ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইলম শব্দের অর্থ কি, ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইলম সম্পর্কে আয়াত, দ্বীনি ইলম শিক্ষার গুরুত্ব, ইলম কাকে বলে, ইলম ও আলেমের মর্যাদা ইত্যাদি।

ইলম-শব্দের-অর্থ-কি-ইলমের-গুরুত্ব-ও-ফজিলত

ইলম শব্দের অর্থ কি

ইলম আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। ইলম হচ্ছে জাহল (অজ্ঞতা) এর বিপরীত। আর ইলম এর ব্যাপক অর্থ হলো: কোন কিছুকে তার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে জানতে পারা।

কিছু বিদ্বান বলেছেন, ইলম হলো (কোন কিছুর) প্রকৃত অবস্থা জানা। আর এটি অজানা ও অজ্ঞতার বিপরীত। অন্যান্য আলেম বলেছেন, নিশ্চয় ইলম (কোন কিছুর) প্রকৃত অবস্থা জানার চেয়েও অধিকতর স্পষ্ট। আর এখানে ইলম (জ্ঞান) দ্বারা আমাদের যেটি উদ্দেশ্য সেটি হলো ইলমে শারঈ (ইসলামী জ্ঞান)। আর ইলমে শারঈ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: আল্লাহ তাআলা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যেসব সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেছেন, সেগুলোর ইলম (জ্ঞান)।

শারঈ ইলম

সুতরাং যে ইলমের মাঝে গুণকীর্তন ও প্রশংসা রয়েছে, সেটিই (ওহীর জ্ঞান) এবং শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ইলম (জ্ঞান)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের সঠিক ইলম (জ্ঞান) দান করেন।

মুত্তাফাকুন আলাইহি: বুখারী হা/৭১, মুসলিম, হা/১৩৩৭।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,

নিশ্চয় নবীগণ (সাধারণ) কাউকে দিনার ও দিরহামের (দুনিয়াবী কোন জিনিসের) উত্তরাধিকারী বানাননি। প্রকৃতপক্ষে, তারা (মানুষকে) ‘ইলম (জ্ঞান) এর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন। যদি কোন ব্যক্তি ‘ইলম অর্জন করে, তাহলে সে ব্যক্তি অবশ্যই নবীগণ (সাঃ) এর উত্তরাধিকার থেকে পূর্ণ অংশ অর্জন করতে পারবে।

তিরমিযী হা/২৬৮২, আবূ দাউদ হা/৩৬৪১, ইবনু মাজাহ, হা/২২৩।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

আর এটি জানা বিষয় যে, নবীগণ (সাঃ) (মানুষকে) যে ‘ইলমের উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে এটি আল্লাহর শরীআত (বিধান) সংক্রান্ত ইলম। সেটা অন্য কোন ইলম না। নবিগণ (সাঃ) মানুষকে কারিগরিবিদ্যা, শিল্পকর্ম বিদ্যা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যার উত্তরাধিকারী বানাননি।

তবে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন, তখন তিনি কিছু মানুষকে খেজুর গাছে পরাগায়ন করতে দেখলেন। যখন তিনি তাদেরকে পরাগায়ন করতে দেখলেন, তখন তিনি একটি কথা বললেন যে, এটি (পরাগায়ন) করার কোন প্রয়োজন নেই। অতঃপর তারা কথাটি মেনে নিল এবং পরাগায়ন করা ছেড়ে দিল। কিন্তু গাছের খেজুর নষ্ট হয়ে গেল। অতঃপর নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের দুনিয়াবী বিষয়ে তোমরাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।

ছহীহ মুসলিম; হা/২৩৬৩।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

আর যদি এটি (পরাগায়ন করার ইলমটি) ঐ ইলম হতো, যার মাঝে প্রশংসা রয়েছে, তাহলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে অবশ্যই সর্বাধিক জ্ঞানী হতেন। কেননা ইলম ও আমলের কারণে যার সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করা হয়, তিনি হলেন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতএব, ইলমে শারঈ (ইসলামী জ্ঞান) সেটাই, যেটির মাঝে প্রশংসা রয়েছে। আর প্রশংসাটি ইলমে শারঈ অন্বেষণকারীর জন্যই নির্দিষ্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্যান্য ইলমগুলোর উপকারিতা অস্বীকার করছি না। যদি অন্যান্য ইলম গুলো আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে ও আল্লাহর দ্বীনকে সমর্থনের ব্যাপারে সহযোগিতা করে এবং যদি ঐ সকল ইলমের দ্বারা আল্লাহর বান্দারা উপকৃত হয়; তাহলে ঐ সকল ইলম উত্তম ও কল্যাণকর হবে। আর কিছু এলাকায় কখনো কখনো ঐগুলো শিক্ষা করা ওয়াজিব (আবশ্যক) হয়ে যায়; যখন ঐ সকল ইলম (জ্ঞান) আল্লাহ তাআলার এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত হয়,

(হে মুসলমান সম্প্রদায়!) তোমরা তাদের (তোমাদের শত্রুদের) মোকাবেলার জন্য তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি এবং সুসজ্জিত অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখো”। সূরা আল-আনফাল ৮:৬০।

দুনিয়াবী ইলম

অধিকাংশ আলিম উল্লেখ করেছেন যে, কারিগরিবিদ্যা/শিল্পকর্ম বিদ্যা শিক্ষা করা ফরজে কেফায়া (যৌথভাবে পালনীয় ফরজ)। কেননা মানুষের জন্য কিছু পাত্র অপরিহার্য, যেগুলোর সাহায্যে তারা রান্না করে, পানি পান করে এবং অন্যান্য কাজগুলো করে, যে কাজগুলোর দ্বারা তারা উপকৃত হয়। অতএব, যখন এমন কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে না, যে ব্যক্তি ঐ শিল্পকর্ম গুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং (এগুলোর জন্য) কারখানা তৈরি করবে; তখন ঐ সকল বিদ্যা শিক্ষা করা ‘ফরজে কেফায়া’ (যৌথভাবে পালনীয় ফরজ) হবে। (আলিমগণ আরও বলেছেন যে) আর এটিই (ফরযে কেফায়া) আলেমগণের মাঝে বিতর্কের ক্ষেত্র। সর্বাবস্থায় এটি বলতে পছন্দ করি,

“নিশ্চয় ঐ ‘ইলম (জ্ঞান), যা প্রশংসার ক্ষেত্র ও স্থান; সেটিই ‘ইলমে শারঈ (ইসলামী জ্ঞান)। যা আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) এবং তার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহর বুঝ/উপলব্ধি।”

আর এটি (ইলমে শারঈ) ছাড়া অন্যান্য ইলম, হয় ভাল কাজের জন্য মাধ্যম হবে, না হয় খারাপ কাজের জন্য মাধ্যম হবে। সুতরাং ঐ ইলম যে কাজের জন্য মাধ্যম হবে, সে কাজ অনুসারে ঐ ইলমের বিধান নির্ধারিত হবে।

ইলমের গুরুত্ব

ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে ইবাদতের চেয়েও বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে জ্ঞান অর্জন ইবাদতের চেয়েও বেশি পছন্দনীয়। রাসূল (স) আরো বলেছেন, ইবাদতের পরিমাণ বেশি হওয়ার চেয়ে ইলমের পরিমান বেশি হওয়া উত্তম। দীনের মূল হল তাকওয়া ও ধার্মিকতা।

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২৩৮

১. ইলম হচ্ছে সমস্ত কল্যাণের মূল

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “জ্ঞান হচ্ছে সমস্ত কল্যাণের মূল, আর অজ্ঞতা হচ্ছে সমস্ত অকল্যাণের মূল।” জ্ঞান হচ্ছে মহান আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এ নিয়ামত দ্বারা সমৃদ্ধ করেন। ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ “আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান তাকে ধর্মের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন।

সহিহ তিরমিযী, খন্ড পাঁচ, হাদিস নং ২৬৪৫

২. ইলম হল প্রদীপের মত

তেমনি জ্ঞান হল প্রদীপের মত। প্রদীপ যেমন অন্ধকার বিদূরিত করে, জ্ঞান অজ্ঞতা দূর করে মানসিক উন্নতি সাধন করে। একটি প্রদীপ থেকে শত সহস্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করলেও যেমন উক্ত প্রদীপের আগুন বিন্দু পরিমাণ হ্রাস পায়না, তেমনি যতই বিতরণ করা হোক না কেন জ্ঞান কখনো নিঃশেষ হয় না। হজরত আলী (রাঃ) বলেন, “জ্ঞান অর্থ সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা, জ্ঞান তোমাকে পাহারা দেয়, কিন্তু অর্থকে উল্টো পাহারা দিতে হয়। জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হল শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায়।”

ইমাম গাজ্জালী, এহইয়াউল উলুম, ১/১৭-১৮

৩. ইলমই শক্তি

জ্ঞানই শক্তি। জ্ঞান মানুষের চিরস্থায়ী বন্ধু। বিপদে সকল বন্ধু পরিত্যাগ করলেও জ্ঞান কখনো আপনাকে পরিত্যাগ করবেনা, বরং এই জ্ঞানই শত বিপদে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। জ্ঞান মানুষকে আত্মসম্মানে বলীয়ান করে তোলে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়। জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের প্রভুত কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা) বলেন, “তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাঙ্খা করা ইবাদত বিশেষ। জ্ঞান চর্চা করা হল তাসবিহ পাঠ তুল্য। জ্ঞানের অন্বেষণ করা জিহাদের আওতাভুক্ত। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেয়া সদকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের কারণ। আর তা হালাল হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের সাথী, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা তাকে স্থায়ীভাবে অনুসরণীয় করে রাখে।”

আখলাকুল উলুম, ৩৪-৩৫

৪. ইলম অর্জন করা নফল নামাজের চেয়ে উত্তম

জ্ঞান চর্চা নফল নামাজের চেয়ে উত্তম। রাসূলুল্লাহ (স) সাহাবী আবু যর (রা) কে বলেন, “হে আবু যর! তুমি যদি কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা কর, তবে তা তোমার জন্য ১০০ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর যদি তুমি ‘ইলমের’ একটি অধ্যায় শিক্ষা কর, আমলকৃত অথবা আমলকৃত নয়, তবে তা তোমার জন্য ১০০০ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম।

সহিত তারগীব, ১/৫৪, ২/২৩২

৫. ইলম অর্জন করা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কাজ

একদিন এক লোক রাসূল (স) এর কাছে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন কোন কাজ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। তখন রাসূল (স) দুইবার বললেন, “মহান আল্লাহ এবং তার দ্বীন সম্পর্কিত জ্ঞান।” তখন লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উৎকৃষ্ট কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলাম আর আপনি আমাকে জ্ঞানের কথা বললেন। তখন রাসূল (স) বললেন, “জ্ঞানের সাথে কৃত সামান্য পরিমান কাজও অনেক মূল্যবান, পক্ষান্তরে অজ্ঞতার সাথে কৃত বিপুল পরিমান কাজও মূল্যহীন।”

৬. ইলম তিনটি সদকায়ে জারিয়ার একটি

জ্ঞান বা ইলম দুনিয়াতে যেমন মানুষের কল্যাণ দান করে, তেমনি পরকালেও মানুষকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। মৃত্যুর সাথে সাথে দুনিয়ার সাথে মানুষের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় এবং রেখে যাওয়া সম্পদ মৃত ব্যক্তির আর কোন কাজে আসেনা। কিন্তু অর্জিত জ্ঞান মৃত্যুর পরেও মানুষকে পরিত্যাগ করে না। দুনিয়াতে রেখে যাওয়া জ্ঞান মৃত্যুর পরেও মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব প্রেরণ করতে থাকে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যেখানে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন “মানুষ মরে গেলে তার থেকে তার সমস্ত কার্যক্রম বিচ্ছিন্ন (নিঃশেষ) হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে, ক. সদকায়ে জারিয়ার কাজের সওয়াব, খ. এমন জ্ঞান (রেখে যায়) যার থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে এবং গ. এমন সন্তান রেখে যাওয়া যে (সব সময়) তার জন্য দু’আ করে।

মিশকাতুল মাসাবিহ, খন্ড ১, হাদিস নং ১৯৩

৭. রাসুল (সাঃ) ইলম অর্জনকে অগ্রধিকার দিতেন

মানবতার মুক্তির দূত রাসূলুল্লাহ (স) শিক্ষাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতেন। বদরের যুদ্ধে কিছু সংখ্যক কাফের যোদ্ধা বন্দি হন যারা শিক্ষিত ছিলেন। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (স) কিছু সংখ্যক মুসলিম শিশু কিশোরদের লেখাপড়া শেখানোর বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেন।” 

মুসনাদে আহমদ, 8/8৭

চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (স) স্বর্ণ মুদ্রা কিংবা মোটা অংকের অর্থ মুক্তিপণ নিয়ে বন্দিদের মুক্তি প্রদান করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি মুসলিম শিশুদের শিক্ষা প্রদান করার বিনিময়ে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেন। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে রাসূলুল্লাহ (স) শিক্ষার উপর কতটা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

ইলমের ফজিলত

অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা ইলম এবং তার ধারক-বাহক (জ্ঞানী / বিদ্বান ব্যক্তি) এর প্রশংসা করেছেন। আর অবশ্যই তিনি তার বান্দাদেরকে ইলম অর্জন (জ্ঞান অর্জন) এবং তা থেকে পাথেয় সংগ্রহের জন্য উৎসাহিত করেছেন। ইলম অর্জন করা সর্বশ্রেষ্ঠ সৎ আমলের অন্তর্ভুক্ত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা ইলম অর্জন করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের একটি প্রকার। মহান আল্লাহর দীন কেবলমাত্র দুটি বিষয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রথম বিষয়: ইলম অর্জন এবং দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করা।

দ্বিতীয় বিষয়: যুদ্ধ ও সমরাস্ত্র।

সুতরাং এ দুটি বিষয় অপরিহার্য। শুধুমাত্র এ দুটি বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ী হওয়া সম্ভব।

আর এ দু’টির মধ্য থেকে প্রথম বিষয় (‘ইলম অর্জন এবং দলীল প্রমাণ) –কে দ্বিতীয় বিষয় (যুদ্ধ ও সমরাস্ত্র) এর আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন গোত্রের উপর আক্রমণ করতেন না, যতক্ষণ না তাদের নিকটে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে। অতএব যুদ্ধের পূর্বে ইলম অর্জন করতে হবে।

ইলম অর্জনকারী ও মূর্খ ব্যক্তি সমান নয়

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সালাতে সিজদাবনত অবস্থায় এবং দাঁড়ানো অবস্থায় আনুগত্য প্রকাশ করে, পরকালের (শাস্তিকে) ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে (সে ব্যক্তি কি তার সমান, যে ব্যক্তি তা করে না)?” সূরা আয-যুমার ৩৯:৯।

প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সালাতে সিজদাবনত অবস্থায় অথবা দাঁড়ানো অবস্থায় আনুগত্য প্রকাশ করে, পরকালের (শাস্তিকে) ভয় করে এবং তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিরত থাকে; তারা উভয়েই কি সমান?

উত্তর: না! তারা উভয়ে সমান নয়।

প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি আনুগত্য প্রকাশ করে, আল্লাহর দেয়া সওয়াবের আশা করে এবং পরকালের (শাস্তিকে) ভয় করে; তার এ কর্মগুলো কি ‘ইলম থাকার কারণে (সংঘটিত হয়েছে) না-কি ‘ইলম না থাকার কারণে (সংঘটিত হয়েছে)? উত্তর: (তার এ কর্মগুলো) ‘ইলম থাকার কারণে (সংঘটিত হয়েছে)। আর এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“(হে নবী!) আপনি বলুন, যারা (তাদের প্রতিপালক এবং সত্য দ্বীন সম্পর্কে) জানে এবং যারা এগুলোর কিছুই জানে না, তারা কি সমান? কেবলমাত্র জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে”। সূরা আয-যুমার ৩৯:৯।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

যেমনভাবে জীবিত ব্যক্তি ও মৃত ব্যক্তি, শ্রবণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ও শ্রবণশক্তিহীন ব্যক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ও দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তি সমান নয়; ঠিক তেমনভাবে যে ব্যক্তি (তার প্রতিপালক এবং সত্য দীন সম্পর্কে) জানে আর যে ব্যক্তি তা জানে না, তারা উভয়ে সমান নয়।

“ইলম হচ্ছে আলো, যার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পায় এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের হয়ে আসে। আল্লাহ তা’আলা ‘ইলমের কারণেই তার সৃষ্ট জীবের মধ্য থেকে যাকে চান (উচ্চ মর্যাদায়) উন্নীত করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে (ইহকালে সম্মান ও পরকালে সওয়াব দানের মাধ্যমে) বহু মর্যাদায় উন্নীত করেন”। সূরা আল-মুজাদালা ৫৮:১১।

একারণেই আমরা দেখতে পাই যে, জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই প্রশংসার পাত্র। যখনই তাদের আলোচনা করা হয়, তখনই মানুষ তাদের প্রশংসা করে। আর এটা তাদের ইহকালীন মর্যাদা।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

পক্ষান্তরে আল্লাহর দিকে যারা দাওয়াত দিয়েছেন এবং যা জানেন তা অনুযায়ী যে আমল করেছেন; তার ভিত্তিতে তারা পরকালে বহু মর্যাদায় উন্নীত হবেন। প্রকৃত ইবাদতকারী (বান্দা) সে ব্যক্তি, যে ব্যক্তি সুস্পষ্ট শার’ঈ দলিলের ভিত্তিতে তার প্রতিপালকের ‘ইবাদত করে এবং যার নিকটে সত্য প্রকাশিত হয়। আর এটিই নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথ/ রাস্তা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“(হে মুহাম্মদ!) আপনি (মুশরিকদের) বলুন, এটাই (আল্লাহর একত্বের দিকে আহ্বান করা) আমার পথ। (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সুস্পষ্ট (শার’ঈ) দলিলের ভিত্তিতে (একমাত্র) আল্লাহর (“ইবাদতের) দিকে (মানুষকে) আহ্বান করি এবং যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করে। আর (অংশীদারদের থেকে) আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, এমতাবস্থায় আমি মুশরিকদের (অংশীদার সাব্যস্ত কারীদের) অন্তর্ভুক্ত নই”। সূরা ইউসুফ; ১২:১০৮।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রশ্নঃ যিনি পবিত্রতা অর্জন করেন এটা জেনে যে, তিনি শারঈ পদ্ধতির উপর রয়েছেন, তিনি কি ঐ ব্যক্তির মত; যে ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে এ কারণে যে, সে তার পিতা অথবা মাতা কে পবিত্রতা অর্জন করতে দেখেছে? ইবাদত বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে কে অধিকতর শ্রেষ্ঠ? যিনি পবিত্রতা অর্জন করেন এ কারণে যে, তিনি জানেন আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা নাৰী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্রতা। অতএব তিনি আল্লাহর আদেশকে মেনে চলার জন্য এবং রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতকে অনুসরণ করার জন্য পবিত্রতা অর্জন করেন, ঐ ব্যক্তি (অধিকতর শ্রেষ্ঠ)? নাকি অপর যে ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে একারণে যে, এটি তার নিকটে অভ্যাস?

উত্তর: নিঃসন্দেহে অধিকতর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি তিনি, যিনি সুস্পষ্ট দলীলের ভিত্তিতে আল্লাহর ইবাদত করেন। তাহলে, এই ব্যক্তি আর ঐ ব্যক্তি কি সমান? (কখনোই সমান নয়) যদিও দুজনের মধ্য থেকে প্রত্যেকের কাজ (বাহ্যিক দিক দিয়ে) একই ছিল। কিন্তু এ ব্যক্তি ‘ইলম এবং সুস্পষ্ট দলিল এর কারণে আল্লাহর (জান্নাতের) প্রত্যাশা করেন, পরকালের (শাস্তিকে) ভয় করেন এবং তিনি জানেন যে, তিনি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর (সুন্নাতের) অনুসারী। আর আমি এই স্থানেই থেমে যাব এবং কিছু প্রশ্ন করব।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রশ্নঃ আমরা কি উযূ করার সময় এটি উপলব্ধি করি যে, আমরা আল্লাহর এই বাণীতে উল্লেখিত তার আদেশ মেনে চলছি?

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়াবে (দাঁড়ানোর ইচ্ছা করবে, এমতাবস্থায় তোমরা ওযুবিহীন অবস্থায় রয়েছ), তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও দুই হাত কনুইসহ ধৌত কর, তোমরা তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং তোমাদের পা টাখনু সহ (ধৌত কর)”। সূরা আল-মায়িদা ৫:৬।

মানুষ কি তার ওযুর সময় উক্ত আয়াতটি স্মরণ করে? অথচ সে আল্লাহর আদেশ মেনে চলার জন্যই উযূ করে? আর সে কি উপলব্ধি করে যে, এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওযু? অথচ সে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করার জন্যই উযূ করে?

উত্তর: হ্যাঁ! বাস্তবতা হচ্ছে যে, আমাদের মধ্য থেকে কেউ এটি স্মরণ করে (আর কেউ এটি স্মরণ করে না)। আর একারণেই সকল প্রকার ইবাদত সম্পাদন করার সময়ে ঐ সকল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ আমাদের মেনে চলা ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক), যেন এটির মাধ্যমে আমাদের মাঝে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) বাস্তবায়িত হয় এবং রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের অনুসরণ করা ওয়াজিব।

আমরা জানি যে, নিয়ত করা ওযুর শর্ত সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কখনো কখনো এর দ্বারা আমলের নিয়তকে উদ্দেশ্য করা হয়।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা আমাদের উপর বাধ্যতামূলক। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ইবাদত সম্পন্ন করা অবস্থায় আমাদের এটি স্মরণ করা যে, ইখলাছ (একনিষ্ঠতা) বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে ইবাদতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর আদেশ মেনে চলছি। আর ইবাদত সম্পন্ন করা অবস্থায় আমাদের এটিও স্মরণ করা যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ইবাদতটি করেছেন। আমরা এ ইবাদতের ক্ষেত্রে অনুসরণ বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে তার অনুসরণ করি। কেননা ইখলাস এবং অনুসরণ হচ্ছে আমল বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যে দুটির মাধ্যমেই এ সাক্ষ্য প্রদান বাস্তবায়িত হয় যে,

“আল্লাহ ছাড়া (প্রকৃত) কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর (প্রেরিত) রসূল”।

আমরা এ পরিচ্ছেদের শুরুতে ‘ইলম অর্জনের ফজিলত সমূহ নিয়ে যে আলোচনা করেছিলাম, (এখন) সে দিকে ফিরে যাচ্ছি। কারণ ‘ইলম অর্জনের মাধ্যমে মানুষ (কুরআন-সুন্নাহ’) সুস্পষ্ট দলিল এর ভিত্তিতে তার প্রতিপালকের ‘ইবাদত করে। ফলে তার অন্তর ‘ইবাদতের সাথে ঝুলে থাকে এবং তার অন্তর ‘ইবাদতের কারণে আলোকিত হয়। আর সে ব্যক্তি ‘ইবাদত করে এ ভিত্তিতে যে, এটি একটি “ইবাদত। এ ভিত্তিতে নয় যে, এটি একটি অভ্যাস। আর এ কারণেই যখন মানুষ এ দৃষ্টি কোণের ভিত্তিতে সালাত আদায় করে, তখন তার জন্য ঐ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়, যার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, সালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।

ইলমের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

১. ইলম নবীগণের উত্তরাধিকার

নবীগণ (সাঃ) (কাউকে) দিরহাম এবং দিনারের (দুনিয়াবী কোন জিনিসের) উত্তরাধিকারী বানাননি। কেবলমাত্র তারা (মানুষকে) ‘ইলমের উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন। যদি কোন ব্যক্তি ‘ইলম অর্জন করে, তাহলে সে ব্যক্তি নবীগণ (সাঃ) এর উত্তরাধিকার থেকে পূর্ণ অংশ অর্জন করতে পারবে।

অতএব এ পঞ্চদশ শতাব্দীতে যখন তুমি জ্ঞানবানদের অন্তর্ভুক্ত হবে, তখন তুমি মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তরাধিকারী হবে। আর এটি (ইলম অর্জনের) সবচেয়ে বড় ফযীলত।

২. ইলম স্থায়ী হয় আর সম্পদ ফুরিয়ে যায়

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু দরিদ্র সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এমনকি তিনি ক্ষুধার কারণে অজ্ঞান হয়ে (মাটিতে) পড়ে যেতেন। আমি আল্লাহর কসম করে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই, আমাদের যুগে মানুষের মাঝে আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীস চলে, নাকি চলে না? হ্যাঁ! তার বর্ণিত হাদীস অনেক চলে। সুতরাং আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব হয়, যে ব্যক্তি তার বর্ণিত হাদীস গুলো দ্বারা উপকৃত হয়। তাহলে বুঝা গেল যে, ‘ইলম টিকে থাকে, আর সম্পদ ফুরিয়ে যায়। অতএব, হে ‘ইলম অন্বেষণকারী! ‘ইলমকে আঁকড়ে ধরা তোমার উপর অপরিহার্য। হাদীসে প্রমাণিত আছে যে, নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যখন মানুষ মারা যায়, তখন তিনটি আমল ছাড়া তার সকল আমল (সকল আমলের সওয়াব তার থেকে) ছিন্ন হয়ে যায়। ছাদাক্বায়ে জারিয়া, এমন ইলম (জ্ঞান), যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন সৎ সন্তান, যে সন্তান (তার মৃত্যুর পর) তার জন্য দু’আ করে”।

ছহীহ মুসলিম হা/১৬৩১, সুনান আবূ দাউদ হা/২৮৮০, সুনান আত-তিরমিযী হা/১৩৭৬।

৩. ইলম অর্জনকারী ইলম (সংরক্ষণের ক্ষেত্রে) কোন কষ্ট অনুভব করে না

কেননা যখন আল্লাহ তোমাকে কোন ‘ইলম দান করেন, তখন তিনি তা (তোমার) অন্তরে সংরক্ষণ করেন। ‘ইলম (সংরক্ষণের ক্ষেত্রে) কোন সিন্দুক বা চাবিকাঠি অথবা অন্যান্য কোন জিনিসের প্রয়োজন অনুভব করেন না। এটি (মানুষের) অন্তরে ও হৃদয়ে সংরক্ষিত থাকে। আর যথাসময়ে ‘ইলম (জ্ঞানই) তোমার অভিভাবক হয়ে যায়। কেননা এটি আল্লাহর অনুমতিক্রমে তোমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। অতএব, ‘ইলম তোমাকে রক্ষা করে। পক্ষান্তরে সম্পদকে তুমি নিজেই বড় দরজার অন্তরালে সিন্দুকের মধ্যে রেখে সংরক্ষণ কর। আর তা সত্ত্বেও তুমি সম্পদের ব্যাপারে আস্থাশীল হও না।

৪. মানুষ সত্যের সাক্ষ্য প্রদান কারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ‘ইলমকে মাধ্যম বানায়

এর দলীল (প্রমাণ) হচ্ছে আল্লাহর এই বাণী,

“ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত আল্লাহ নিজেই সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই! ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানী ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ব্যতিত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই”! সূরা আলে ইমরান; ৩:১৮। (এখানে) আল্লাহ কি “ধনী ব্যক্তিগণ” বলেছেন? না! বরং তিনি বলেছেন, জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ! সুতরাং হে ‘ইলম অন্বেষণকারী! আল্লাহর একত্বের উপর সাক্ষ্যদানকারী ফেরেশতাগণের সাথে যে ব্যক্তি আল্লাহর ব্যাপারে এ সাক্ষ্যদান করে যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, সে ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়া তোমার সম্মানের জন্য যথেষ্ট।

৫. উলাতুল আমর (কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিবর্গ) এর দুই শ্রেণীর মধ্যে প্রথম শ্রেণী হলেন আহলুল ইলম (আলিমগণ)

আল্লাহ তা’আলা যাদের আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্য থেকে “উলুল আমর” (কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিবর্গ) এর (আনুগত্য করো)”। সূরা আন-নিসা ৪:৫৯।

অতএব, এখানে “উলাতুল আমর” (পদটি) “শাসকবর্গ ও বিচারক বর্গ” এবং “জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ (উলামায়ে কিরাম) ও ‘ইলম অন্বেষণকারী (শিক্ষার্থীবৃন্দ)” শব্দগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে! সুতরাং জ্ঞানী ব্যক্তিগণের (আলিমগণের) কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর বিধি-বিধান (শরী’আত) বর্ণনা করার ক্ষেত্রে এবং জনগণকে তার দিকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে! আর শাসকবর্গের কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর বিধি-বিধান (রাষ্ট্রে) বাস্তবায়িত করা এবং সে বিধি-বিধান পালনের জন্য জনগণকে বাধ্য করা।

৬. আহলুল ইলম (আলিমগণ) কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার আদেশের উপর অটল থাকবেন

আর এর পক্ষে দলীল (প্রমাণ) গ্রহণ করা হয় মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর (বর্ণিত) হাদীস দ্বারা! তিনি বলেন, আমি নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,

“আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের সঠিক ‘ইলম (জ্ঞান) দান করেন”।

ছহীহ বুখারী হা/৭১, ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৭, সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৮৯।

প্রকৃতপক্ষে আমি (আল্লাহর আদেশক্রমে তোমাদের সকলের মাঝে ওহীর জ্ঞান) বন্টন করি এবং আল্লাহ (তার ইচ্ছা অনুযায়ী তোমাদের সকলকে দ্বীনের ‘ইলম) দান করেন! আর এ উম্মাহ (আলিম জাতি) আল্লাহর সত্য দীনের উপর অটল থাকবেন! যারা তাদের বিরোধিতা করে, তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না! এমনকি আল্লাহর আদেশ (কিয়ামত) সংঘটিত হবে, (অথচ তারা এমনই থাকবে)! ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল এ দল সম্পর্কে বলেন,

“যদি তারা ‘আহলুল হাদীছ’ না হন, তাহলে আমি জানি না তারা কারা”।

ফাতহুল বারী ১/১৬৪, শারহুন নাওয়াবী; ১৩/৬৭।

আর কাজী ইয়াদ (রহঃ) বলেন,

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহঃ) “আহলুস সুন্নাহ”কে এবং যারা আহলে হাদীস মতাদর্শকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন।

প্রাগুক্ত।

৭. রাসুল (সাঃ) ইলমের ব্যাপারে একে অপরের প্রতি ঈর্ষা করতে উৎসাহ দিয়েছেন

আল্লাহ (তার বান্দাগণকে) যেগুলো নেয়ামত দান করেছেন! সেগুলোর মধ্য থেকে কোন নিয়ামতের ব্যাপারে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাউকে কারও প্রতি ঈর্ষা করতে উৎসাহ দেননি! তবে দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে (একে অপরের প্রতি ঈর্ষা করতে উৎসাহ দিয়েছেন)।

ক. ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করা এবং তা অনুযায়ী আমল করা।

খ. এমন ব্যবসায়ী, যে তার সম্পদ ইসলামের কাজে প্রদান করে।

নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“(শুধুমাত্র) দুটি ক্ষেত্রে ছাড়া (অন্য কোন ক্ষেত্রে) ঈর্ষা করা বৈধ নয়! এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তাকে মহৎ কাজগুলোর ক্ষেত্রে তা খরচ করার ব্যাপারে ক্ষমতা দিয়েছেন! আর এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, আল্লাহ যাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন! অতঃপর সে ব্যক্তি তা অনুযায়ী আমল করে এবং তা মানুষকে (ছাওয়াবের আশায়) শিক্ষা দেয়”।

ছহীহ বুখারী হা/৭৩, ছহীহ মুসলিম হা/৮১৬, ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৯০, সুনান ইবনু মাজাহ হা/৪২০৮, আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/ ২০১৬৪।

৮. ইলম অর্জনকারী অন্যের উপকারে আসে

ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণিত হাদিসে (ইলম সম্পর্কে বর্ণনা) এসেছে:

আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,

“আল্লাহ যে দিক-নির্দেশনা এবং (শরয়ী দলীল সমূহের) ‘ইলমসহ আমাকে (দুনিয়াতে) পাঠিয়েছেন! তা (অর্জনকারীর) দৃষ্টান্ত হচ্ছে জমিনের (এক অংশে) পতিত পর্যাপ্ত বৃষ্টির মত! (প্রথম প্রকার জমিন) ভাল উর্বর কিছু ভূমি রয়েছে, যেগুলো পানি শুষে নেয়! অতঃপর প্রচুর তাজা ও শুকনা তৃণলতা এবং তাজা ঘাস উৎপন্ন করে! (দ্বিতীয় প্রকার জমিন) আর শক্ত কিছু ভূমি রয়েছে, যেগুলো পানি আটকে রাখে! অতঃপর আল্লাহ ঐ পানির দ্বারা সকল মানুষের উপকার করেন! ফলে তারা (নিজেরা তা) পান করে, (তাদের পশুপাখিকে পান করায় এবং (তা দ্বারা) চাষাবাদ করে! (তৃতীয় প্রকার জমিন:) জমিনের উপর কিছু অংশে বৃষ্টি পতিত হয়, যে অংশগুলো কেবলমাত্র সমতল! সেগুলো পানি আটকে রাখে না এবং তাজা ও শুকনা তৃণলতাও উৎপন্ন করে না।

ছহীহ বুখারী হা/৭৯, শারহুস সুন্নাহ হা/১৩৫।

সুতরাং ঐ (প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকার) জমিন হলো এমন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত! যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনের ব্যাপারে ইলম অর্জন করে এবং আল্লাহ আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন, তা তার উপকারে আসে! ফলে সে ইলম অর্জন করে এবং তা শিক্ষা দেয়! আর ঐ (তৃতীয় প্রকার) জমিন হলো এমন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত! যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে দিক-নির্দেশনা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে, সেটিও গ্রহণ করে না”।

ছহীহ মুসলিম হা/২৬৯৯, তিরমিযী হা/২৯৪৫, ইবনু মাজাহ হা/২২৫।

৯. ইলম (অন্বেষণের পথ) জান্নাতের পথ

আবূ হুরাইরাহ (রা) এর বর্ণিত হাদীস তার প্রমাণ। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

আর যদি কোন ব্যক্তি ‘ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়! তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের দিকে রাস্তা সহজ করে দেন।

মুসলিম হা/২৬৯৯, তিরমিযী হা/২৬৪৬, ইবনে মাজাহ হা/২২৫।

১০. আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দীনের ব্যাপারে জ্ঞান দান করেন

মুআবিয়া (রাঃ) এর হাদিসে ‘ইলম সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দীনের ব্যাপারে জ্ঞান দান করেন”।

ছহীহ বুখারী হা/৭১, ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৭।

অর্থাৎ আল্লাহ তার দীনের ব্যাপারে তাকে ফকীহ/বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দেন! ফিকাহ শাস্ত্রে পারদর্শীদের নিকটে এটা (দীনের ব্যাপারে জ্ঞান) দ্বারা শুধুমাত্র (বিশেষ আমল সংক্রান্ত বিধি-বিধানের জ্ঞান) উদ্দেশ্য নয়! বরং এর দ্বারা (আল্লাহর একত্বের জ্ঞান), (দীনের মূলনীতি সমূহের জ্ঞান) এবং আল্লাহর শরীয়তের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয়াদির জ্ঞান উদ্দেশ্য! আর যদি ‘ইলম অর্জনের ফযীলতের ক্ষেত্রে এ হাদীছটি ব্যতীত কুরআন এবং হাদীসের কোন দলীল না থাকে! তবুও অবশ্যই এ হাদীছটি শরীয়তের ‘ইলম অন্বেষণ ও অর্জনের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে।

১১. ইলম হচ্ছে আলো যার দ্বারা বান্দা আলোকিত হয়

বান্দা জানে সে কিভাবে তার প্রতিপালকের ইবাদত করবে এবং সে কিভাবে তার বান্দাদের সাথে পারস্পরিক লেনদেন করবে! অতএব, এসব ব্যাপারে “ইলম এবং (কুরআন ও হাদীছের) সুস্পষ্ট দলিল অনুযায়ী তার চলার পথ হয়।

১২. আলিম (জ্ঞানী) ব্যক্তি হলেন আলো

নিশ্চয় আলিম (জ্ঞানী) ব্যক্তি হলেন আলো, যার দ্বারা লোকেরা তাদের দীন ও দুনিয়ার বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সঠিক পথ পায়।

আর বানী ইসরাইলের (১০০ জন মানুষকে হত্যাকারী) লোকটার ঘটনা আমাদের অধিকাংশের নিকটে গোপনীয় নয়! যখন ঐ লোকটি ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করল, তখন সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একজন আলিম সম্পর্কে (মানুষকে) জিজ্ঞেস করল! অতঃপর তাকে একজন ধার্মিক লোকের ব্যাপারে বলা হলো! তারপর সে (তার নিকটে গিয়ে) তাকে জিজ্ঞেস করল! তার জন্য কি কোন তাবাহ রয়েছে? তখন ধার্মিক লোকটি যেন বিষয়টিকে বড় মনে করলেন! তারপর তিনি বললেন: না ! (কোন তাওবা নেই)।

ফলে সে তাকে হত্যা করে তার দ্বারা (হত্যাকৃত ব্যক্তির সংখ্যা) ১০০ জন পূর্ণ করল! অতঃপর সে একজন আলিমের নিকটে গেল! তারপর তাকে জিজ্ঞেস করল! (তার জন্য কি কোন তাবাহ রয়েছে?) তখন তিনি তাকে সংবাদ দিলেন যে, তার জন্য তাওবাহ রয়েছে! (তিনি তাকে আরও সংবাদ দিলেন যে,) এমন কিছু নেই, যা তার মাঝে এবং তার তাওবা এর মাঝে প্রতিবন্ধক হবে! অতঃপর তিনি তাকে এক দেশের ব্যাপারে বললেন, সে দেশের উদ্দেশ্যে তার বের হওয়ার জন্য, যার অধিবাসীগণ সৎ! ফলে সে বের হলো! অতঃপর রাস্তার মাঝে তার মৃত্যু সংঘটিত হলো! ঘটনাটি প্রসিদ্ধ।

ঘটনাটি ছহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। ছহীহ মুসলিম হা/২৭৬৬

সুতরাং তুমি ‘আলিম (জ্ঞানী) এবং জাহিল (মূর্খ) এর মাঝে পার্থক্য লক্ষ্য করো।

১৩. নিশ্চয় আল্লাহ ইহকালে ও পরকালে জ্ঞানী ব্যক্তি বর্গকে (আলেমগণকে) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেন

তারা আল্লাহর দিকে দাওয়াত দানের যে দায়িত্ব পালন করেন, তার ভিত্তিতে এবং তারা যা জানেন তা অনুযায়ী আমল করার ভিত্তিতে! দুনিয়াতে আল্লাহ তাদেরকে তার সমস্ত বান্দাদের মাঝে উচ্চ মর্যাদা দান করেন! পক্ষান্তরে, পরকালেও তিনি তাদেরকে এসবের ভিত্তিতে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে! আল্লাহ তাদেরকে (ইহকালে সম্মান ও পরকালে সওয়াব দানের মাধ্যমে) বহু মর্যাদায় উন্নীত করবেন”। সূরা আল-মুজাদালাহ ৫৮:১১।

ইলম শব্দের অর্থ কি? ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত

ইলম শব্দের অর্থ কি, ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইলম সম্পর্কে আয়াত, দ্বীনি ইলম শিক্ষার গুরুত্ব, ইলম কি, ইলম কাকে বলে, ইলম সম্পর্কে বাণী, ইলম সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস, ইলমের ফজিলত, ইলম অর্থ কি, ইলম অর্জনের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইলম সম্পর্কে হাদিস, ইলমে দ্বীনের গুরুত্ব ও ফজিলত, ইলম শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত, ইলম অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, ইলম অর্জনের গুরুত্ব, ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস, ইলমের গুরুত্ব, ইলম কী, ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিস, ইলম সম্পর্কে কুরআনের আয়াত, ইলম ও আলেমের মর্যাদা

ইলম – উইকিপিডিয়া

ইলমের ফযীলত – প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

তাওহীদ অর্থ কি? তাওহীদ কাকে বলে? তাওহীদের বিপরীত কি?

ইবাদত অর্থ কি, ইবাদত কাকে বলে, ইবাদত কত প্রকার?

ইসলাম শব্দের অর্থ কি এবং ইসলাম কাকে বলে?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *