ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম ও ফরজ গোসলের নিয়ত

ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত, ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া, ফরজ গোসলের নিয়ম সমূহ, ফরজ গোসলের নিয়ম কি, ফরজ গোসলের নিয়ম হাদিস, ফরজ গোসলের নিয়ম কানুন, ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম

ফরজ গোসলের নিয়ম

ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম ও ফরজ গোসলের নিয়ত

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, সম্মানিত দ্বীনি মুসলিম ভাই ও বোন, আজকে আলোচনা করতে চাই ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। রাসুল (স) কিভাবে ফরজ গোসল করতেন সহীহ হাদিস থেকে সে বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

১. প্রথমে গোসলের নিয়্যাত করতেন।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

প্রতিটি কর্ম নিয়্যাত নির্ভরশীল। যেমন নিয়্যাত তেমনই ফল। যেমন, কেউ যদি দুনিয়ার্জন বা কোনো রমণীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত (নিজ আবাসভূমি ত্যাগ) করে তাহলে সে তাই পাবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।

২. “বিসমিল্লাহ” বলে গোসল শুরু করতেন। যেমনিভাবে তা বলে ওযু শুরু করতেন।

৩. উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসল করতেন তখন প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধুয়ে নিতেন। অতঃপর বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতেন। এরপর সালাতের অযুর ন্যায় অযু করতেন। অতঃপর আঙ্গুলসমূহ পানিতে ভিজিয়ে কেশমূল খেলাল করতেন। অনন্তর মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢালতেন। পরিশেষে পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৬।

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাবাতের গোসলের জন্য পানি দিলে তিনি নিজ হস্তযুগল দু’ বা তিন বার ধৌত করেন। অতঃপর পাত্র থেকে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান পরিষ্কার করেন। এরপর ভূমিতে হস্তস্থাপন করে তা ভালোভাবে ঘষে নেন। অতঃপর সালাতের অযুর ন্যায় অযু করেন। তবে পদযুগল ধোন নি। অনন্তর তিনি নিজ মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢেলে দেন এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধৌত করেন। অতঃপর পূর্বস্থান থেকে একটু সরে গিয়ে পদযুগল ধুয়ে ফেলেন। পরিশেষে আমি তাঁর নিকট তোয়ালে নিয়ে আসলে তিনি তা গ্রহণ করেন নি; বরং হাত দিয়ে পানিটুকু ঝেড়ে ফেলেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৯, ২৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৭।

৪. বাম হাতে পানি ঢেলে নিজ লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতেন।

মায়মূনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বাম হাতে পানি ঢেলে নিজ লজ্জাস্থান ধৌত করেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৭।

৫. বাম হাতটি পবিত্র মাটি দিয়ে বা দেওয়ালে ঘষে নিতেন অথবা পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নিতেন।

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বাম হাতে পানি ঢেলে নিজ লজ্জাস্থান ধৌত করেন। অতঃপর হাত খানা ভূমিতে বা দেওয়ালে ঘষে নেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৬, ২৭৪।

৬. সালাতের অযুর ন্যায় ভালোভাবে পূর্ণাঙ্গরূপে অযু করতেন অথবা অযুর সময় পদযুগল না ধুয়ে গোসল শেষে তা ধৌত করতেন। তবে অযু করার সময় মাথা মাসাহ করেন নি।

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গোসল করার সময়) উভয় হাত দু’ বা তিন বার ধুয়েছেন। অতঃপর কুলি করেছেন। নাকে পানি দিয়েছেন। মুখ মণ্ডল ও হস্তদ্বয় ধৌত করেছেন। মাথা তিন বার ধুয়েছেন। পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করেছেন। অতঃপর পূর্বস্থান ছেড়ে অন্যত্র সরে গিয়ে পদযুগল ধুয়েছেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৭, ২৫৯, ২৬৫, ২৭৪, ২৭৬।

আয়েশা ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গোসল করার সময়) উভয় হাত তিনবার ধুয়ে নিতেন। তিনবার কুলি করতেন ও নাকে পানি দিতেন। তিনবার মুখ মণ্ডল ও হস্তযুগল ধৌত করতেন। তবে মাথা মাসাহ না করে তৎপরিবর্তে তিনি মাথায় পানি ঢেলে দিতেন।

নাসাঈ, হাদীস নং ৪২২।

৭. পানি দ্বারা হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজিয়ে তা দিয়ে চুল খেলাল করতেন।

যাতে কেশমূল তথা চর্ম পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়। অতঃপর দু’হাতে তিন চিল্লু পানি নিয়ে তা মাথায় ঢেলে দিতেন। প্রথমে মাথার ডান ভাগ অতঃপর মাথার বাম অংশ এবং পরিশেষে মাথার মধ্য ভাগে পানি প্রবাহিত করতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবাতের গোসলের ইচ্ছে করতেন তখন দুগ্ধদোহনপাত্রের ন্যায় এক পাত্র পানি আনতে বলতেন। এরপর তিনি হাতে পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পার্শ্বে অতঃপর বাম পার্শ্বে প্রবাহিত করতেন। পুনরায় দু’ হাতে পানি নিয়ে তা মাথায় ঢেলে দিতেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৮।

জানাবাতের গোসলের সময় মহিলাদের মাথার বেণী খুলতে হবে না।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভালোভাবে মাথায় বেণী বেঁধে থাকি। তা জানাবাতের গোসলের সময় খুলতে হবে কি? অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তা জানাবাত ও ঋতুস্রাবের গোসলের সময় খুলতে হবে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বেণী খুলতে হবে না। তোমার জন্য যথেষ্ট এই যে, তুমি তোমার মাথায় তিন চিল্লু পানি ঢেলে দিবে। পুনরায় পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাতেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব পরবর্তী গোসলের সময় বেণী খোলা মুস্তাহাব।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩০।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঋতুশেষে গোসল করার সময় আদেশ করেন:

(হে আয়েশা!) তুমি বেণী খুলে গোসল সেরে নাও।

ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৬৪৬।

৮. পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করতেন। প্রথমে ডান পার্শ্বে অতঃপর বাম পার্শ্বে প্রবাহিত করতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব কাজই ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পরা, মাথা আঁচড়ানো, পবিত্রতার্জন তথা সর্ব ব্যাপারই”।

বিশেষকরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বগল, কুঁচকি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভাঁজসমূহ ভালোভাবে ধুয়ে নিতেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৮।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের গোসল করার ইচ্ছে করলে প্রথমে দু’হাত ধুয়ে নিতেন। অতঃপর পানি ঢেলে বগল ও কুঁচকি ধৌত করতেন। এরপর উভয় হাত পরিষ্কার করে দেওয়ালে ঘঁষে নিতেন। অনন্তর অযু করে মাথায় পানি ঢালতেন।

আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩।

ঘষা মলার প্রয়োজন হলে তা করে নিবে।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আস্মা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋতুস্রাব পরবর্তী গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে পবিত্রতার্জন করবে। অতঃপর মাথায় পানি ঢেলে খুব ভালোভাবে মলবে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩২।

৯. পূর্বের জায়গা ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে উভয় পা ধুয়ে নিতেন।

তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল শেষে তোয়ালে দিয়ে শরীর শুকিয়ে নিতেন না। এ সংক্রান্ত হাদীস ইতোঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

খোলা জায়গায় গোসল করা নিষেধ:

খোলামেলা জায়গায় গোসল করা অনুচিত, বরং পর্দার ভেতরে গোসল করবে।

উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে পর্দা দিয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৬।

মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছি। এমতাবস্থায় তিনি জানাবাতের গোসল করেছেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৭।

গোসলের অযু দিয়েই সালাত পড়া যায়:

গোসলের অযু দিয়ে সালাত পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি সম্ভব। এ জন্য নতুন অযু করতে হবে না।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল সেরে দু রাকআত সুন্নাত ও ফজরের ফরয সালাত পড়তেন। কিন্তু তিনি গোসলের পর নতুন অযু করতেন না।

আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫০; তিরমিযী, হাদীস নং ১০৭; নাসাঈ, হাদিস নং ২৫৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৫৮৫।

ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম ও ফরজ গোসলের নিয়ত

ফরজ গোসলের নিয়ম, ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত, ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া, ফরজ গোসলের নিয়ম সমূহ, ফরজ গোসলের নিয়ম কারণ, ফরজ গোসলের নিয়ম কি, ফরজ গোসলের নিয়ম হাদিস, ফরজ গোসলের নিয়ম কানুন, ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম, ফরজ গোসল করার সঠিক নিয়ম, ফরজ গোসল করার নিয়ম, ফরজ গোসল কিভাবে করতে হয়

জানতে হবে গোসলের নিয়ম

অযুর দোয়া ও ওযু করার নিয়ম. ওযুর ফরজ ও অজু ভঙ্গের কারণ কয়টি?