তাকওয়া অর্থ কি? তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা. মুত্তাকী কাকে বলে?

তাকওয়া অর্থ কি, তাকওয়া শব্দের অর্থ কি, তাকওয়া কাকে বলে, তাকওয়া কি, তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, তাকওয়া শব্দের অর্থ কী, তাকওয়া মানে কি, তাকওয়া বলতে কি বুঝায়, তাকওয়া কত প্রকার, তাকওয়া সম্পর্কে হাদিস, তাকওয়া কী, মুত্তাকী কাকে বলে, মুত্তাকী অর্থ কি, taqwa meaning in bengali, taqwa meaning bangla

তাকওয়া-অর্থ-কি-তাকওয়ার-গুরুত্ব-ও-প্রয়োজনীয়তা.-মুত্তাকী-কাকে-বলে

তাকওয়া অর্থ কি? তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা. মুত্তাকী কাকে বলে?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে তাকওয়া অর্থ কি, তাকওয়া কত প্রকার, তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, মুত্তাকী কাকে বলে ইত্যাদি।

তাকওয়া অর্থ কি

তাকওয়া আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বাঁচা, হেফাযত করা, রক্ষা করা ইত্যাদি। তাকওয়ার আরেক অর্থ হলো ভয়, সতর্কতা ও জবাবদিহিতা।

পারিভাষিক অর্থে আল্লাহর ক্রোধ, অসন্তোষ এবং তাঁর শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য তার নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালন করা এবং নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করে চলতে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তাই তাকওয়া।

১. হাফেয ইবনু রজব (রহ) বলেন, আল্লাহ ভীতি হচ্ছে বান্দা ও তাঁর প্রভুর মধ্যকার ভীতিকর বিষয় যেমন তার আযাব, অসন্তোষ ও শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা। আর এটা হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা ও তাঁর অবাধ্যতা ত্যাগ করা।

সাঈদ ইবনু আলী আল-কাহতানী, ফিকহুল দা’ওয়াত ফী সহীহ আল-বুখারী, ২য় খণ্ড (সউদী আরব : রিয়াসাতুল আম্মা, ১ম প্রকাশ ১৪২১ হি.), পৃঃ ৩৬৭।

২. ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা প্রতিপালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন, তা পরিত্যাগ করা।

মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আত-তাকওয়া (জেদ্দা : মাজমূ আহ যাদ, ১৪৩০ হিঃ), পৃঃ ৭।

৩. হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন, তাকওয়া এমন একটি ব্যাপকার্থক বিশেষ্য যা (আল্লাহর) আনুগত্যে কর্ম সম্পাদন ও অপছন্দনীয় বিষয় পরিহার করাকে বুঝায়।

তাফসীর ইবনে কাসীর, ১/২৮৪ পৃঃ।

৪. আবু সাঊদ (রহঃ) বলেন, তাকওয়া হচ্ছে যা আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন বিষয় থেকে পরিপূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকা।

তাফসীরে আবী সউদ, ১/২৭ পৃঃ।

সুতরাং সমস্ত ওয়াজিব কর্ম প্রতিপালন করা এবং নিষিদ্ধ ও সন্দিগ্ধ বিষয় পরিহার করা পূর্ণাঙ্গ তাকওয়ার পরিচায়ক। কোন কোন ক্ষেত্রে বৈধ কাজ সম্পাদন ও অপছন্দনীয় কাজ ত্যাগ করাও তাকওয়ার শামিল।

অতএব পরিপূর্ণ তাকওয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় ওয়াজিব কর্ম সম্পাদন করা এবং হারাম ও সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করা। কখনও এর মধ্যে শামিল হয় কিছু কিছু বৈধ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং অপছন্দনীয় কাজ পরিত্যাগ করা।

কুরআনে তাকওয়া

তাকওয়াকে কখনো আল্লাহর নামের দিকে সম্বন্ধিত করা হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর ভয় কর আল্লাহকে, যাঁর নিকট তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে’। (মায়েদা ৫/৯৬)।

তিনি আরো বলেন, আল্লাহকে ভয় কর; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর আল্লাহকে ভয় কর; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (হাশর ৫৯/১৮)।

আল্লাহর দিকে ‘তাকওয়া’ শব্দকে সম্বন্ধিত করা হলে অর্থ হবে তাঁর ক্রোধ ও রাগ থেকে বেঁচে থাকা। আর এটাই হচ্ছে বড় তাকওয়া। কেননা তার ক্রোধের কারণেই পার্থিব ও পরকালীন জীবনে শাস্তি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন’। (আলে ইমরান ৩/২৮)। তিনি আরো বলেন, ‘একমাত্র তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী’। (মুদ্দাসসির ৭৪/৫৬)।

সুতরাং মহান আল্লাহই একমাত্র সত্তা যাঁকে ভয় করা হয় এবং তাঁর প্রতিই বান্দার অন্তরে অশেষ সম্মান সৃষ্টি হয়। এ কারণে বান্দা তার ইবাদত ও আনুগত্য করে।

আবার কখনো ‘তাকওয়া’ শব্দকে আল্লাহর শাস্তির দিকে কিংবা শাস্তির স্থান তথা জাহান্নামের দিকে অথবা সময়ের দিকে তথা কিয়ামত দিবসের দিকে সম্বন্ধিত করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সেই অগ্নিকে ভয় কর যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে’। (আলে ইমরান ৩/১৩১)।

তিনি আরো বলেন, তবে সেই আগুনকে ভয় কর, মানুষ এবং পাথর হবে যার ইন্ধন, কাফিরদের জন্য যা প্রস্তুত রয়েছে’। (বাক্বারাহ ২/২৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যানীত হবে’। (বাক্বারাহ ২/২৮১)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারও কোন কাজে আসবে না’। (বাক্বারাহ ২/৪৮)।

পবিত্র কুরআনে ‘তাকওয়া’ শব্দটি তিনটি অর্থে প্রয়োগ হয়েছে

১. ভয়-ভীতি অর্থে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/৪১)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যানীত হবে’। (বাক্বারাহ ২/২৮১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তারা কর্তব্য পালন করে এবং সে দিনের ভয় করে যে দিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক’। (ইনসান/দাহর ৭৬/৭)।

২. আনুগত্য ও ইবাদত অর্থে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে কোন অবস্থায় মরো না’। (আলে ইমরান ৩/১০২)। অর্থাৎ তার যথার্থ আনুগত্য ও যথাযথ ইবাদত কর। ইবনে আব্বাস বলেন, ‘আল্লাহর যথার্থ আনুগত্য কর’।

ইবনু মাসউদ ও মুজাহিদ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আনুগত্য করা অবাধ্যতা না করা; (আল্লাহর) যিকির করা, তাকে ভুলে না যাওয়া; তার শুকরিয়া আদায় করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া। (তাফসীরে তাবারী, ৩/৩৭৫ পৃঃ।)

৩. পাপাচার বা গুনাহের পঙ্কিলতা থেকে অন্তরকে পবিত্র করা অর্থে। প্রথমোক্ত দু’টি অপেক্ষা এটি তাকওয়ার প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্যের অতি নিকটবর্তী। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম’। (নূর ২৪/৫২)। এ আয়াতে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য এবং আল্লাহর ভয় উল্লেখ করার পর তাকওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং প্রকৃত তাকওয়া হচ্ছে অন্তরকে পাপ মুক্ত করা।

ড. আহমাদ ফরীদ আল-হামদ, আত-তাকওয়া আদ-দুরাতুল মাফকূদাহ ওয়াল গায়াতুল মানশূদাহ, পৃঃ ৭; মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, আত-তাকওয়া , পৃঃ ৭।

তাকওয়া কত প্রকার

মানুষের আত্ম সংযম ও আত্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গোনাহে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার নাম হচ্ছে তাকওয়া। মানুষের ঈমানী শক্তির দৃষ্টিকোণে এটা দু’ধরনের হতে পারে। ক. দুর্বলদের তাকওয়া খ. সবলদের তাকওয়া।

ক. দুর্বলদের তাকওয়া: এটা হচ্ছে এমন মানুষের তাকওয়া, যদিও তারা নিজেদেরকে গোনাহে লিপ্ত হওয়া ও পাপাচারে নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে সুষ্ঠু ও শান্ত পরিবেশে। কিন্তু দূষিত ও আক্রান্ত পরিবেশ-পরিস্থিতিতে এবং পাপাচার সংক্রমিত স্থান ও পরিবেশে তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে না। অনুরূপভাবে নিজে পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারলেও অন্যকে পাপ পঙ্কিলতা ও কদর্যতা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় না।

খ. সবলদের তাকওয়া: এটা এমন লোকদের তাকওয়া, যারা এমন সুদৃঢ় আত্মিক শক্তি ও চারিত্রিক গুণের অধিকারী যে, তারা যে কোন প্রতিকূল ও আক্রান্ত পরিবেশ-পরিস্থিতিতেও নিজেদেরকে গুনাহে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়। তাদের আত্মিক শক্তি তাদের ও গুনাহের মধ্যে বাধার প্রাচীর সদৃশ হয়ে দাঁড়ায় এবং তাদেরকে পাপের পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করে। সাথে সাথে অন্যদেরকেও নসিহত-উপদেশ, দিকনির্দেশনা, উত্তম নমুনা পেশ ও আল্লাহর আযাবের ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিরত রাখতে সক্ষম হয়।

তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

মানব জীবনে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। এর ভিত্তিতেই মানুষের কর্মকাণ্ড মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় বা বর্জনীয় হয়। এটাই আল্লাহর কাছে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা লাভের মাধ্যম। তাই তাকওয়া মানব জীবনে বিশেষত মুমিন জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিচে তাকওয়ার মর্যাদা ও গুরুত্বের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা হলো-

১. পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি তাকওয়া অবলম্বনের জন্য আল্লাহর নির্দেশ

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে এবং আসবে সকলের প্রতি মহান আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে ও তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা  আল্লাহকে ভয় করবে। (নিসা ৪/১৩১)

পবিত্র কুরআনের প্রায় ২০০ টি স্থানে আল্লাহ তাকওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তাকওয়ার গুরুত্ব, মর্যাদা, ফজিলত ও পুরস্কার প্রভৃতি। কুরআনে এত অধিকবার এ বিষয়টি উল্লেখ করার দ্বারা এর গুরুত্ব সহজেই অনুমিত হয়।

২. রাসূলুল্লাহ (স) কর্তৃক স্বীয় উম্মতকে তাকওয়া অবলম্বনের উপদেশ ও নির্দেশ

স্বীয় উম্মতকে তাকওয়া অর্জনের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ ও উপদেশ দিয়েছেন এবং এর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এ সম্পর্কে কতিপয় হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ-

নবী কারীম (স) মানুষকে তাকওয়া অবলম্বন করতে বলতেন, বিশেষত কোথাও কোন অভিযান প্রেরণকালে তিনি প্রধান সেনাপতিকে তাকওয়াশীল হওয়ার জন্য আদেশ করতেন।

যেমন সুলায়মান ইবনে বুরায়দা রাঃ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সঃ যখন কোন সৈন্যদলের আমীর নির্ধারণ করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করা তথা তাকওয়া অবলম্বন করার জন্য আদেশ করতেন এবং সাধারণ মুসলিম যোদ্ধাদেরকে তাকওয়া অর্জনের উপদেশ দিতেন।

মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯২৯; বুলূগুল মারাম হা/১২৬৮।

রাসূলুল্লাহ সাঃ মু’আয ইবনে জাবাল রাঃ কে ইয়েমেন প্রেরণকালে তাকওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দেন। হাদীছে এসেছে,

মু’আয ইবনু জাবাল রাঃ বলেন, যখন রাসূল তাকে ইয়ামান পাঠান, তখন তিনি তাকে উপদেশ দেয়ার জন্য তার সাথে বের হলেন। মু’আয সওয়ারীর উপরে আরোহণ করলেন এবং নবী করীম সাঃ সওয়ারীর নীচে ছিলেন। তিনি উপদেশ শেষে বললেন, মু’আয! সম্ভবত এ বছরের পর তোমার সাথে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না। তুমি আমার মসজিদ ও কবরের পাশ দিয়ে পার হয়ে যাবে। মু’আয নবী করীম সাঃ এর বিচ্ছিন্নতায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন এবং মদীনার দিকে ফিরে দেখলেন। তারপর নবী করীম সাঃ বললেন, ‘তাকওয়াশীল ব্যক্তিরাই সবচেয়ে আমার নিকটে। তারা যেই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন।

ছহীহ ইবনে হিব্বান হা/ ৬৪৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৯৭; মিশকাত হা/৫২২৭। 

রাসূল স্বীয় কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-কেও তাকওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, অতএব ফাতিমা তুমি আল্লাহকে ভয় কর বা পরহেযগার হও এবং ধৈর্য ধারণ কর। আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রযাত্রী’।

বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৭৮।

রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর নিকটে ছাহাবীগণ উপদেশ চাইলে তিনি তাদেরকে প্রথমত তাকওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দিতেন। যেমন-

ইরবায ইবনে সারিয়া রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ আমাদের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ করে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন এক মর্মস্পর্শী নছীহত করলেন, যাতে চক্ষু সমূহ অশ্রু প্রবাহিত করল এবং অন্তর সমূহ ভীত-বিহ্বল হলো। এ সময়ে এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল! এ মনে হচ্ছে বিদায় গ্রহণের উপদেশ। আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তখন নবী করীম সাঃ বললেন, “আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করার বা তাকওয়াশীল হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং নেতার কথা শুনতে ও তার আনুগত্য করতে উপদেশ দিচ্ছি, নেতা বা ইমাম হাবশী গোলাম হলেও।

আমার পর তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অল্প দিনের মধ্যেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমারা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকে মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে ধরে থাকবে। অতএব সাবধান তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে কিতাব ও সুন্নাহর বাইরে) নতুন সৃষ্ট কাজ হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নতুন কাজই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আতই ভ্রষ্টতা।

আবু দাউদ, মিশকাত হা/১৫৮।

৩. পৃথিবীতে আগত সকল নবী-রাসূলের উপদেশ ছিল তাকওয়া অবলম্বনের

আদম আঃ থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ সাঃ পর্যন্ত ৩১৫ জন রাসূল সহ এক লক্ষ চব্বিশ হাযার পয়গম্বর পৃথিবীতে প্রেরিত হন। প্রত্যেকের দাওয়াত ছিল তাকওয়া অবলম্বনের। পবিত্র কুরআনে কয়েকজন নবীর দাওয়াতের বিষয়টি তুলে ধারা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,

নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। যখন তাদের ভ্রাতা নূহ তাদেরকে বলল, তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না’? (শু’আরা ২৬/১০৫-১০৬)।

তিনি আরো বলেন, আদ-সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। যখন তাদের ভ্রাতা হূদ তাদেরকে বলল, তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না’? (শু’আরা ২৬/১২৩-১২৪)।

অন্যত্র তিনি বলেন, ছামূদ সম্প্রদায় রাসুলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। যখন তাদের ভ্রাতা ছালিহ তাদেরকে বলল, তোমরা কি তাকওয়াশীল হবে না’? (শু’আরা ২৬/১৪১-১৪২)।

আল্লাহ আরো বলেন, লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। যখন তাদের ভ্রাতা লূত তাদেরকে বলল, তোমরা কি ভয় করবে না’? (শু’আরা ২৬/১৬০-১৬১)।

তিনি আরো বলেন, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডেকে বললেন, তুমি যালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও, ফিরআওন সম্প্রদায়ের নিকট; তারা কি ভয় করে না?’ (শু’আরা ২৬/১০-১১)।

এভাবে অন্যান্য রাসূলগণও তাঁদের অনুসারীদেরকে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জনের দাওয়াত দিতেন।

৪. তাকওয়া অবলম্বনে পূর্বসূরীদের অছিয়ত

ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈসহ পূর্বসূরী মনীষীগণ মানুষকে তাকওয়াশীল হওয়ার জন্য নছীহত করতেন। হাফেয ইবনু রজব বলেন, সালফে ছালেহীন সর্বদা মানুষকে তাকওয়ার উপদেশ দিতেন। যেমন-

(১) আবু বকর রাঃ খুৎবা প্রদানকালে বলতেন, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহভীতি অর্জনের, তাঁর যথাযথ প্রশংসা করার, কোন কিছু কামনার সাথে ভীত হওয়ার, কোন কিছু প্রার্থনার ক্ষেত্রে বিনয়ের সংমিশ্রণ ঘটানোর। 

ড. আহমাদ ফরীদ, আত-তাকওয়া, পৃঃ ১৩-১৪।

যখন আবু বকর রাঃ এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে এবং ওমরের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন, তখন তিনি ওমর রাঃ কে ডেকে বিভিন্ন উপদেশ দিলেন। তাকে তিনি প্রথম যা বললেন, তা হচ্ছে হে ওমর আল্লাহকে ভয় কর।

ড. আহমাদ ফরীদ, আত-তাকওয়া, পৃঃ ১৩-১৪। 

(২) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব রাঃ স্বীয় পুত্র আব্দুল্লাহর নিকটে পত্র লিখলেন এ বলে যে, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করার। কেননা যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। যে তাঁকে ভয় করবে না আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন। আর যে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে, তিনি তাকে বৃদ্ধি করে দিবেন। তাকওয়াকে তোমার চোখের মণি ও অন্তরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিকারী করে নাও।

তদেব, পৃঃ ১৪

৫. তাকওয়া বান্দার সর্বোত্তম পরিচ্ছদ

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি হচ্ছে মানুষের সর্বোত্তম ভূষণ। আল্লাহ পাক বলেন, হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমরা তোমাদেরকে পরিচ্ছদ দিয়েছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম’ (আ’রাফ ৭/২৬)। উল্লেখ্য, (পোশাক) হচ্ছে যা দ্বারা লজ্জাস্থান আবৃত করা হয়। তা (সাজসজ্জা) হচ্ছে যা দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়। সুতরাং প্রথমটা আবশ্যকীয় ও যরূরী। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে অতিরিক্ত ও পূর্ণতা দানকারী। মানুষের জন্য সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ ভূষণ হলো যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দোষ-ত্রুটি আড়াল করে তাকে সৌন্দর্য মণ্ডিত ও সুশোভিত করে; আর সেটাই হচ্ছে তাকওয়ার পোশাক।

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী দ্বারা সুস্পষ্ট হচ্ছে যে, তাকওয়াই উত্তম ভূষণ।

তাফসীর কুরতুবী, ৭/১৮৪, সূরা আ’রাফ ৭নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ।

৬. তাকওয়া বান্দার সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়

তাকওয়া হচ্ছে মানব জীবনের সর্বোত্তম পাথেয়। যা মানুষকে সর্বমহলে সমাদৃত করে। আল্লাহর কাছেও সম্মানিত করে। তাই তিনি এ পাথেয় সংগ্রহের জন্য মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, আর তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।

মুত্তাকী কাকে বলে

যারা তাকওয়া অবলম্বন করে চলে অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে চলে তারাই তাকওয়াশীল বা মুত্তাকী।

তাকওয়া অর্থ কি? তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা. মুত্তাকী কাকে বলে?

তাকওয়া অর্থ কি, তাকওয়া শব্দের অর্থ কি, তাকওয়া কাকে বলে, তাকওয়া কি, তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, তাকওয়া শব্দের অর্থ কী, তাকওয়া মানে কি, তাকওয়া বলতে কি বুঝায়, তাকওয়া কত প্রকার, তাকওয়া সম্পর্কে হাদিস, তাকওয়া কী, মুত্তাকী কাকে বলে, মুত্তাকী অর্থ কি, taqwa meaning in bengali, taqwa meaning bangla

তাওহীদ অর্থ কি? তাওহীদ কাকে বলে? তাওহীদের বিপরীত কি?

ইবাদত অর্থ কি, ইবাদত কাকে বলে, ইবাদত কত প্রকার?

ঈমান কাকে বলে? ইমান শব্দের অর্থ কি?

ইসলাম শব্দের অর্থ কি এবং ইসলাম কাকে বলে?

ইহসান শব্দের অর্থ কি এবং ইহসান কাকে বলে?

তাকওয়া – উইকিপিডিয়া

তাকওয়া অর্থ কি, ও তাকওয়ার ফজিলত

মানবজীবনে তাকওয়ার প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা