হজের ফরজ কয়টি ও কি কি? হজ্জের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী?

হজের-ফরজ-কয়টি-ও-কি-কি-হজ্জের-ওয়াজিব-কয়টি-ও-কী-কী

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে হজের ফরজ কয়টি ও কি কি এবং হজ্জের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী।

হজের ফরজ কয়টি ও কি কি

হজের ফরজ ৪টি:-

(১) ইহরাম বাধা

(২) আরাফা ময়দানে অবস্থান করা

(৩) তাওয়াফে ইফাযাহ করা

(৪) সাফা-মারওয়া সাঈ করা।

১. ইহরাম তথা হজের নিয়ত করা

যে ব্যক্তি হজ্জের নিয়ত করবে না তার হজ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আমল সমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়ত করে।

বুখারী: ১

২. উকুফে আরাফা বা আরাফায় অবস্থান

হজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম আ. এর আদর্শের অনুকরণ করেছেন। তিনি মুশরিকদের ব্যাপারে মুসলমানদেরকে বলেছেন, আমাদের আদর্শ তাদের আদর্শ থেকে ভিন্ন। সুতরাং তিনি মুসলমানদেরকে নিয়ে আরাফার ময়দানে অবস্থান করলেন এবং এক্ষেত্রেও কুরাইশদের বিপরীত করলেন। কেননা কুরাইশরা মুযদালিফা অতিক্রম করত না; বরং মুযদালিফাতেই অবস্থান করত এবং বলত, আমরা হারাম এলাকা ছাড়া অন্য জায়গা থেকে প্রস্থান করব না। উল্লেখ্য, আরাফাহ হারামের সীমারেখার বাইরে।

বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা : ৫/ ১২৫

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হজ হচ্ছে আরাফাহ।

ইরওয়াউল গালীল: ৪/২৫৬।

৩. তাওয়াফে ইফাযাহ বা তাওয়াফে যিয়ারা (বাইতুল্লাহর ফরয তাওয়াফ)

আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে।

হজ : ২৯

সাফিয়া রা. যখন ঋতুবর্তী হলেন, তখন নবীজী (সাঃ) বললেন, সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে? আয়েশা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাঃ, সে তো ইফাযা অর্থাৎ বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছে। তাওয়াফে ইফাযার পর সে ঋতুবতী হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এখন যাত্রা কর।

বুখারী : ৪২৮।

এ থেকে বুঝা যায়, তাওয়াফে ইফাযা ফরজ।

৪. সাফা ও মারওয়া সাঈ করা

অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ ও ইমামের মতে এটা ফরজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সাঈ কর, কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর সাঈ ফরয করেছেন।

মুসনাদে আহমদ : ৪২১।

আয়েশা রা. বলেন, আমার জীবনের কসম! আল্লাহ কখনো সে ব্যক্তির হজ পরিপূর্ণ করবেন না যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে না।

মুসলিম : ৯২৮।

মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি কোন একটি ফরয ছেড়ে দেবে, তার হজ হবে না।

হজের ওয়াজিব কয়টি ও কী কী

হজ্জের ওয়াজিব ৮টি:-

(১) মীকাত হতে ইহরাম বাধা

(২) আরাফা ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা

(৩) মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করা

(৪) ১০ তারিখে জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করা

(৫) মাথা মুণ্ডন করা অথবা সমস্ত মাথার চুল ছোট করা

(৬) আইয়ামে তাশরীকের রাত্রিগুলি মিনায় অতিবাহিত করা

(৭) ১১, ১২, ১৩ তারিখে তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা

(৮) বিদায়ী তাওয়াফ করা।

১. মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা

অর্থাৎ মীকাত অতিক্রমের আগেই ইহরাম বাঁধা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীকাত গুলো নির্ধারণ করার সময় বলেন, এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্যও।

বুখারী : ১৫২৪; মুসলিম : ১১৮১।

২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা

যে ব্যক্তি আরাফার ময়দানে দিনে উকূফ করবে, তার ওপর ওয়াজিব হচ্ছে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে দিনে উকুফ করেছেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছেন। মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করার সময় বললেন, মুশরিক ও পৌত্তলিকরা সূর্যাস্তের সময় এখান থেকে প্রস্থান করত, যখন সূর্য পাহাড়ের মাথায় পুরুষের মাথায় পাগড়ির মতো অবস্থান করত। অতএব আমাদের আদর্শ তাদের আদর্শ থেকে ভিন্ন।

বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা : ৫/১২৫।

সুতরাং সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রস্থান মুশরিকদের আচারের সাথে ভিন্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ছিল।

৩. মুযদালিফায় রাত্রি যাপন

ক. কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করেছেন এবং বলেছেন, আমার উম্মত যেন হজের বিধান শিখে নেয়। কারণ আমি জানি না, এ বছরের পর সম্ভবত তাদের সাথে আমার আর সাক্ষাৎ হবে না।

খ. তিনি অর্ধ রাতের পর দুর্বলদেরকে মুযদালিফা প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায়, মুযদালিফায় রাত যাপন ওয়াজিব। কারণ অনুমতি তখনই প্রয়োজন হয় যখন বিষয়টি গুরুত্বের দাবি রাখে।

গ. আল্লাহ তাআলা মাশ’আরে হারামের নিকট তাঁর যিকর করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশ‘আরে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর।

বাকারা : ১৯৮।

৪. ১০ তারিখে জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করা

১০ জিলহজ জামরাতুল আকাবায় (বড় জামরায়) কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন।

জাবের রা. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি কুরবানীর দিন তিনি তাঁর বাহনের ওপর বসে কঙ্কর নিক্ষেপ করছেন এবং বলছেন, তোমরা তোমাদের হজের বিধান জেনে নাও। কারণ আমি জানি না, সম্ভবত আমার এ হজের পর আমি আর হজ করতে পারব না।

মুসলিম : ১২৯৭; আবু দাউদ : ১৯৭০।

৫. মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করার আদেশ দিয়ে বলেন, সে যেন মাথার চুল ছোট করে এবং হালাল হয়ে যায়।

বুখারী : ১৬৯১; মুসলিম : ১২২৭।

আর তিনি মাথা মুণ্ডনকারিদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দোয়া করেছেন এবং চুল ছোট কারীদের জন্য একবার মাগফিরাতের দোয়া করেছেন।

৬. তাশরীকের রাতগুলো মিনায় যাপন

১০ তারিখ দিবাগত রাত ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করতে হবে। ১২ তারিখ যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে যায় তাহলে ১২ তারিখ দিবাগত রাতও মিনায় যাপন করতে হবে। ১৩ তারিখ কংকর মেরে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে।

আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত মসজিদুল হারামে আদায় ও তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে মিনায় ফিরে এসেছেন এবং তাশরীকের রাতগুলো মিনায় কাটিয়েছেন।

আবু দাউদ: ১৬৮৩।

হাজীদেরকে যমযমের পানি পান করানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনার রাতগুলো মক্কাতে যাপনের অনুমতি দিয়েছেন এবং উটের দায়িত্বশীলদেরকে মিনার বাইরে রাত যাপনের অনুমতি দিয়েছেন। এই অনুমতি প্রদান থেকে প্রতীয়মান হয়, মিনার রাতগুলোতে মিনাতে যাপন করা ওয়াজিব।

৭. ১১, ১২, ১৩ তারিখে তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা

তাশরীকের দিনসমূহ যথা: ১১, ১২ এবং যারা ১৩ তারিখ মিনায় থাকবেন, তাদের জন্য ১৩ তারিখেও যথাক্রমে ছোট, মধ্য ও বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন।

৮. বিদায়ী তাওয়াফ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী তাওয়াফের আদেশ দিয়ে বলেন, বাইতুল্লাহর সাথে তার শেষ সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন না যায়।

মুসলিম : ২৩৫০।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বাইতুল্লাহর সাক্ষাৎ। তবে তিনি ঋতুবতী মহিলার জন্য ছাড় দিয়েছেন।

মুসলিম : ২৩৫১।

উল্লেখ্য, যে এসবের একটিও ছেড়ে দেবে, তার ওপর দম ওয়াজিব হবে অর্থাৎ একটি পশু যবেহ করতে হবে।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে ব্যক্তি তার হজের কোন কাজ করতে ভুলে যায় অথবা ছেড়ে দেয় সে যেন একটি পশু যবেহ করে।

মুআত্তা মালেক : ৮৯০; দারাকুতনী : ২/২৪৪।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top