বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আবু তাহের মিসবাহ এর লেখা বই এসো কুরআন শিখি এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
এসো কোরআন শিখি ১ম খণ্ড – আবু তাহের মিসবাহ
এসো কোরআন শিখি ২য় খণ্ড – আবু তাহের মিসবাহ
এসো কোরআন শিখি ৩য় খণ্ড – আবু তাহের মিসবাহ
এসো কোরআন শিখি ৪র্থ খণ্ড – আবু তাহের মিসবাহ
আমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীতে, মানুষ করে এবং মুসলমান করে, আমি তাঁর প্রশংসা করি, যে প্রশংসা রাবে কারীমের শান-উপযোগী।
আমাকে যিনি ইলম দান করেছেন, কোরআন থেকে এবং সুন্নাহ থেকে, আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, যে কৃতজ্ঞতা বান্দায়ে ফাকীরের হাল-উপযোগী। আমাকে যিনি দান করেছেন কলম এবং কলমের কালি, আমাকে যিনি দান করেছেন কলব এবং কলবের ‘তাজাল্লি’ আমি তার নামে তাসবীহ পড়ি, যে তাসবীহ তাঁর চিরপবিত্রতার উপযোগী।
রহমান-রাহীম আল্লাহ যেন কবুল করেন কমযোর বান্দার কমযোর কলমের ‘টুটা-ফাটা’ এই হামদ-ছানা এবং এই তাসবীহ- শোকরানা। আমীন
তা’লীম-তাছনীফ ও শিক্ষা-গবেষণার ক্ষেত্রে এক নগণ্য খাদেম হিসাবে আল্লাহর রহমতে আমার জীবনে সন্তোষ ও সন্তুষ্টি এবং তৃপ্তি ও পরিতৃপ্তির কিছু মুহূর্ত এসেছে। এখন থেকে ছাব্বিশ বছর পূর্বে (এসো আরবী শিখি)-এর প্রথম প্রকাশের সৌভাগ্য-স্মৃতি এবং অন্যান্য কিতাবের আত্মপ্রকাশের আনন্দ-অনুভূতি এখনো হৃদয়কে আমার রাব্বে কারীমের প্রতি শোকর ও কৃতজ্ঞতায় অভিভূত করে। কিন্তু আজ! এর আত্মপ্রকাশের মুহূর্তটি আমার জীবনের অন্যরকম এক মুহূর্ত। হৃদয় ও আত্মার শান্তি ও প্রশান্তির অনন্য এক মুহূর্ত। কেননা এটা হলো আমার কলমের প্রথম ফসল, যার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আল্লাহর কালাম আলকোরআনের সঙ্গে। আল্লাহর কালামের কোন হক আদায় করতে পারি নি। ন্যূনতম আদব রক্ষ করাও সম্ভব হয় নি; সেই সঙ্গে ইলমের দৈন্য ও দারিদ্র্য তো ছিলোই, তবু মেহেরবান আল্লাহ মাহরূম করেন নি। বান্দাকে তিনি তাঁর পাক কালামের খিদমতে কলম ব্যবহার করার তাওফীক দান করেছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটা তাঁরই মেহেরবানি। শোকর আলহামদু লিল্লাহ। এখানে প্রসঙ্গক্রমে দু’টি কথা আরয করতে চাই।
এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, তালিবে ইলমের যিন্দেগীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো আল্লাহর কালাম বুঝতে পারা। আমাদের নেছাবে তা’লীমের যাবতীয় উদ্যোগ আয়োজন এবং সাধনা ও অনুশীলনের এটাই হলো আসল মাকছুদ। আর আল্লাহর কালাম বোঝার প্রথম স্তর হলো ‘তারজামাতুল কোরআন’। এর মাধ্যমেই আমরা কোরআনুল কারীমের মহাজ্ঞানসমুদ্রের তীরে উপনীত হই। তারপর তাফসীরুল কোরআনের মাধ্যমে সেই মহাসমুদ্রে অবগাহন করি। এক্ষেত্রে আল্লাহ যাকে যত তাওফীক দান করেন সে ঐ মহাসমুদ্রের তত গভীরে ও তলদেশে পৌছতে পারে এবং সেই পরিমাণ মণিমুক্তা’ সংগ্রহ করতে পারে। এখানে কোন অন্ত নেই, সব অনন্ত; এখানে কোন সীমা নেই, সব অসীম। কেননা সাগর যদি হয় কালি তবে কালি ফুরিয়ে যাবে, আমার রাবের কালাম ফুরোবে না।
সুতরাং কোরআন হলো একজন তালিবে ইলমের জীবনব্যাপী সাধনা এবং ‘তা-যিন্দেগী’ মুজাহাদার বিষয়। আর তারজামাতুল কোরআনই হলো এই মহাসাধনা ও মুজাহাদার জগতে উপনীত হওয়ার প্রবেশপথ’। সুতরাং তারজামতুল কোরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
কিন্তু আফসোসের বিষয়, আমাদের নিছাবে তা’লীমে কখনো তারজামাতুল কোরআনকে স্বতন্ত্র বিষয় ও ‘ফন’ হিসাবে যথাযোগ্য গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি এবং এখনো পর্যন্ত তারজামাতুল কোরআনের জন্য পূর্ণাঙ্গ কোন পাঠব্যবস্থা ও পাঠ্যগ্রন্থ প্রণীত হয় নি। ফলে আমাদের ছাত্রজীবনে যেমন দেখেছি, তেমনি শিক্ষকজীবনেও দেখতে পাই, অধিকাংশ তালিবে ইলম তারজামাতুল কোরআনকে যথাযথভাবে আত্মস্থ করতে পারে না। খুব মেধাবী যারা তারা হয়ত কোনভাবে উত্তরে যায়, তবে অধিকতর সফলতার সম্ভাবনা থেকে তারাও বঞ্চিত হয়। সাধারণ তালিবানে ইলম যারা তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। এটা আমাদের নিছাবে তা’লীমের এমনই এক আশ্চর্য ‘অপূর্ণতা’ যার গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা নেই।
এ মন্তব্য এক কল্যাণকামী আপনজনের ব্যথিত হৃদয়ের মন্তব্য। কারণ দরসে নিযামীর শাজারায়ে তাইয়েবা’রই আমি এক ক্ষুদ্র ফল। আমার যা কিছু রস, গন্ধ ও স্বাদ তা এ ‘শুভবৃক্ষ’-এরই অবদান। আমার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত দরসে নিযামীর মহান পরিবারের সঙ্গেই জড়িত এবং সেজন্য আমি গর্বিত। সুতরাং আশা করি, গভীর চিন্তা’ ও পূর্ণ সহৃদয়তার সাথেই আমার মন্তব্য বিবেচনা করা হবে। তাছাড়া আজ থেকে বহু বছর আগে তাঁর সময়ে হযরত মাদানী (রাহ)ও এ বিষয়ে আফসোস করেছেন, সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন এবং সমাধানের পথ নির্দেশ করেছেন। কিন্তু তারপরো বিষয়টি ‘সতৃষ্ণ’ই রয়ে গেছে।
তবে এটা তো সত্য যে, আমাদের মহান পূর্ববর্তীগণ সর্বদা পূর্ণ থেকে পূর্ণতরের সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন এবং পরবর্তীদেরও সেই সাধনায় উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছেন। সুতরাং তাঁদের প্রদর্শিত পথে এগিয়ে যাওয়াই তো আমাদের কর্তব্য এবং তাঁদের, রেখে যাওয়া আমানতকে, পূর্ণতরের অব্যাহত প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থেকে পরবর্তীদের হাতে অর্পণ করে যাওয়াই তো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
আল্লাহর শোকর, আমার যাঁরা আসাতিযায়ে কেরাম, তাঁদেরই ছোহবত থেকে এ দায়িত্ব ও কর্তব্যের চেতনা আমার অন্তরে জাগ্রত হয়েছিলো এবং শিক্ষকজীবনের শুরু থেকেই এ চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো যে, তারজামাতুল কোরআনের তা’লীমকে কীভাবে সর্বস্তরের তালিবানে ইলমের জন্য সহজ ও ফলপ্রসূ করা যায়? তাত্ত্বিক চিন্তার পাশাপাশি প্রায়োগিক ক্ষেত্রেও আমি আমার ছাত্রদের উপর কিছু মেহনত অব্যাহত রেখেছিলাম। কয়েক বছরের চিন্তা ও মেহনতের নতিজা হিসাবে আমার মনে হয়েছে, যদি-
(ক) আমাদের নেছাবে তা’লীমের শুরু থেকে আরবীভাষা শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং তালিবে ইলমের মাঝে আরবীভাষার ন্যূনতম একটি যোগ্যতা তৈরী করা সম্ভব হয়
(খ) তারপর কোরআনুল কারীমের সহজ আয়াতগুলো নির্বাচন করে পর্যায়ক্রমে তরজমা শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা হয় এবং
(গ) চূড়ান্ত স্তরে পূর্ণ ইলমী আন্দাযে সমগ্র কোরআনের তরজমার তা’লীমের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ –
(ক) শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই কোরআন ও তারজামাতুল কোরআনের সঙ্গে তালিবে ইলমের -মুনাসাবাত ও পরিচয় গড়ে ওঠবে।
(খ) ধারাবাহিক তরজমার পরিবর্তে ‘সহজ পর্যায়ক্রম পদ্ধতি’ অনুসরণের ফলে তালিবে ইলমের কাছে তারজামাতুল কোরআন কোন কঠিন বিষয় মনে হবে না, বরং হৃদয় ও আত্মার জন্য প্রশান্তি এবং রূহ ও কলবের জন্য সুকূন ও সাকীনার বিষয় মনে হবে।
(গ) তারজামার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বতন্ত্র বিষয় ও ‘ফন’ হিসাবে পূর্ণ তারজামাতুল কোরআন আত্মস্থ করা সহজে সম্ভব হবে। এভাবে তার সামনে খুলে যাবে তাফসীরুল কোরআনের বিশাল জগতে উপনীত হওয়ার প্রবেশপথ’।
অবশ্য এজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পাঠ ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পাঠ্যগ্রন্থ প্রণয়ন করা অপরিহার্য, যা তারজামাতুল কোরআনের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে তালিবে ইলমকে সঠিক পথ দেখাবে এবং তার অন্তর্গত যোগ্যতা ও ইসতিদাদের বিকাশ ঘটাবে।