৬৪/৪৬. অধ্যায়ঃ
জুহাইনাহ গোত্রের শাখা ‘হুরুকাত’ [৬৫] উপগোত্রের বিরুদ্ধে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ইবনু যায়িদ (রাঃ)-কে প্রেরণের বর্ণনা
[৬৫] আরবীতে হুরকাতুন শব্দের অর্থ আগুনে পোড়ানো। তারা একটি গোত্রকে নৃশংশভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। তাই এই উপগোত্রটি হুরকাহ নামে প্রসিদ্ধ ছিল।
৪২৬৯
عَمْرُوْ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ أَخْبَرَنَا حُصَيْنٌ أَخْبَرَنَا أَبُوْ ظَبْيَانَ قَالَ سَمِعْتُ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ بَعَثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْحُرَقَةِ فَصَبَّحْنَا الْقَوْمَ فَهَزَمْنَاهُمْ وَلَحِقْتُ أَنَا وَرَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ رَجُلًا مِنْهُمْ فَلَمَّا غَشِيْنَاهُ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ فَكَفَّ الْأَنْصَارِيُّ فَطَعَنْتُهُ بِرُمْحِيْ حَتَّى قَتَلْتُهُ فَلَمَّا قَدِمْنَا بَلَغَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا أُسَامَةُ أَقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قُلْتُ كَانَ مُتَعَوِّذًا فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى تَمَنَّيْتُ أَنِّيْ لَمْ أَكُنْ أَسْلَمْتُ قَبْلَ ذَلِكَ الْيَوْمِ.
উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হুরকা গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। আমরা প্রত্যুষে গোত্রটির উপর আক্রমণ করি এবং তাদেরকে পরাজিত করি। এ সময়ে আনসারদের এক ব্যক্তি ও আমি তাদের (হুরকাদের) একজনের পিছু ধাওয়া করলাম। আমরা যখন তাকে ঘিরে ফেললাম তখন সে বলে উঠল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ বাক্য শুনে আনসারী তার অস্ত্র সামনে নিলেন। কিন্তু আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেললাম। আমরা মদিনায় ফিরার পর এ সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছালে তিনি বললেন, হে উসামাহ! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ? আমি বললাম, সে তো জান বাঁচানোর জন্য কালিমা পড়েছিল। এর পরেও তিনি এ কথাটি ‘হে উসামাহ! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ’ বারবার বলতে থাকলেন। এতে আমার মন চাছিল যে, হায়, যদি সেই দিনটির পূর্বে আমি ইসলামই গ্রহণ না করতাম! [৬৬] [৬৮৭২; মুসলিম ১/৪১, হাঃ ৯৬, আহমাদ ২১৮০৪] (আ.প্র. ৩৯৩৬, ই.ফা. ৩৯৪০)
[৬৬] লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠকারী ব্যক্তিকেও হত্যা করার ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত ব্যথিত হন। তাই উসামা (রাঃ) চরম অনুতপ্ত হয়ে এ কথা বলেছিলেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, ঐদিনের পর ইসলাম গ্রহণ করলে এত বড় কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না আর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এত কষ্ট পেতেন না।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭০
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا حَاتِمٌ عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِيْ عُبَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ سَلَمَةَ بْنَ الْأَكْوَعِ يَقُوْلُ غَزَوْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ وَخَرَجْتُ فِيْمَا يَبْعَثُ مِنَ الْبُعُوْثِ تِسْعَ غَزَوَاتٍ مَرَّةً عَلَيْنَا أَبُوْ بَكْرٍ وَمَرَّةً عَلَيْنَا أُسَامَةُ.
সালামাহ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব অভিযান প্রেরণ করেছেন তন্মধ্যে নয়টি অভিযানে আমি অংশ নিয়েছি। এসব অভিযানে একবার আবূ বকর (রাঃ) আমাদের অধিনায়ক থাকতেন, আরেকবার উসামাহ (রাঃ) আমাদের অধিনায়ক থাকতেন। [৪২৭১-৪২৭৩] (আ.প্র. ৩৯৩৭, ই.ফা. ৩৯৪১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭১
وَقَالَ عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِيْ عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِيْ عُبَيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ سَلَمَةَ يَقُوْلُ غَزَوْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ وَخَرَجْتُ فِيْمَا يَبْعَثُ مِنَ الْبَعْثِ تِسْعَ غَزَوَاتٍ عَلَيْنَا مَرَّةً أَبُوْ بَكْرٍ وَمَرَّةً أُسَامَةُ.
উমার ইবনু হাফ্স ইবনু গিয়াস (রহঃ) তাঁর পিতা হাফস্ থেকে বর্ণিতঃ
ইয়াযীদ ইবনু আবী ‘উবাইদাহ (রাঃ)-এর মাধ্যমে সালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আর তিনি যেসব সেনাভিযান পাঠিয়েছিলেন এর নয়টি সেনাভিযানে অংশ নিয়েছি। এ সব সেনাভিযানে একবার আবূ বকর (রাঃ) আমাদের অধিনায়ক থাকতেন। আরেকবার উসামাহ (রাঃ) আমাদের অধিনায়ক থাকতেন। [৪২৭০; মুসলিম ৩২/৪৯, হাঃ ১৮১৫] (আ.প্র. ৩৯৩৭, ই.ফা.৩৯৪১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭২
أَبُوْ عَاصِمٍ الضَّحَّاكُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ أَبِيْ عُبَيْدٍ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ غَزَوْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ وَغَزَوْتُ مَعَ ابْنِ حَارِثَةَ اسْتَعْمَلَهُ عَلَيْنَا.
সালামাহ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ)-এর সঙ্গেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে (যায়দকে) আমাদের সেনাধ্যক্ষ নিয়োগ করেছিলেন। [৪২৭০] (আ.প্র. ৩৯৩৮, ই.ফা. ৩৯৪২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭৩
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ مَسْعَدَةَ عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِيْ عُبَيْدٍ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ غَزَوْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَبْعَ غَزَوَاتٍ فَذَكَرَ خَيْبَرَ وَالْحُدَيْبِيَةَ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ وَيَوْمَ الْقَرَدِ قَالَ يَزِيْدُ وَنَسِيْتُ بَقِيَّتَهُمْ.
সালামাহ ইবনু আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এতে তিনি খাইবার, হুদাইবিয়াহ, হুনায়ন ও যি-কারাদের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, অবশিষ্ট যুদ্ধগুলোর নাম আমি ভুলে গেছি। [৪২৭০] (আ.প্র. ৩৯৩৯, ই.ফা. ৩৯৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৪৭. অধায়ঃ
মাক্কাহ্য় বিজয়াভিযান
এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভিযানের ব্যাপারে খবর জানিয়ে মক্কাবাসীদের নিকট হাতিব ইবনু আবূ বালতা’আর লোক প্রেরণের ঘটনা ।
৪২৭৪
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِيْنَارٍ قَالَ أَخْبَرَنِي الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ أَنَّهُ سَمِعَ عُبَيْدَ اللهِ بْنَ أَبِيْ رَافِعٍ يَقُوْلُ سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ أَنَا وَالزُّبَيْرَ وَالْمِقْدَادَ فَقَالَ انْطَلِقُوْا حَتَّى تَأْتُوْا رَوْضَةَ خَاخٍ فَإِنَّ بِهَا ظَعِيْنَةً مَعَهَا كِتَابٌ فَخُذُوْا مِنْهَا قَالَ فَانْطَلَقْنَا تَعَادَى بِنَا خَيْلُنَا حَتَّى أَتَيْنَا الرَّوْضَةَ فَإِذَا نَحْنُ بِالظَّعِيْنَةِ قُلْنَا لَهَا أَخْرِجِي الْكِتَابَ قَالَتْ مَا مَعِيْ كِتَابٌ فَقُلْنَا لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لَنُلْقِيَنَّ الثِّيَابَ قَالَ فَأَخْرَجَتْهُ مِنْ عِقَاصِهَا فَأَتَيْنَا بِهِ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا فِيْهِ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِيْ بَلْتَعَةَ إِلَى نَاسٍ بِمَكَّةَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ يُخْبِرُهُمْ بِبَعْضِ أَمْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا حَاطِبُ مَا هَذَا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَا تَعْجَلْ عَلَيَّ إِنِّيْ كُنْتُ امْرًَا مُلْصَقًا فِيْ قُرَيْشٍ يَقُوْلُ كُنْتُ حَلِيْفًا وَلَمْ أَكُنْ مِنْ أَنْفُسِهَا وَكَانَ مَنْ مَعَكَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ مَنْ لَهُمْ قَرَابَاتٌ يَحْمُوْنَ أَهْلِيْهِمْ وَأَمْوَالَهُمْ فَأَحْبَبْتُ إِذْ فَاتَنِيْ ذَلِكَ مِنْ النَّسَبِ فِيْهِمْ أَنْ أَتَّخِذَ عِنْدَهُمْ يَدًا يَحْمُوْنَ قَرَابَتِيْ وَلَمْ أَفْعَلْهُ ارْتِدَادًا عَنْ دِيْنِيْ وَلَا رِضًا بِالْكُفْرِ بَعْدَ الإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكُمْ فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ دَعْنِيْ أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ فَقَالَ إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا وَمَا يُدْرِيْكَ لَعَلَّ اللهَ اطَّلَعَ عَلَى مَنْ شَهِدَ بَدْرًا فَقَالَ اعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ فَأَنْزَلَ اللهُ السُّوْرَةَ {يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْا عَدُوِّيْ وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَآءَ تُلْقُوْنَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَآءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ} إِلَى قَوْلِهِ {فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيْلِ}.
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলে পাঠালেন যে, তোমরা রওয়ানা হয়ে রাওযায়ে খাখ পর্যন্ত চলে যাও, সেখানে সাওয়ারীর পৃষ্ঠে হাওদায় উপবিষ্টা জনৈকা মহিলার নিকট একখানা পত্র আছে। তোমরা ঐ পত্রটি তার থেকে নিয়ে আসবে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, আমরা রওয়ানা দিলাম। আর আমাদের অশ্বগুলো আমাদের নিয়ে খুব দ্রুত ছুটে চলল। শেষ পর্যন্ত আমরা রাওযায়ে খাখ-এ পৌঁছে গেলাম। গিয়েই আমরা হাওদায় আরোহিণী মহিলাটিকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রটি বের কর। সে বললঃ আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, তুমি অবশ্যই পত্রটি বের করবে, অন্যথায় আমরা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে তালাশ করব। রাবী বলেন, মহিলাটি তখন তার চুলের খোপা থেকে পত্রটি বের করল। আমরা পত্রটি নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম। দেখা গেল এটি হাতিব ইবনু আবূ বালতা’আ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এতে মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কিছু তৎপরতার সংবাদ দিয়েছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে হাতিব! এ কী কাজ করেছ? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! (দয়া করে) আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আমি কুরাইশদের সঙ্গে স্বগোত্রীয় কেউ ছিলাম না বরং তাদের বন্ধু অর্থাৎ তাদের মিত্র গোত্রের একজন ছিলাম। আপনার সঙ্গে যেসব মুহাজির আছেন কুরায়শ গোত্রে তাঁদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। যারা এদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদের হিফাযাত করছে। আর কুরাইশ গোত্রে যেহেতু আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই, তাই আমি ভাবলাম, যদি আমি তাদের কোন উপকার করে দেই তাহলে তারা আমার পরিবার-পরিজনের হিফাযাতে এগিয়ে আসবে। কখনো আমি আমার দ্বীন পরিত্যাগ করা কিংবা ইসলাম গ্রহনের পর কুফরকে গ্রহণ করার জন্য এ কাজ করিনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন, সে (হাতিব) তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেব। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দেখ সে বদর যুদ্ধে যোগদান করেছে। তুমি তো জান না, হয়তো আল্লাহ তা’আলা বাদ্রে যোগদানকারীদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে বলে দিয়েছেন, তোমরা যা খুশী করতে থাক, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তখন আল্লাহ তা’আলা এ সূরাহ অবতীর্ণ করেনঃ “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমারা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা রসূলকে এবং তোমাদেরকে মাক্কাহ থেকে নির্বাসিত করেছে এ কারণে যে, তোমরা তোমাদের রব আল্লাহ্র প্রতি ঈমান রাখ। যদি তোমরা বের হয়ে থাক আমার পথে জিহাদ করার উদ্দেশে এবং আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তবে কেন গোপনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাও? আর তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর তা আমি ভাল জানি। তোমরদের যে কেউ এরূপ করে, সে তো সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়”-(সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০/১)। [৩০০৭] (আ.প্র. ৩৯৪০, ই.ফা. ৩৯৪৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৪৮. অধ্যায়ঃ
রমযান মাসে সংঘটিত মাক্কাহ বিজয়ের যুদ্ধ
৪২৭৫
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি জানিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে মাক্কাহ বিজয়ের যুদ্ধ করেছেন। বর্ণনাকারী যুহরী (রাঃ) বলেন, আমি সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ)-কেও একই রকম বর্ণনা করতে শুনেছি। আরেকটি সূত্র দিয়ে তিনি ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবব্দুল্লাহ (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বলেছেন, (মাক্কাহ অভিমুখে রওয়ানা হয়ে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন করছিলেন। অবশেষে তিনি যখন কুদাইদ এবং উস্ফান নামক স্থানদ্বয়ের মাঝে কাদীদ নামক জায়গায় ঝরণার কাছে পৌঁছেন তখন তিনি ইফতার করেন। এরপর রমাযান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি সওম পালন করেননি। [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪১, ই.ফা. ৩৯৪৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭৬
مَحْمُوْدٌ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ قَالَ أَخْبَرَنِي الزُّهْرِيُّ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ فِيْ رَمَضَانَ مِنَ الْمَدِيْنَةِ وَمَعَهُ عَشَرَةُ آلَافٍ وَذَلِكَ عَلَى رَأْسِ ثَمَانِ سِنِيْنَ وَنِصْفٍ مِنْ مَقْدَمِهِ الْمَدِيْنَةَ فَسَارَ هُوَ وَمَنْ مَعَهُ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ إِلَى مَكَّةَ يَصُوْمُ وَيَصُوْمُوْنَ حَتَّى بَلَغَ الْكَدِيْدَ وَهُوَ مَاءٌ بَيْنَ عُسْفَانَ وَقُدَيْدٍ أَفْطَرَ وَأَفْطَرُوْا قَالَ الزُّهْرِيُّ وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ مِنْ أَمْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْآخِرُ فَالْآخِرُ.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে মাদীনাহ থেকে (মাক্কাহ অভিযানে) রওয়ানা হন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার সহাবী। তখন হিজরাত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলিমগণ সওম অবস্থায়ই মাক্কাহ অভিমুখে রওয়ানা হন। অবশেষে তিনি যখন উস্ফান এবং কুদাইদ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নামক জায়গায় ঝরণার নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি ও সঙ্গী মুসলিমগণ ইফতার করলেন। যুহরী (রহঃ) বলেছেনঃ উম্মতের জীবনযাত্রায় গ্রহণ করার ব্যাপারে রসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাজকর্মের শেষোক্ত ‘আমালটিকেই চূড়ান্ত দলীল হিসাবে গণ্য করা হয়। [৬৭] [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪২, ই.ফা. ৩৯৪৬)
[৬৭] রসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সময় একটি কাজ করে থাকলেও পরে যদি তার ব্যতিক্রম কোন কাজ করে থাকেন, তাহলে পরবর্তীটিই দলীল হিসাবে গণ্য হবে। এবং পূর্বের কাজটি মানসূখ (রহিত) হিসাবে পরিগণিত হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭৭
عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى حَدَّثَنَا خَالِدٌ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِيْ رَمَضَانَ إِلَى حُنَيْنٍ وَالنَّاسُ مُخْتَلِفُوْنَ فَصَائِمٌ وَمُفْطِرٌ فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى رَاحِلَتِهِ دَعَا بِإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ أَوْ مَاءٍ فَوَضَعَهُ عَلَى رَاحَتِهِ أَوْ عَلَى رَاحِلَتِهِ ثُمَّ نَظَرَ إِلَى النَّاسِ فَقَالَ الْمُفْطِرُوْنَ لِلصُّوَّامِ أَفْطِرُوْا.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে হুনাইনের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। সঙ্গী মুসলিমদের অবস্থা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কেউ ছিলেন সওমরত। কেউ ছিলেন সওমহীন। তাই তিনি যখন সওয়ারীর উপর বসলেন তখন তিনি একপাত্র দুধ কিংবা পানি আনতে বললেন। তারপর তিনি পাত্রটি হাতের উপর কিংবা সওয়ারীর উপর রেখে লোকজনের দিকে তাকালেন। এ অবস্থা দেখে সওমবিহীন লোকেরা সওমরত লোকদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমরা সওম ভেঙ্গে ফেল। [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪৩, ই.ফা. ৩৯৪৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭৮
وَقَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْفَتْحِ وَقَالَ حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আবদুর রায্যাক, মা‘মার, আইয়ুব, ‘ইকরিমা (রহ.) সূত্রে ইবনু ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয়ের বছর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানে বের হয়েছিলেন। এভাবে হাম্মাদ ইবনু যায়িদ আইয়ূব, ‘ইকরিমাহ (রহ.) ইবনু ‘আববাস (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। [১৯৪৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৪৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৪৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৭৯
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ طَاوُسٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَافَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ رَمَضَانَ فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ عُسْفَانَ ثُمَّ دَعَا بِإِنَاءٍ مِنْ مَاءٍ فَشَرِبَ نَهَارًا لِيُرِيَهُ النَّاسَ فَأَفْطَرَ حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ قَالَ وَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُوْلُ صَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي السَّفَرِ وَأَفْطَرَ فَمَنْ شَاءَ صَامَ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে সওয়মরত অবস্থায় (মাক্কাহ আভিমুখে) সফর করেছেন। অবশেষে তিনি উস্ফান নামক স্থানে পৌঁছলে একপাত্র পানি দিতে বললেন। তারপর দিনের বেলাতেই সে পানি পান করলেন যেন তিনি লোকজনকে তাঁর সওমবিহীন অবস্থা দেখাতে পারেন। এরপর মাক্কাহ পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আর সওম পালন করেননি। বর্ণনাকারী বলেছেন, পরবর্তীকালে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন সফরে কোন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন করতেন আবার কোন সময় তিনি সওমবিহীন আবস্থায়ও ছিলেন। তাই সফরে যার ইচ্ছা সওম পালন করবে যার ইচ্ছে সওমবিহীন অবস্থায় থাকবে। (সফর শেষে বাসস্থানে তা আদায় করে নিতে হবে)। [১৯৪৪] (আ.প্র. ৩৯৪৪, ই.ফা. ৩৯৪৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৪৯. অধ্যায়ঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় ঝাণ্ডা স্থাপন করেছিলেন
৪২৮০
عُبَيْدُ بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ لَمَّا سَارَ رَسُوْلُ اللهِ عَامَ الْفَتْحِ فَبَلَغَ ذَلِكَ قُرَيْشًا خَرَجَ أَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ حَرْبٍ وَحَكِيْمُ بْنُ حِزَامٍ وَبُدَيْلُ بْنُ وَرْقَاءَ يَلْتَمِسُوْنَ الْخَبَرَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْبَلُوْا يَسِيْرُوْنَ حَتَّى أَتَوْا مَرَّ الظَّهْرَانِ فَإِذَا هُمْ بِنِيْرَانٍ كَأَنَّهَا نِيْرَانُ عَرَفَةَ فَقَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ مَا هَذِهِ لَكَأَنَّهَا نِيْرَانُ عَرَفَةَ فَقَالَ بُدَيْلُ بْنُ وَرْقَاءَ نِيْرَانُ بَنِيْ عَمْرٍو فَقَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ عَمْرٌو أَقَلُّ مِنْ ذَلِكَ فَرَآهُمْ نَاسٌ مِنْ حَرَسِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَدْرَكُوْهُمْ فَأَخَذُوْهُمْ فَأَتَوْا بِهِمْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَسْلَمَ أَبُوْ سُفْيَانَ فَلَمَّا سَارَ قَالَ لِلْعَبَّاسِ احْبِسْ أَبَا سُفْيَانَ عِنْدَ حَطْمِ الْخَيْلِ حَتَّى يَنْظُرَ إِلَى الْمُسْلِمِيْنَ فَحَبَسَهُ الْعَبَّاسُ فَجَعَلَتْ الْقَبَائِلُ تَمُرُّ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تَمُرُّ كَتِيْبَةً كَتِيْبَةً عَلَى أَبِيْ سُفْيَانَ فَمَرَّتْ كَتِيْبَةٌ قَالَ يَا عَبَّاسُ مَنْ هَذِهِ قَالَ هَذِهِ غِفَارُ قَالَ مَا لِيْ وَلِغِفَارَ ثُمَّ مَرَّتْ جُهَيْنَةُ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ مَرَّتْ سَعْدُ بْنُ هُذَيْمٍ فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ وَمَرَّتْ سُلَيْمُ فَقَالَ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى أَقْبَلَتْ كَتِيْبَةٌ لَمْ يَرَ مِثْلَهَا قَالَ مَنْ هَذِهِ قَالَ هَؤُلَاءِ الْأَنْصَارُ عَلَيْهِمْ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ مَعَهُ الرَّايَةُ فَقَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ يَا أَبَا سُفْيَانَ الْيَوْمَ يَوْمُ الْمَلْحَمَةِ الْيَوْمَ تُسْتَحَلُّ الْكَعْبَةُ فَقَالَ أَبُوْ سُفْيَانَ يَا عَبَّاسُ حَبَّذَا يَوْمُ الذِّمَارِ ثُمَّ جَاءَتْ كَتِيْبَةٌ وَهِيَ أَقَلُّ الْكَتَائِبِ فِيْهِمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ وَرَايَةُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَعَ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ فَلَمَّا مَرَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِأَبِيْ سُفْيَانَ قَالَ أَلَمْ تَعْلَمْ مَا قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ قَالَ مَا قَالَ قَالَ كَذَا وَكَذَا فَقَالَ كَذَبَ سَعْدٌ وَلَكِنْ هَذَا يَوْمٌ يُعَظِّمُ اللهُ فِيْهِ الْكَعْبَةَ وَيَوْمٌ تُكْسَى فِيْهِ الْكَعْبَةُ قَالَ وَأَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ تُرْكَزَ رَايَتُهُ بِالْحَجُوْنِ قَالَ عُرْوَةُ وَأَخْبَرَنِيْ نَافِعُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ سَمِعْتُ الْعَبَّاسَ يَقُوْلُ لِلزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ هَا هُنَا أَمَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ تَرْكُزَ الرَّايَةَ قَالَ وَأَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ أَنْ يَدْخُلَ مِنْ أَعْلَى مَكَّةَ مِنْ كَدَاءٍ وَدَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ كُدَا فَقُتِلَ مِنْ خَيْلِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيْدِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَوْمَئِذٍ رَجُلَانِ حُبَيْشُ بْنُ الْأَشْعَرِ وَكُرْزُ بْنُ جابِرٍ الْفِهْرِيُّ.
হিশামের পিতা [‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাক্কাহ অভিমুখে) রওয়ানা করেছেন। এ সংবাদ কুরাইশদের কাছে পৌঁছালে আবূ সুফ্ইয়ান ইবনু হার্ব, হাকীম ইবনু হিযাম এবং বুদাইল ইবনু ওয়ারকা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সংবাদ জানার জন্য রাতের বেলা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে (মক্কার অদূরে) মাররুয জাহ্রান নামক স্থান পর্যন্ত এসে পৌঁছালে তারা আরাফার ময়দানে প্রজ্জ্বলিত আলোর মতো অসংখ্য আগুন দেখতে পেল। আবূ সুফ্ইয়ান বলে উঠল, ঠিক আরাফাহ্র ময়দানে প্রজ্জ্বলিত আলোর মতো এ সব কিসের আলো? বুদাইল ইবনু ওয়ারকা উত্তর করল, এগুলো ‘আমর গোত্রের (চুলার) আলো। আবূ সুফ্ইয়ান বলল, ‘আমর গোত্রের লোক সংখ্যা এর চেয়ে অনেক কম। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন প্রহরী তাদেরকে দেখে ফেলল এবং কাছে গিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে এল। এ সময় আবূ সুফ্ইয়ান ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর তিনি [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] যখন (সেনাবাহিনী সহ) রওয়ানা হলেন তখন ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আবূ সুফ্ইয়ানকে পথের একটি সংকীর্ণ জায়গায় দাঁড় করাবে, যেন সে মুসলিমদের পুরো সেনাদলটি দেখতে পায়। তাই ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে যথাস্থানে থামিয়ে রাখলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আগমনকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে খণ্ড দলে আবূ সুফইয়ানের স্মমুখ দিয়ে অতিক্রম করতে লাগল। (প্রথমে) একটি দল অতিক্রম করে গেল। আবূ সুফ্ইয়ান বললেন, হে ‘আব্বাস (রাঃ) এরা কারা? ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এরা গিফার গোত্রের লোক। আবূ সুফ্ইয়ান বললেন, আমার এবং গিফার গোত্রের মধ্যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল না। এরপর জুহাইনা গোত্রের লোকেরা অতিক্রম করে গেলেন, আবূ সুফ্ইয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সা’দ ইবনু হুযাইম গোত্র অতিক্রম করল, তখনো আবূ সুফ্ইয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সুলাইম গোত্র অতিক্রম করলেও আবূ সুফ্ইয়ান অনুরূপ বললেন। অবশেষে একটি বিরাট বাহিনী তার সামনে এল যে, এত বিরাট বাহিনী এ সময় তিনি আর দেখেননি। তাই জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা? ‘আব্বাস (রাঃ) উত্তর দিলেন, এরাই আনসারবৃন্দ। সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) তাঁদের দলপতি। তাঁর হাতেই রয়েছে তাঁদের পতাকা। সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) বললেন, হে আবূ সুফইয়ান! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কা’বার অভ্যন্তরে রাক্তপাত হালাল হওয়ার দিন। আবূ সুফ্ইয়ান বললেন, হে ‘আব্বাস! আজ হারাম ও তার অধিবাসীদের প্রতি তোমাদের করুণা প্রদর্শনেরও কত উত্তম দিন। তারপর আরেকটি দল আসল। এটি ছিল সবচেয়ে ছোট দল। আর এদের মধ্যেই ছিলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ। যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ)-এর হাতে ছিল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পতাকা। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আবূ সুফ্ইয়ানের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন আবূ সুফ্ইয়ান বললেন, সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ কী বলছে আপনি তা কি জানেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে কী বলেছে? আবূ সুফ্ইয়ান বললেন, সে এ রকম বলেছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সা’দ ঠিক বলেনি বরং আজ এমন একটি দিন যে দিন আল্লাহ কা’বাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কা’বাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, (মক্কায়) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজুন নামক স্থানে তাঁর পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দেন। বর্ণনাকারী উরওয়া নাফি’ ইবনু যুবায়র ইবনু মুত্ঈম ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যুবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ)-কে (মাক্কাহ বিজয়ের পর একদা) বললেন, হে আবূ ‘আবদুল্লাহ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে এ জায়গায়ই পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ‘উরওয়াহ (রাঃ) আরো বলেন, সে দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে মক্কার উঁচু এলাকা কাদার দিক থেকে প্রবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুদার দিক দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। সেদিন খালিদ ইবনু ওয়ালীদের অশ্বারোহী সৈন্যদের মধ্য থেকে হুবায়শ ইবনুল আশআর এবং কুরয ইবনু জাবির ফিহ্রী (রাঃ)-এ দু’জন শহীদ হয়েছিলেন। [২৯৭৬] (আ.প্র. ৩৯৪৫, ই.ফা. ৩৯৪৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮১
أَبُو الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ مُغَفَّلٍ يَقُوْلُ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ عَلَى نَاقَتِهِ وَهُوَ يَقْرَأُ سُوْرَةَ الْفَتْحِ يُرَجِّعُ وَقَالَ لَوْلَا أَنْ يَجْتَمِعَ النَّاسُ حَوْلِيْ لَرَجَّعْتُ كَمَا رَجَّعَ.
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর উটনীর উপর দেখেছি, তিনি ‘তারজী’ অর্থাৎ পূর্ণ তাজভীদ সহকারে সূরাহ আল-ফাত্হ তিলাওয়াত করছেন। বর্ণনাকারী মু’আবিয়াহ ইবনু কুররাহ (রহঃ) বলেন, যদি আমার চারপাশে লোকজন জমায়েত হওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তা হলে ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তিলাওয়াত বর্ণনা করতে যেভাবে তারজী করেছিলেন আমিও ঠিক সে রকমে তারজী করে তিলওয়াত করতাম। [৪৮৩৫, ৫০৩৪, ৫০৪৭, ৭৫৪০] (আ.প্র. ৩৯৪৬, ই.ফা. ৩৯৫০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮২
سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَنَا سَعْدَانُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِيْ حَفْصَةَ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ عَنْ عَمْرِو بْنِ عُثْمَانَ عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ أَنَّهُ قَالَ زَمَنَ الْفَتْحِ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيْنَ تَنْزِلُ غَدًا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهَلْ تَرَكَ لَنَا عَقِيْلٌ مِنْ مَنْزِلٍ؟
উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি মাক্কাহ বিজয়ের কালে বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আগামীকাল আপনি কোথায় অবস্থান করবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গেছে? [১৫৮৮] (আ.প্র. ৩৯৪৭, ই.ফা. ৩৯৫১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮৪
أَبُو الْيَمَانِ حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْزِلُنَا إِنْ شَاءَ اللهُ إِذَا فَتَحَ اللهُ الْخَيْفُ حَيْثُ تَقَاسَمُوْا عَلَى الْكُفْرِ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (মাক্কাহ বিজয়ের পূর্বে) রসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ আমাদেরকে বিজয় দান করলে ইনশাআল্লাহ ‘খাইফ’ হবে আমাদের অবস্থানস্থল, যেখানে কাফিররা কুফরীর উপর পরস্পরের শপথ গ্রহণ করেছিল। [৬৯] [১৫৮৯] (আ.প্র. ৩৯৪৮, ই.ফা. ৩৯৫২)
[৬৯] হিজরাতের পূর্বে কাফিররা সম্মিলিতভাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , বানূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিবকে মাক্কাহ হতে বহিষ্কার করে খাইফ এলাকায় নির্বাসন দেয়ার ফয়সালা করেছিল। পরিশেষে তারা পরস্পর শপথ করে একটি চুক্তিনামাও স্বাক্ষর করেছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদিকেই ইশারা করেছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮৫
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ سَعْدٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ شِهَابٍ عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ أَرَادَ حُنَيْنًا مَنْزِلُنَا غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ بِخَيْفِ بَنِيْ كِنَانَةَ حَيْثُ تَقَاسَمُوْا عَلَى الْكُفْرِ.
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনাইনের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে বললেন, বানী কিনানার খায়ফ নামক স্থানই হবে আমাদের আগামীকালের আবস্থানস্থল, যেখানে কাফিররা কুফরের উপর পরস্পরের শপথ গ্রহণ করেছিল। [১৫৮৯] (আ.প্র. ৩৯৪৯, ই.ফা. ৩৯৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮৬
يَحْيَى بْنُ قَزَعَةَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ مَكَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ ابْنُ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ اقْتُلْهُ قَالَ مَالِكٌ وَلَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِيْمَا نُرَى وَاللهُ أَعْلَمُ يَوْمَئِذٍ مُحْرِمًا.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় লোহার টুপি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেছেন। তিনি সবেমাত্র টুপি খুলেছেন এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, ইবনু খাতাল কা’বার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে হত্যা কর। [৭০] ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, আমাদের ধারণামতে সেদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহ্রাম অবস্থায় ছিলেন না। তবে আল্লাহ আমাদের চেয়ে ভাল জানেন। [১৮৪৬] (আ.প্র. ৩৯৫০, ই.ফা. ৩৯৫৪)
[৭০] খাতাল কুফর ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে পুনরায় মুরতাদ হয়ে যায় এবং অন্যায়ভাবে কয়েকজন মুসলিমকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ জন্যই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কাহ বিজয় করেন তখন তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তাকে যমযম কূপ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮৭
صَدَقَةُ بْنُ الْفَضْلِ أَخْبَرَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ ابْنِ أَبِيْ نَجِيْحٍ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ أَبِيْ مَعْمَرٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ دَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَحَوْلَ الْبَيْتِ سِتُّوْنَ وَثَلَاثُ مِائَةِ نُصُبٍ فَجَعَلَ يَطْعُنُهَا بِعُوْدٍ فِيْ يَدِهِ وَيَقُوْلُ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ جَاءَ الْحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ وَمَا يُعِيْدُ.
আবদুল্লাহ [ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন বাইতুল্লাহর চারপাশ ঘিরে তিনশত ষাটটি প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে প্রতিমাগুলোকে আঘাত করতে থাকলেন আর বলতে থাকলেন, হাক এসেছে, বাতিল অপসৃত হয়েছে। হাক এসেছে, বাতিলের উদ্ভব বা পুনরুত্থান আর ঘটবে না। [২৪৭৮] (আ.প্র. ৩৯৫১, ই.ফা. ৩৯৫৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৮৮
إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبِيْ حَدَّثَنَا أَيُّوْبُ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ أَبَى أَنْ يَدْخُلَ الْبَيْتَ وَفِيْهِ الْآلِهَةُ فَأَمَرَ بِهَا فَأُخْرِجَتْ فَأُخْرِجَ صُوْرَةُ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ فِيْ أَيْدِيْهِمَا مِنَ الْأَزْلَامِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَاتَلَهُمْ اللهُ لَقَدْ عَلِمُوْا مَا اسْتَقْسَمَا بِهَا قَطُّ ثُمَّ دَخَلَ الْبَيْتَ فَكَبَّرَ فِيْ نَوَاحِي الْبَيْتِ وَخَرَجَ وَلَمْ يُصَلِّ فِيْهِ تَابَعَهُ مَعْمَرٌ عَنْ أَيُّوْبَ وَقَالَ وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا أَيُّوْبُ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় আগমন করার পর তৎক্ষনাৎ বাইতুল্লাহ্র ভিতরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রইলেন, কেননা সে সময় বাইতুল্লাহর ভিতরে অনেক প্রতিমা স্থাপিত ছিল। প্রতিমাগুলো বের করে ফেলা হল। তখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর মূর্তিও বেরিয়ে আসল। তাদের উভয়ের হাতে ছিল মুশরিকদের ভাগ্য নির্ণয়ের কয়েকটি তীর। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। তারা অবশ্যই জানত যে, ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ) কক্ষনো তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করেননি। এরপর তিনি বাইতুল্লাহ্র ভিতরে প্রবেশ করলেন। আর প্রত্যেক কোণায় কোণায় গিয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন এবং বেরিয়ে আসলেন। আর সেখানে সলাত আদায় করেননি। মা’মার (রহঃ) আইয়ুব (রহঃ) সূত্রে এবং ওয়াহায়ব (রহঃ) আইয়ুব (রহঃ)-এর মাধ্যমে ‘ইকরামাহ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [৩৯৮] (আ.প্র. ৩৯৫২, ই.ফা. ৩৯৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫০. অধ্যায়ঃ
মাক্কাহ নগরীর উঁচু এলাকার দিক দিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রবেশের বর্ণনা
৪২৮৯
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ يُوْنُسُ قَالَ أَخْبَرَنِيْ نَافِعٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَقْبَلَ يَوْمَ الْفَتْحِ مِنْ أَعْلَى مَكَّةَ عَلَى رَاحِلَتِهِ مُرْدِفًا أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ وَمَعَهُ بِلَالٌ وَمَعَهُ عُثْمَانُ بْنُ طَلْحَةَ مِنَ الْحَجَبَةِ حَتَّى أَنَاخَ فِي الْمَسْجِدِ فَأَمَرَهُ أَنْ يَأْتِيَ بِمِفْتَاحِ الْبَيْتِ فَدَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهُ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَبِلَالٌ وَعُثْمَانُ بْنُ طَلْحَةَ فَمَكَثَ فِيْهِ نَهَارًا طَوِيْلًا ثُمَّ خَرَجَ فَاسْتَبَقَ النَّاسُ فَكَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ أَوَّلَ مَنْ دَخَلَ فَوَجَدَ بِلَالًا وَرَاءَ الْبَابِ قَائِمًا فَسَأَلَهُ أَيْنَ صَلَّى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَشَارَ لَهُ إِلَى الْمَكَانِ الَّذِيْ صَلَّى فِيْهِ قَالَ عَبْدُ اللهِ فَنَسِيْتُ أَنْ أَسْأَلَهُ كَمْ صَلَّى مِنْ سَجْدَةٍ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সওয়ারীতে আরোহণ করে উসামাহ ইবনু যায়িদকে নিজের পিছনে বসিয়ে মাক্কাহ নগরীর উঁচু এলাকার দিক দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল এবং বাইতুল্লাহর চাবি রক্ষক ‘উসমান ইবনু ত্ব্লহা। অবশেষে তিনি [নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] মাসজিদে হারামের সামনে সওয়ারী থামালেন এবং ‘উসমান ইবনু ত্ব্লহাকে চাবি এনে (দরজা খোলার) আদেশ করলেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (কা’বায়) প্রবেশ করলেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামাহ ইবনু যায়্দ, বিলাল এবং ‘উসমান ইবনু ত্ব্লহা (রাঃ)। সেখানে তিনি দিনের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবস্থান করে (সলাত আদায়, তাকবীর ও অনান্য দু’আ করার পর) বের হয়ে এলেন। তখন অনান্য লোক দ্রুত ছুটে এল। তন্মধ্যে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রথমেই প্রবেশ করলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে দরজার পাশে দাঁড়ানো পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন জায়গায় সলাত আদায় করেছেন? তখন বিলাল তাকে তাঁর সলাতের জায়গাটি ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কত রাক’আত আদায় করেছিলেন বিলাল (রাঃ)-কে আমি এ কথাটি জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম। [৩৯৭] (আ.প্র. ৩৯৫৩, ই.ফা. ৩৯৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯০
الْهَيْثَمُ بْنُ خَارِجَةَ حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ مَيْسَرَةَ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَامَ الْفَتْحِ مِنْ كَدَاءٍ الَّتِيْ بِأَعْلَى مَكَّةَ تَابَعَهُ أَبُوْ أُسَامَةَ وَوُهَيْبٌ فِيْ كَدَاءٍ.
আয়িশাহ [রা.] থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার উঁচু এলাকা ‘কাদা’-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করেছেন। আবূ উসামাহ এবং ওহাইব (রহঃ) ‘কাদা’-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করার বর্ণনায় হাফস্ ইবনু মাইসারাহ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। [১৫৭৭] (অ.প্র. ৩৯৫৩, ই.ফা. ৩৯৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯১
عُبَيْدُ بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيْهِ دَخَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْفَتْحِ مِنْ أَعْلَى مَكَّةَ مِنْ كَدَاءٍ.
হিশামের পিতা থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ জয়ের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার উঁচু এলাকা অর্থাৎ ‘কাদা’ নামক স্থান দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। [১৫৭৭] (আ.প্র. ৩৯৫৪, ই.ফা. ৩৯৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫১. অধ্যায়ঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবস্থানস্হল
৪২৯২
أَبُو الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ ابْنِ أَبِيْ لَيْلَى مَا أَخْبَرَنَا أَحَدٌ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّيْ الضُّحَى غَيْرَ أُمِّ هَانِئٍ فَإِنَّهَا ذَكَرَتْ أَنَّهُ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ اغْتَسَلَ فِيْ بَيْتِهَا ثُمَّ صَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ قَالَتْ لَمْ أَرَهُ صَلَّى صَلَاةً أَخَفَّ مِنْهَا غَيْرَ أَنَّهُ يُتِمُّ الرُّكُوْعَ وَالسُّجُوْدَ.
ইবনু আবী লাইলা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে চাশতের সলাত আদায় করতে দেখেছে-এ কথাটি একমাত্র উম্মু হানী (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি বলেছেন যে, মাক্কাহ বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বাড়িতে গোসল করেছিলেন, এরপর তিনি আট রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ সলাত অপেক্ষা হালকাভাবে অন্য কোন সলাত আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি রুকূ’, সাজদাহ্ পুরোপুরিই আদায় করেছিলেন। [১১০৩] (আ.প্র. ৩৯৫৫, ই.ফা. ৩৯৫৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫২. অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নেই
৪২৯৩
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِي الضُّحَى عَنْ مَسْرُوْقٍ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ فِيْ رُكُوْعِهِ وَسُجُوْدِهِ سُبْحَانَكَ اللهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِي.
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সলাতের রুকূ ও সাজদাহ্য় পড়তেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকাল্লাহুম্মা গফির লী অর্থাৎ অতি পবিত্র। হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমি তোমারই প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [৭৯৪] (আ.প্র. নাই, ই.ফা. ৩৯৬০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯৪
أَبُو النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَوَانَةَ عَنْ أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَ عُمَرُ يُدْخِلُنِيْ مَعَ أَشْيَاخِ بَدْرٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِمَ تُدْخِلُ هَذَا الْفَتَى مَعَنَا وَلَنَا أَبْنَاءٌ مِثْلُهُ فَقَالَ إِنَّهُ مِمَّنْ قَدْ عَلِمْتُمْ قَالَ فَدَعَاهُمْ ذَاتَ يَوْمٍ وَدَعَانِيْ مَعَهُمْ قَالَ وَمَا رُئِيْتُهُ دَعَانِيْ يَوْمَئِذٍ إِلَّا لِيُرِيَهُمْ مِنِّيْ فَقَالَ مَا تَقُوْلُوْنَ فِيْ {إِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ أَفْوَاجًا} حَتَّى خَتَمَ السُّوْرَةَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ أُمِرْنَا أَنْ نَحْمَدَ اللهَ وَنَسْتَغْفِرَهُ إِذَا نُصِرْنَا وَفُتِحَ عَلَيْنَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ لَا نَدْرِيْ أَوْ لَمْ يَقُلْ بَعْضُهُمْ شَيْئًا فَقَالَ لِيْ يَا ابْنَ عَبَّاسٍ أَكَذَاكَ تَقُوْلُ قُلْتُ لَا قَالَ فَمَا تَقُوْلُ قُلْتُ هُوَ أَجَلُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَعْلَمَهُ اللهُ لَهُ {إِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ}فَتْحُ مَكَّةَ فَذَاكَ عَلَامَةُ أَجَلِكَ {فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّه” كَانَ تَوَّابًا} قَالَ عُمَرُ مَا أَعْلَمُ مِنْهَا إِلَّا مَا تَعْلَمُ.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) তাঁর (পরামর্শ মজলিসে) বাদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বর্ষীয়ান সহাবাদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করতেন। তাই তাঁদের কেউ কেউ বললেন, আপনি এ তরুণকে কেন আমাদের সঙ্গে মজলিসে শামিল করেন। তার মতো সন্তান তো আমাদেরও আছে। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, ইবনু ‘আববাস (রাঃ) ঐ সব মানুষের একজন যাদের (মর্যাদা) সম্পর্কে আপনারা অবহিত আছেন। ইবনু ‘আববাস বলেন, একদিন তিনি (‘উমার) তাদেরকে পরামর্শ মজলিসে আহবান করলেন এবং তাঁদের সঙ্গে তিনি আমাকেও ডাকলেন। তিনি (ইবনু ‘আববাস) বলেন, আমার মনে হয় সেদিন তিনি তাঁদেরকে আমার ইল্ম দেখানোর জন্যই ডেকেছিলেন। ‘উমার বলেন, إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ أَفْوَاجًا এভাবে সূরাটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ সূরাহ সম্পর্কে আপনাদের কী বক্তব্য? তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, এখানে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, যখন আমাদেরকে সাহায্য করা হবে এবং বিজয় দান করা হবে তখন যেন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর কেউ কেউ বললেন, আমরা অবগত নই। আবার কেউ কেউ কোন কথাই বলেননি। এ সময় ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, ওহে ইবনু ‘আববাস! তুমি কি এ রকমই মনে কর? আমি বললাম, জ্বী, না। তিনি বললেন, তা হলে তুমি কী বলতে চাও? আমি বললাম, এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের সংবাদ। আল্লাহ তাঁকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় আসবে’’ অর্থাৎ মক্কা বিজয়। সেটাই হবে আপনার ওফাতের নিদর্শন। সুতরাং এ সময়ে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করবেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) বললেন, এ সূরাহ থেকে তুমি যা বুঝেছ আমি তা ব্যতীত আর অন্য কিছুই বুঝিনি। [৩৬২৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৫৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯৫
سَعِيْدُ بْنُ شُرَحْبِيْلَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنِ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِيْ شُرَيْحٍ الْعَدَوِيِّ أَنَّهُ قَالَ لِعَمْرِو بْنِ سَعِيْدٍ وَهُوَ يَبْعَثُ الْبُعُوْثَ إِلَى مَكَّةَ ائْذَنْ لِيْ أَيُّهَا الْأَمِيْرُ أُحَدِّثْكَ قَوْلًا قَامَ بِهِ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْغَدَ يَوْمَ الْفَتْحِ سَمِعَتْهُ أُذُنَايَ وَوَعَاهُ قَلْبِيْ وَأَبْصَرَتْهُ عَيْنَايَ حِيْنَ تَكَلَّمَ بِهِ إِنَّهُ حَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ إِنْ مَكَّةَ حَرَّمَهَا اللهُ وَلَمْ يُحَرِّمْهَا النَّاسُ لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَسْفِكَ بِهَا دَمًا وَلَا يَعْضِدَ بِهَا شَجَرًا فَإِنْ أَحَدٌ تَرَخَّصَ لِقِتَالِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْهَا فَقُوْلُوْا لَهُ إِنَّ اللهَ أَذِنَ لِرَسُوْلِهِ وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ وَإِنَّمَا أَذِنَ لِيْ فِيْهَا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ وَقَدْ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالأَمْسِ وَلْيُبَلِّغْ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ فَقِيْلَ لِأَبِيْ شُرَيْحٍ مَاذَا قَالَ لَكَ عَمْرٌو قَالَ قَالَ أَنَا أَعْلَمُ بِذَلِكَ مِنْكَ يَا أَبَا شُرَيْحٍ إِنَّ الْحَرَمَ لَا يُعِيْذُ عَاصِيًا وَلَا فَارًّا بِدَمٍ وَلَا فَارًّا بِخَرْبَةٍ.
قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ الْخَرْبَةُ الْبَلِيَّةُ.
আবূ শুরাইহিল আদবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(মাদীনাহ্র শাসনকর্তা) আমর ইবনু সা’ঈদ যে সময় মাক্কাহ অভিমুখে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন তখন আবূ শুরায়হিল আদবী (রাঃ) তাকে বলেছিলেন, হে আমাদের আমীর! আপনি আমাকে একটু অনুমতি দিন, আমি আপনাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর একটি বাণী শোনাব, যেটি তিনি মাক্কাহ বিজয়ের পরের দিন বলেছিলেন। সেই বাণীটি আমার দু’কান শুনেছে। আমার হৃদয় তা হিফাযাত করে রেখেছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সে কথাটি বলেছিলেন তখন আমার দু’চোখ তাঁকে অবলোকন করেছে। প্রথমে তিনি [নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)] আলাহ্র প্রশংসা করেন এবং সানা পাঠ করেন। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহ নিজে মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। কোন মানুষ এ ঘোষণা দেয়নি। কাজেই ব্যক্তি আল্লাহ এবং ক্বিয়ামাত দিবসের উপর ঈমান এনেছে তার পক্ষে সেখানে রক্তপাত করা কিংবা এখানকার গাছপালা কর্তন করা কিছুতেই হালাল নয়। আর আল্লাহ্র রসূলের সে স্থানে লড়াইয়ের কথা বলে যদি কেউ নিজের জন্যও সুযোগ নিতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও, আল্লাহ তাঁর রসূলের ক্ষেত্রে (বিশেষভাবে) অনুমতি দিয়েছিলেন, তোমাদের জন্য কোন অনুমতি দেননি। আর আমার ক্ষেত্রেও তা একদিনের কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই কেবল অনুমতি দেয়া হযেছিল। এরপর সেদিনই তা পুনরায় সেরূপ হারাম হয়ে গেছে যেরূপে তা একদিন পূর্বে হারাম ছিল। উপস্থিত লোকজন (এ কথাটি) অনুপস্থিত লোকের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে| (বর্ননাকারী বলেন) পরবর্তী সময়ে আবু শুরায়হ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ‘আমর ইবনু সা’ঈদ আপনাকে কী উত্তর করেছিলেন? তিনি বললেন, ‘আম্র আমাকে বললেন, হে আবূ শুরায়হ্! হাদীসটির বিষয় আমি তোমার চেয়ে অধিক অবগত আছি। হারামে মাক্কাহ কোন অপরাধী বা খুনী পলাতককে কিংবা কোন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ফেরারীকে প্রশ্রয় দেয় না। আর ‘আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আল খারবাহ’ অর্থ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। [১০৪] (আ.প্র. ৩৯৫৭, ই.ফা. ৩৯৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯৬
قُتَيْبَةُ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِيْ حَبِيْبٍ عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِيْ رَبَاحٍ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ عَامَ الْفَتْحِ وَهُوَ بِمَكَّةَ إِنَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ حَرَّمَ بَيْعَ الْخَمْرِ.
জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের বছর তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মক্কায় এ কথা বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল মদের ক্রয়-বিক্রয় হারাম করে দিয়েছেন। [৭১] [২২৩৬] (আ.প্র. ৩৯৫৮, ই.ফা. ৩৯৬৩)
[৭১] মদ পান যেমন হারাম তেমনি তার ক্রয়-বিক্রয়ও হারাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫৩. অধ্যায়ঃ
মাক্কাহ বিজয়ের সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সেখানে অবস্থানকালের পরিমাণ
৪২৯৭
أَبُوْ نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ح حَدَّثَنَا قَبِيْصَةُ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَقَمْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَشْرًا نَقْصُرُ الصَّلَاةَ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে মক্কায় দশদিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় আমরা সলাত কসর করতাম। [৭২] [১০৮১] (আ.প্র. ৩৯৫৯, ই.ফা. ৩৯৬৪)
[৭২] আল্লাহ তা’আলা আল-কুরানে ঘোষণা দিয়েছেন-
”যখন তোমরা যমীনে ভ্রমণ করবে তখন সলাত কসর করলে তাতে কোন সমস্যা নেই।” (সূরা অন-নিসাঃ ১০১)
উক্ত আয়াতে এরূপ প্রমাণ মিলে না যে, কি পরিমাণ সফর করলে কসর করা যাবে। এ কারণেই সহাবীগণের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা চার বুরুদ (১৬ ফারসাখ সমান ৪৮ মাইল) পরিমান সফর করলে সলাত কসর করতেন এবং সওম ভেঙ্গে দিতেন। পক্ষান্তরে ইবনু ‘উমার হতে সহীহ বর্ণনায় সাব্যস্ত হয়েছে তিনি বলেন, “তিন মাইল সফর করলে সলাত কসর করা যাবে”। সহীহ সানাদে তার থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনি মাক্কাহ’য় অবস্থানকালীন যখন মিনায় যেতেন তখন কসর করতেন’। এমনকি সহীহ সুত্রে ইবনু ‘উমার হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘আমি যদি এক মাইল পথের জন্য বের হতাম তাহলেও সলাত করতাম’। তিনি আরো বললেন, আমি দিনের কিছু সময় সফর করতাম এবং কসর করতাম। এসব আসারের সুত্রগুলো সহীহ। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ”ফাতহুল বারী” ও শাইখ আলবানীর ”ইরওয়াউল গালীল” (৩/১৪-২০)
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, সহাবীগণ এ বিষয়ে একমত ছিলেন না। বরং তাদের মধ্যে মতভেদ সংঘটিত হয়েছিল। অতএব আমাদেরকে দেখা দরকার এ ব্যাপারে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘আমল কি ছিল? আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘আমলের এর দিকে লক্ষ্য করলে দেখছি ইবনু ‘উমর (রাঃ) এর ‘আমল তাঁর ‘আমলের সাথে অনেকাংশেই মিলে যাচ্ছে। যদিও তাঁর থেকে এ ব্যাপারে কোন মৌখিক হাদীছ বর্ণিত হয়নি। কারণ আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আমল বর্ননা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযিদ আল হুনাই বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে কসর করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিন মাইল বা তিন ফারসাখ পরিমাণ পথ সফর করলেই দু’রাক’আত সলাত আদায় করতেন। (নিম্নের বর্ণনাকারী শু’বাহ সন্দেহ বশতঃ তিন মাইল বা তিন ফারসাখ বলেছেন) ।
হাদীছটি ইমাম মুসলিম (২/১৪৫) , আবু আওয়ানাহ (২/৩৪৬) , আবু দাউদ, ইবনু আবী শাইবাহ (২/১০৮/১-২) , বায়হাক্বী (৩/১৪৬) ও আহমাদ (৩/১২৯) বর্ননা করেছেন।
উল্লেখ এক ফারসাখ সমান তিন মাইল। অতএব তিন ফারসাখ সমান ৯ মাইল। যেহেতু মুসলিম সহ অনান্য হাদীছগ্রন্থে বর্ণিত এ হাদীছটিতে তিন মাইল বা ৯ মাইল এর কথা বলা হয়েছে। যা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘আমল হিসেবে প্রমাণিত। অতএব আমরা সতর্কতার স্বার্থে তিন মাইল গ্রহণ না করে ৯ মাইলকে গ্রহণ করব এবং ৯ মাইল পরিমান পথ সফর করলেই নির্দ্বিধায় সলাত কসর করব।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ফিকহুস সুন্নাহ ইরওয়াউল গালীল ৩য় খণ্ড ফতহুল বারী প্রমুখ গ্রন্থসমূহের সলাত অধ্যায়। (দেখুন মুসলিম হাঃ নং ৬৯১, সহীহ আবূ দাউদ ১২০১, আহমাদ ১১৯০৪, সিলসিলা সহীহা হাঃ নং ১৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯৮
عَبْدَانُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا عَاصِمٌ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ أَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمَكَّةَ تِسْعَةَ عَشَرَ يَوْمًا يُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (মাক্কাহ বিজয়ের সময়ে) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঊনিশ দিন মক্কায় অবস্থান করেছিলেন, তিনি সে সময় দু’রাক’আত সলাত আদায় করতেন। [১০৮০] (আ.প্র. ৩৯৬০, ই.ফা. ৩৯৬৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪২৯৯
أَحْمَدُ بْنُ يُوْنُسَ حَدَّثَنَا أَبُوْ شِهَابٍ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَقَمْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْ سَفَرٍ تِسْعَ عَشْرَةَ نَقْصُرُ الصَّلَاةَ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَنَحْنُ نَقْصُرُ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ تِسْعَ عَشْرَةَ فَإِذَا زِدْنَا أَتْمَمْنَا.
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সফরে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ঊনিশ দিন (মক্কা বিজয়্কালে) অবস্থান করেছিলাম। [৭৩] ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমরা সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত কসর করতাম। এর চেয়ে অধিক দিন থাকলে আমরা পূর্ণ সলাত আদায় করতাম। [১০৮০] (আ.প্র. ৩৯৬১, ই.ফা. ৩৯৬৬)
[৭৩] হাদীসের পণ্ডিতগণের মতে আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বিদায় হাজ্জের সফরে এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে মাক্কাহ বিজয়্কালে মাক্কায় অবস্থানের মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫৪. অধ্যায়ঃ
পরিচ্ছেদ নেই
৪৩০০
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ يُوْنُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَخْبَرَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ ثَعْلَبَةَ بْنِ صُعَيْرٍ وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَدْ مَسَحَ وَجْهَهُ عَامَ الْفَتْحِ.
লায়্স [ইবনু সা’দ (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
ইউনুস আমার কাছে ইবনু শিহাব থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাবাহ ইবনু সু’আয়র (রাঃ) আমার নিকট বর্ননা করেছেন, আর মাক্কাহ বিজয়ের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর মুখমণ্ডল মাসহ করেছিলেন। [৬৩৫৬] (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩০১
إِبْرَاهِيْمُ بْنُ مُوْسَى أَخْبَرَنَا هِشَامٌ عَنْ مَعْمَرٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ سُنَيْنٍ أَبِيْ جَمِيْلَةَ قَالَ أَخْبَرَنَا وَنَحْنُ مَعَ ابْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ وَزَعَمَ أَبُوْ جَمِيْلَةَ أَنَّهُ أَدْرَكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَخَرَجَ مَعَهُ عَامَ الْفَتْحِ.
যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি সুনায়ন আবূ জামীলাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমরা (সাঈ’দ) ইব্ন মুসায়্যাব (রহঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় আবূ জামীলাহ (রাঃ) দাবি করেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাক্কাহ বিজয়ের বছর (যুদ্ধের জন্য) বেরিয়েছিলেন। (আ.প্র. ৩৯৬২, ই.ফা. ৩৯৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩০২
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ أَبِيْ قِلَابَةَ عَنْ عَمْرِو بْنِ سَلَمَةَ قَالَ قَالَ لِيْ أَبُوْ قِلَابَةَ أَلَا تَلْقَاهُ فَتَسْأَلَهُ قَالَ فَلَقِيْتُهُ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ كُنَّا بِمَاءٍ مَمَرَّ النَّاسِ وَكَانَ يَمُرُّ بِنَا الرُّكْبَانُ فَنَسْأَلُهُمْ مَا لِلنَّاسِ مَا لِلنَّاسِ مَا هَذَا الرَّجُلُ فَيَقُوْلُوْنَ يَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَهُ أَوْحَى إِلَيْهِ أَوْ أَوْحَى اللهُ بِكَذَا فَكُنْتُ أَحْفَظُ ذَلِكَ الْكَلَامَ وَكَأَنَّمَا يُقَرُّ فِيْ صَدْرِيْ وَكَانَتْ الْعَرَبُ تَلَوَّمُ بِإِسْلَامِهِمْ الْفَتْحَ فَيَقُوْلُوْنَ اتْرُكُوْهُ وَقَوْمَهُ فَإِنَّهُ إِنْ ظَهَرَ عَلَيْهِمْ فَهُوَ نَبِيٌّ صَادِقٌ فَلَمَّا كَانَتْ وَقْعَةُ أَهْلِ الْفَتْحِ بَادَرَ كُلُّ قَوْمٍ بِإِسْلَامِهِمْ وَبَدَرَ أَبِيْ قَوْمِيْ بِإِسْلَامِهِمْ فَلَمَّا قَدِمَ قَالَ جِئْتُكُمْ وَاللهِ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم حَقًّا فَقَالَ صَلُّوْا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِيْنِ كَذَا وَصَلُّوْا صَلَاةَ كَذَا فِيْ حِيْنِ كَذَا فَإِذَا حَضَرَتْ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا فَنَظَرُوْا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّيْ لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنْ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُوْنِيْ بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ سِنِيْنَ وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّيْ فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّوْا عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِيْ قَمِيْصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِيْ بِذَلِكَ الْقَمِيْصِ.
আম্র ইবনু সালামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আইয়ুব (রহঃ) বলেছেন, আবূ কিলাবাহ আমাকে বললেন, তুমি ‘আম্র ইবনু সালামাহ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে (তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞাস কর না কেন? আবূ কিলাবাহ (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি ‘আম্র ইবনু সালামাহ্র সঙ্গে দেখা করে তাঁকে (তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমরা লোকজনের চলার পথের পাশে একটি ঝরণার কাছে বাস করতাম। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা চলাচল করত। তখন আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, (মক্কার) লোকজনের অবস্থা কী? মক্কার লোকজনের অবস্থা কী? আর ঐ লোকটির কী অবস্থা? তারা বলত, ঐ ব্যক্তি তো দাবী করে যে, আল্লাহ তাঁকে রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন, তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন। (কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে বলত) তাঁর কাছে আল্লাহ এ রকম ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন। (‘আম্র ইবনু সালামা’হ বলেন) তখন আমি সে বাণীগুলো মুখস্থ করে নিতাম যেন তা আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকত। সমগ্র আরব ইসলাম গ্রহণের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিজয়ের অপেক্ষা করছিল। তারা বলত, তাঁকে তার নিজ গোত্রের লোকেদের সঙ্গে (আগে) বোঝাপড়া করতে দাও। অতঃপর তিনি যদি তাদের উপর বিজয়ী হন তবে তিনি সত্য নাবী। এরপর মাক্কাহ বিজয়ের ঘটনা ঘটল। এবার সব গোত্রই তাড়াহুড়া করে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। আমাদের কাওমের ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমার পিতা বেশ তাড়াহুড়া করলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ফিরে এসে বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি সত্য নাবীর নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমরা অমুক সলাত এবং অমুক সময় অমুক সলাত আদায় করবে। এভাবে সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুরআন অধিক জানে সে সলাতের ইমামাত করবে। সবাই এ রকম একজন লোক খুঁজলেন। কিন্তু আমার চেয়ে অধিক কুরআন জানা একজনকেও পাওয়া গেল না। কেননা আমি কাফেলার লোকদের থেকে কুরআন শিখেছিলাম। কাজেই সকলে আমাকেই তাদের সামনে এগিয়ে দিল। অথচ তখনো আমি ছয় কিংবা সাত বছরের বালক। আমার একটি চাদর ছিল, যখন আমি সাজদাহ্য় যেতাম তখন চাদরটি আমার গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যেত। তখন গোত্রের জনৈকা মহিলা বলল, তোমরা আমাদের দৃষ্টি থেকে তোমাদের ক্বারীর নিতম্ব আবৃত করে দাও না কেন? তারা কাপড় খরিদ করে আমাকে একটি জামা তৈরি করে দিল। এ জামা পেয়ে আমি এত খুশি হয়েছিলাম যে, আর কিছুতে এত খুশি হইনি। (আ.প্র. ৩৯৬৩, ই.ফা. ৩৯৬৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩০৩
عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ عَنْ مَالِكٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ يُوْنُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ عُتْبَةُ بْنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ عَهِدَ إِلَى أَخِيْهِ سَعْدٍ أَنْ يَقْبِضَ ابْنَ وَلِيْدَةِ زَمْعَةَ وَقَالَ عُتْبَةُ إِنَّهُ ابْنِيْ فَلَمَّا قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَكَّةَ فِي الْفَتْحِ أَخَذَ سَعْدُ بْنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ ابْنَ وَلِيْدَةِ زَمْعَةَ فَأَقْبَلَ بِهِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَقْبَلَ مَعَهُ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ فَقَالَ سَعْدُ بْنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ هَذَا ابْنُ أَخِيْ عَهِدَ إِلَيَّ أَنَّهُ ابْنُهُ قَالَ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذَا أَخِيْ هَذَا ابْنُ زَمْعَةَ وُلِدَ عَلَى فِرَاشِهِ فَنَظَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى ابْنِ وَلِيْدَةِ زَمْعَةَ فَإِذَا أَشْبَهُ النَّاسِ بِعُتْبَةَ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ لَكَ هُوَ أَخُوْكَ يَا عَبْدُ بْنَ زَمْعَةَ مِنْ أَجْلِ أَنَّهُ وُلِدَ عَلَى فِرَاشِهِ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم احْتَجِبِيْ مِنْهُ يَا سَوْدَةُ لِمَا رَأَى مِنْ شَبَهِ عُتْبَةَ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ قَالَتْ عَائِشَةُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ وَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ يَصِيْحُ بِذَلِكَ.
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উত্বাহ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তার ভাই সা’দ [ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)]-কে ওয়াসিয়াত করে গিয়েছিল যে, সে যেন যাম’আহ্র বাঁদীর সন্তানটি তাঁর নিজের কাছে নিয়ে নেয়। ‘উত্বাহ বলেছিল, পুত্রটি আমার ঔরসজাত। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কাহ বিজয়কালে সেখানে আগমন করলেন তখন সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস যাম’আহ্র বাঁদীর সন্তানটি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত করলেন। তাঁর সঙ্গে আবদ্ ইবনু যাম’আহ (যামআর পুত্র)-ও আসলেন। সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস বললেন, সন্তানটি তো আমার ভাতিজা। আমার ভাই আমাকে বলে গিয়েছেন যে, এ সন্তান তার ঔরসজাত কিন্তু আবদ্ ইবনু যাম’আহ তার দাবী পেশ করে বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! এ আমার ভাই, এ যাম’আহ্র সন্তান, তাঁর বিছানায় এর জম্ম হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন যাম’আহ্র ক্রীতদাসীর সন্তানের প্রতি নযর দিয়ে দেখলেন যে, সন্তানটি আকৃতিতে ‘উত্বাহ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসের সঙ্গেই অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আব্দ ইবনু যাম’আহ! একে নিয়ে যাও। সে তোমার ভাই। কেননা সে তার (তোমার পিতা যাম’আহ্র) বিছানায় জম্মগ্রহণ করেছে। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সন্তানটির আকৃতি ‘উত্বাহ ইবনু আবী ওয়াক্কাসের আকৃতির মত হওয়ার কারণে (তাঁর স্ত্রী) সাওদা বিনতে যাম’আহ (রাঃ)-কে বললেন, হে সওদা! তুমি তার থেকে পর্দা করবে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন যে, এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, শয্যা যার, ছেলে তার। আর ব্যভিচারীর জন্য আছে পাথর। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেছেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এ কথাটি উচ্চৈঃস্বরে বলতেন। [২০৫৩] (আ.প্র. ৩৯৬৪, ই.ফা. ৩৯৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩০৪
مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا يُوْنُسُ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ امْرَأَةً سَرَقَتْ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِيْ غَزْوَةِ الْفَتْحِ فَفَزِعَ قَوْمُهَا إِلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ يَسْتَشْفِعُوْنَهُ قَالَ عُرْوَةُ فَلَمَّا كَلَّمَهُ أُسَامَةُ فِيْهَا تَلَوَّنَ وَجْهُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَتُكَلِّمُنِيْ فِيْ حَدٍّ مِنْ حُدُوْدِ اللهِ قَالَ أُسَامَةُ اسْتَغْفِرْ لِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَلَمَّا كَانَ الْعَشِيُّ قَامَ رَسُوْلُ اللهِ خَطِيْبًا فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ النَّاسَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوْا إِذَا سَرَقَ فِيْهِمْ الشَّرِيْفُ تَرَكُوْهُ وَإِذَا سَرَقَ فِيْهِمْ الضَّعِيْفُ أَقَامُوْا عَلَيْهِ الْحَدَّ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا ثُمَّ أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِتِلْكَ الْمَرْأَةِ فَقُطِعَتْ يَدُهَا فَحَسُنَتْ تَوْبَتُهَا بَعْدَ ذَلِكَ وَتَزَوَّجَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَكَانَتْ تَأْتِيْ بَعْدَ ذَلِكَ فَأَرْفَعُ حَاجَتَهَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم .
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর যামানায় মক্কা বিজয় অভিযানের সময়ে এক স্ত্রীলোক চুরি করেছিল। তাই তার গোত্রের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)- এর কাছে এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ জানালো। ‘উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, উসামাহ (রাঃ)- এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে কথা বলা মাত্র তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি উসামাহ (রাঃ)- কে বললেন, তুমি কি আল্লাহ্র নির্ধারিত শাস্তিগুলোর একটি শাস্তির ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? উসামাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এরপর সন্ধ্যা হলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিতে দাঁড়ালেন। যথাযথভাবে আল্লাহ্র হাম্দ-সানা করে বললেন, “আম্মা বা’দ” তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এ জন্য ধ্বংস হয়েছিল যে, তারা তাদের মধ্যকার উচ্চ শ্রেণীর কোন লোক চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত। পক্ষান্তরে কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করত। যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ, যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত তা হলে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই মহিলাটির ব্যাপারে আদেশ দিলেন। ফলে তার হাত কেটে দেওয়া হল। অবশ্য পরবর্তীকালে সে উত্তম তওবার অধিকারিণী হয়েছিল এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এরপর সে আমার কাছে প্রায়ই আসত। আমি তার প্রয়োজনাদি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে তুলে ধরতাম। [২৬৪৮] (আ.প্র. ৩৯৬৫ , ই.ফা. ৩৯৭০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩০৯
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ بِشْرٍ عَنْ مُجَاهِدٍ قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا إِنِّيْ أُرِيْدُ أَنْ أُهَاجِرَ إِلَى الشَّأْمِ قَالَ لَا هِجْرَةَ وَلَكِنْ جِهَادٌ فَانْطَلِقْ فَاعْرِضْ نَفْسَكَ فَإِنْ وَجَدْتَ شَيْئًا وَإِلَّا رَجَعْتَ.
মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললাম, আমি সিরিয়া দেশে হিজরাত করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, এখন হিজরাত নয়, এখন জিহাদ। সুতরাং যাও, নিজ অন্তরের সঙ্গে বুঝে দেখ, জিহাদের সাহস খুঁজে পাও কিনা, তা না হলে হিজরাতের ইচ্ছা থেকে ফিরে আস। (৩৮৯৯) (আ.প্র. ৩৯৬৮, ই.ফা. ৩৯৭৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১০
وَقَالَ النَّضْرُ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ أَخْبَرَنَا أَبُوْ بِشْرٍ سَمِعْتُ مُجَاهِدًا قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ فَقَالَ لَا هِجْرَةَ الْيَوْمَ أَوْ بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ.
নায্র [ইবনু শুমায়ল (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
মুজাহিদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন) আমি ইবনু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললে তিনি উত্তরে বললেন, বর্তমানে হিজরাতের কোন প্রয়োজন নেই, অথবা তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর পরে কোন হিজরাত নেই। অতঃপর তিনি উপরোল্লিখিত হাদীসের মত বর্ণনা করেন। [৩৮৯৯] (আ.প্র. ৩৯৬৮, ই.ফা. ৩৯৭৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১১
إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيْدَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبُوْ عَمْرٍو الْأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَبْدَةَ بْنِ أَبِيْ لُبَابَةَ عَنْ مُجَاهِدِ بْنِ جَبْرٍ الْمَكِّيِّ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا كَانَ يَقُوْلُ لَا هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ.
মুজাহিদ ইবনু জাব্র আল-মাক্কী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলতেনঃ মাক্কাহ বিজয়ের পর আর কোন হিজরাত নেই। [৩৮৯৯] (আ.প্র. ৩৯৬৯, ই.ফা. ৩৯৭৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১২
إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيْدَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ قَالَ حَدَّثَنِي الْأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِيْ رَبَاحٍ قَالَ زُرْتُ عَائِشَةَ مَعَ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ فَسَأَلَهَا عَنِ الْهِجْرَةِ فَقَالَتْ لَا هِجْرَةَ الْيَوْمَ كَانَ الْمُؤْمِنُ يَفِرُّ أَحَدُهُمْ بِدِيْنِهِ إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم مَخَافَةَ أَنْ يُفْتَنَ عَلَيْهِ فَأَمَّا الْيَوْمَ فَقَدْ أَظْهَرَ اللهُ الإِسْلَامَ فَالْمُؤْمِنُ يَعْبُدُ رَبَّهُ حَيْثُ شَاءَ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ.
আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘উবায়দ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) সহ ‘আয়িশা (রাযিআল্লাহু আনহা)- এর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। সে সময় ‘উবায়দ (রহঃ) তাঁকে হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, বর্তমানে কোন হিজরাত নেই। আগে মু’মিন ব্যক্তি তার দ্বীনকে ফিতনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের দিকে (মদিনায়) পালিয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে আল্লাহ ইসলামকে বিজয় দান করেছেন। তাই এখন মু’মিন যেখানে চায় আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করতে পারে। তবে বর্তমানে জিহাদ এবং নিয়্যাত করা যাবে। [৩০৮০] (আ.প্র. ৩৯৭০, ই.ফা. ৩৯৭৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১৩
إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَاصِمٍ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ حَسَنُ بْنُ مُسْلِمٍ عَنْ مُجَاهِدٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ يَوْمَ الْفَتْحِ فَقَالَ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ مَكَّةَ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَهِيَ حَرَامٌ بِحَرَامِ اللهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَمْ تَحِلَّ لِأَحَدٍ قَبْلِيْ وَلَا تَحِلُّ لِأَحَدٍ بَعْدِيْ وَلَمْ تَحْلِلْ لِيْ قَطُّ إِلَّا سَاعَةً مِنْ الدَّهْرِ لَا يُنَفَّرُ صَيْدُهَا وَلَا يُعْضَدُ شَوْكُهَا وَلَا يُخْتَلَى خَلَاهَا وَلَا تَحِلُّ لُقَطَتُهَا إِلَّا لِمُنْشِدٍ فَقَالَ الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِلَّا الإِذْخِرَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّهُ لَا بُدَّ مِنْهُ لِلْقَيْنِ وَالْبُيُوْتِ فَسَكَتَ ثُمَّ قَالَ إِلَّا الإِذْخِرَ فَإِنَّهُ حَلَالٌ وَعَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ أَخْبَرَنِيْ عَبْدُ الْكَرِيْمِ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ بِمِثْلِ هَذَا أَوْ نَحْوِ هَذَا رَوَاهُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবার জন্য দাঁড়িয়ে বললেন, যেদিন আল্লাহ সমুদয় আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মাক্কাহ নগরীকে সম্মান দান করেছেন। তাই আল্লাহ কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি, আমার পরে কারো জন্যও তা হালাল করা হবে না। আর আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। তার শিকারযোগ্য প্রাণীকে বিতাড়িত করা যাবে না। ঘাস সংগৃহীত হবে না। বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত রাস্তায় পতিত বস্তু উত্তোলিত হবে না। তখন ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! ইয্খির ঘাস ব্যতীত। কেননা ইয্খির ঘাস আমাদের কর্মকার ও বাড়ির (ছাউনির) কাজে লাগে। তখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ থাকলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বললেন, ইয্খির ব্যতীত। ইয্খির ঘাস কাটা অনুমোদিত। অন্য সানাদে ইবনু জুরায়জ (রহঃ)….. ইবনু ‘আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া এ হাদীস আবূ হুরায়রা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) ও নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [১৩৪৯] (আ.প্র. ৩৯৭১, ই.ফা. ৩৯৭৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫৫. অধ্যায়ঃ
মহান আল্লাহ্র বাণীঃ
এবং হুনায়নের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে গর্বিত করে তুলেছিল; কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল তোমাদের প্রতি এ পৃথিবী এত প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও, পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েছিলে। অতঃপর আল্লাহ নিজের তরফ থেকে প্রশান্তি অবর্তীর্ণ করলেন তাঁরা রসূলের প্রতি এবং মু’মিনদের প্রতি, আর তিনি অবর্তীর্ণ করলেন এমন এক সেনাবাহিনী যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। তিনি কাফিরদের শাস্তি দিলেন এবং তা ছিল কাফিরদের কর্মফল। আর আল্লাহ এরপরও তাওবার তাওফীক দেন যাদের ইচ্ছা করেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরাহ আত-তওবাহ ৯/২৫-২৭)
৪৩১৪
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ هَارُوْنَ أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيْلُ رَأَيْتُ بِيَدِ ابْنِ أَبِيْ أَوْفَى ضَرْبَةً قَالَ ضُرِبْتُهَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ قُلْتُ شَهِدْتَ حُنَيْنًا قَالَ قَبْلَ ذَلِكَ.
ইসমাঈল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। তিনি বলেছেন, হুনাইনের দিন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমাকে এ আঘাত করা হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি কি হুনাইন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? তিনি বললেন, এর পূর্বেও (সংঘটিত যুদ্ধগুলোতে) অংশ নিয়েছি। (আ.প্র. ৩৯৭২, ই.ফা. ৩৯৭৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১৫
مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيْرٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ يَا أَبَا عُمَارَةَ أَتَوَلَّيْتَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَقَالَ أَمَّا أَنَا فَأَشْهَدُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ لَمْ يُوَلِّ وَلَكِنْ عَجِلَ سَرَعَانُ الْقَوْمِ فَرَشَقَتْهُمْ هَوَازِنُ وَأَبُوْ سُفْيَانَ بْنُ الْحَارِثِ آخِذٌ بِرَأْسِ بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ يَقُوْلُ
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ أَنـَا ابْنُ عـَبـْدِ الْـمُـطِّلـِبْ.
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি বারাআ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) – কে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি এসে তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আবূ ‘উমারাহ! হুনাইনের দিন কি আপনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন? তখন তিনি বলেন যে, আমি তো নিজেই নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। তবে মুজাহিদদের অগ্রবর্তী যোদ্ধাগণ (গানীমাত সংগ্রহের জন্য) তাড়াহুড়া করলে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা তাঁদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় আবূ সুফ্ইয়ান ইবনুল হারিস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাদা খচ্চরটির মাথা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেছিলেন-
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৩, ই.ফা. ৩৯৭৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১৬
أَبُو الْوَلِيْدِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ قِيْلَ لِلْبَرَاءِ وَأَنَا أَسْمَعُ أَوَلَّيْتُمْ مَعَ النَّبِيِّ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَقَالَ أَمَّا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَلَا كَانُوْا رُمَاةً فَقَالَ :
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ أَنـَا ابْنُ عـَبـْدِ الْـمُـطِّلـِبْ.
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি শুনলাম যে, বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে জিজ্ঞেস করা হল, হুনাইন যুদ্ধের দিন আপনারা কি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন? তিনি বললেন, কিন্তু নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। তবে তারা (হাওয়াযিনের লোকেরা) ছিল দক্ষ তীরন্দাজ, তাদের তীর বর্ষণে মুসলিমরা পিছনে হটলেও নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) (অটলভাবে দাঁড়িয়ে) বলছিলেন-
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। [২৮৬৪] (আ.প্র. ৩৯৭৪, ই.ফা. ৩৯৭৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১৭
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ سَمِعَ الْبَرَاءَ وَسَأَلَهُ رَجُلٌ مِنْ قَيْسٍ أَفَرَرْتُمْ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ فَقَالَ لَكِنْ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَفِرَّ كَانَتْ هَوَازِنُ رُمَاةً وَإِنَّا لَمَّا حَمَلْنَا عَلَيْهِمْ انْكَشَفُوْا فَأَكْبَبْنَا عَلَى الْغَنَائِمِ فَاسْتُقْبِلْنَا بِالسِّهَامِ وَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ وَإِنَّ أَبَا سُفْيَانَ بْنَ الْحَارِثِ آخِذٌ بِزِمَامِهَا وَهُوَ يَقُوْلُ:
أَنـَا الـنّـَبـِيُّ لَا كـَذِبْ
قَالَ إِسْرَائِيْلُ وَزُهَيْرٌ نَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ بَغْلَتِهِ.
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বারআ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁকে কায়স গোত্রের এক লোক জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, হুনাইনের দিন আপনারা কি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট হতে পালিয়েছিলেন? তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কিন্তু পালিয়ে যাননি। হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা যখন তাদের উপর আক্রমণ চালালাম তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। আমরা গানীমাত তুলতে শুরু করলাম তখন আমরা তাদের তীরন্দাজ বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। তখন আমি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে আরোহিত অবস্থায় দেখলাম। আর আবূ সুফ্ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর খচ্চরটির লাগাম ধরেছিলেন। তিনি বলছিলেন-
আমি আল্লাহ্র নাবী, এটা মিথ্যা নয়।
বর্ণনাকারী ইসরাঈল এবং যুহায়র (রহঃ) বলেছেন যে, তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর খচ্চর থেকে অবতরন করেছিলেন। [২৮৬৪; মুসলিম ৩২/২৮, হাঃ ১৭৭৬, আহমাদ ১৮৪৯৫] (আ.প্র. ৩৯৭৫, ই.ফা. ৩৯৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১৮
سَعِيْدُ بْنُ عُفَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ عُقَيْلٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ ح و حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ شِهَابٍ وَزَعَمَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ مَرْوَانَ وَالْمِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ أَخْبَرَاهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ حِيْنَ جَاءَهُ وَفْدُ هَوَازِنَ مُسْلِمِيْنَ فَسَأَلُوْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَسَبْيَهُمْ فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَعِيْ مَنْ تَرَوْنَ وَأَحَبُّ الْحَدِيْثِ إِلَيَّ أَصْدَقُهُ فَاخْتَارُوْا إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ إِمَّا السَّبْيَ وَإِمَّا الْمَالَ وَقَدْ كُنْتُ اسْتَأْنَيْتُ بِكُمْ وَكَانَ أَنْظَرَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً حِيْنَ قَفَلَ مِنْ الطَّائِفِ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم غَيْرُ رَادٍّ إِلَيْهِمْ إِلَّا إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ قَالُوْا فَإِنَّا نَخْتَارُ سَبْيَنَا فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمُسْلِمِيْنَ فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ إِخْوَانَكُمْ قَدْ جَاءُوْنَا تَائِبِيْنَ وَإِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ أَنْ أَرُدَّ إِلَيْهِمْ سَبْيَهُمْ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يُطَيِّبَ ذَلِكَ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَكُوْنَ عَلَى حَظِّهِ حَتَّى نُعْطِيَهُ إِيَّاهُ مِنْ أَوَّلِ مَا يُفِيْءُ اللهُ عَلَيْنَا فَلْيَفْعَلْ فَقَالَ النَّاسُ قَدْ طَيَّبْنَا ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّا لَا نَدْرِيْ مَنْ أَذِنَ مِنْكُمْ فِيْ ذَلِكَ مِمَّنْ لَمْ يَأْذَنْ فَارْجِعُوْا حَتَّى يَرْفَعَ إِلَيْنَا عُرَفَاؤُكُمْ أَمْرَكُمْ فَرَجَعَ النَّاسُ فَكَلَّمَهُمْ عُرَفَاؤُهُمْ ثُمَّ رَجَعُوْا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرُوْهُ أَنَّهُمْ قَدْ طَيَّبُوْا وَأَذِنُوْا هَذَا الَّذِيْ بَلَغَنِيْ عَنْ سَبْيِ هَوَازِنَ.
মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন মুসলিম হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এলো এবং তাদের (যুদ্ধে ফেলে যাওয়া) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাদের বললেন, আমার সঙ্গে যারা আছে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ- এ দু’টির যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে পার। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে দশ রাতেরও অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু’টির মধ্যে একটির অধিক ফেরত দিতে সম্মত নন, তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করে বললেন, আম্মা বা‘দু, তোমাদের (মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের নিকট ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি মনে গ্রহণ করবে সে (বন্দী) ফেরত দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করব, তবে সে তাই করুক। তখন সকল লোক উত্তর করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাদের সঙ্গে আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং (যুদ্ধবন্দী ফেরত দেয়ার) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহ.) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমার কাছে পৌঁছেছে। [২৩০৭, ২৩০৮] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩১৯
سَعِيْدُ بْنُ عُفَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ عُقَيْلٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ ح و حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ حَدَّثَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَخِي ابْنِ شِهَابٍ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ شِهَابٍ وَزَعَمَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ مَرْوَانَ وَالْمِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ أَخْبَرَاهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ حِيْنَ جَاءَهُ وَفْدُ هَوَازِنَ مُسْلِمِيْنَ فَسَأَلُوْهُ أَنْ يَرُدَّ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَسَبْيَهُمْ فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَعِيْ مَنْ تَرَوْنَ وَأَحَبُّ الْحَدِيْثِ إِلَيَّ أَصْدَقُهُ فَاخْتَارُوْا إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ إِمَّا السَّبْيَ وَإِمَّا الْمَالَ وَقَدْ كُنْتُ اسْتَأْنَيْتُ بِكُمْ وَكَانَ أَنْظَرَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِضْعَ عَشْرَةَ لَيْلَةً حِيْنَ قَفَلَ مِنْ الطَّائِفِ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم غَيْرُ رَادٍّ إِلَيْهِمْ إِلَّا إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ قَالُوْا فَإِنَّا نَخْتَارُ سَبْيَنَا فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمُسْلِمِيْنَ فَأَثْنَى عَلَى اللهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ إِخْوَانَكُمْ قَدْ جَاءُوْنَا تَائِبِيْنَ وَإِنِّيْ قَدْ رَأَيْتُ أَنْ أَرُدَّ إِلَيْهِمْ سَبْيَهُمْ فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يُطَيِّبَ ذَلِكَ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَكُوْنَ عَلَى حَظِّهِ حَتَّى نُعْطِيَهُ إِيَّاهُ مِنْ أَوَّلِ مَا يُفِيْءُ اللهُ عَلَيْنَا فَلْيَفْعَلْ فَقَالَ النَّاسُ قَدْ طَيَّبْنَا ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّا لَا نَدْرِيْ مَنْ أَذِنَ مِنْكُمْ فِيْ ذَلِكَ مِمَّنْ لَمْ يَأْذَنْ فَارْجِعُوْا حَتَّى يَرْفَعَ إِلَيْنَا عُرَفَاؤُكُمْ أَمْرَكُمْ فَرَجَعَ النَّاسُ فَكَلَّمَهُمْ عُرَفَاؤُهُمْ ثُمَّ رَجَعُوْا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرُوْهُ أَنَّهُمْ قَدْ طَيَّبُوْا وَأَذِنُوْا هَذَا الَّذِيْ بَلَغَنِيْ عَنْ سَبْيِ هَوَازِنَ.
মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন মুসলিম হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এলো এবং তাদের (যুদ্ধে ফেলে যাওয়া) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাদের বললেন, আমার সঙ্গে যারা আছে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদ- এ দু’টির যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে পার। আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে ফিরে আসার পথে দশ রাতেরও অধিক সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু’টির মধ্যে একটির অধিক ফেরত দিতে সম্মত নন, তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করতে চাই। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্দ ও সানা পাঠ করে বললেন, আম্মা বা‘দু, তোমাদের (মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের নিকট ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি মনে গ্রহণ করবে সে (বন্দী) ফেরত দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করব, তবে সে তাই করুক। তখন সকল লোক উত্তর করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রথম সিদ্ধান্ত খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ তাদের সঙ্গে আলাপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এসে জানাল যে, সবাই তাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং (যুদ্ধবন্দী ফেরত দেয়ার) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী (রহ.) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটিই আমার কাছে পৌঁছেছে। [২৩০৭, ২৩০৮] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২০
أَبُو النُّعْمَانِ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عُمَرَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ح حَدَّثَنِيْ مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا قَفَلْنَا مِنْ حُنَيْنٍ سَأَلَ عُمَرُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ نَذْرٍ كَانَ نَذَرَهُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ اعْتِكَافٍ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِوَفَائِهِ وَقَالَ بَعْضُهُمْ حَمَّادٌ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ وَرَوَاهُ جَرِيْرُ بْنُ حَازِمٍ وَحَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ أَيُّوْبَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! …. হাদীসটি অন্য সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ)… ইব্নু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুনায়নের যুদ্ধ থেকে ফেরার কালে ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে জাহিলিয়্যাতের যুগে মানৎ করা তাঁর একটি ই’তিকাফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সেটি পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, হাদীসটি হাম্মাদ-আইয়ূব-নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া জারীর ইবনু হাযিম এবং হাম্মাদ ইব্নু সালামাহ (রহঃ) ও এ হাদীসটি আইয়ূব, নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সূত্রে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। [২০৩২] (আ.প্র. ৩৯৭৭, ই.ফা. ৩৯৮২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২১
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ كَثِيْرِ بْنِ أَفْلَحَ عَنْ أَبِيْ مُحَمَّدٍ مَوْلَى أَبِيْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَامَ حُنَيْنٍ فَلَمَّا الْتَقَيْنَا كَانَتْ لِلْمُسْلِمِيْنَ جَوْلَةٌ فَرَأَيْتُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ قَدْ عَلَا رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ فَضَرَبْتُهُ مِنْ وَرَائِهِ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ بِالسَّيْفِ فَقَطَعْتُ الدِّرْعَ وَأَقْبَلَ عَلَيَّ فَضَمَّنِيْ ضَمَّةً وَجَدْتُ مِنْهَا رِيْحَ الْمَوْتِ ثُمَّ أَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَأَرْسَلَنِيْ فَلَحِقْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ فَقُلْتُ مَا بَالُ النَّاسِ قَالَ أَمْرُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ رَجَعُوْا وَجَلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ قَتَلَ قَتِيْلًا لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ فَقُلْتُ مَنْ يَشْهَدُ لِيْ ثُمَّ جَلَسْتُ قَالَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ فَقُمْتُ فَقُلْتُ مَنْ يَشْهَدُ لِيْ ثُمَّ جَلَسْتُ قَالَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ فَقُمْتُ فَقَالَ مَا لَكَ يَا أَبَا قَتَادَةَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ رَجُلٌ صَدَقَ وَسَلَبُهُ عِنْدِيْ فَأَرْضِهِ مِنِّيْ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ لَاهَا اللهِ إِذًا لَا يَعْمِدُ إِلَى أَسَدٍ مِنْ أُسْدِ اللهِ يُقَاتِلُ عَنْ اللهِ وَرَسُوْلِهِ فَيُعْطِيَكَ سَلَبَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَدَقَ فَأَعْطِهِ فَأَعْطَانِيْهِ فَابْتَعْتُ بِهِ مَخْرَفًا فِيْ بَنِيْ سَلِمَةَ فَإِنَّهُ لَأَوَّلُ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ فِي الإِسْلَامِ.
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখী হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। এ সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে মুসলিমদের এক ব্যক্তিকে পরাভূত করে ফেলেছে। তাই আমি কাফির লোকটির পশ্চাৎ দিকে গিয়ে তরবারি দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ের মাঝে শক্ত শিরার উপর আঘাত হানলাম এবং লোকটির গায়ের লৌহ বর্মটি কেটে ফেললাম। এ সময় সে আমার উপর আক্রমণ করে বসল এবং আমাকে এত জোরে চাপ দিয়ে জড়িয়ে ধরল যে, আমি আমার মৃত্যুর বাতাস অনুভব করলাম। এরপর মৃত্যু লোকটিকে পেয়ে বসল আর আমাকে ছেড়ে দিল। এরপর আমি ‘উমার [ইবনুল খাত্তাব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর] কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মুসলিমদের হলটা কী? তিনি বললেন, মহান শক্তিধর আল্লাহ্র ইচ্ছা। এরপর সবাই (আবার) ফিরে এল (এবং মুশরিকদের উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হল)। যুদ্ধের পর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বসলেন এবং ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি কোন মুশরিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে তাঁকে তার (নিহত ব্যক্তির) পরিত্যক্ত সকল সম্পদ দেয়া হবে। এ ঘোষণা শুনে আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পক্ষে কেউ সাক্ষ্য দিবে কি? আমি বসে পড়লাম। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- ও অনুরূপ ঘোষণা দিলে আমি দাঁড়ালাম। তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তোমার কী হয়েছে? আমি তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম। এ সময় এক ব্যক্তি বলল, আবূ ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) ঠিকই বলেছেন, নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত বস্ত্রগুলো আমার কাছে আছে। সুতরাং সেগুলো আমার প্রাপ্তির ব্যাপারে আপনি তাঁকে সম্মত করুন। তখন আবূ বাক্র (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, না আল্লাহ্র শপথ! তা হতে পারে না। আল্লাহ্র সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি তোমাকে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) করতে পারে না। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ বাক্র ঠিকই বলছে। সুতরাং এসব দ্রব্য তুমি তাঁকে (আবূ ক্বাতাদাহ) দিয়ে দাও। [আবূ ক্বাতাদাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন] তখন সে আমাকে দ্রব্যগুলো দিয়ে দিল। এ দ্রব্যগুলোর বিনিময়ে আমি বানী সালামাহ্র এলাকায় একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটিই হল প্রথম সম্পদ যেটা ছিল আমার আর্থিক বুনিয়াদ। [২১০০] (আ.প্র. ৩৯৭৮/৩৯৭৯, ই.ফা. ৩৯৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২২
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِيْ يَحْيَى بْنُ سَعِيْدٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ كَثِيْرِ بْنِ أَفْلَحَ عَنْ أَبِيْ مُحَمَّدٍ مَوْلَى أَبِيْ قَتَادَةَ أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمَ حُنَيْنٍ نَظَرْتُ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ يُقَاتِلُ رَجُلًا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ وَآخَرُ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ يَخْتِلُهُ مِنْ وَرَائِهِ لِيَقْتُلَهُ فَأَسْرَعْتُ إِلَى الَّذِيْ يَخْتِلُهُ فَرَفَعَ يَدَهُ لِيَضْرِبَنِيْ وَأَضْرِبُ يَدَهُ فَقَطَعْتُهَا ثُمَّ أَخَذَنِيْ فَضَمَّنِيْ ضَمًّا شَدِيْدًا حَتَّى تَخَوَّفْتُ ثُمَّ تَرَكَ فَتَحَلَّلَ وَدَفَعْتُهُ ثُمَّ قَتَلْتُهُ وَانْهَزَمَ الْمُسْلِمُوْنَ وَانْهَزَمْتُ مَعَهُمْ فَإِذَا بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي النَّاسِ فَقُلْتُ لَهُ مَا شَأْنُ النَّاسِ قَالَ أَمْرُ اللهِ ثُمَّ تَرَاجَعَ النَّاسُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ أَقَامَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيْلٍ قَتَلَهُ فَلَهُ سَلَبُهُ فَقُمْتُ لِأَلْتَمِسَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيْلِيْ فَلَمْ أَرَ أَحَدًا يَشْهَدُ لِيْ فَجَلَسْتُ ثُمَّ بَدَا لِيْ فَذَكَرْتُ أَمْرَهُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ جُلَسَائِهِ سِلَاحُ هَذَا الْقَتِيْلِ الَّذِيْ يَذْكُرُ عِنْدِيْ فَأَرْضِهِ مِنْهُ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ كَلَّا لَا يُعْطِهِ أُصَيْبِغَ مِنْ قُرَيْشٍ وَيَدَعَ أَسَدًا مِنْ أُسْدِ اللهِ يُقَاتِلُ عَنْ اللهِ وَرَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَدَّاهُ إِلَيَّ فَاشْتَرَيْتُ مِنْهُ خِرَافًا فَكَانَ أَوَّلَ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ فِي الإِسْلَامِ.
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখলাম যে, এক মুসলিম এক মুশরিকের সঙ্গে লড়াই করছে। আরেক মুশরিক মুসলিম ব্যক্তিটির পেছন থেকে তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করছে। তখন আমি তার হাতের উপর আঘাত ক’রে তা কেটে ফেললাম। সে আমাকে ধরে ভীষণ ভাবে চাপ দিল। এমনকি আমি শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। এরপর সে আমাকে ছেড়ে দিল ও দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে হত্যা করলাম। মুসলিমগণ পালাতে লাগলে আমিও তাঁদের সঙ্গে পালালাম। হঠাৎ লোকের মাঝে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে দেখতে পেলাম। তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কী? তিনি বললেন, আল্লাহ্র যা ইচ্ছা। এরপর লোকেরা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট ফিরে এলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যে (মুসলিম) ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করতে পারবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যাকে হত্যা করেছি তার সম্পর্কে সাক্ষী খোঁজার জন্য আমি দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে এমন কাউকে পেলাম না। তখন বসে পড়লাম। এরপর আমার সুযোগমত ঘটনাটি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে জানালাম। তখন তাঁর পাশে উপবিষ্ট একজন বললেন- উল্লিখিত নিহত ব্যক্তির হাতিয়ার আমার কাছে আছে, সেগুলো আমাকে দিয়ে দেয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করুন। তখন আবূ বাক্র (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, না, তা হতে পারে না। আল্লাহ্র সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ কুরাইশী দুর্বল ব্যক্তিকে তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] দিতে পারেন না। রাবী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটিই ছিল প্রথম সম্পদ, যদ্দারা আমি আমার আর্থিক বুনিয়াদ করেছি। [২১০০] (আ.প্র. ৩৯৭৮/৩৯৭৯, ই.ফা. ৩৯৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫৬. অধ্যায়ঃ
আওতাসের যুদ্ধ
৪৩২৩
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ بُرَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا فَرَغَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ حُنَيْنٍ بَعَثَ أَبَا عَامِرٍ عَلَى جَيْشٍ إِلَى أَوْطَاسٍ فَلَقِيَ دُرَيْدَ بْنَ الصِّمَّةِ فَقُتِلَ دُرَيْدٌ وَهَزَمَ اللهُ أَصْحَابَهُ قَالَ أَبُوْ مُوْسَى وَبَعَثَنِيْ مَعَ أَبِيْ عَامِرٍ فَرُمِيَ أَبُوْ عَامِرٍ فِيْ رُكْبَتِهِ رَمَاهُ جُشَمِيٌّ بِسَهْمٍ فَأَثْبَتَهُ فِيْ رُكْبَتِهِ فَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ يَا عَمِّ مَنْ رَمَاكَ فَأَشَارَ إِلَى أَبِيْ مُوْسَى فَقَالَ ذَاكَ قَاتِلِي الَّذِيْ رَمَانِيْ فَقَصَدْتُ لَهُ فَلَحِقْتُهُ فَلَمَّا رَآنِيْ وَلَّى فَاتَّبَعْتُهُ وَجَعَلْتُ أَقُوْلُ لَهُ أَلَا تَسْتَحْيِيْ أَلَا تَثْبُتُ فَكَفَّ فَاخْتَلَفْنَا ضَرْبَتَيْنِ بِالسَّيْفِ فَقَتَلْتُهُ ثُمَّ قُلْتُ لِأَبِيْ عَامِرٍ قَتَلَ اللهُ صَاحِبَكَ قَالَ فَانْزِعْ هَذَا السَّهْمَ فَنَزَعْتُهُ فَنَزَا مِنْهُ الْمَاءُ قَالَ يَا ابْنَ أَخِيْ أَقْرِئْ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم السَّلَامَ وَقُلْ لَهُ اسْتَغْفِرْ لِيْ وَاسْتَخْلَفَنِيْ أَبُوْ عَامِرٍ عَلَى النَّاسِ فَمَكُثَ يَسِيْرًا ثُمَّ مَاتَ فَرَجَعْتُ فَدَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ فِيْ بَيْتِهِ عَلَى سَرِيْرٍ مُرْمَلٍ وَعَلَيْهِ فِرَاشٌ قَدْ أَثَّرَ رِمَالُ السَّرِيْرِ بِظَهْرِهِ وَجَنْبَيْهِ فَأَخْبَرْتُهُ بِخَبَرِنَا وَخَبَرِ أَبِيْ عَامِرٍ وَقَالَ قُلْ لَهُ اسْتَغْفِرْ لِيْ فَدَعَا بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِيْ عَامِرٍ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ثُمَّ قَالَ اللهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيْرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنْ النَّاسِ فَقُلْتُ وَلِيْ فَاسْتَغْفِرْ فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلًا كَرِيْمًا قَالَ أَبُوْ بُرْدَةَ إِحْدَاهُمَا لِأَبِيْ عَامِرٍ وَالْأُخْرَى لِأَبِيْ مُوْسَى.
আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের [৭৪] বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌছালাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন। তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু’আ করতে বলবে। আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর স্থলে আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলাম, তারপর ইন্তিকাল করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য) একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ ‘আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)– এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, (মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে] আমার মাগফিরাতের জন্য দু’আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পানি আনতে বললেন এবং ‘উযু করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি বললেন। হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি দু’আ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী আবূ বুরদা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, দু’টি দু’আর একটি ছিল আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর জন্য আর অপরটি ছিল আবূ মূসা (আশআরী) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর জন্য। [২৮৮৪; মুসলিম ৪৪/৩৮, হাঃ ২৪৯৮, আহ্মাদ ১৯৭১৩] (আ.প্র. ৩৯৮০, ই.ফা. ৩৯৮৪)
[৭৪] তায়িফের অদূরে একটি উপত্যকার অধিবাসীদের কওমে আওতাস বলা হতো। অষ্টম হিজরী সনে হুনায়ন যুদ্ধের পর পরই তাদেরকে দমন করার জন্য আবূ মূসা আশ’আরীর ভাতিজা আবূ আমির (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে পাঠানো হয়েছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৬৪/৫৭. অধ্যায়ঃ
তায়িফের যুদ্ধ
মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেছেন এ যুদ্ধ অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে।
৪৩২৪
الْحُمَيْدِيُّ سَمِعَ سُفْيَانَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ أُمِّهَا أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَعِنْدِيْ مُخَنَّثٌ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ لِعَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ أُمَيَّةَ يَا عَبْدَ اللهِ أَرَأَيْتَ إِنْ فَتَحَ اللهُ عَلَيْكُمْ الطَّائِفَ غَدًا فَعَلَيْكَ بِابْنَةِ غَيْلَانَ فَإِنَّهَا تُقْبِلُ بِأَرْبَعٍ وَتُدْبِرُ بِثَمَانٍ وَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَا يَدْخُلَنَّ هَؤُلَاءِ عَلَيْكُنَّ قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ وَقَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ الْمُخَنَّثُ هِيْتٌ حَدَّثَنَا مَحْمُوْدٌ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ هِشَامٍ بِهَذَا وَزَادَ وَهُوَ مُحَاصِرُ الطَّائِفِ يَوْمَئِذٍ.
উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
আমার কাছে এক হিজড়া ব্যক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি শুনলাম যে, সে (হিজড়া ব্যক্তি) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়া (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে বলছে, হে ‘আবদুল্লাহ! কী বল, আগামীকাল যদি আল্লাহ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তা হলে গাইলানের কন্যাকে নিয়ে নিও। কেননা সে (এতই কোমলদেহী), সামনের দিকে আসার সময় তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। [উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন] তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এদেরকে তোমাদের কাছে ঢুকতে দিও না। [৭৫] ইবনু উয়াইনাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বর্ণনা করেন যে, ইবনু জুরাইজ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেছেন, হিজড়ার নাম ছিল হীত। (আ.প্র. ৩৯৮১, ই.ফা. ৩৯৮৫)
হিশাম (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি এ হাদীসে এতুটুকু বৃদ্ধি করেছেন যে, সেদিন তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] তায়িফ অবরোধ করা অবস্থায় ছিলেন। [৫২৩৫, ৫৮৮৭; মুসলিম ৩৯/১৩, হাঃ ২১৮০, আহমাদ ২৬৫৫২] (আ.প্র. ৩৯৮২, ই.ফা. ৩৯৮৬)
[৭৫] হিজড়াদের সম্মুখেও পর্দার বিধান প্রযোজ্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২৫
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ الشَّاعِرِ الْأَعْمَى عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ لَمَّا حَاصَرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الطَّائِفَ فَلَمْ يَنَلْ مِنْهُمْ شَيْئًا قَالَ إِنَّا قَافِلُوْنَ إِنْ شَاءَ اللهُ فَثَقُلَ عَلَيْهِمْ وَقَالُوْا نَذْهَبُ وَلَا نَفْتَحُهُ وَقَالَ مَرَّةً نَقْفُلُ فَقَالَ اغْدُوْا عَلَى الْقِتَالِ فَغَدَوْا فَأَصَابَهُمْ جِرَاحٌ فَقَالَ إِنَّا قَافِلُوْنَ غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ فَأَعْجَبَهُمْ فَضَحِكَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً فَتَبَسَّمَ قَالَ قَالَ الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ الْخَبَرَ كُلَّهُ.
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তায়িফ অবরোধ করলেন। কিন্তু তাদের নিকট কিছুই হাসিল করতে পারেননি। তাই তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ আমরা (অবরোধ উঠিয়ে মাদীনাহ্র দিকে) ফিরে যাব। কথাটি সহাবীদের মনে ভারী লাগল। তাঁরা বললেন, আমরা চলে যাব, তায়িফ বিজয় করব না? বর্ণনাকারী একবার কাফিলুন শব্দের স্থলে নাকফুলো (অর্থাৎ আমরা ‘যুদ্ধবিহীন ফিরে যাব’) বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে সকালে গিয়ে লড়াই কর। তাঁরা (পরদিন) সকালে লড়াই করতে গেলেন, এতে তাঁদের অনেকেই আহত হলেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইনশাআল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাব। তখন সহাবাদের কাছে কথাটি মনঃপূত হল। এতে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হাসলেন। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান (রহঃ) একবার বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মুচকি হাসি হেসেছেন। হুমাইদী (রহঃ) বলেন, সুফ্ইয়ান আমাদেরকে এ হাদীসের পূর্ণ সূত্রটিতে ‘খবর’ শব্দটি ব্যবহার করে বর্ণনা করেছেন। [৬০৮৬, ৭৪৮০; মুসলিম ৩২/২৯, হাঃ ১৭৭৮, আহমাদ ৪৫৮৮] (আ.প্র. ৩৯৮৩, ই.ফা. ৩৯৮৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২৬
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَاصِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَهُوَ أَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَبَا بَكْرَةَ وَكَانَ تَسَوَّرَ حِصْنَ الطَّائِفِ فِيْ أُنَاسٍ فَجَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَا سَمِعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ وَهُوَ يَعْلَمُ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ.
وَقَالَ هِشَامٌ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ أَوْ أَبِيْ عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَأَبَا بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَاصِمٌ قُلْتُ لَقَدْ شَهِدَ عِنْدَكَ رَجُلَانِ حَسْبُكَ بِهِمَا قَالَ أَجَلْ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَأَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَنَزَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ وَعِشْرِيْنَ مِنْ الطَّائِفِ.
আবূ ‘উসমান [নাহ্দী (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনেছি সা‘দ থেকে, যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) থেকেও শুনেছি যিনি (তায়িফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়িফের পাঁচিলের উপর চড়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দু’জনই বলেছেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।
হিশাম (রহ.) বলেন, মা‘মার (রহ.) আমাদের কাছে ‘আসিম-আবুল ‘আলিয়া (রহ.) অথবা আবূ ‘উসমান নাহদী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা‘দ এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহ.) বলেন, আমি (আবুল ‘আলিয়া অথবা আবূ ‘উসমান) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২৭
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ عَاصِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَهُوَ أَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَبَا بَكْرَةَ وَكَانَ تَسَوَّرَ حِصْنَ الطَّائِفِ فِيْ أُنَاسٍ فَجَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَا سَمِعْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيْهِ وَهُوَ يَعْلَمُ فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ.
وَقَالَ هِشَامٌ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ عَاصِمٍ عَنْ أَبِي الْعَالِيَةِ أَوْ أَبِيْ عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ قَالَ سَمِعْتُ سَعْدًا وَأَبَا بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ عَاصِمٌ قُلْتُ لَقَدْ شَهِدَ عِنْدَكَ رَجُلَانِ حَسْبُكَ بِهِمَا قَالَ أَجَلْ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَأَوَّلُ مَنْ رَمَى بِسَهْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الْآخَرُ فَنَزَلَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثَالِثَ ثَلَاثَةٍ وَعِشْرِيْنَ مِنْ الطَّائِفِ.
আবূ ‘উসমান [নাহ্দী (রহঃ)] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনেছি সা‘দ থেকে, যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) থেকেও শুনেছি যিনি (তায়িফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়িফের পাঁচিলের উপর চড়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দু’জনই বলেছেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবী করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।
হিশাম (রহ.) বলেন, মা‘মার (রহ.) আমাদের কাছে ‘আসিম-আবুল ‘আলিয়া (রহ.) অথবা আবূ ‘উসমান নাহদী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা‘দ এবং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহ.) বলেন, আমি (আবুল ‘আলিয়া অথবা আবূ ‘উসমান) (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। আর অপরজন হলেন তায়েফ থেকে (প্রাচীর টপকে) এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন। [৬৭৬৬, ৬৭৬৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২৮
مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ حَدَّثَنَا أَبُوْ أُسَامَةَ عَنْ بُرَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ نَازِلٌ بِالْجِعْرَانَةِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةِ وَمَعَهُ بِلَالٌ فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ أَلَا تُنْجِزُ لِيْ مَا وَعَدْتَنِيْ فَقَالَ لَهُ أَبْشِرْ فَقَالَ قَدْ أَكْثَرْتَ عَلَيَّ مِنْ أَبْشِرْ فَأَقْبَلَ عَلَى أَبِيْ مُوْسَى وَبِلَالٍ كَهَيْئَةِ الْغَضْبَانِ فَقَالَ رَدَّ الْبُشْرَى فَاقْبَلَا أَنْتُمَا قَالَا قَبِلْنَا ثُمَّ دَعَا بِقَدَحٍ فِيْهِ مَاءٌ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيْهِ وَمَجَّ فِيْهِ ثُمَّ قَالَ اشْرَبَا مِنْهُ وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوْهِكُمَا وَنُحُوْرِكُمَا وَأَبْشِرَا فَأَخَذَا الْقَدَحَ فَفَعَلَا فَنَادَتْ أُمُّ سَلَمَةَ مِنْ وَرَاءِ السِّتْرِ أَنْ أَفْضِلَا لِأُمِّكُمَا فَأَفْضَلَا لَهَا مِنْهُ طَائِفَةً.
আবূ মূসা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট মাক্কাহ ও মাহীনাহ্র মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলাম। তখন বিলাল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর কাছে ছিলেন। এমন সময়ে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর। সে বলল, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি ক্রোধ ভরে আবূ মূসা ও বিলাল (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- এর দিকে ফিরে বললেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা দু’জন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি পানির একটি পাত্র আনতে বললেন। তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে কুল্লি করলেন। তারপর বললেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে নির্দেশ মত কাজ করলেন। এমন সময় উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু আনহা) পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও অতিরিক্ত কিছু রাখ। কাজেই তাঁরা এ থেকে অতিরিক্ত কিছু তাঁর [উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু আনহা)- এর] জন্য রাখলেন। [১৮৮] (আ.প্র. ৩৯৮৫, ই.ফা. ৩৯৮৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩২৯
يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيْلُ حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ عَطَاءٌ أَنَّ صَفْوَانَ بْنَ يَعْلَى بْنِ أُمَيَّةَ أَخْبَرَهُ أَنَّ يَعْلَى كَانَ يَقُوْلُ لَيْتَنِيْ أَرَى رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ يُنْزَلُ عَلَيْهِ قَالَ فَبَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِالْجِعْرَانَةِ وَعَلَيْهِ ثَوْبٌ قَدْ أُظِلَّ بِهِ مَعَهُ فِيْهِ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ إِذْ جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مُتَضَمِّخٌ بِطِيْبٍ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَيْفَ تَرَى فِيْ رَجُلٍ أَحْرَمَ بِعُمْرَةٍ فِيْ جُبَّةٍ بَعْدَمَا تَضَمَّخَ بِالطِّيْبِ فَأَشَارَ عُمَرُ إِلَى يَعْلَى بِيَدِهِ أَنْ تَعَالَ فَجَاءَ يَعْلَى فَأَدْخَلَ رَأْسَهُ فَإِذَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مُحْمَرُّ الْوَجْهِ يَغِطُّ كَذَلِكَ سَاعَةً ثُمَّ سُرِّيَ عَنْهُ فَقَالَ أَيْنَ الَّذِيْ يَسْأَلُنِيْ عَنِ الْعُمْرَةِ آنِفًا فَالْتُمِسَ الرَّجُلُ فَأُتِيَ بِهِ فَقَالَ أَمَّا الطِّيْبُ الَّذِيْ بِكَ فَاغْسِلْهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ وَأَمَّا الْجُبَّةُ فَانْزِعْهَا ثُمَّ اصْنَعْ فِيْ عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِيْ حَجِّكَ.
সাফওয়ান ইবনু ইয়া’লা ইব্নু উমাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
ইয়া’লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলতেন যে, আহা! রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার মুহূর্তে যদি তাঁকে দেখতে পেতাম। ইয়া’লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন ইতোমধ্যে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জি’রানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর উপর একটি কাপড় টানিয়ে ছায়া করে দেয়া হয়েছিল। আর সেখানে তাঁর সঙ্গে তাঁর কতিপয় সাহাবীও ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক বেদুঈন আসল। তাঁর গায়ে ছিল একটি খুশবু মাখানো জোব্বা। সে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কী যে গায়ে খুশবু মাখানো জোব্বা পরিধান ক’রে ‘উমরাহ্ আদায়ের জন্য ইহ্রাম বেঁধেছে? (এমন সময়) ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) হাত দিয়ে ইশারা করে ইয়া’লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু)- কে আসতে বললেন। ইয়া’লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এলে ‘উমার (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর মাথাটি (কাপড়ের ছায়ায়) ঢুকিয়ে দিলেন। [তখন তিনি ইয়া’লা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) দেখতে পেলেন যে] নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর চেহারা লাল বর্ণ হয়ে রয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস জোরে চলছে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ পর্যন্ত ছিল, তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল। তখন তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] বললেন, সে লোকটি কোথায়, কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে “উমরাহ্র বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিল। লোকটিকে খুঁজে আনা হলে তিনি বললেনঃ তোমার গায়ে যে খুশবু রয়েছে তা তুমি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জোব্বাটি খুলে ফেল। তারপর হাজ্জ পালনে যা কর, ‘উমরাহ্তেও সেগুলোই কর। [১৫৩৬] (আ.প্র. ৩৯৮৬, ই.ফা. ৩৯৯০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩০
مُوْسَى بْنُ إِسْمَاعِيْلَ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ حَدَّثَنَا عَمْرُوْ بْنُ يَحْيَى عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيْمٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ قَالَ لَمَّا أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ حُنَيْنٍ قَسَمَ فِي النَّاسِ فِي الْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَلَمْ يُعْطِ الْأَنْصَارَ شَيْئًا فَكَأَنَّهُمْ وَجَدُوْا إِذْ لَمْ يُصِبْهُمْ مَا أَصَابَ النَّاسَ فَخَطَبَهُمْ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمْ اللهُ بِيْ وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِيْنَ فَأَلَّفَكُمْ اللهُ بِيْ وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمْ اللهُ بِيْ كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمَنُّ قَالَ مَا يَمْنَعُكُمْ أَنْ تُجِيْبُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمَنُّ قَالَ لَوْ شِئْتُمْ قُلْتُمْ جِئْتَنَا كَذَا وَكَذَا أَتَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالشَّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَذْهَبُوْنَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى رِحَالِكُمْ لَوْلَا الْهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرًَا مِنَ الْأَنْصَارِ وَلَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَشِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ وَشِعْبَهَا الْأَنْصَارُ شِعَارٌ وَالنَّاسُ دِثَارٌ إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِيْ أُثْرَةً فَاصْبِرُوْا حَتَّى تَلْقَوْنِيْ عَلَى الْحَوْضِ.
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে গানীমাতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই দিলেন না। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তাঁরা তা পাননি। অথবা তিনি বলেছেনঃ তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যোরা যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি, অতঃপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমারা ছিলে দরিদ্র, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলেছেন, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র রসূলের জবাব দিতে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলেছেন তার উত্তরে বলে যাচ্ছেন, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন কিন্তু তোমরা কি কথায় সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বক্রী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহ্র নাবীকে সঙ্গে নিয়ে। যদি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আমাকে হিজরাত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হল (নাববী) ভিতরের পোশাক আর অন্যান্য লোক হল উপরের পোশাক। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করবে (দ্বীনের উপর টিকে থাকবে) যে পর্যন্ত না তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর। [৭২৪৫; মুসলিম ১২/৪৬, হাঃ ১০৬১, আহমাদ ১৬৪৭০] (আ.প্র. ৩৯৮৭, ই.ফা. ৩৯৯১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩১
عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ نَاسٌ مِنَ الْأَنْصَارِ حِيْنَ أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ صلى الله عليه وسلم مَا أَفَاءَ مِنْ أَمْوَالِ هَوَازِنَ فَطَفِقَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُعْطِيْ رِجَالًا الْمِائَةَ مِنَ الإِبِلِ فَقَالُوْا يَغْفِرُ اللهُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُعْطِيْ قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا وَسُيُوْفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ قَالَ أَنَسٌ فَحُدِّثَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِمَقَالَتِهِمْ فَأَرْسَلَ إِلَى الْأَنْصَارِ فَجَمَعَهُمْ فِيْ قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ وَلَمْ يَدْعُ مَعَهُمْ غَيْرَهُمْ فَلَمَّا اجْتَمَعُوْا قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا حَدِيْثٌ بَلَغَنِيْ عَنْكُمْ فَقَالَ فُقَهَاءُ الْأَنْصَارِ أَمَّا رُؤَسَاؤُنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ فَلَمْ يَقُوْلُوْا شَيْئًا وَأَمَّا نَاسٌ مِنَّا حَدِيْثَةٌ أَسْنَانُهُمْ فَقَالُوْا يَغْفِرُ اللهُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُعْطِيْ قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا وَسُيُوْفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَإِنِّيْ أُعْطِيْ رِجَالًا حَدِيْثِيْ عَهْدٍ بِكُفْرٍ أَتَأَلَّفُهُمْ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالأَمْوَالِ وَتَذْهَبُوْنَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى رِحَالِكُمْ فَوَاللهِ لَمَا تَنْقَلِبُوْنَ بِهِ خَيْرٌ مِمَّا يَنْقَلِبُوْنَ بِهِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ رَضِيْنَا فَقَالَ لَهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَتَجِدُوْنَ أُثْرَةً شَدِيْدَةً فَاصْبِرُوْا حَتَّى تَلْقَوْا اللهَ وَرَسُوْلَهُ صلى الله عليه وسلم فَإِنِّيْ عَلَى الْحَوْضِ قَالَ أَنَسٌ فَلَمْ يَصْبِرُوْا.
আনাস ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাঁর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গানীমাত হিসেবে যতটুকু দান করতে চেয়েছেন দান করলেন, তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কতিপয় লোককে একশ’ করে উট দান করলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন, আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে ক্ষমা করুন, তিনি কুরায়শদেরকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে বাদ দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তলোয়ার থেকে এখলো তাদের রক্ত টপটপ করে পড়ছে। আনাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, তাঁদের একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে জমায়েত এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে অনুমতি দিলেন না। এরপর তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের নিকট হতে কী কথা আমার নিকট পৌঁছল? আনসারদের জ্ঞানীগুণী লোকেরা বললেনঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা বলেছে যে, আল্লাহ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গানীমাতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারীগুলো থেকে এখনো তাদের রক্ত টপটপ করে পড়ছে। তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফ্র ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্যে যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঢ় করতে পারি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহ্র) নাবীকে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহ্র কসম! তোমরা যে জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাবে। আনসারগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রবল অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। অতএব, (আমার মৃত্যুর পর) আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে। আমি হাউজে কাউসারের নিকট থাকব। আনাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) ধৈর্যধারণ করেননি। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৮৮, ই.ফা. ৩৯৯২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩২
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ عَنْ أَنَسٍ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ فَتْحِ مَكَّةَ قَسَمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم غَنَائِمَ بَيْنَ قُرَيْشٍ فَغَضِبَتْ الْأَنْصَارُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالدُّنْيَا وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالُوْا بَلَى قَالَ لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا أَوْ شِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ أَوْ شِعْبَهُمْ.
আনাস (ইবনু মালিক) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিনে রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের মধ্যে গানীমাতের মাল বন্টন করে দিলেন। এতে আনসারগণ নাখোশ হয়ে গেলেন। তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকজন পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে ফিরবে? তাঁরা উত্তর দিলেন, অবশ্যই (আমরা সন্তুষ্ট)। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি লোকজন কোন উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যাকা বা গিরিপথ দিয়ে চলব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৮৯, ই.ফা. ৩৯৯৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩৩
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا أَزْهَرُ عَنْ ابْنِ عَوْنٍ أَنْبَأَنَا هِشَامُ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ الْتَقَى هَوَازِنُ وَمَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَشَرَةُ آلَافٍ وَالطُّلَقَاءُ فَأَدْبَرُوْا قَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ قَالُوْا لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ لَبَّيْكَ نَحْنُ بَيْنَ يَدَيْكَ فَنَزَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَنَا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَانْهَزَمَ الْمُشْرِكُوْنَ فَأَعْطَى الطُّلَقَاءَ وَالْمُهَاجِرِيْنَ وَلَمْ يُعْطِ الْأَنْصَارَ شَيْئًا فَقَالُوْا فَدَعَاهُمْ فَأَدْخَلَهُمْ فِيْ قُبَّةٍ فَقَالَ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالشَّاةِ وَالْبَعِيْرِ وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتْ الْأَنْصَارُ شِعْبًا لَاخْتَرْتُ شِعْبَ الْأَنْصَارِ.
আনাস (ইবনু মালিক) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়ন [৭৬]- এর দিন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখি হলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (মুহাজির ও আনসার সৈনিক) এবং (মক্কার) নও-মুসলিম। যুদ্ধে এরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। এ মুহূর্তে তিনি [নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] বললেন, ওহে আনসার সকল! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্র বান্দা এবং তাঁর রসূল। মুশরিকরা পরাজিত হল। তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে (গানীমাতে) বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। (এতে তারা নিজেদের মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল।) তখন তিনি তাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর জমায়েত করলেন এবং বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন বাক্রী ও উট নিয়ে যাবে আর তোমরা আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে। এরপর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরো বললেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই বেছে নেব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯০, ই.ফা. ৩৯৯৪)
[৭৬] মাক্কাহ বিজয়ের পর হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রগুলো চিন্তা করলো তারা যদি মুসলিমদেরকে পরাজিত করতে পারে তাহলে মাক্কাহবাসীর যে সব বাগান ও জায়গীর তায়িফে রয়েছে সেগুলো বিনা বাধায় তাদেরই হয়ে যাবে। আর মুসলিমদের উপর মূর্তি ভাঙ্গার অপরাধের প্রতিশোধও নেয়া যাবে।
তারা বানূ মুযার ও বানূ হেলাল গোত্রকেও তাদের সাথে নিয়ে নিলো এবং চার হাজার বীর যোদ্ধা নিয়ে মাক্কাহর পথে রওয়ানা হলো। তারা হুনায়নের উপত্যকায় এসে অবতরণ করলো। তাদের নেতা মালিক ইবনু ‘আউফের পরামর্শক্রমে তাদের স্ত্রী, শিশু, মাল ও গবাদি পশুকেও সঙ্গে নিয়ে ছিল, তাঁর যুক্তি ছিল এর ফলে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাবে না।
এ সংবাদ শুনে নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ হতে সামনে অগ্রসর হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মাক্কাহর আরও দু’হাজার লোক যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অমুসলিমরাও ছিল এবং চুক্তিবদ্ধ মূর্তী পূজকরাও ছিল। সৈন্যদের মোট সংখ্যা বারো হাজারে দাঁড়িয়েছিল। নিজেদের সংখ্যাধিক্য দেখে সৈন্যদের মনে অহংকারও এসে গিয়েছিল এবং এজন্যে তারা যেখানে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এরূপ স্থলেও সতর্কতা অবলম্বন করেনি। শত্রুপক্ষ পূর্ব হতেই সেখানে প্রস্তুত হয়েছিল। পাহাড়ের আবশ্যকীয় ঘাটিগুলি অধিকার করে এবং নিকটবর্তী উপত্যকায় বহু সংখ্যক আব্যর্থ লক্ষ্য তীরন্দাজ সৈন্য বসিয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থা বেশ মযবুত করে নিয়েছিল। প্রাতঃকালে মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হবার আয়োজন করেছে, এমন সময় হাওয়াযেনের বিরাট বাহিনী প্রচন্ড বেগে তাদের উপর আপতিত হলো। নব দীক্ষিত মুসলিম এবং অমুসলিম সৈন্যরা আগ্রহাতিশয্য বশতঃ বাহিনীর অগ্রে যাত্রা করছিল। তাদের অনেকের নিকট আবশ্যকীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ছিল না। তারা অসতর্ক অবস্থায় শত্রুদের ঘাটির নিকট পৌঁছল। এমতাবস্থায় শত্রুরা তাদের উপর এতো তীর বর্ষণ করলো যে, অগ্রবর্তী সেনাদল মুখ ফিরিয়ে পালাতে শুরু করলো। মুসলিমরা এটা সামলে নিয়ে শত্রু পক্ষের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন বটে, কিন্তু অগ্রবর্তী সৈন্যদলের ঐ ঘৃণিত পলায়নের জন্য তখন এমনই বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের সে চেষ্টায় বিশেষ কোন ফল হলো না। এই ভীষণ দুর্যোগের মধ্যে পতিত হয়েও রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুহূর্তের জন্যেও বিচলিত হননি। এই সময় তিনি নিজের শ্বেত খচ্চরের উপর আরোহণ করে মুসলিমদেরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু ঐ বিশৃঙ্খলা ও কোলাহলের মধ্যে তাঁর কণ্ঠস্বর কারো কর্ণে প্রবেশ করলো না। দু’একজন ব্যতীত সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। ঐ সময় আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর খচ্চরের লাগাম এবং আবু সুফ্ইয়ান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) তাঁর পালানের রেকাব ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। মাত্র আর দু-তিন জন মুসলিম তাঁর পাশে টিকে ছিলেন।
দ্বাদশ সহস্র আত্নোৎসর্গী সৈন্য চক্ষের পলকে উধাও হয়ে গেছে। অগনিত শত্রু সেনা নাঙ্গা তরবারী হস্তে আক্রমণ করতে আসছে, সেদিকে তাঁর একটুও লক্ষ নেই। ঐ সময় তিনি খচ্চর হতে অবতরন করলেন এবং নতজানু হয়ে নিজের পরম জনের নিকট সাহায্য ও শক্তি প্রার্থনা করতে লাগলেন। তারপর পুনরায় খচ্চরে আরোহণ করে অগণিত শত্রুদলের উপর আক্রমণ করার জন্য তিনি দ্রুতবেগে আগ্রসর হলেন। ঐ সময় তিনি দৃঢ় কন্ঠে ও গুরুগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করলেনঃ (আরবী)
“আমি নাবী, এতে মিথ্যার লেশমাত্র নেই, আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।” ভাবার্থ ছিলঃ আমার সত্যবাদিতার মাপকাঠি কোন সেনাবাহিনীর জয় বা পরাজয় নয়, বরং আমার সত্যবাদিতা স্বয়ং আমার স্বত্ত্বার দ্বারা হয়ে থাকে।”
ঐ সময় ‘আব্বাস (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) একটি উচ্চ স্থানে আরোহণ পূর্বক তার স্বভাব সিদ্ধ উচ্চ কন্ঠে মুসলিমদেরকে আহবান করতে লাগলেনঃ হে আনসার বীরগণ! হে শাজারার বায়’আতকারীগণ! হে মুসলিম বীরবৃন্দ! হে মুহাজিরগণ! কোথায় তোমরা? এই দিকে ছুটে এসো।”
সদ্য প্রসূত গাভী যেমন স্বীয় বৎসের বিপদ দর্শনে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসে, ‘আব্বাসের (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) আহবান শ্রবন করে মুসলিম সৈনিকগণ এরূপ ছুটে আসতে লাগলেন। অতঃপর নতুনভাবে সৈন্যদের শ্রেণী বিন্যাস করা হলো। আনসার ও মুহাজিরকে আগে বাড়িয়ে দেয়া হল। এরপর তারা শত্রু পক্ষকে সমবেতভাবে আক্রমণ করলেন। শত্রুরা মুসলিমদের তরবারির সামনে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারলো না। তারা স্ত্রী পুত্র রণ সম্ভার ও সমস্ত ধণ দৌলত যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলেই ইতস্ততঃ পালিয়ে গেল।
পলায়নের পর শত্রু পক্ষের কতক সৈন্য তাদের নেতা মালিক ইবনু আওফের সাথে তায়িফের দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলো।
দ্বিতীয় দল, যাদের সাথে তাদের পরিবার বর্গ ছিল এবং ধন-সম্পদ ছিল, আওতাসের ঘাঁটিতে গিয়ে আত্নগোপন করলো।
রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়িফের দূর্গ অবরোধের নির্দেশ দিলেন এবং আওতাসের দিকে আবু আমির আশ’আরী (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) পৌঁছে শত্রুদের স্ত্রী-পুত্র ও ধন-সম্পদের উপর অধিকার লাভ করলেন। নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন আওতাসের ফলাফল অবগত হলেন তখন তিনি দূর্গের অবরোধ উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। কেননা, ঐ লোকগুলি স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কঠিন বিপদে পড়েছিল।
আওতাসের ২৪ হাজার উট, চল্লিশ হাজার বকরী, চার হাজার উকিয়া চাঁদি এবং ছয় হাজার নারী ও শিশু মুসলিমদের হস্তগত হয়েছিল।
রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও যুদ্ধ ক্ষেত্রেই ছিলেন। এমন সময় হাওয়াযেন গোত্রের ছয় জন সর্দার আসলো এবং করুণার আবেদন পেশ করলো।
তাদের মধ্যে ঐ লোকগুলি ছিল যারা তায়েফে নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর উপর পাথর বর্ষণ করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত যায়েদ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) সেখান হতে রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে অজ্ঞান অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে আসেন।
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হাঁ আমি স্বয়ং তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম (এবং এই অপেক্ষার মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে যায় এবং গানীমাতের মালও বন্টিত হয়নি)। আমি আমার অংশের এবং আমার বংশের ভাগের বন্দীদেরকে সহজেই ছেড়ে দিতে পারি। আর আমার সাথে যদি শুধু আনসার ও মুহাজিরই থাকতো তাহলে সবাইকে ছেড়ে দেয়াও কঠিন ছিল না। কিন্তু তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ যে, এই সেনাবাহিনীতে আমার সাথে ঐ লোকেরা রয়েছে যারা এখনও মুসলিম হয়নি। এ জন্যে একটা কৌশলের প্রয়োজন আছে। তোমরা আগামীকাল ফজরের ছালাতের সময়ে এসো এবং সাধারণ সমাবেশে তোমাদের আবেদন পেশ করো। ঐ সময় কোন এক উপায় বের হয়ে আসবে।” তিনি আরো বললেনঃ “তোমরা হয় ধনমাল নেয়া পছন্দ করো অথবা স্ত্রী-পুত্র। কেননা, আক্রমণকারী সৈন্যদের সব কিছুই ছেড়ে দেয়া কঠিন।”
পরের দিন ঐ নেতৃ বর্গই আসলো এবং তারা সাধারণ সমাবেশে নিজেদের বন্দীদের মুক্তির আবেদন নাবী কারীমের (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খিদমতে পেশ করলো।
তুলনাবিহীন দয়া দাক্ষিণ্য ও করুণা প্রদর্শনঃ রাহমাতের নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমি আমার ও বানু আবদিল মুত্তালিবের বন্দীদেরকে কোন বিনিময় গ্রহণ ছাড়াই মুক্ত করে দিচ্ছি।” আনসার ও মুহাজিররা তাঁর এ ঘোষণা শুনে বললেনঃ “আমরাও নিজ নিজ বন্দীদেরকে কোন মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্ত করে দিলাম।”
এখন বাকী থাকল বানু সালিম ও বানু ফাযরাহ্। তাদের কাছে এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল যে, আক্রমণকারী সৈন্যদের প্রতি (যারা ভাগ্যক্রমে পরাজিত হয়েছে) এরূপ দয়া প্রদর্শন করা হবে। এ জন্য তারা নিজ নিজ অংশের বন্দীদেরকে মুক্ত করল না। রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ডাকলেন। প্রত্যেক বন্দীর মূল্য ছয়টি উট নির্ধারণ করা হলো। এই মূল্য নাবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজেই প্রদান করলেন। এভাবে বাকী বন্দীদেরকে তিনি মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বন্দীদের প্রত্যেককে নতুন বস্ত্র পরিয়ে বিদায় করলেন।
দুধ-বোনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনঃ এই বন্দীদের মধ্যে দাই হালীমার কন্যা শায়মা বিনতুল হারিসও ছিল। নাবী কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঐ দুধ-বোনকে চিনতে পারলেন এবং তার সম্মানে নিজের চাদরখানা মাটিতে বিছিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেনঃ “যদি তুমি আমার কাছে থাকো তাহলে ভালো কথা। আর যদি তুমি নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফিরে যেতে চাও তাহলে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।” সে ফিরে যেতে চাওয়ায় রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সসম্মানে তার কওমের মধ্যে পাঠিয়ে দিলেন।
অকৃত্রিম সহচরদের আন্তরিকতার নমুনাঃ গানীমাতের মাল রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ জায়গাতেই বন্টন করে দিলেন। বড় বড় অংশ তিনি ঐ লোকদেরকে প্রদান করলেন যারা অল্পদিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আনসারদেরকে, যারা অত্যন্ত অকৃত্রিম ছিলেন, কিছুই দিলেন না। তিনি বললেনঃ “আনসারদের সাথে আমি নিজেই আছি। মানুষ ধন-দৌলত নিয়ে নিজ নিজ বাড়ীতে যাবে, আর আনসারগণ আল্লাহ্র রসূলকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে নিজেদের বাড়ীতে প্রবেশ করবে।”
আনসারগণ এতে এতো সন্তুষ্ট হন যে সম্পদ প্রাপকরা এমন সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেননি। (রাহমাতুল লিল ‘আলামীন)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩৪
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ قَالَ سَمِعْتُ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَمَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَاسًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ إِنَّ قُرَيْشًا حَدِيْثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ وَمُصِيْبَةٍ وَإِنِّيْ أَرَدْتُ أَنْ أَجْبُرَهُمْ وَأَتَأَلَّفَهُمْ أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَرْجِعَ النَّاسُ بِالدُّنْيَا وَتَرْجِعُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى بُيُوْتِكُمْ قَالُوْا بَلَى قَالَ لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتْ الْأَنْصَارُ شِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الْأَنْصَارِ أَوْ شِعْبَ الْأَنْصَارِ.
আনাস ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আনসারদের লোকজনকে জমায়েত করে বললেন, কুরাইশরা সবেমাত্র জাহিলীয়্যাত ছেড়েছে আর তারা দুর্দশাগ্রস্ত। তাই আমি তাদেরকে অনুদান দিয়ে তাদের মন জয় করার ইচ্ছা করেছি। তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাবে আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে। তারা বললেন, অবশ্যই আমরা সন্তুষ্ট। তিনি আরো বললেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে, তা হলে আনসারদের গিরিপথ অথবা তিনি বলেছেন, আনসারদের উপত্যকা দিয়েই চলব। [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯১, ই.ফা. ৩৯৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩৫
قَبِيْصَةُ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَمَّا قَسَمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قِسْمَةَ حُنَيْنٍ قَالَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ مَا أَرَادَ بِهَا وَجْهَ اللهِ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرْتُهُ فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ ثُمَّ قَالَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَى مُوْسَى لَقَدْ أُوْذِيَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ.
আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হুনাইনের গানীমাত বন্টন করলেন, তখন আনসারদের এক ব্যক্তি বলে ফেলল যে, এই বন্টনের ব্যাপারে তিনি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করেননি। কথাটি শুনে আমি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে কথাটি জানিয়ে দিলাম। তখন তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ, মূসা (আঃ)– এর উপর রাহমাত বর্ষণ করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল। তাতে তিনি ধৈর্য ধারণ করেছিলেন। [৩১৫০] (আ.প্র. ৩৯৯২, ই.ফা. ৩৯৯৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩৬
قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا جَرِيْرٌ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ آثَرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نَاسًا أَعْطَى الْأَقْرَعَ مِائَةً مِنَ الإِبِلِ وَأَعْطَى عُيَيْنَةَ مِثْلَ ذَلِكَ وَأَعْطَى نَاسًا فَقَالَ رَجُلٌ مَا أُرِيْدَ بِهَذِهِ الْقِسْمَةِ وَجْهُ اللهِ فَقُلْتُ لَأُخْبِرَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رَحِمَ اللهُ مُوْسَى قَدْ أُوْذِيَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ.
আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কোন কোন লোককে (গানীমাতের মাল) প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেন। যেমন আকরা’কে একশ’ উট দিয়েছিলেন। ‘উয়াইনাহ্কে ততই দিয়েছিলেন। অন্যদেরকেও দিয়েছিলেন। এতে এক ব্যক্তি বলে উঠল, এ বণ্টনে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। (রাবী বলেন) তখন আমি বললাম, অবশ্যই আমি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- কে এ কথা জানিয়ে দিব। [এ কথা জানানো হলে নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)] বললেন, আল্লাহ মূসা (আঃ)- এর উপর রহম করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল। তাতে তিনি ধৈর্য ধারণ করেন। [৩১৫০] (আ.প্র. ৩৯৯৩, ই.ফা. ৩৯৯৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
- সরাসরি
৪৩৩৭
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ حَدَّثَنَا ابْنُ عَوْنٍ عَنْ هِشَامِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمَ حُنَيْنٍ أَقْبَلَتْ هَوَازِنُ وَغَطَفَانُ وَغَيْرُهُمْ بِنَعَمِهِمْ وَذَرَارِيِّهِمْ وَمَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَشَرَةُ آلَافٍ وَمِنْ الطُّلَقَاءِ فَأَدْبَرُوْا عَنْهُ حَتَّى بَقِيَ وَحْدَهُ فَنَادَى يَوْمَئِذٍ نِدَاءَيْنِ لَمْ يَخْلِطْ بَيْنَهُمَا الْتَفَتَ عَنْ يَمِيْنِهِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ قَالُوْا لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَبْشِرْ نَحْنُ مَعَكَ ثُمَّ الْتَفَتَ عَنْ يَسَارِهِ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ قَالُوْا لَبَّيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَبْشِرْ نَحْنُ مَعَكَ وَهُوَ عَلَى بَغْلَةٍ بَيْضَاءَ فَنَزَلَ فَقَالَ أَنَا عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُهُ فَانْهَزَمَ الْمُشْرِكُوْنَ فَأَصَابَ يَوْمَئِذٍ غَنَائِمَ كَثِيْرَةً فَقَسَمَ فِي الْمُهَاجِرِيْنَ وَالطُّلَقَاءِ وَلَمْ يُعْطِ الْأَنْصَارَ شَيْئًا فَقَالَتْ الْأَنْصَارُ إِذَا كَانَتْ شَدِيْدَةٌ فَنَحْنُ نُدْعَى وَيُعْطَى الْغَنِيْمَةَ غَيْرُنَا فَبَلَغَهُ ذَلِكَ فَجَمَعَهُمْ فِيْ قُبَّةٍ فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ مَا حَدِيْثٌ بَلَغَنِيْ عَنْكُمْ فَسَكَتُوْا فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَلَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالدُّنْيَا وَتَذْهَبُوْنَ بِرَسُوْلِ اللهِ تَحُوْزُوْنَهُ إِلَى بُيُوْتِكُمْ قَالُوْا بَلَى فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَسَلَكَتْ الْأَنْصَارُ شِعْبًا لَأَخَذْتُ شِعْبَ الْأَنْصَارِ وَقَالَ هِشَامٌ قُلْتُ يَا أَبَا حَمْزَةَ وَأَنْتَ شَاهِدٌ ذَاكَ قَالَ وَأَيْنَ أَغِيْبُ عَنْهُ.
আনাস ইবনু মালিক (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়নের দিন হাওয়াযিন, গাতফান ও অন্যান্য গোত্রগুলো নিজেদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এল। আর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (ও কিছু সংখ্যক) তুলাকা [৭৭] সৈনিক। যুদ্ধে তারা সবাই তাঁর পাশ থেকে পিছনে সরে গেল। ফলে তিনি একাকী রয়ে গেলেন। সেই সময়ে তিনি আলাদা আলাদাভাবে দু’টি ডাক দিয়েছিলেন, তিনি ডান দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারগণ! তাঁরা সবাই উত্তর করলেন, আমরা উপস্থিত হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। এরপর তিনি বাম দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারগণ! তাঁরা সবাই উত্তরে বললেন, আমরা উপস্থিত হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাদা রঙের খচ্চরটির পিঠে ছিলেন। তিনি নিচে নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহ্র বান্দা এবং তাঁর রসূল। (শেষে) মুশরিকরাই পরাজিত হল। সে যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গানীমাত হস্তগত হল। তিনি সেসব সম্পদ মুহাজির এবং নও-মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দেননি। তখন আনসারদের (কেউ কেউ) বললেন, কঠিন মুহূর্ত আসলে ডাকা হয় আমাদেরকে আর গানীমাত দেয়া হয় অন্যদেরকে। কথাটি নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাই তিনি তাদেরকে একটি তাঁবুতে জমায়েত করে বললেন, ওহে আনসারগণ! একী কথা আমার কাছে পৌঁছল? তাঁরা চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, হে আনসারগণ! তোমরা কি খুশি থাকবে না যে, লোকজন দুনিয়ার ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা (বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহ্র রসূলকে সঙ্গে নিয়ে? তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই। তখন নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করে নেব। বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ হামযাহ (আনাস ইবনু মালিক) আপনি কি এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তাঁর নিকট হতে কখন বা অনুপস্থিত থাকতাম? [৩১৪৬] (আ.প্র. ৩৯৯৪, ই.ফা. ৩৯৯৮)
[৭৭] ইবনু হাজার আসকালানী ও কিরমানী প্রভৃতি হাদীসবেত্তাগণের মতে তুলাকা শব্দের পূর্বে একটি ওয়াও উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ দশ হাজার মুহাজির ও আনসার এবং মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস