ওমরা করার নিয়ম. উমরাহ করার নিয়ম ও দোয়া

ওমরা-করার-নিয়ম.-উমরাহ-করার-নিয়ম-ও-দোয়া

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ওমরা করার নিয়ম ও উমরাহ এর দোয়া সমূহ। ওমরার আভিধানিক অর্থ যিয়ারত করা। শরীয়তের পরিভাষায় ওমরা অর্থ নির্দিষ্ট কিছু কর্ম তথা ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ ও মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করার মাধ্যমে বাইতুল্লাহ শরীফের যিয়ারত করা।

ওমরা করার নিয়ম

১. ইহরাম বাঁধা

২. তাওয়াফ করা

৩. সাফা-মারওয়া সাঈ করা

৪. মাথা মুণ্ডন করা অথবা সমস্ত মাথার চুল ছোট করা।

বছরের যেকোন সময় ওমরার ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সাঈ শেষে মাথা মুন্ডন করে বা চুল ছেঁটে হালাল হওয়ার মাধ্যমে ওমরার কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

১. ইহরাম বাঁধা

বাংলাদেশী হাজীগণ সাধারণত তামাত্তু হজ্জ করে থাকেন। ঢাকা হতে জেদ্দা পৌঁছাতে বিমানে সাধারণত সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। তামাত্তু হাজীগণ জেদ্দা অবতরণের অন্তত আধা ঘন্টা পূর্বে বিমানের দেওয়া মীকাত বরাবর পৌঁছানোর ঘোষণা ও সবুজ সংকেত দানের পরপরই ওযু শেষে ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধবেন।

বাংলাদেশী হাজীগণ যদি মদীনা হয়ে মক্কায় যান, তাহলে মদীনায় নেমে যুল-হুলাইফা থেকে ইহরাম বাঁধবেন, তার আগে নয়। কেননা জেদ্দা হয়ে তিনি মদীনায় এসেছেন সাধারণ মুসাফির হিসাবে মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে, হজ্জের উদ্দেশ্যে নয়। আর মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করা হজ্জের কোন অংশ নয়।

ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান

ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থানকে শরিয়তের ভাষায় মিকাত বলা হয়। পাঁচটি স্থান থেকে ইহরাম বাঁধা যায়।

এক. জুল হুলায়ফা বা বীরে আলী: এটি মদিনাবাসী এবং মদিনা হয়ে মক্কায় প্রবেশকারীদের মিকাত।

দুই. ইয়ালামলাম: এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে জেদ্দা হয়ে মক্কা প্রবেশকারীদের মিকাত।

তিন. আল-জুহফা: এটি সিরিয়া, মিসর ও সেদিক থেকে আগতদের মিকাত।

চার. কারনুল মানাজিল বা আসসায়েল আল-কাবির: এটি নাজদ থেকে আগতদের জন্য মিকাত।

পাঁচ. যাতুল ইরক: এটি ইরাক থেকে আগতদের জন্য মিকাত।

ইহরামের সুন্নত

(১) ইহরামের পূর্বে অযু বা গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা উত্তম। তবে শর্ত নয়। মহিলাগণ নাপাক অবস্থায় ইহরাম বাঁধতে পারবেন।

(২) দেহে সুগন্ধি ব্যবহার করা, পোশাকে নয়।

(৩) পুরুষদের জন্য সাদা সেলাইবিহীন লুঙ্গী ও চাদর পরিধান করা। মহিলাদের জন্য যে কোন ধরনের শালীন পোষাক পরিধান করা, যা পুরুষদের পোশাকের সদৃশ নয়।

যে কোন ফরয সালাতের পর কিংবা ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ দুই রাকাত নফল সালাতের পর ইহরাম বাঁধা চলে। তবে ইহরাম বাঁধার সাথে সালাতের কোন সম্পর্ক নেই।

শায়খ আবদুল্লাহ বিন জাসের, আহকামুল হজ্জ (রিয়াদ: ৩য় সংস্করণ ১৪১২/১৯৯২) পৃঃ ৭০-৭৫।

ইহরাম বাঁধার দোয়া

নিম্নোক্ত যে কোন একটি দোয়া পাঠের মাধ্যমে ইহরাম বাঁধতে হবে।

(১) লাব্বায়েক উমরাতান (আমি ওমরাহর জন্য হাজির)।

(২) লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা ওমরাতান। (হে আল্লাহ! আমি ওমরাহর জন্য হাজির)।

(৩) লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা ওমরাতাম মুতামাত্তিআন বিহা ইলাল হাজ্জি; ফাইয়াসসিরহা লি ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী (হে আল্লাহ! আমি ওমরাহর জন্য হাজির, হজের উদ্দেশ্যে উপকার লাভকারী হিসেবে। অতএব তুমি আমার জন্য ওমরাহকে সহজ করে দাও এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করে নাও)।

# যারা একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ্জ দুটিই করবেন, তারা বলবেন, লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা ওমরাতান ওয়া হাজ্জান।

## যারা কেবলমাত্র হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবেন, তারা বলবেন লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা হাজ্জান।

### কিন্তু যারা পথিমধ্যে অসুখের জন্য বা অন্য কোন কারণে হজ্জ আদায় করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করবেন, তারা ‘লাব্বায়েক উমরাতান’ অথবা ‘লাব্বায়েক হাজ্জান’ বলার পর শর্তাধীন দোয়া পড়বেন, ফাইন হাবাসানী হা-বিসুন, ফা মাহাল্লী হাইছু হাবাসতানী। অর্থ: যদি (আমার হজ্জ বা ওমরাহ পালনে) কোন কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে যেখানে তুমি আমাকে বাধা দিবে (হে আল্লাহ!), সেখানেই আমার হালাল হওয়ার স্থান হবে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৭১১)।

#### যারা কারু পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করবেন, তারা তাদের মুওয়াক্কিল পুরুষ হলে মনে মনে তার নিয়ত করে বলবেন, লাব্বায়েক আন ফুলান (অমুকের পক্ষ হতে আমি হাজির)। আর মহিলা হলে বলবেন, লাব্বায়েক আন ফুলা-নাহ। যদি আন ফুলান বা ফুলা-নাহ বলতে ভুলে যান, তাতেও অসুবিধা নেই। নিয়তের উপরেই আমল কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

##### সঙ্গে নাবালক ছেলে বা মেয়ে থাকলে (তাদেরকে ওযু করিয়ে ইহরাম বাঁধিয়ে) তাদের পক্ষ থেকে তাদের অভিভাবক মনে মনে তাদের নিয়ত করে উপরোক্ত দোয়া পড়বেন। (ক্বাহত্বানী, পৃঃ ৫২-৫৫)।

ইহরামের পর নিষিদ্ধ বিষয় সমূহ

হজ্জ ও ওমরার ইহরাম সালাতে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায়। ফলে ইহরাম বাধার পর মুহরিমের জন্য অনেকগুলি বিষয় নিষিদ্ধ থাকে। যেমন,

(১) সুগন্ধি ব্যবহার করা।

(২) স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যই মাথার চুল এবং যে কোন উপায়ে শরীরের যে কোন স্থানের পশম উঠানো ও হাত পায়ের নখ কাটা।

(৩) পশু-পক্ষী বা যেকোন প্রাণী শিকার করা। এমনকি শিকার ধরতে ইশারা-ইঙ্গিতে সহযোগিতা করা। তবে ক্ষতিকর জীবজন্তু যেমন সাপ, বিচ্ছু, ইদুর, ক্ষ্যাপা কুকুর, মশা, উকুন ইত্যাদি মারার অনুমতি রয়েছে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৯৮-৯৯)।

(৪) যাবতীয় যৌনাচার, বিবাহের প্রস্তাব, বিবাহের আকদ বা যৌন আলোচনা করা।

(৫) পুরুষের জন্য পাগড়ি, টুপী ও রুমাল ব্যবহার করা। তবে প্রচণ্ড গরমে ছায়ার জন্য বা বৃষ্টিতে ছাতা বা ঐরূপ কিছু ব্যবহার করায় দোষ নেই।

(৬) পুরুষের জন্য কোন প্রকার সেলাই করা কাপড় যেমন জুব্বা, পাঞ্জাবী, শার্ট, গেঞ্জি, মোজা ইত্যাদি পরিধান করা। তবে তালি লাগানো ইহরামের কাপড় পরায় দোষ নেই।

(৭) মহিলাদের জন্য মুখাচ্ছাদন ও হাত মোজা ব্যবহার করা। তবে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা ওয়াজিব।

(৮) ঝগড়া-বিবাদ করা এবং শরীআত বিরোধী কোন বাজে কথা বলা ও বাজে কাজ করা।

উপরোক্ত কাজগুলির মধ্যে কেবল যৌন মিলনের ফলে ইহরাম বাতিল হবে। বাকি গুলোর জন্য ইহরাম বাতিল হবে না। তবে ফিদিয়া ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ কাফফারা স্বরূপ একটি বকরী কুরবানী দিবেন অথবা ৬ জন মিসকীনকে তিন ছা খাদ্য দিবেন অথবা তিন দিন সিয়াম পালন করবেন।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৮৮।

অবশ্য যদি ভুলে কিংবা অজ্ঞতাবশত কিংবা বাধ্যগত কারণে অথবা ঘুম অবস্থায় কেউ করে ফেলে, তাতে কোন গুনাহ নেই বা ফিদিয়া নেই।

উপরোক্ত নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের উদ্দেশ্য হল মুহরিমকে দুনিয়াবি সাজসজ্জা থেকে মুক্ত হয়ে পুরোপুরি আল্লাহ মুখী করা। পুরুষের জন্য সেলাই বিহীন কাপড় পরিধানের উদ্দেশ্য হল সকল জৌলুস ও প্রদর্শনী থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য খালেছ ও নিবেদিতপ্রাণ হওয়া।

তালবিয়াহ

ইহরাম বাধার পর থেকে মসজিদুল হারামে পৌঁছা পর্যন্ত ইহরামের কারণে নিষিদ্ধ বস্তু সমূহ হতে বিরত থাকবেন এবং হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত সর্বদা সরবে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বেন, যাকে ‘তালবিয়া’ বলা হয়। পুরুষগণ সরবে ও মহিলাগণ নিম্নস্বরে ‘তালবিয়া’ পাঠ করবেন।

মুয়াত্তা, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/২৫৪৯।

উচ্চারণ: ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক; লা শারীকা লাক’।

অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির। আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই।

উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগে আরবরা তাওয়াফ কালে নিম্নোক্ত শিরকী তালবিয়া পাঠ করত। – লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা, ইল্লা শারীকান হুয়া লাক; তামলিকুহু ওয়া মা মালাক’ (আমি হাজির তোমার কোনো শরিক নেই, কেবল ঐ শরীক যা তোমার জন্য রয়েছে। তুমি যার মালিক এবং যা কিছুর সে মালিক’)। মুশরিকরা ‘লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা’ বলার পর রাসূল (ছাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে ক্বাদ ক্বাদ (থামো থামো, আর বেড়োনা) বলতেন।

মুসলিম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে; মিশকাত হা/২৫৫৪ ‘ইহরাম ও তালবিয়া’ অনুচ্ছেদ।

বস্তুত: ইসলাম এসে উক্ত শিরকী তালবিয়া পরিবর্তন করে পূর্বে বর্ণিত নির্ভেজাল তাওহীদ ভিত্তিক তালবিয়া প্ৰবৰ্তন করে। যার অতিরিক্ত কোন শব্দ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেননি।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৪১ ‘ইহরাম ও তালবিয়া’ অনুচ্ছেদ।

‘তালবিয়া’ পাঠ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত কামনা করে এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো’আ সমূহ পাঠ করা যাবে। যেমন ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার’ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে জান্নাত প্রার্থনা করছি ও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)।

আবু দাউদ হা/৭৯৩; সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৮৬৫।

অথবা বলবে ‘রব্বে ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব আছু ‘ইবা-দাকা’। ‘হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হতে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে।

মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪৭ তাশাহুদে দোয়া’ অনুচ্ছেদ-১৭।

নিয়তঃ মনে মনে ওমরাহ বা হজ্জের সংকল্প করা ও তালবিয়া পাঠ করাই যথেষ্ট। মুখে ‘নাওয়াইতুল ওমরাতা’ বা ‘নাওয়াইতুল হাজ্জা’ বলা বিদআত।

ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৬৪ পৃঃ।

উল্লেখ্য যে, হজ্জ বা ওমরার জন্য ‘তালবিয়া’ পাঠ করা ব্যতীত অন্য কোন ইবাদতের জন্য মুখে নিয়ত পাঠের কোন দলিল নেই।

ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “কোন মুসলমান যখন ‘তালবিয়া’ পাঠ করে, তখন তার ডানে-বামে, পূর্বে-পশ্চিমে তার ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত কংকর, গাছ ও মাটির ঢেলা সবকিছু তার সাথে ‘তালবিয়া’ পাঠ করে’।

তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৫৫০।

ত্বীবী বলেন, অর্থাৎ যমীনে যা কিছু আছে, সবই তার তালবিয়া সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।

যদি কেউ তালবিয়া পাঠ করতেও ভুলে যান, তাহলে তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবেন এবং তালবিয়া পাঠ করবেন। এজন্য তাকে কোন ফিদিয়া দিতে হবে না।

মসজিদুল হারামে প্রবেশের দোয়া

কা’বা গৃহ দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্র ইচ্ছা করলে দুহাত উঁচু করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে যেকোন দো’আ অথবা নিম্নোক্ত দো’আটি পড়তে পারেন, যা ওমর (রাঃ) পড়েছিলেন।

আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, ফা হাইয়্যিনা রাব্বানা বিস সালাম। (হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে, অতএব হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে শান্তির সাথে বাঁচিয়ে রাখুন!)।

বায়হাকী ৫/৭৩; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ‘উমরাহ পৃ ২০।

অতঃপর মসজিদুল হারামে প্রবেশ করার সময় প্রথমে ডান পা রেখে নিম্নের দোয়াটি পড়বেন।

আল্লা-হুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা’ (হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর। হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার অনুগ্রহের দরজাসমূহ খুলে দাও!’)।

হাকেম ১/২১৮; আবুদাউদ হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/৭৭২-৭৩; ছহীহাহ হা/২৪৭৮।

অথবা বলবেন, আ’ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজ হিহিল কারীম, ওয়া বিসুলত্বা-নিহিল ক্বাদীমি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম’ (‘আমি মহীয়ান ও গরিয়ান আল্লাহ এবং তাঁর মহান চেহারা ও চিরন্তন কর্তৃত্বের আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান হতে’। এই দো’আ পাঠ করলে শয়তান বলে, লোকটি সারা দিন আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল।

আবু দাউদ হা/৪৬৬; মিশকাত হা/৭৪৯।

দু’টি দো’আ একত্রে পড়ায় কোন দোষ নেই। বস্তুতঃ এ দো’আ মসজিদে নববী সহ যে কোন মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া

প্রথমে বাম পা রেখে বলবেন, ‘আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিকা’ (হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’)।

অথবা বলবেন, ‘আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া সাল্লেম; আল্লা-হুম্মা ছিমনী মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম’ (হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখো’)।

ইবনু মাজাহ হা/৭৭৩; ছহীহাহ হা/২৪৭৮।

দু’টি দো’আ একত্রে পড়ায় কোন দোষ নেই। দো’আটি মসজিদে নববী সহ সকল মসজিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

২. তাওয়াফ করা

অতঃপর হাজারে আসওয়াদের নিকটবর্তী বনু শায়বা গেইট দিয়ে অথবা অন্য যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ওযু অবস্থায় সোজা মাতাফে গিয়ে কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত ‘হাজরে আসওয়াদ’ (কালো পাথর) বরাবর সবুজ বাতির নীচ থেকে কাবা ঘরকে বামে রেখে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) শুরু শুরু করবেন। একে ‘তাওয়াফে কুদুম’ বা আগমনী তাওয়াফ বলে।

উল্লেখ্য যে, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ হল সালাতের মত। সেজন্য এতে পবিত্রতা শর্ত। মাঝখানে অযু ছুটে গেলে পুনরায় ওযু করে প্রথম থেকে আবার তাওয়াফ শুরু করতে হবে। না করলে বা সময় না পেলে তাকে ফিদিয়া স্বরূপ একটি কুরবানী দিতে হবে। তবে অজ্ঞতাবশত করলে মাফ। তাওয়াফের সময় ছালাতের ন্যায় চুপে চুপে দোআ পড়তে হয়। তবে এখানে বাধ্যগত অবস্থায় কল্যাণকর সামান্য কথা বলার অনুমতি আল্লাহ দিয়েছেন।

তিরমিযী ও অন্যান্য; মিশকাত হা/২৫৭৬; ইরওয়া হা/১২১;

মনে রাখতে হবে যে, গৃহ প্রদক্ষিণ মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং আল্লাহর হুকুম মান্য করাই ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভই মুখ্য উদ্দেশ্য।

অতঃপর এই তাওয়াফের সময় পুরুষেরা ‘ইযত্বিবা’ করবেন। অর্থাৎ ডান বগলের নীচ দিয়ে ইহরামের কাপড় বাম কাঁধের উপরে উঠিয়ে রাখবেন ও ডান কাঁধ খোলা রাখবেন। তবে অন্যান্য তাওয়াফ যেমন তাওয়াফে ইফাদা, তাওয়াফে বিদা ইত্যাদির সময় এবং সালাতের সময় সহ অন্য সকল অবস্থায় মুহরিম তার উভয় কাঁধ ঢেকে রাখবেন। হাজরে আসওয়াদ থেকে প্রতিটি তাওয়াফ শুরু হবে ও সেখানে এসেই শেষ হবে।

তাওয়াফের শুরুতে ‘হাজরে আসওয়াদ’-এর দিকে হাত ইশারা করে বলবেন- ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ সবার বড়)। অথবা শুধু ‘আল্লাহু আকবর’ বলবেন।

বায়হাকী ৫/৭৯ পৃঃ।

এভাবে যখনই হাজারে আসওয়াদে পৌঁছবেন, তখনই হাত দ্বারা ইশারা অথবা চুমু দিয়ে আল্লাহু আকবর বলবেন। ভিড় কম থাকার সুযোগ নেই। তবুও সুযোগ পেলে তাওয়াফের শুরুতে এবং শেষে ‘হাজারে আসওয়াদ’ চুম্বন করার সুন্নাত আদায় করবেন।

মোট ৭টি তাওয়াফ হবে। প্রথম তিনটি তাওয়াফে ‘রমল’ বা একটু জোরে চলতে হবে এবং শেষের চার তাওয়াফে স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। মহিলাগণ সর্বদা স্বাভাবিক গতিতে চলবেন।

মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৬৬।

অতঃপর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ‘রুকনে ইয়ামানী’ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ‘হাজরে আসওয়াদ’ পর্যন্ত দক্ষিণ দেওয়াল এলাকায় পৌঁছে প্রতি তাওয়াফে এই দোয়া পড়বেন-

উচ্চারণ: রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আযা-বান্না-র।

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যান দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা কর।

বাক্বারাহ ২/২০১; ছহীহ আবু দাঊদ হা/১৬৬৬; মিশকাত হা/২৫৮১; বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; মিশকাত হা/২৪৮৭।

এ সময় ডান হাত দিয়ে ‘রুকনে ইয়ামানী’ স্পর্শ করবেন ও বলবেন ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার’। তবে চুমু দিবেন না। ভিড়ের জন্য সম্ভব না হলে স্পৰ্শ করারও দরকার নেই বা ওদিকে ইশারা করে ‘আল্লাহু আকবর’ বলারও প্রয়োজন নেই। কেবল ‘রব্বানা আ-তিনা… দো’আটি পড়ে চলে যাবেন। আনাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অধিকাংশ সময় অত্র দোয়াটি পাঠ করতেন। উল্লেখ্য যে, রব্বানা-এর স্থলে আল্লা- হুম্মা আ-তিনা কিংবা আল্লা-হুম্মা রব্বানা আ- তিনা বললে সিজদাতেও এ দো’আ পড়া যাবে। এতদ্ব্যতীত ছালাত, সাঈ, আরাফা, মুযদালিফা সর্বত্র সর্বদা এ দো’আ পড়া যাবে। এটি একটি সারগর্ভ ও সর্বাত্মক দোআ। যা সবকিছুকে শামিল করে এবং যা সর্বাবস্থায় পড়া যায়।

উল্লেখ্য যে, কাবার উত্তর পার্শ্বে স্বল্প উচ্চ দেওয়াল ঘেরা হাতীম এর বাহির দিয়ে তাওয়াফ করতে হবে। ভেতর দিয়ে গেলে ঐ তাওয়াফ বাতিল হবে ও পুনরায় আরেকটি তাওয়াফ করতে হবে। কেননা হাতীম অংশটি মূল ক’বার অন্তর্ভুক্ত। যাকে বাদ দিলে কাবা বাদ পড়ে যাবে।

এভাবে সাত তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে বা ভিড়ের কারণে অসম্ভব হলে হারাম শরীফের যে কোন স্থানে হালকাভাবে নীরবে দুই রাকাত নফল ছালাত ছালাত আদায় করবেন। এই সময় ডান কাঁধ ঢেকে নিবেন।

(ক) এই সালাত নিষিদ্ধ তিন সময়েও পড়া যাবে।

(খ) যদি বাধ্যগত কোন শারঈ কারণে বা ভুলবশতঃ এই ছালাত আদায় না করে কেউ বেরিয়ে আসেন, তাতে কোন দোষ হবে না। কারণ এটি ওয়াজিব নয়।

(গ) এখানে সুত্রা ছাড়াই ছালাত জায়েয। তবে মুসল্লিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব। মুসল্লির সিজদার স্থান থেকে একটি বকরী যাওয়ার মত দুরত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে।

বুখারী হা/৪৯৬; মুসলিম হা/১১৩৪।

(ঘ) উক্ত সালাতে সূরা ফাতিহা শেষে প্রথম রাকাতে ‘সূরা কাফিরুন’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা ইখলাস’ পাঠ করবেন। তবে অন্য সূরাও পাঠ করতে পারেন।

তাওয়াফ ও সাঈ-তে সংখ্যা গণনায় কম হয়েছে বলে নিশ্চিত ধারণা হলে বাকিটা পূর্ণ করে নিবেন। ধারণা অনিশ্চিত হলে বা গণনায় বেশি হলে কোন দোষ নেই।

সালাত শেষে সম্ভব হলে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করবেন। অতঃপর নিকটেই পূর্ব-দক্ষিণে ‘যমযম’ এলাকায় প্রবেশ করে সেখান থেকে পানি পান করে পাশেই ‘সাফা’ পাহাড়ে উঠে যাবেন।

৩. সাফা-মারওয়া সাঈ করা

‘সাঈ’ অর্থ দৌড়ানো। তৃষ্ণার্ত মা হাজেরা শিশু ইসমাইলের ও নিজের পানি পানের জন্য মানুষের সন্ধানে পাগলপারা হয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠে দেখতে চেয়েছিলেন কোন ব্যবসায়ী কাফেলার সন্ধান মেলে কি-না। সেই কষ্টকর ও করুণ স্মৃতি মনে রেখেই এ সাঈ করতে হয়।

সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাতবার সাঈ (দৌড়) করবেন।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৫৭

দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী দুই সবুজ দাগের মধ্যে একটু জোরে দৌড়াবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। সাঈর সময় মহিলাদের দৌড়াতে হয় না সম্ভবতঃ তাদের পর্দার কারণে ও স্বাস্থ্যগত কারণে।

(১) সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হয়ে বলবেন, আমরা শুরু করছি সেখান থেকে যা দিয়ে আল্লাহ শুরু করেছেন। অতঃপর নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করবেন- ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ-ইরিল্লা-হ। অর্থ: নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। (বাক্বারাহ ২/১৫৮)।

(২) অতঃপর পাহাড়ে উঠার সময় তিনবার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবেন।

(৩) অতঃপর পাহাড়ে উঠে কা’বা-র দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে তিনবার নিম্নের দো’আ পাঠ করবেন-

উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, আনজাযা ওয়া দাহূ ওয়া নাসারা ‘আবদুহু, ওয়া হাযামাল আতা-বা ওয়াহদাহু’।

অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। তিনিই বাঁচান ও তিনিই মারেন এবং তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী’। ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন ও স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু দলকে ধ্বংস করেছেন’। এই সাথে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে অন্যান্য দো‘আও পড়া যাবে।

মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫; আবু দাউদ হা/১৮৭২।

(৪) সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক সাঈ, মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত আরেক সাঈ। এমনি করে সাফা থেকে সাঈ শুরু হয়ে মারওয়াতে গিয়ে সপ্তম সাঈ শেষ হবে।

(৫) প্রতিবার সাফা ও মারওয়াতে উঠে কাবামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে পূর্বের দো’আটি পাঠ করবেন। তবে মারওয়াতে উঠে ‘ইন্নাছ ছাফা…’ আয়াতটি পড়তে হয় না।

(৬) তাওয়াফ ও সাঈ অবস্থায় নির্দিষ্ট কোন দো’আ নেই। বরং যার যা দো’আ মুখস্ত আছে, তাই নীরবে পড়বেন। অবশ্যই তা সহীহ হাদীছে বর্ণিত দো’আ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বান্দা তার প্রভুর নিকটে তার মনের সকল কথা নিবেদন করবেন। আল্লাহ তার বান্দার হৃদয়ের খবর রাখেন। ইবনে মাসউদ ও ইবনে উমর (রাঃ) এই সময় পড়েছেন : ‘রব্বিগফির ওয়ারহাম’ (হে প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর)।

বায়হাকী ৫/৯৫ পৃঃ।

(৭) এই সময় অধিকহারে ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ পড়বেন বা কুরআন তেলাওয়াত করবেন।

# সাঈ-র জন্য ওযূ বা পবিত্রতা শর্ত নয়, তবে মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া ইবনে বায ৫/২৬৪ পৃঃ)।

## সাঈ-র মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকী সাঈগুলি ট্রলিতে করায় দোষ নেই।

### তাওয়াফ ও সাঈ-র সময় একজন দলনেতা বই বের করে জোরে জোরে পড়তে থাকেন ও তার সাথীরা পিছে পিছে সরবে তা উচ্চারণ করতে থাকে। এ প্রথাটি বিদ’আত। এটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। অর্থ না বুঝে এভাবে সমস্বরে ও উচ্চৈঃস্বরে দোআ পাঠ করার মধ্যে যেমন খুশু-খুযূ থাকে না, তেমনি তা নিজ হৃদয়ে কোনরূপ রেখাপাত করে না। ফলে এভাবে তোতা পাখির বুলি আওড়ানোর মধ্যে কোনরূপ নেকী লাভ হবে না। উপরন্তু অন্যের নীরব দোআ ও খুশু-খুযূ-তে বিঘ্ন সৃষ্টি করার দায়ে নিঃসন্দেহে তাকে গুনাহগার হতে হবে।

#### তাওয়াফের পরেই সাঈ করার নিয়ম। কিন্তু যদি কেউ তাওয়াফে ইফাযার পূর্বেই অজ্ঞতাবশত বা ভুলক্রমে সাঈ করেন, তাতে কোন দোষ হবে না।

৪. মাথা মুণ্ডন করা অথবা সমস্ত মাথার চুল ছোট করা

সাঈ শেষ হওয়ার পর মাথার চুল ছোট বা মুণ্ডন করে নেবেন।

বিদায় হজের সময় তামাত্তু কারি সাহাবীগণ চুল ছোট করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, অতঃপর সমস্ত মানুষ হালাল হয়ে গেল এবং তারা চুল ছোট করে নিল।

মুসলিম : ১২১৮।

সে হিসেবে তামাত্তু হাজীর জন্য ওমরার পর মাথার চুল ছোট করা উত্তম। যাতে হজের পর মাথার চুল কামানো যায়। মাথায় যদি একেবারেই চুল না থাকে তাহলে শুধু ক্ষুর চালাবেন। চুল ছোট করা বা মুণ্ডন করার পর গোসল করে স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে নেবেন। ৮ জিলহজ পর্যন্ত হালাল অবস্থায় থাকবেন।

আর মহিলারা মাথার প্রতিটি চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের কর পরিমাণ কর্তন করবেন; এর চেয়ে বেশি নয়।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৩/১৪৭।

উপরোক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমে মুহরিমের উমরা পূর্ণ হয়ে যাবে। তিনি যদি তামাত্তু হজকারী বা স্বতন্ত্র উমরাকারী হন, তবে তার জন্য ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল তার সব হালাল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি কিরান হজকারী হন, তাহলে এখন তিনি চুল ছোট বা মাথা মুণ্ডন করবেন না। বরং জিলহজের ১০ তারিখ (কুরবানীর দিন) পাথর মারার পর প্রথম হালাল না হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকবেন।

এ সময়ে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার, সালাত, সাদাকা, তাওয়াফ ইত্যাদি নেক কাজে নিয়োজিত থাকবেন। বিশেষ করে যিলহজের প্রথম দশ দিন, যেগুলোতে নেক কাজ করলে অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সওয়াব হাসিল হয়।

মহিলাদের জ্ঞাতব্য

(১) মহিলাগণ মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত কোন গায়রে মাহরাম ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে হজ্জ বা ওমরা করতে পারবেন না।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫১৩, ২৫১৫।

মাহরাম হল রক্ত সম্পৰ্কীয় ৭ জন : (১) পিতা- দাদা (২) পুত্র-পৌত্র ও অধঃস্তন (৩) ভ্রাতা (৪) ভ্রাতুষ্পুত্র ও অধস্তন (৫) ভগিনী পুত্র ও অধস্তন (৬) চাচা (৭) মামু। এতদ্ব্যতীত দুগ্ধ সম্পৰ্কীয় গণ।

বিবাহ সম্পর্কীয় ৪ জন : (১) স্বামীর পুত্র বা পৌত্র (২) স্বামীর পিতা বা দাদা (৩) জামাতা, পৌত্র-জামাতা, নাতিন জামাতা (৪) মাতার স্বামী বা দাদী-নানীর স্বামী।

(২) ঋতুবতী ও নেফাস ওয়ালী মহিলাগণ তাওয়াফ (ও সালাত) ব্যতীত হজ্জ ও ওমরাহর সবকিছু পালন করবেন।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৭২

(৩) যদি ওমরাহর ইহরাম বাঁধার সময় বা পরে নাপাকী শুরু হয় এবং ৮ তারিখের পূর্বে পাক না হয়, তাহলে নিজ অবস্থানস্থল থেকেই হজ্জের ইহরাম বাঁধবেন এবং তিনি তখন ওমরাহ ও হজ্জ মিলিতভাবে কিরান হজ্জকারিনী হবেন।

(৪) পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাওয়াফ ব্যতীত সাঈ, ওকূফে আরাফাহ, মুজদালিফা, মিনায় কংকর মারা, বিভিন্ন দো‘আ-দরূদ পড়া, কুরবানী করা, চুলের মাথা কাটা ইত্যাদি হজ্জের বাকী সব অনুষ্ঠান পালন করবেন।

(৫) নাপাক থাকলে বিদায়ী তাওয়াফ ছাড়াই দেশে ফিরবেন।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top