুফুর বিদ্যমান আছে কিন্তু সেটাকে গোপন রেখে ইসলাম পালন করার নামই হচ্ছে নিফাক।
ঈমান এবং ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। ইসলামের জন্য শর্ত হচ্ছে ঈমান। আর ঈমানের দাবী হচ্ছে ইসলাম গ্রহণ করা। ঈমান ছাড়া যেমন ইসলাম মূল্যহীন তেমন ইসলাম ছাড়া ঈমান মূল্যহীন। একটি ছাড়া অপরটি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈমানবিহীন ইসলাম গ্রহণ কোন কাজে আসবে না। অর্থাৎ যদি অন্তরে তাওহীদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস না থাকে তবে ইসলাম অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়ন কোন কাজে আসবে না। যেমন কোন কাজে আসেনি মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই এর ইসলাম পালন, অন্তরে ঈমান না থাকার কারনে।
আবার শুধু ঈমান অর্থাৎ শুধু অন্তরে বিশ্বাস কোন কাজে আসবে না যদি না ইসলামকে গ্রহণ করা হয় অর্থাৎ মুখে স্বীকৃতি প্রদান এবং কাজে বাস্তবায়ন না করা হয়। যেমন সম্রাট হিরাক্লিয়াস এর ঈমান কোন কাজে আসেনি ইসলামকে গ্রহণ না করার কারনে। ঈমান এবং ইসলাম এই দুটির সমন্বয়ই হচ্ছে ইবাদাত। অর্থাৎ তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের যাবতীয় বিষয়কে অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কাজে বাস্তবায়ন করার নামই ইবাদাত। আর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদাত করার জন্য। ইসলাম ছাড়া শুধু ঈমান ইবাদাত বলে গন্য হবে না আবার ঈমান ছাড়া শুধু ইসলাম ইবাদাত বলে গন্য হবে না। তাই আমাদেরকে তাওহীদের যাবতীয় বিষয়ের উপর অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তারপর মুখে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। তবেই সেটা ইবাদাত হিসাবে আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে।
নিফাকের চিহ্ন কয়টি
রাসুল সঃ এর হাদিস থেকে নিফাকের কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। যথাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের দুইটি শাখা।
যে ব্যাক্তি জিহাদ না করে মারা গেল বা তার মনে যুদ্ধের বাসনা জাগলো না, তার মৃত্যু হলো নিফাকের একটি অংশের উপর।
আনসারের প্রতি ভালবাসা ঈমানের আলামত আর আনসারের প্রতি শত্রুতা নিফাকের আলামত।
চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খালিস মুনাফিক বলে গন্য হবে। যে ব্যক্তিকথা বলার সময় মিথ্যা বলে, আর অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, প্রতিশ্রুতি দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করে, যখন ঝগড়া করে গালাগালি করে। যার মধ্যে এগুলোর কোন একটি স্বভাব পাওয়া যাবে, তার মধ্যে নিফাকের একটি স্বভাব পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।
মুহাম্মাদ ইব্নু যায়েদ ইব্নু আবদুল্লাহ ইব্নু উমার তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কয়েকজন লোক ইব্নু উমার(রাঃ) কে বলল, আমরা আমাদের শাসকের কাছে গিয়ে তার এমন কথা বলি, তার দরবার থেকে বাইরে আসার পর সে কথার উল্টো বলি। তিনি বললেন, আমরা এটাকেই নিফাকবলে গণ্য করতাম।
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম কারো সামনে এক কথা আর তার অগোচরে আরেক কথা বলাও নিফাক।