Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শবে বরাতের ফজিলত আমল ও নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও ইতিহাস

শবে বরাতের ফজিলত আমল ও নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও ইতিহাস Info

শবে বরাতের ফজিলত আমল ও নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও ইতিহাস Description

শবে বরাতের ফজিলত আমল ও নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও ইতিহাস

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের ফজিলত আমল ও নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও ইতিহাস এবং শবে বরাত সম্পর্কিত আরো অনেক কিছু।

শবে বরাত অর্থ কি

শব ফারসি শব্দ। অর্থ রাত বা রজনী। বরাত শব্দটিও মূলে ফারসি। অর্থ ভাগ্য। দু’শব্দের একত্রে অর্থ হবে, ভাগ্য- রজনী।

বরাত শব্দটি আরবী ভেবে অনেকেই ভুল করে থাকেন। কারণ বরাত বলতে আরবী ভাষায় কোনো শব্দ নেই।

যদি বরাত শব্দটি আরবী বারাআত শব্দের অপভ্রংশ ধরা হয় তবে তার অর্থ হবে – সম্পর্কচ্ছেদ বা বিমুক্তিকরণ। কিন্তু কয়েকটি কারণে এ অর্থটি এখানে অগ্রাহ্য, মেনে নেয়া যায় না-

১. আগের শব্দটি ফারসী হওয়ায় বরাত শব্দটিও ফারসী হবে, এটাই স্বাভাবিক।

২. শাবানের মধ্যরজনীকে আরবী ভাষার দীর্ঘ পরম্পরায় কেউই বারা’আতের রাত্রি হিসাবে আখ্যা দেন নি।

৩. রমযান মাসের লাইলাতুল কাদরকে কেউ-কেউ লাইলাতুল বারাআত হিসেবে নামকরণ করেছেন, শাবানের মধ্যরজনীকে নয়।

আরবী ভাষায় এ রাতটিকে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান- শাবান মাসের মধ্য রজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়।

শবে বরাতের ফজিলত

শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযিলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:

১. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

“এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবেন? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোনো স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “মহান আল্লাহ তা’আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন”।

হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিযী তার সুনানে (২/১২১, ১২২) বর্ণনা করে বলেন, ইমাম বুখারীকে এ হাদীসটিকে দুর্বল বলতে শুনেছি। অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত।

২. আবু মূসা আল আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমন করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন”। হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০) এবং তাবরানী তার মুজামুল কাবীর (২০/১০৭, ১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

আল্লামা বুছীরি বলেন, ইবন মাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদ দুর্বল। তাবরানী বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আল্লামা হাইসামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মাজমাআয যাওয়ায়েদ (৮/৬৫) গ্রন্থে বলেন, তাবরানী বর্ণিত হাদীসটির সনদের সমস্ত বর্ণনাকারী শক্তিশালী। হাদীসটি ইবন হিব্বানও তার ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে দেখুন, মাওয়ারেদুজ জামআন, হাদীস নং: ১৯৮০, পূ:- ৪৮৬।

৩. আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যখন শাবানের মধ্যরাত্রি আসবে তখন তোমরা সে রাতের কিয়াম তথা রাতভর সালাত পড়বে, আর সে দিনের সাওম রাখবে; কেননা সে দিন সুর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ক্ষমা চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব? রিযিক চাওয়ার কেউ কি আছে যাকে আমি রিযিক দেব? সমস্যাগ্রস্ত কেউ কি আছে যে আমার কাছে পরিত্রাণ কামনা করবে আর আমি তাকে উদ্ধার করব? এমন এমন কেউ কি আছে? এমন এমন কেউ কি আছে? ফজর পর্যন্ত তিনি এভাবে বলতে থাকেন”।

হাদীসটি ইমাম ইবন মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৮) বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বৃছীরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার যাওয়ায়েদে ইবন মাজাহ (২/১০) গ্রন্থে বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবন আবি সুবরাহ রয়েছেন যিনি হাদীস বানাতেন। তাই হাদীসটি বানোয়াট।

উল্লিখিত আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, শাবানের মধ্যরাত্রির ফযিলত বিষয়ে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই দুর্বল অথবা বানোয়াট, আর তাই গ্রাহ্যতারহিত।

প্রাজ্ঞ আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, দুর্বল হাদীস দ্বারা কোনো আহকাম – বিধান প্রমাণ করা যায় না। দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার জন্য কয়েকটি শর্ত লাগিয়েছেন তারা। শর্তগুলো নিম্নরূপ –

১. হাদীসটির মূল বক্তব্য অন্য কোনো সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করবে না, বরং কোনো শুদ্ধ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

২. হাদীসটি একেবারেই দুর্বল অথবা বানোয়াট হলে চলবে না।

৩. হাদীসটির উপর আমল করার সময় এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত বলে বিশ্বাস

করা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত বলে বিশ্বাস করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর মিথ্যাচারিতার পাপ হবে, ফলে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে পড়বে।

৪. হাদীসটি ফাদায়িল তথা কোনো আমলের ফযিলত বর্ণনা সংক্রান্ত হতে হবে। আহকাম (ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হারাম, মাকরূহ) ইত্যাদি সাব্যস্তকারী হওয়া যাবে না।

৫. বান্দা ও তার প্রভুর মাঝে একান্ত ব্যক্তিগত কোনো আমলের ক্ষেত্রে হাদীসটির নির্ভরতা নেয়া যাবে। তবে এ হাদীসের ওপর আমল করার জন্য একে অপরকে আহবান করতে পারবে না।

এই শর্তাবলীর আলোকে যদি উপরোক্ত হাদীসগুলো পরীক্ষা করে দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, উপরোক্ত হাদীসসমূহের মধ্যে শেষোক্ত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি বানোয়াট। সুতরাং তার উপর আমল করা উম্মাতের আলেমদের ঐক্যমতে জায়েয হবে না।

প্রথম হাদীসটি দুর্বল, দ্বিতীয় হাদীসটিও অধিকাংশ আলেমের মতে দুর্বল, যদিও কোনো-কোনো আলেম এর বর্ণনাকারীগণকে শক্তিশালী বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কেবলমাত্র বর্ণনাকারী শক্তিশালী হলেই হাদীস বিশুদ্ধ হওয়া সাব্যস্ত হয় না।

মোট কথা: প্রথম ও দ্বিতীয়, এ হাদীস দু’টি দুর্বল। খুব দুর্বল বা বানোয়াট নয়। সে হিসেবে যৎকিঞ্চিৎ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এ রাত্রির ফযিলত রয়েছে।

এই সূত্রেই অনেক হাদীসবিদ শাবানের মধ্যরাতের ফযিলত রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন:

ইমাম আহমাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। [ইবন তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে (২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]

ইমাম আওযায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। [ইমাম ইবন রাজাব তার লাতায়েফুল মাআরিফ গ্রন্থে (পৃ: ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। (ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১, ১৩৩, ১৩৪)

ইমাম ইবন রাজাব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। (তার লাতায়েফুল মাআরিফ পৃ: ১৪৪ দ্রষ্টব্য)

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। (ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯)

উপরোক্ত মুহাদ্দিসগনসহ আরো অনেকে এ রাত্রিকে ফযিলতের রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু আমরা যদি উপরে উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় হাদীসটি পাঠ করে দেখি তাহলে দেখতে পাব আল্লাহ তা’আলা নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানাতে থাকেন- হাদীসদ্বয়ে এ বক্তব্যই উপস্থাপিত হয়েছে। মূলতঃ সহীহ হাদীসে সুস্পষ্ট এসেছে যে,

“আল্লাহ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হয়ে আহবান জানাতে থাকেন- এমন কেউ কি আছে, যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? এমন কেউ কি আছে, যে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি তাকে দেব? আমার কাছে ক্ষমা চাইবে; আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮)

সুতরাং আমরা এ হাদীসদ্বয়ে অতিরিক্ত কোনো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। সুতরাং এ রাত্রির বিশেষ কোনো বিশেষত্ব আমাদের নজরে পড়ছে না। এজন্যই শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে এ রাত্রির অতিরিক্ত ফযিলত অস্বীকার করেছেন।

এ রাত্রি কী ভাগ্য রজনী?

না, এ রাত্রি ভাগ্য রজনী নয়। মূলতঃ এ রাত্রিকে ভাগ্য রজনী বলার পেছনে কাজ করছে সূরা আদ-দুখানের ৩ ও ৪ আয়াত দু’টির ভুল ব্যাখ্যা। তা হলো:

“অবশ্যই আমরা তা (কুরআন) এক মুবারক রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি, অবশ্যই আমরা সতর্ককারী, এ রাত্রিতে যাবতীয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।” [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩-৪]

এ আয়াতদ্বয়ের তাফসীরে অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, এ আয়াত দ্বারা রমযানের লাইলাতুল কদরকেই বুঝানো হয়েছে। যে লাইলাতুল কাদরের চারটি নাম রয়েছে: ১. লাইলাতুল কদর, ২. লাইলাতুল বারাআত, ৩. লাইলাতুচ্ছফ, ৪.লাইলাতুল মুবারাকাহ। শুধুমাত্র ইকরিমা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, এ আয়াত দ্বারা শাবানের মধ্যরাত্রিকে বুঝানো হয়েছে। এটা একটি অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা।

আল্লামা ইবন কাসীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলোচ্য আয়াতে মুবারক রাত্রি বলতে লাইলাতুল কাদর বুঝানো হয়েছে, যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

“আমরা এ কুরআনকে কাদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।” [সূরা আল-কাদর, আয়াত: ১] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

“রমযান এমন একটি মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫]

যিনি এ রাত্রিকে শাবানের মধ্যবর্তী রাত বলে মত প্রকাশ করেছেন, যেমনটি ইকরিমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি অনেক দূরবর্তী মত গ্রহণ করেছেন; কেননা কুরআনের সুস্পষ্ট বাণী তা রমযান মাসে বলে ঘোষণা দিয়েছে। (তাফসীরে ইবন কাসীর ( ৪/১৩৭ )

অনুরূপভাবে আল্লামা শাওকানীও এ মত প্রকাশ করেছেন। (তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর (৪/৭০৯)

সুতরাং ভাগ্য রজনী হলো লাইলাতুল ক্বাদর যা রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিগুলো।

আর এতে করে এও সাব্যস্ত হলো যে, এ আয়াতের তাফসীরে ইকরিমা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মতভেদ করলেও তিনি শাবানের মধ্য তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল বারাআত নামকরণ করেন নি।

শবে বরাতের আমল

শাবানের মধ্যরাত্রি পালন করার কী হুকুম এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে তিনটি মত রয়েছে:

এক. শাবানের মধ্য রাত্রিতে মাসজিদে জামাতের সাথে সালাত ও অন্যান্য ইবাদত করা জায়েয। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী খালেদ ইবন মিদান, লুকমান ইবন আমের সুন্দর পোশাক পরে, আতর-খুশবু, সুরমা মেখে মাসজিদে গিয়ে মানুষদের নিয়ে এ রাত্রিতে সালাত আদায় করতেন। এ মতটি ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়ীয়াহ থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (লাতায়েফুল মাআরেফ পৃ:- ১৪৪)

তারা তাদের মতের পক্ষে কোনো দলীল পেশ করেন নি। আল্লামা ইবন রাজাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাদের মতের পক্ষে দলীল হিসাবে বলেনঃ তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি তথা পূর্ববর্তী উম্মাতদের থেকে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছিল, সে অনুসারে তারা আমল করেছিলেন। তবে পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন দুর্বল হাদীস তাদের দলীল হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে।

দুই. শাবানের মধ্যরাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত বন্দেগী করা জায়েয। ইমাম আওযায়ী, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া এবং আল্লামা ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম এ মত পোষণ করেন।

যে সমস্ত হাদীস দ্বারা এ রাত্রির ফযিলত বর্ণিত হয়েছে সে সমস্ত সাধারণ হাদীসের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের মতের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করাকে জায়েয মনে করেন।

তিন, এ ধরনের ইবাদত সম্পূর্ণরূপে বিদআত- চাই তা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা সামষ্টিকভাবে। ইমাম আতা ইবন আবি রাবাহ, ইবন আবি মুলাইকা, মদীনার ফুকাহাগণ, ইমাম মালেকের ছাত্রগণ ও অন্যান্য আরো অনেকেই এ মত পোষণ করেছেন। এমনকি ইমাম আওযায়ী যিনি শাম তথা সিরিয়াবাসীদের ইমাম বলে প্রসিদ্ধ তিনিও এ ধরনের ঘটা করে মাসজিদে ইবাদত পালন করাকে বিদআত বলে ঘোষণা করেছেন।

তাদের মতের পক্ষে যুক্তি হলো:

১. এ রাত্রির ফযিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো দলীল নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাত্রিতে কোনো সুনির্দিষ্ট ইবাদত করেছেন বলে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়নি। অনুরূপভাবে তার কোনো সাহাবী থেকেও কিছু বর্ণিত হয়নি। তাবেয়ীনদের মধ্যে তিনজন ব্যতীত আর কারো থেকে বর্ণিত হয়নি।

আল্লামা ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শাবানের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার সাহাবাদের থেকে কোনো সালাত পড়া প্রমাণিত হয়নি। যদিও শামদেশীয় সুনির্দিষ্ট কোনো কোনো তাবেয়ীন থেকে তা বর্ণিত হয়েছে। (লাতায়েফুল মাআরিফ : ১৪৫ )

শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ রাত্রির ফযিলত বর্ণনায় কিছু দুর্বল হাদীস এসেছে যার উপর ভিত্তি করা জায়েয নেই, আর এ রাত্রিতে সালাত আদায়ে বর্ণিত যাবতীয় হাদীসই বানোয়াট, আলেমগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন।

২. হাফেজ ইবন রজব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি কোনো কোনো তাবেয়ীনদের থেকে এ রাত্রির ফযিলত রয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ঐ সমস্ত তাবেয়ীনদের কাছে দলীল হলো যে তাদের কাছে এ ব্যাপারে ইসরাইলি কিছু বর্ণনা এসেছে।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, যারা এ রাত পালন করেছেন তাদের দলীল হলো যে তাদের কাছে ইসরাইলি বর্ণনা এসেছে, আমাদের প্রশ্ন: ইসরাইলি বর্ণনা এ উম্মাতের জন্য কিভাবে দলীল হতে পারে?

৩. যে সমস্ত তাবেয়ী থেকে এ রাত উদযাপনের সংবাদ এসেছে তাদের সমসাময়িক প্রখ্যাত ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনগণ তাদের এ সব কর্মকান্ডের নিন্দা করেছেন। যারা তাদের নিন্দা করেছেন তাদের মধ্যে প্রখ্যাত হলেন- ইমাম আতা ইবন আবি রাবাহ, যিনি তার যুগের সর্বশ্রেষ্ট মুফতি ছিলেন, আর যার সম্পর্কে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছিলেন, তোমরা আমার কাছে প্রশ্নের জন্য একত্রিত হও, অথচ তোমাদের কাছে ইবন আবি রাবাহ রয়েছে।

সুতরাং যদি ঐ রাত্রি উদযাপনকারীদের পক্ষে কোনো দলীল থাকত, তাহলে তারা আতা ইবন আবি রাবাহর বিপক্ষে তা অবশ্যই পেশ করে তাদের কর্মকাণ্ডের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন, অথচ এরকম করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি।

৪. পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, যে সমস্ত দুর্বল হাদীসে ঐ রাত্রির ফযিলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র সে রাত্রিতে আল্লাহর অবতীর্ণ হওয়া এবং ক্ষমা করা প্রমাণিত হয়েছে, এর বাইরে কিছুই বর্ণিত হয়নি। মূলতঃ এ অবতীর্ণ হওয়া ও ক্ষমা চাওয়ার আহবান প্রতি রাতেই আল্লাহ তা’আলা করে থাকেন। যা সুনির্দিষ্ট কোনো রাত বা রাতসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এর বাইরে দুর্বল হাদীসেও অতিরিক্ত কোনো ইবাদত করার নির্দেশ নেই।

৫. আর যারা এ রাত্রিতে ব্যক্তিগতভাবে আমল করা জায়েয বলে মন্তব্য করেছেন তাদের মতের পক্ষে কোনো দলীল নেই। কেননা এ রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বা তার সাহাবা কারো থেকেই ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক কোনো ভাবেই কোনো প্রকার ইবাদত করেছেন বলে বর্ণিত হয়নি।

এর বিপরীতে শরীয়তের সাধারণ অনেক দলীল এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে, তন্মধ্যে রয়েছে:

আল্লাহ বলেন,

“আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাবে যা এর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭)

তিনি আরো বলেছেন,

“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করবে যার উপর আমাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো নির্দেশ নেই তা অগ্রহণযোগ্য”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮ )

শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আর ইমাম আওযায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যে এ রাতে ব্যক্তিগত ইবাদত করা ভাল মনে করেছেন, আর যা হাফেয ইবন রাজাব পছন্দ করেছেন, তাদের এ মত অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বরং দুর্বল; কেননা কোনো কিছু যতক্ষণ পর্যন্ত না শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে জায়েয বলে সাব্যস্ত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলিমের পক্ষেই দ্বীনের মধ্যে তার অনুপ্রবেশ ঘটানো বৈধ হবে না। চাই তা ব্যক্তিগতভাবে করুক বা সামষ্টিক – দলবদ্ধভাবে। চাই গোপনে করুক বা প্রকাশ্যে। কারণ বিদআতকর্ম অস্বীকার করে এবং তা থেকে সাবধান করে যে সমস্ত প্রমাণাদি এসেছে সেগুলো সাধারণভাবে তার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। (আত্তাহযীর মিনাল বিদআ: ১৩)

৬. শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমরা জুম’আর রাত্রিকে অন্যান্য রাত থেকে ক্বিয়াম / সালাতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, আর জুম’আর দিনকেও অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা করে সাওমের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নিও না, তবে যদি কারো সাওমের দিনে সে দিন ঘটনাচক্রে এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা”। (মুসলিম, হাদীস নং: ১১৪৪, ১৪৮)। যদি কোনো রাতকে ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো তবে অবশ্যই জুম’আর রাতকে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট করা জায়েয হতো; কেননা জুম’আর দিনের ফযিলত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে,

“সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয় তন্মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন, জুমুআর দিন”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৪)। সুতরাং যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর দিনকে বিশেষভাবে ক্বিয়াম / সালাতের জন্য সুনির্দিষ্ট করা থেকে নিষেধ করেছেন সেহেতু অন্যান্য রাতগুলোকে অবশ্যই ইবাদতের জন্য সুনির্দিষ্ট করে নেয়া জায়েয হবে না। তবে যদি কোনো রাত্রের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো দলীল এসে যায় সেটা ভিন্ন কথা। আর যেহেতু লাইলাতুল ক্বাদর এবং রমযানের রাতের ক্বিয়াম / সালাত পড়া জায়েয সেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রাতগুলোর ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীস এসেছে।

শবে বরাতের নামাজ

শা’বানের মধ্যরাত্রিতে একশত রাকাত সালাতের প্রতি রাকাতে দশবার সূরা কুলহু ওয়াল্লাহ (সূরা ইখলাস) দিয়ে সালাত পড়ার যে নিয়ম প্রচলিত হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বিদআত।

শবে বরাতের নামাজের ইতিহাস

এ সালাতের প্রথম প্রচলন হয় হিজরী ৪৪৮ সনে। ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের ইবন আবিল হামরা নামীয় একলোক বায়তুল মুকাদ্দাস আসেন। তার তিলাওয়াত ছিল সুমধুর। তিনি শাবানের মধ্যরাত্রিতে নামাযে দাঁড়ালে তার পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ায়, তারপর তার সাথে তৃতীয় জন এসে যোগ দেয়, তারপর চতুর্থ জন। তিনি সালাত শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে।

পরবর্তী বছর এলে, তার সাথে অনেকেই যোগ দেয় ও সালাত আদায় করে। এতে করে মাসজিদুল আক্সাতে এ সালাতের প্রথা চালু হয়। কালক্রমে এ সালাত এমনভাবে আদায় হতে লাগে যে অনেকেই তা সুন্নাত মনে করতে শুরু করে। (ত্বারতুসী, হাওয়াদেস ও বিদআ পৃ: ১২১, ১২২, ইবন কাসীর, বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৪/২৪৭, ইবনুল কাইয়েম, আল-মানারুল মুনিফ পূ: ১৯)

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

প্রথা অনুযায়ী এ সালাতের পদ্ধতি হলো, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস দশবার করে পড়ে মোট একশত রাকাত সালাত পড়া। যাতে করে সূরা ইখলাস ১০০০ বার পড়া হয়। (এহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন ১/২০৩)

এ ধরনের সালাত সম্পূর্ণ বিদআত। কারণ এ ধরনের সালাতের বর্ণনা কোনো হাদীসের কিতাবে আসেনি। কোনো কোনো বইয়ে এ সম্পর্কে যে সকল হাদীস উল্লেখ করা হয় সেগুলো কোনো হাদীসের কিতাবে আসেনি। আর তাই আল্লামা ইবনুল জাওযী (মাওদুআত ১/১২৭-১৩০), হাফ্যে ইরাকী (তাখরীজুল এহইয়া), ইমাম নববী (আল-মাজমু ৪/৫৬), আল্লামা আবু শামাহ (আল-বায়স পৃ: ৩২-৩৬), শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা, (ইকতিদায়ে ছিরাতুল

মুস্তাকীম ২/৬২৮), আল্লামা ইবন আররাক (তানযীহুশ শরীয়াহ ২/৯২), ইবন হাজার আল-আসকালানী, আল্লামা সুয়ূতী (আল-আমর বিল ইত্তেবা পৃ: ৮১, আল-লাআলিল মাসনূআ ২/৫৭), আল্লামা শাওকানী (ফাওয়ায়েদুল মাজমু’আ পৃ: ৫১) সহ আরো অনেকেই এগুলোকে “বানোয়াট হাদীস” বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।

শবে বরাতের নামাজের হুকুম

সঠিক জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণের মতে এ ধরণের সালাত বিদআত; কেননা এ ধরনের সালাত আল্লাহর রাসূল পড়েননি, তার কোনো খলীফাও পড়েননি এবং সাহাবীগণও পড়েননি। আয়িম্মায়ে হুদা তথা আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ, সাওরী, আওযায়ী, লাইসসহ অন্যান্যগণ কেউই এ ধরনের সালাত পড়েননি বা পড়তে বলেননি। আর এ ধরনের সালাতের বর্ণনায় যেই হাদীসসমূহ কেউ কেউ উল্লেখ করে থাকেন তা উম্মাতের আলেমদের ইজমা অনুযায়ী বানোয়াট। (এর জন্য দেখুন: ইবন তাইমিয়ার মাজমু’ল ফাতাওয়া ২৩/১৩১, ১৩৩, ১৩৪, ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৮, আবু শামাহ: আল-বায়েছ পৃ: ৩২-৩৬, রশীদ রিদা: ফাতাওয়া ১/২৮, আলী মাহফুজ, ইবদা’ পৃ: ২৮৬, ২৮৮, ইবন বায: আত্তাহযীর মিনাল বিদআ পৃ: ১১-১৬)

শবে বরাতের রোজা

উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শাবান মাসে সবচেয়ে বেশী সাওম রাখতেন। (এর জন্য দেখুন: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৬৫৭ )

সে হিসাবে যদি কেউ শাবান মাসে সাওম রাখেন তবে তা হবে সুন্নাত। শাবান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোনো দিন সাওম রাখা জায়েয বা সাওয়াবের কাজ। তবে সাওম রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু শাবান মাসে সাওম পালন করেছিলেন তাকে অনুসরণ করে সাওম রাখা হচ্ছে।

অথবা যদি কারও আইয়ামে বিদের নফল সাওম তথা মাসের ১৩, ১৪, ১৫ এ তিনদিন সাওম রাখার নিয়ম থাকে তিনিও সাওম রাখতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র শাবানের পনের তারিখ সাওম রাখা বিদআত হবে। কারণ শরীয়তে এ সাওমের কোনো ভিত্তি নেই।

আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার তাওফিক দিন। আমীন!

টীকা: যদি শাবানের মধ্যরাত্রিকে উদযাপন করা বা ঘটা করে পালন করা জায়েয হতো তাহলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আমাদের জানাতেন। বা তিনি নিজেই তা করতেন। আর যদি এমন কিছু তিনি করে থাকতেন তাহলে সাহাবাগণ অবশ্যই তা উম্মাতের কাছে বর্ণনা করতেন। তারা নবীদের পরে জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ, সবচেয়ে বেশী নসীহতকারী, কোনো কিছুই তারা গোপন করেন নি। (আত্তহযীর মিনাল বিদা ১৫, ১৬) উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে কুরআন, হাদীস ও গ্রহণযোগ্য আলেমদের বাণী থেকে আমরা জানতে পারলাম শাবানের মধ্য রাত্রিকে ঘটা করে উদযাপন করা চাই তা সালাতের মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোনো ইবাদতের মাধ্যমে অধিকাংশ আলেমদের মতে জঘন্যতম বিদআত। শরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই। বরং তা সাহাবাদের যুগের পরে প্রথম শুরু হয়েছিল। যারা সত্যের অনুসরণ করতে চায় তাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা করতে বলেছেন তাই যথেষ্ট।

শবে বরাতের ফজিলত আমল ও নামাজ সম্পর্কে হাদিস ও ইতিহাস

শবে বরাত বিষয়ক সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীস

Rate the Post

Latest Book

Latest Post

Latest Post

Scroll to Top