বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আরিফ আজাদ লিখিত বই নবী জীবনের গল্প এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
একটা পবিত্র, শুভ্র আর স্বপ্নময় জীবনের উপাখ্যান হলো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী তথা সীরাহ। আমাদের ধারণা – কেবল মসৃণ, সহজ আর সাবলীল জীবন হলেই বুঝি তাকে স্বপ্নময় জীবন বলে। এটা কিন্তু মোটেও সত্য নয়। স্বপ্নময় জীবনের অর্থই হলো হাজারো বাধা, হাজারো প্রতিবন্ধকতা, ঘরের ও বাইরের শত্রুতা-সহ সকল প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে একটা সফল এবং কর্মময় জীবনের স্বাক্ষর রেখে যাওয়া।
স্বপ্নময়, সফল ও সার্থক জীবনের এই যদি হয় সংজ্ঞা, পৃথিবীর যেকেউ তখন অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোটা জীবনটাই এমনই এক জীবনের অনুপম উদাহরণ। সবিস্ময়ে তিনি সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করেছেন। নিজ হাতে তিনি ঘর সাজিয়েছেন। পরের দুয়ারে ছুটে যেতেও কখনো তিনি ক্লান্তি অনুভব করেননি।
তিনি সম্ভাবনাকে রূপ দিয়েছেন বাস্তবতায়, শত্রুতাকে হয় ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছেন, নয়তো মহাবীরের মতো সেটা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। তিনি জয় করেছেন হৃদয়, শীতল করেছেন অন্তর, জুড়িয়েছেন চোখ আর ভরিয়েছেন বুক। তিনি অনুপম, অনন্য, অনতিক্রম্য!
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধরণির বুকে এমন এক মানবাত্মা, যাকে রাব্বুল আলামিন বাছাই করেছেন গোটা মানবজাতির জন্য। যিনি বয়ে এনেছেন দয়াময়ের অশেষ করুণার ফল্গুধারা। যিনি খরস্রোতা নদীতে তুলেছেন তীরভাঙা ঢেউ, মৃত পত্রপল্লবে যিনি এঁকে দিয়েছেন সবুজের আল্পনা। তৃষিত নগরীর বুকে তিনি যেন শ্রাবণের অবিরল বৃষ্টিধারা। অতলান্ত অন্ধকারে তিনি নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল আলোকের সন্ধান।
সীরাতের পরতে পরতে, ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা আছে এই মহামানবের জীবনী। তার শারীরিক গড়ন থেকে শুরু করে জীবন গঠনের দিকনির্দেশনাবলি—সবকিছুই স্বমহিমায় আমাদের সামনে উপস্থিত। কখনো তিনি আমাদের সামনে সফল একজন রাষ্ট্রনায়ক, কখনো বা যুদ্ধের তেজস্বী সেনাপতি ! কখনো তিনি অনুপম শিক্ষকের ভূমিকায়, আবার কখনো তিনি হাস্যমুখর এক স্বামী। একই সাথে তিনি আদর্শবান পিতা এবং দরদি বন্ধু। সর্বত্র তার সে কী অবাধ বিচরণ!
আমরা সীরাহ তথা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন করি ঠিকই, কিন্তু তা হতে প্রাপ্ত মর্মার্থকে যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ বানাতে কেন জানি নিদারুণভাবে ব্যর্থ হই। আমাদের এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে হলো- সীরাহগুলোতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীকে কেবল জীবনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেটাকে যদি মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে দেওয়া যেতো, নবি-জীবনের প্রতিটি ঘটনার সাথে, প্রতিটা অনুষঙ্গের সাথে আমাদের ভাবনার জন্য যদি কিছু বরাদ্দ থাকতো, তাহলে সীরাহগুলো থেকে জীবনের পাঠোদ্ধার করা আমাদের জন্য ততোধিক সহজ হয়ে যেতো।
বইয়ের পাতায় নবিজির টুকরো জীবন এবং সেই সাথে আমাদের জন্য দুটো বাড়তি লাইন যেখানে নবি-জীবনের এই ঘটনা, এই অনুষঙ্গ একান্তভাবে আমাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলবে, আমাকে শেখাবে জীবনের ধারাপাত—এমন একটা স্বপ্নকে সামনে রেখেই লিখতে শুরু করেছিলাম নবি-জীবনের গল্প।
সীরাহ থেকে তুলে আনা টুকরো টুকরো নবি-জীবনের গল্প, সাথে সেই গল্পের ভেতর থেকে কুড়িয়ে আনা আলো এবং সেই আলোতে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, কখনো ঝালাই করা, আবার কখনো বা উদ্বুদ্ধ করতে করতে এগিয়েছে বইটি।
প্রসঙ্গত, এটা পূর্ণাঙ্গ সীরাহ নয়। সীরাহ থেকে নেওয়া কিছু ঘটনাকে স্রেফ নিজের মতো করে তুলে ধরবার এক দুঃসাহসী প্রয়াস! দুঃসাহসী এ কারণে — নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী নিয়ে কাজ করবার জন্য আমি অধম যে বড়োই অযোগ্য! আল্লাহ যেন আমার এই অযোগ্যতাকে যোগ্যতায় নিয়ে যান এবং আমার ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেন।
বইটি লিখবার পেছনে আমার আরও একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। যারা সীরাহ পড়তে ইচ্ছুক নন কিংবা কখনো কোনো সীরাহ পড়েননি, এই বইটা পড়ে তারা যদি দারুণভাবে উজ্জীবিত হন এবং বইটা যদি তাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাহ পড়া পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়, তাহলেই এই অধমের কাজটা সার্থক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সীরাহ থেকে জীবনের পাঠোদ্ধারে যদি এই বই কাউকে একটুও সাহায্য করে, তার বিনিময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেন আমাকে নবিজির শাফায়াত নসিব করেন।
মানুষ ভুল করে। আর ভুল করি বলেই আমরা মানুষ। এই বইতে ভুলত্রুটি, বানান অসংগতি এবং তথ্য-বিভ্রাট থেকে যাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়, যদিও সেসব ব্যাপারে আমার সর্বোচ্চ সতর্কতা ছিলো। এমন ভুলের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম পাঠকের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি এবং যেকোনো প্রকারের সংশোধনী পেলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সরল পথে অবিচল রাখেন, আমিন।