বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে দোয়া ইউনুস বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ, দোয়ায়ে ইউনুস কতবার পড়তে হয়, দোয়া ইউনুস পড়ার ফজিলত।
Table of Contents
Toggleদোয়া ইউনুস আরবি
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
দোয়া ইউনুস বাংলা উচ্চারণ
লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্ব-লিমিন।
দোয়া ইউনুস বাংলা অর্থ
তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।
দোয়ায়ে ইউনুস পড়ার ফজিলত কুরআনে. Dua yunus benefits
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ ذَاالنُّوۡنِ اِذۡ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنۡ لَّنۡ نَّقۡدِرَ عَلَیۡهِ فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ اَنۡ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ ٭ۖ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِينَ
এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেনঃ তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার।
অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্বাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।
সূরা আম্বিয়া আয়াত নং ৮৭ – ৮৮
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَإِنَّ يُونُسَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
إِذْ أَبَقَ إِلَى الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ
فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِينَ
فَالْتَقَمَهُ الْحُوتُ وَهُوَ مُلِيمٌ
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ
لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
আর ইউনুসও ছিলেন পয়গম্বরগণের একজন।
যখন পালিয়ে তিনি বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছেছিলেন।
অতঃপর লটারী (সুরতি) করালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেন।
অতঃপর একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলল, তখন তিনি অপরাধী গণ্য হয়েছিলেন।
যদি তিনি আল্লাহর তসবীহ পাঠ না করতেন,
তবে তাঁকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত।
সূরা সাফফাত আয়াত নং ১৩৯ – ১৪৪
দোয়া ইউনুস পড়ার ফজিলত হাদিসে. Dua yunus benefits
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ سَعْدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوتِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ . فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ ” .
قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ مَرَّةً عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ سَعْدٍ، . قَالَ أَبُو عِيسَى وَقَدْ رَوَى غَيْرُ، وَاحِدٍ، هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ يُونُسَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ سَعْدٍ، وَلَمْ يَذْكُرُوا فِيهِ عَنْ أَبِيهِ، . وَرَوَى بَعْضُهُمْ، عَنْ يُونُسَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ، فَقَالُوا عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ سَعْدٍ، وَكَانَ، يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ رُبَّمَا ذَكَرَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ عَنْ أَبِيهِ، وَرُبَّمَا، لَمْ يَذْكُرْهُ .
সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার নবী যুন- নুন [ইউনুস (আঃ)] মাছের পেটে থাকাকালে যে দোয়া করেছিলেন তা হল, “তুমি ব্যতিত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয়ই যালিমদের দলভুক্ত” – (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দোয়া করলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তার দুআ কবুল করেন।
তিরমিজি হাদিস নং ৩৫০৫
হাদিসটি সহিহ
দোয়া ইউনুস কতবার পড়তে হয়. Dua Yunus Bangla
যে কোন বালা-মসিবত, বিপদাপদ, দু:শ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নাই। এটি পড়ার পর একান্ত বিনয়-নম্রতা, পূর্ণ আন্তরিকতা ও ভয়ভীতি সহকারে আল্লাহর নিকট দুআ করতে হয়।
আমির সানআনী বলেন,
যদি বলা হয়, এটা তো একটা জিকির; দুআ নয়। আমরা বলব, এটি এমন একটি জিকির যা দ্বারা দুআ শুরু করা হয়। এটা পড়ার পর যা ইচ্ছা দুআ করবে। (আত তানবীর, ৬/৯৮)
খতমে ইউনুস পড়ার বিধান. Dua Yunus Bangla
বিপদাপদ ও বালামুসিবত থেকে পরিত্রাণ লাভ, রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ, মৃতপ্রায় ব্যক্তির সহজে জান কবজ, মৃত ব্যক্তির গোর আজাব মাফ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে হাফেজ, ইমাম ও মৌলভীদেরকে টাকার মাধ্যমে ভাড়া করে অথবা সাধারণ লোকজন জমায়েত করে তসবি দানা, ডিজিটাল কাউন্টার মেশিন, তেঁতুলের বিচি, পাথরের টুকরা, কঙ্কর ইত্যাদি দ্বারা সত্তর হাজার বার অথবা সোয়া লক্ষ বার বা ৩১৩ বা এ জাতীয় নিদিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করার মাধ্যমে ‘খতমে ইউনুস’ বা ‘দোয়া ইউনুসের খতম’ করার প্রচলিত রীতি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও শরিয়ত বহির্ভূত বিদআত। এ ব্যাপারে কুরআন, হাদিস ও ফিকাহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে এর কোন অস্তিত্ব নেই বরং এগুলো তথাকথিত বুজুর্গদের পক্ষ থেকে দীনের মধ্যে নতুন সংযোজন (বিদআত) যা ক্রমান্বয়ে মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা (বিদআত তৈরি করা) শরিয়তের দৃষ্টিতে যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
যেমন: হাদিসে এসেছে:
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي (وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ).
জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও সালাতের পর বলেন, নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হল, আল্লাহর কিতাব এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ হেদায়েত (পথনির্দেশ) হল, মুহাম্মদের হেদায়েত (পথনির্দেশ)। আর নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হল ভ্রষ্টতা। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)।
আর নাসাঈতে রয়েছে, প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার এবং সব ধরণের বিদআত ও গোমরাহি থেকে বেঁচে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুক, আমীন।