শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

Table of Content

  1. শবে বরাতের দোয়া
  2. শবে বরাতে কবর জিয়ারত
  3. শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন

৩. শবে বরাতের দোয়া সংক্রান্ত হাদিস

পূর্বোক্ত দু’প্রকারের হাদীসে মধ্য শাবানের রজনীর ফযীলত বা মর্যাদা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে এ রাতে বিশেষ কোনো নেক আমলের নির্দেশ বা উৎসাহ প্রদান করা হয়নি। মধ্য শাবানের রজনীর ফযীলত বিষয়ে বর্ণিত তৃতীয় প্রকারের হাদীস গুলিতে এ রাত্রিতে সাধারণভাবে দোয়া করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ রাতে দোয়া করা, আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের পাপরাশি ক্ষমা লাভের জন্য প্রার্থনার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

হাদীস নং ১৪:

এ রাত্রির দোয়া-ইস্তেগফার কবুল হয় 

উসমান ইবনু আবিল আস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ কি বলেছেন:

যখন মধ্য শাবানের রাত আগমন করে তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোন যাচনাকারী আছে কি? আমি তাকে দান করব। ব্যভিচারী ও শিরকে জড়িত ব্যতীত যত লোক যা কিছু চাইবে সকলকেই তাদের প্রার্থনা পূরণ করে দেয়া হবে।

এ হাদীসটি ইমাম বায়হাক্বী তার শায়খ আবুল হুসাইন বিন বিশরান থেকে, তিনি আবু জাফর বাযযায় থেকে, তিনি মুহাম্মদ বিন আহমদ রিয়াহী থেকে, তিনি জামে বিন সাবীহ রামলী থেকে, তিনি মারহুম বিন আব্দুল আজিজ থেকে, তিনি দাউদ বিন আব্দুর রহমান থেকে, তিনি হিশাম বিন হাসসান থেকে, তিনি হাসান বসরী থেকে, তিনি সাহাবী উসমান বিন আবুল আস (রা) থেকে বর্ণনা করেন।

এই হাদীসে মধ্য-শাবানের রাতে আল্লাহর কাছে পাপ মার্জনা ও দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করার সুস্পষ্ট উৎসাহ দেয়া হয়েছে। শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী হাদীসটি দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। তবে হাদিসটির সনদ অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, হাদীসটির সনদ কিছুটা দুর্বল হলেও তা বানোয়াট, বাতিল বা অত্যন্ত দুর্বল পর্যায়ের নয়।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

এ হাদীসের দুর্বলতার তিনটি দিক রয়েছে।

প্রথমত, সাহাবী ও তাবিয়ীর মধ্যে সনদের বিচ্ছিন্নতা। সাহাবী উসমান ইবনু আবিল আস ৫১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। হাসান বসরী ২১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি উসমান ইবনু আবিল আস থেকে সরাসরি হাদীস শিক্ষা করেছেন কি না সে বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মতভেদ রয়েছে। সাধারণভাবে মুহাদ্দিসগণ মনে করেন যে, হাসান বসরী উসমান ইবনু আবিল আস থেকে সরাসরি কোনো হাদীস শ্রবণ করেননি। এজন্য হাদিসটির সনদ মুনকাতি’ বা বিচ্ছিন্ন বলে গণ্য। তবে আমরা দেখি যে, ইমাম তিরমিযী উসমান বিন আবুল আস থেকে হাসানের বর্ণনাকে সহীহ বা বিশুদ্ধ বলে গণ্য করেছেন।

দ্বিতীয়ত, তাবেয়ী ও তাবে-তাবিয়ীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতার সন্দেহ। হাসান বসরী থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হিশাম বিন হাসসান আল আযদী আবু আব্দুল্লাহ আল-বাসরী (১৪৭ হি)। তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য রাবী। বুখারী ও মুসলিম-সহ সকল মুহাদ্দিস তার বর্ণনা বিশুদ্ধ বলে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোন কোন মুহাদ্দিস উল্লেখ করেছেন যে, হাসান বসরী থেকে তিনি যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন সেগুলি তিনি সরাসরি হাসান বসরী থেকে শুনেন নি। বরং তা শাহর ইবনে হাওশাবের পাণ্ডুলিপি থেকে সংগ্রহ করে হাসান বসরীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

আর শাহর ইবনে হাওশাব দুর্বল। সে হিসেবে হাসান বসরী থেকে হিশামের রেওয়ায়েত বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল। অপর দিকে ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান (১৯৫ হি), আব্দুর রহমান বিন মাহদী (১৯৫ হি) ও অন্যান্য অনেক হাদীস বিশারদ হাসান বসরী থেকে হিশামের বর্ণনাকে বিশুদ্ধ বলে গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ইমাম তিরমিযী, হাকিম নিশাপুরী, যাহাবী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাসান বসরী থেকে হিশামের বর্ণনাকে বিশুদ্ধ হিসেবে গণ্য করেছেন।

তৃতীয়ত, বর্ণনাকারীর দুর্বলতা। এই হাদীসের সনদে উল্লেখিত সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য ও সুপরিচিত মুহাদ্দিস। একমাত্র ব্যতিক্রম জামে ইবনে সাবিহ। তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। জামি ইবনু সাবীহকে ইবনু আবি হাতিম আল-জারহু ওয়াত তাদীল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার সম্বন্ধে কোন মন্তব্য করেননি। ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে ইবনে হাজার আসকালানী উল্লেখ করেছেন যে, আব্দুল গণি ইবনু সাঈদ আল আযদী তার রচিত ‘মুশতাবাহ’ গ্রন্থে ‘জামি’-কে দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জামি’ ব্যতীত সনদের সকল রাবী সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযােগ্য।

হাদীস নং ১৫: 

পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না। 

আবু উমামা (রা)-এর সূত্রে, রাসূলুল্লাহ -এর নামে কথিত আছে যে:

পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না। রজব মাসের প্রথম রাত, মধ্য শাবানের রাত, জুমআর রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।

হাদীসটি ইবনে আসাকির (৫৭১ হি) তার তারীখে দিমাশক গ্রন্থে আবু সাঈদ বানদার বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ রূইয়ানির সূত্রে, তিনি ইবরাহীম বিন আবী ইয়াহিয়া থেকে, তিনি আবু কানাব থেকে, তিনি আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। ইমাম সুয়ূতী তাঁর “আল জামে আস সাগীর” গ্রন্থে ইবনে আসাকিরের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীসটি যয়ীফ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে বানোয়াট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ এ হাদীসের মূল ভিত্তি হলাে ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহিয়া (১৮৪ হি) নামক একজন মুহাদ্দিস।

ইমাম মালিক, আহমদ, বুখারী, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, ইয়াহইয়া আল-কাত্তান, নাসাঈ, দারাকুতনী, যাহাবী, ইবনে হিব্বান ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে রাফেজী, শিয়া, মুতাজিলা ও কাদেরিয়া আক্বীদায় বিশ্বাসী বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং মিথ্যাবাদী ও অপবিত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম শাফিয়ী প্রথম বয়সে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন বিধায় কোন কোন শাফিয়ী মুহাদ্দিস তার দুর্বলতা কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করেন। তবে শাফিয়ী মাযহাবের অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ এবং অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস এক কথায় তাকে মিথ্যাবাদী ও পরিত্যক্ত বলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

ইমাম শাফিয়ী নিজেও তার এ শিক্ষকের দুর্বলতা ও অগ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি পরবর্তী জীবনে তার সূত্রে কোনো হাদীস বললে তার নাম উল্লেখ না করে বলতেন, আমাকে বলা হয়েছে, বা শুনেছি বা অনুরূপ কোন বাক্য ব্যবহার করতেন। এ হাদীসটির ক্ষেত্রেও ইমাম শাফেয়ী বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, আগের যুগে বলা হতো, পাঁচ রাতে দোয়া করা মুস্তাহাব। ইমাম শাফী বলেন, এ সকল রাতে যে সব আমলের কথা বলা হয়েছে সেগুলােকে আমি মুস্তাহাব মনে করি।

প্রকাশ থাকে যে, যে হাদীস এ ধরণের মিথ্যাবাদী একক ভাবে বর্ণনা করেন, অন্য কোনো বিশ্বস্ত রাবী তা বর্ণনা করেন না, সে হাদীসটি বানোয়াট হিসেবেই বিবেচিত হবে। এছাড়া সনদের অন্য রাবী আবু সাঈদ বুনদার বিন উমরও মিথ্যাবাদী ও হাদীস জালকারী বলে পরিচিত।

এখানে উল্লেখ্য যে, আব্দুর রাজ্জাক সানআনী এ হাদীসটি অন্য একটি সনদে ইবনু উমারের রাঃ নিজস্ব বক্তব্য হিসাবে উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে এক ব্যক্তি বলেছেন, তিনি বাইয়ালমানীকে বলতে শুনেছেন, তার পিতা বলেছেন, ইবনে উমর বলেছেন, পাঁচ রাতের দোয়া বিফল হয় না।

এ সনদে আব্দুর রাযযাক যিনি হাদিসটি বলেছেন, তিনি অজ্ঞাত পরিচয়। যার নাম, পরিচয় ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে কিছুই জানার কোনো পথ নেই। আব্দুর রাযযাক তার নাম বলেন নি। এরূপ অজ্ঞাত পরিচয় রাবীর বর্ণিত হাদীস একেবারেই দুর্বল বলে গণ্য। সনদের পরবর্তী রাবী মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন বায়লামানী মিথ্যা হাদিস জালিয়াতি করার অভিযোগে অভিযুক্ত। ইমাম বুখারী তার হাদিস পরিত্যক্ত বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, ইবনে হিব্বান ও ইবনে আদী তাকে মিথ্যা হাদিস বানোয়াট কারী বলে উল্লেখ করেছেন। উক্ত মুহাম্মদের পিতা, সনদের পরবর্তী রাবী, আব্দুর রহমান বিন বায়লামানীও দুর্বল, যদিও তিনি তার পুত্রের চেয়ে উত্তম।

৪. শবে বরাতে কবর জিয়ারত সংক্রান্ত হাদীস

হাদীস নং ১৬: 

গোরস্থান জিয়ারত ও মৃতদের জন্য দোয়া 

আয়েশা (রা) বলেন,

এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সঃ কে খুঁজে পেলাম না। তখন বের হয়ে দেখি তিনি বাকিতে (আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে) রয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি কি আশংকা করছিলে যে, আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) তোমার উপর অবিচার করবেন! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। তখন তিনি বলেন, মহিমান্বিত পরাক্রান্ত আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের অধিক সংখ্যককে ক্ষমা করেন।

এ হাদীসটি তিরমিযী, ইবনে মাজাহ এবং আহমদ বিন হাম্বল একই সনদে আহমদ ইবনে মানি থেকে, তিনি ইয়াজিদ ইবনে হারুন থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরব থেকে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনু আবি কাসীর থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন।

এ হাদীসে কোনাে আমলের নির্দেশ বা উৎসাহ দেওয়া না হলেও এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কর্তৃক মৃত মুসলিমদের মাগফেরাতের জন্য তাদের কবর জিয়ারত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে হাদিসটির সনদ বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে এর দুর্বলতা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারীর উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টিকে আরো নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আয়েশার (রা) হাদীস হাজ্জাজের এ সনদ ব্যতীত অন্য কোন ভাবে আমরা অবগত নই। আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারীকে) এ হাদীসের দুর্বলতা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন আবি কাসীর উরওয়াহ থেকে শ্রবণ করেননি এবং হাজ্জাজ ইয়াহিয়া বিন আবি কাসীর থেকে শ্রবণ করেনি। এ হাদীসের সমার্থক একটি হাদীস অন্য সনদে আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু সে সনদে মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারী বিদ্যমান।

হাদীসটি ইবনুল জাওযী ভিত্তিহীন বর্ণনা সমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী তার সনদে আতা ইবনে আজলান থেকে, তিনি ইবনে আবি মুলাইকা থেকে, তিনি আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। এ সনদের রাবী আতা ইবনে আজলানকে মুহাদ্দিসগণ হাদিস জালিয়াতি ও মিথ্যা বলায় অভিযুক্ত করেছেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন, বুখারী, আবু হাতিম রাযী ও ইবনু হিব্বান সকলেই এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, এ রাত্রির ফযীলত বিষয়ক অধিকাংশ বানোয়াট বা অত্যন্ত দুর্বল হাদীসে এ হাদীসের মূল ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জালিয়াতি গণ মূলত এ পরিচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রঙ চড়িয়ে গল্প বা ফজিলতের কাহিনী বানিয়েছেন, যা আমরা পরবর্তী আলোচনায় দেখতে পাব।

৫. শবে বরাতের নামাজ রোজা ও দোয়া সংক্রান্ত হাদীস অনির্ধারিত পদ্ধতিতে

মধ্য শাবানের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে সালাত আদায় ও দোয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে এ রাত্রির সালাতের জন্য কোনো নির্ধারিত রাকাত, সূরা বা পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণভাবে এ রাত্রিতে তাহাজ্জুদ আদায় ও দোয়া করার বিষয়টি এ সকল হাদীস থেকে জানা যায়।

হাদীস নং ১৭: 

মধ্য শাবানের রাত্রিতে নামাজ ও দিবসে সিয়াম পালন

আলী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,

যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (সালাতে) দণ্ডায়মান থাক এবং দিবসে সিয়াম পালন কর। কারণ; ঐ দিন সূর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোন রিযিক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোন দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি আছে কি? তাকে আমি মুক্ত করব। সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।

এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার উস্তাদ হাসান বিন আলী আল-খাল্লাল থেকে, তিনি আব্দুর রাজ্জাক থেকে, তিনি ইবনে আবি সাবাহ থেকে, তিনি ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ থেকে, তিনি মুয়াবিয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর থেকে, তিনি তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ বিন জাফর থেকে, তিনি আলী ইবন আবী তালিব (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীসে মধ্য শাবানের রাত সালাত-ইবাদতে কাটানাের উৎসাহ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দিনের বেলা সিয়াম পালনের উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু হাদীসের ইমামগণের মত অনুযায়ী এ হাদীসটি বানোয়াট বা অত্যন্ত দুর্বল। কারণ এ হাদীসটি একমাত্র ইবনে আবি সাবাহ বর্ণনা করেছেন। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেননি। এ হাদীস আলী ইবনু আবি তালিব থেকে তাঁর কোন ছাত্র বর্ণনা করেননি। আব্দুলাহ বিন জাফর থেকেও তার কোন ছাত্র হাদীসটি বর্ণনা করেননি। এমনকি মুয়াবিয়া ও ইব্রাহীম বিন মুহাম্মদ থেকেও তাদের কোন ছাত্র হাদীসটি বর্ণনা করেননি। শুধুমাত্র ইবনু আবি সারাহ দাবি করেছেন যে, তিনি ইবরাহীম থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি শ্রবণ করেছেন। তার কাছ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

ইবনু আবি সারাহ (১৬২ হি) -এর পূর্ণ নাম আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আবি সারাহ। তিনি মদীনার একজন বড় আলেম ও ফকীহ ছিলেন। কিন্তু তুলনামূলক নিরীক্ষা ও বিচারের মাধ্যমে হাদীসের ইমামগণ নিশ্চিত হয়েছেন যে, তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নিতেন। ইমাম আহমদ, ইয়াহইয়া বিন মাঈন, আলী ইবনুল মাদীনী, বুখারী, ইবনে আদী, ইবনু হিব্বান ও হাকিম নিশাপুরী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।

এরই আলোকে আল্লামা শিহাব উদ্দিন আহমদ বিন আবি বকর আল-বুসীরী (৮৪০ হি) এ হাদীসের টীকায় বলেছেন, ইবনে আবি সাবরাহ দুর্বলতার কারণে এ সনদটি দুর্বল। ইমাম আহমদ ও ইবনে মাঈন তাকে হাদিস বানোয়াট কারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেছেন, হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল বা বানোয়াট। তিনি আরো বলেন, সনদটি বানোয়াট।

হাদীস নং ১৮: 

রাত্রিকালীন সালাত আদায় ও সিজদায় দোয়া

ইমাম বায়হাকী বলেন, আমাকে আমার উস্তাদ আবু আব্দুল্লাহ হাফেজ ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসা বলেছেন, তাদেরকে আবুল আব্বাস মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব বলেছেন, তাদেরকে মুহাম্মদ ইবনে ঈসা ইবনে হাইয়ান বলেছেন, তাদেরকে সাল্লাম বিন সুলায়মান থেকে, তিনি সালাম আত-তাবীল থেকে, তিনি উহাইব আল-মাক্কী থেকে, তিনি আবু রুম থেকে বর্ণনা করেন। আবু রুম বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আয়েশার (রাঃ) কাছে গেলেন। তখন কথা প্রসঙ্গে আয়েশা (রা) তাকে বলেন,

রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তার পোশাকাদি খুলে রাখলেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার তা পরিধান করলেন। এতে আমার মনে কঠিন ক্রোধের উদ্রেক হয়। কারণ আমার মনে হলো যে, তিনি আমার কোন সতীনের নিকট গমন করছেন। তখন আমি বেরিয়ে তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং দেখতে পেলাম যে, তিনি বাকী’ গোরস্থানে মুমিন নরনারী ও শহীদদের পাপ মার্জনার জন্য দোয়া করছেন। আমি (মনে মনে) বললাম, আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমি আমার জাগতিক প্রয়োজন নিয়ে ব্যস্ত আর আপনি আপনার রবের কাজে ব্যস্ত।

অতঃপর আমি ফিরে গিয়ে আমার কক্ষে প্রবেশ করলাম, তখন আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁপাচ্ছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট আগমন করে বললেন, আয়েশা, তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন? আয়শা বললেন, আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবানী হউন, আপনি আমার কাছে আসলেন এবং কাপড় খুলতে শুরু করে তা আবার পরিধান করলেন। ব্যাপারটা আমাকে খুব আহত করল। কারণ আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি আমার কোন সতীনের সংস্পর্শে গিয়েছেন। পরে আপনাকে বাকিতে দোয়া করতে দেখলাম।

তিনি বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি আশংকা করেছিলে যে, আল্লাহ ও তদীয় রাসুল (সাঃ) তােমার উপর অবিচার করবেন? বরং আমার কাছে জিবরাঈল (আ) আসলেন এবং বললেন, এ রাত্রটি মধ্য শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা এ রাতে কালব’ সম্প্রদায়ের মেষ পালের পশমের চাইতে অধিক সংখ্যককে ক্ষমা করেন। তবে তিনি শিরকে লিপ্ত, বিদ্বেষী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, কাপড় ঝুলিয়ে (টাখনু আবৃত করে) পরিধানকারী, পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান ও মদ্যপায়ীদের প্রতি দৃষ্টি দেন না।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

অতঃপর তিনি কাপড় খুললেন এবং আমাকে বললেন, হে আয়শা, আমাকে কি এ রাতে ইবাদত করার অনুমতি দিবে? আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! অবশ্যই। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন এবং এমন দীর্ঘ সিজদা করলেন আমার মনে হলো যে, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। অতঃপর আমি (অন্ধকার ঘরে) তাকে খুঁজলাম এবং তাঁর পদদ্বয়ের তালুতে হাত রাখলাম। তখন তিনি নড়াচড়া করলেন। ফলে দুশ্চিন্তা মুক্ত হলাম। আমি শুনলাম, তিনি সিজদারত অবস্থায় বলছেন: আমি আপনার কাছে শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমা চাই, অসন্তুষ্টির পরিবর্তে সন্তুষ্টি চাই। আপনার কাছে আপনার (আজাব ও গজব) থেকে আশ্রয় চাই। আপনি সুমহান। আপনার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারি না। আপনি তেমনই যেমন আপনি আপনার প্রশংসা করেছেন।

আয়েশা (রা) বলেন, সকালে আমি এ দোয়াটি তার কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি এগুলাে শিখেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা তুমি এগুলাে ভাল করে শিখ এবং অন্যকে শিক্ষা দাও। জিবরাঈল (আ) আমাকে এগুলাে শিক্ষা দিয়েছেন এবং সিজদার ভিতরে বারবার আওড়াতে বলেছেন।

এ হাদীসে মধ্য শাবানের রাতে রাত জেগে নামায আদায় করা, নামাজের সিজদায় বিভিন্ন দোয়া করা এবং মৃতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে সুস্পষ্ট উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তবে হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল ও বাতিল। ইমাম বায়হাক্বী হাদীসটি উদ্ধৃত করার পর বলেন, এ সনদটি দুর্বল।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

সনদের দুর্বলতা বোঝার জন্য আমাদের বর্ণনাকারীর পরিচয় জানতে হবে। সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী রাবী আবু রুহুম সুবাঈ’- আহযাব বিন আসাদ- তাবেয়ী ও বিশ্বস্ত। তার কাছ থেকে বর্ণনাকারী উহাইব আল-মীও বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য। তার কাছ থেকে বর্ণনাকারী সালাম আত-তাবীল (সালাম বিন সুলাইম বা সালাম বিন সুলাইমান তামিমী) অত্যন্ত দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী।

তিনি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন হাদীস রচনায় অভিযুক্ত। তার দুর্বলতা ও অগ্রহণযােগ্যতার বিষয়ে সকল ইমাম একমত। ইয়াহইয়া বিন মাঈন, আহমদ ইবনু হাম্বাল, বুখারী, নাসাঈ ও ইবনে হিব্বান সকলেই তাঁর মিথ্যাচার ও দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। তার ছাত্র সালাম বিন সুলায়মানও দুর্বলতার দিক থেকে তার কাছাকাছি। আবু হাতিম, উকাইলি ও ইবনে আদী তার হাদীসকে পরিত্যাজ্য ও অত্যন্ত দুর্বল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তার ছাত্র মুহাম্মাদ বিন ঈসা বিন হাইয়ান আল মাদায়েনীও (২৭৪ হি) দুর্বল বলে গণ্য। পরবর্তী রাবীগণ গ্রহণযােগ্য।

এ থেকে স্পষ্ট যে, হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল ও পরিত্যাজ্য। বরং হাদীসটি বানোয়াট বলে গণ্য। কারণ সালাম আত-তাবীল ছাড়া আর কেউই এই হাদীসটি বলেন নি। শুধু তিনিই হাদীসটি উহাইব থেকে শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। উহাইব-এর আর কোনো ছাত্র হাদীসটি উহাইব বলেছেন বলে উল্লেখ করেন নি। সালাম আত-তাবীল হাদিস জালিয়াতি করার অভিযোগে অভিযুক্ত। আর যে হাদীস এরূপ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই বলেন না সে হাদীসটি জাল বলে গণ্য।

হাদীস নং ১৯: 

রাত্রিকালীন নামাজ আদায় ও দীর্ঘ সিজদা 

ইমাম বায়হাক্বী বলেন, আমাদেরকে বলেছেন আবু নসর ইবনে কাতাদাহ, তিনি আবু মানসুর মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আযহারী থেকে, তিনি ইমরান ইবনে ইদরীস থেকে, তিনি আবু উবায়দুল্লাহ থেকে, তিনি তাঁর চাচা ইবনে ওয়াহাব থেকে, তিনি মুয়াবিয়া ইবনে সালিহ থেকে, তিনি আলা ইবনুল হারিস থেকে। তিনি বলেন, আয়েশা (রা) বলেছেন:

রাসূলুল্লাহ সাঃ একদা রাতে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি সিজদায় গিয়ে দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকলেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তার ওফাত হয়ে গেছে। আমি যখন এমনটা দেখলাম তখন শয়ন থেকে উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, ফলে তিনি নড়ে উঠলেন। তখন আমি (বিছানায়) ফিরে গেলাম। অতঃপর যখন তিনি সিজদা থেকে মস্তক উঠালেন এবং নামায শেষ করলেন তখন বললেন, হে আয়শা, তুমি কি মনে করেছিলে যে, নবী (সঃ) তােমার সাথে প্রতারণা করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ, আমি এমনটা মনে করিনি।

বরং আপনার দীর্ঘ সিজদার কারণে আমার মনে হয়েছে যে, আপনার ওফাত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি কি জান এটি কোন রাত? আমি বললাম আল্লাহ ও তার রাসুল সঃ ই সম্যক জ্ঞাত। তিনি বললেন, এটি মধ্য শাবানের রাত। আল্লাহ তা’য়ালা এ রাতে বান্দাদের প্রতি দৃকপাত করেন। যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করেন, যারা দয়া প্রার্থনা করে তাদেরকে দয়া করেন এবং যারা বিদ্বেষী তাদেরকে তাদের অবস্থাতেই রেখে দেন।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

এ হাদীসে মধ্য শাবানের রাতে সালাত আদায় এবং দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার উৎসাহ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বছরের প্রত্যেক রাতেই এভাবে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘ সিজদায় আল্লাহর কাছে কাদাকাটা করে দোয়া করতেন। তা সত্ত্বেও হাদীসটি সহীহ বলে প্রমাণিত হলে এ রাত্রির বিশেষ সিজদা ও দোয়ার ফজিলত প্রমাণিত হয়।

কিন্তু হাদীসটি দুর্বল। তাবিয়ী আলা ইবনুল হারেস আয়েশা (রা) থেকে কোনো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। বরং আয়েশার মৃত্যুর পরে তাঁর জন্ম। আলা ইবনুল হারেস মধ্যম পর্যায়ের গ্রহণযােগ্য রাবী। তার মৃত্যু হয়েছে ১৩০ হি. সনে। তিনি ৭০ বছর বেঁচে ছিলেন। সে হিসেবে তাঁর জন্ম সাল হবে ৬০ হি.। অপরদিকে হযরত আয়েশার মৃত্যু হয়েছে ৫৭ হিজরী সালে। এভাবে আমরা দেখছি যে, ‘আলা অন্য কারো মাধ্যমে হাদীসটি শুনেছেন কিন্তু তার নামোল্লেখ করেন নি। এ অনুল্লিখিত ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা অজ্ঞাত থাকার কারণে হাদীসটি দুর্বল। এ ছাড়া সনদের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ততার দিক দিয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ের, যাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য।

হাদীস নং ২০: 

সিজদায় ও সিজদা থেকে উঠে বসে দোয়া

ইমাম বায়হাক্বী তার সনদে সুলায়মান বিন আবি কারিমা থেকে, তিনি হিশাম বিন উরওয়া থেকে, তিনি তাঁর পিতা উরওয়া থেকে, তিনি আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

মধ্য শাবানের রাতে রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমার ঘরে ছিলেন; কারণ সে রাতটি আমার জন্য বরাদ্দ ছিল। রাতের মধ্যভাগে আমি তাকে বিছানায় পেলাম না। স্বভাবতই একজন নারীর যেমনটি হয়ে থাকে তেমনি ভাবে আমি আহত ও ক্রুদ্ধ হলাম। অতঃপর আমি চাদর মুড়ি দিলাম এবং বের হয়ে তার স্ত্রীগণের কামরা সমূহে খোঁজ নিলাম। তাকে কোথাও না পেয়ে আমার নিজের কামরায় ফিরে গেলাম। গৃহে যেয়ে দেখি তিনি একটি পতিত কাপড়ের ন্যায় সিজদায় যেয়ে বলছেন, আপনার জন্য সাজদাবনত হয়েছে আমার মুখমণ্ডল এবং আমার দেহ।

আপনার উপর বিশ্বাস এনেছে আমার অন্তর। আমার হাত এবং আমার হাতে আমি আমার আত্মার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছি তা আপনার নিকট উপস্থিত। হে মহান, সকল মহান কর্মে আপনারই আশা করা হয়। হে মহান, আপনি মহা-পাপ ক্ষমা করে দিন। আমার মুখমণ্ডল সাজদা করেছে তারই জন্য যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি প্রদান করেছেন।

অতঃপর তিনি মস্তক উঠালেন। এরপর আবার তিনি সিজদা করলেন এবং বললেন: আপনার ক্রোধ থেকে আমি আপনার সন্তুষ্টির আশ্রয় গ্রহণ করছি। আপনার শাস্তি থেকে আমি আপনার ক্ষমার আশ্রয় গ্রহণ করছি। আমি আপনার থেকে আপনারই আশ্রয় গ্রহণ করছি। আপনি আপনার যে রূপ প্রশংসা করেছেন আপনি সেরূপই। আমার ভাই দাউদ যা বলেছেন আমিও তাই বলি: আমি আমার নেতা ও প্রভুর জন্য আমার মুখমণ্ডলকে ধুলায় লুটিয়েছি এবং আমার নেতা ও প্রভুর অধিকার আছে যে, তার জন্য সিজদা করতে হবে। অতঃপর তিনি মস্তক উঠালেন এবং (বসা অবস্থায়) বললেন: হে আল্লাহ আপনি আমাকে প্রদান করুন একটি অন্তর যা অকল্যাণ এবং দুর্ভাগাও নয়।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

এরপর তিনি নামায শেষ করলেন এবং আমার কথার মধ্যে প্রবেশ করলেন, তখন আমি বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে হাঁপাচ্ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সা বললেন, হুমায়রা (আয়েশা), তোমার এ অবস্থা কেন? আমি তাঁকে ঘটনাটি খুলে বললাম। অতঃপর তিনি তাঁর হস্তদ্বয় দ্বারা আমার হাটু যুগলকে মুছতে লাগলেন এবং বললেন, এ হাটু যুগলের দুর্ভাগ্য! কত কষ্টই না পেল! আজ হলাে মধ্য শাবানের রাত। আল্লাহ্ তায়ালা এ রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং শিরকে জড়িত ও বিদ্বেষে লিপ্ত ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।

হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। কারণ সুলায়মান বিন আবি কারীমা একক ভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি ছাড়া আর কেউই হাদীসটি বর্ণনা করেন নি। হিশাম ইবনে উরওয়া অগণিত ছাত্রদের কেউই বলেন নি যে, এ অর্থে কোন হাদীস তিনি কখনাে বলেছেন। শুধুমাত্র সুলাইমান ইবনু আবী কারীমাই এ দাবি করছেন। তিনি অত্যন্ত দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী। আবু হাতিম রাযি তাকে দুর্বল হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। ইবনে আদী বলেন: তার বর্ণিত হাদীস সমূহ অধিকাংশই পরিত্যাজ্য। এ কারণেই ইবনুল জাওযী এ হাদীসটিকে ভিত্তিহীন ও পরিত্যাজ্য হাদীস সমূহের মধ্যে গণনা করেছেন।

হাদীস নং ২১: 

সালাতের সিজদায় ও সিজদা থেকে উঠে দোয়া

হাদীসটি ইবনুল জাওযী বাতিল বর্ণনাসমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার সনদে সাঈদ ইবনু আব্দিল করিম ওয়াসিতি থেকে, তিনি আবু নোমান সাদী থেকে, তিনি আবু রেজা আল উত্বারেদী থেকে, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী সঃ আমাকে আয়েশার (রাঃ) কাছে পাঠালেন। আমি তাকে বললাম, আপনি দ্রুত আমাকে ছেড়ে দিন। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) -কে মধ্য শাবানের রাত সম্পর্কে আলােচনারত অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন, হে আনাস, তুমি বস, আমি তোমাকে মধ্য শাবানের রাত সম্বন্ধে বলব,

সে রাতটি আমার জন্য বরাদ্দ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাঃ আমার কাছে এসে আমার লেপের ভিতরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর রাতে আমি জাগ্রত হয়ে তাকে পেলাম না। তখন তাঁর স্ত্রীগণের গৃহগুলিতে অনুসন্ধান করেও তাকে পেলাম না। আমি ধারণা করলাম, তিনি তার দাসী মারিয়া কিবতিয়ার ঘরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বের হয়ে মসজিদে গেলাম। তখন আমার পায়ের সাথে তার দেহ মোবারকের স্পর্শ হলাে। সে সময় তিনি সিজদারত অবস্থায় বলছিলেন, “আপনার জন্য সিজদাবনত হয়েছে আমার দেহ ও আমার ছায়া। আপনার উপর বিশ্বাস এনেছে আমার অন্তর। আমারই দুই হাতের মধ্যে, যে হস্তদ্বয় দ্বারা আমি আমার আত্মার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছি। তাই হে মহান, আপনি মহাপাপ ক্ষমা করার যোগ্যতা রাখেন। আপনি কঠিন পাপরাশি ক্ষমা করে দিন।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

অতঃপর তিনি মস্তক উঠালেন এবং বললেন: হে আল্লাহ আপনি আমাকে প্রদান করুন একটি অন্তর যা অকল্যণ থেকে পবিত্র এবং যা অবিশ্বাসী নয় এবং দুর্ভাগাও নয়। অতঃপর তিনি আবার সাজদা করলেন এবং বললেন: “আমার ভাই দাউদ (আ) যা বলেছেন আমিও তাই বলি: হে আমার নেতা, আমি আমার মুখমণ্ডলকে ধুলায় লুটিয়েছি এবং আমার নেতার অধিকার আছে যে, তার জন্য মুখমণ্ডলগুলি ধুলায় লুটাবে। অতঃপর তিনি মস্তক উঠালেন। আমি (আপন মনে) বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবানী হউন! আপনি এক জগতে আর আমি অন্য জগতে।

তখন রাসুল (সঃ) আমার পদধ্বনি শুনে আমার কক্ষে প্রবেশ করলেন এবং বললেন হে আয়েশা, তুমি কি জান এটি কোন রাত? এটি মধ্য শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা কালব সম্প্রদায়ের মেষপালের পশমের সমপরিমাণ মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। তবে ছয় ব্যক্তি উক্ত ক্ষমার আওতায় পড়বে না। তারা হলো: মদ্যপায়ী, পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান, বারংবার ব্যাভিচারে লিপ্ত ব্যক্তি, সম্পর্ক ছিন্নকারী, প্রাণীর ছবি অংকনকারী এবং যে ব্যক্তি একের কথা অপরের কাছে লাগায়।

এ হাদীস থেকেও পূর্ববর্তী হাদীসের ন্যায় উক্ত রাতে সালাত আদায়, সিজদারত অবস্থায় ও বসা অবস্থায় দোয়া করার উৎসাহ পাওয়া যায়। কিন্তু হাদীসটি একেবারেই বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য। কারণ সাঈদ বিন আব্দুল করিম এককভাবে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি ছাড়া আর কেউই এই হাদীসটি বলেন নি। তিনি অত্যন্ত দুর্বল ও পরিত্যক্ত বা মিথ্যা হাদীস বানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। এধরণের রাবী যে হাদীস এককভাবে বর্ণনা করে তা ভিত্তিহীন বা বাতিল হিসেবে বিবেচিত। এজন্য ইবনুল জাওযী বলেন, এ সনদটি গ্রহণযোগ্য নয়। হাফিজ আবুল ফাতাহ আযাদী বলেছেন: সাঈদ ইবনু আব্দিল করিম পরিত্যক্ত। তার সাথে ইমাম যাহাবী এবং ইবনে হাজার আসকালানীও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

হাদীস নং ২২: 

বাকী গোরস্থানে সেজদারত অবস্থায় দোয়া

ইমাম যাহাবী মিথ্যাবাদী ও দুর্বল রাবীদের জীবনী গ্রন্থে মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া ইবন ইসমাঈল’ নামক তৃতীয় শতকের একজন অনির্ভরযােগ্য রাবীর জীবনী আলোচনাকালে তার বর্ণিত বাতিল হাদিসের নমুনা হিসেবে হাদিসটি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া নামক এই ব্যক্তি তার সনদে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

মধ্য-শাবানের রাতে আমার প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ সঃ আমার কাছে আসলেন এবং তাঁর বিছানায় গেলেন; অতঃপর শােয়া থেকে উঠে গােসল করলেন এবং দ্রুত বেরিয়ে গেলেন; আমি তার পদাংক অনুসরণ করলাম; যেয়ে দেখি তিনি বাকীতে সেজদারত অবস্থায় দোয়া করছেন, হে প্রভু, আপনার জন্য সাজদাবনত হয়েছে আমার দেহ ও আমার মন।

ইমাম যাহাবী বলেন, এ হাদীসটি এ ব্যক্তির বর্ণিত বাতিল হাদীস গুলোর অন্যতম।

হাদীস নং ২৩: 

দুই ঈদ ও মধ্য-শাবানের রাত্রিভর ইবাদত

হাদীসটি ইমাম যাহাবী বাতিল ও মাওযু হাদীস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ঈসা ইবনে ইবরাহীম ইবনে তাহমান নামক দ্বিতীয় হিজরী শতকের এক ব্যক্তি বলেন, তাকে সালামা ইবনে সুলাইমান বলেছেন, মারওয়ান ইবনে সালিম থেকে, তিনি ইবনুল কুরদাউস থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাত ও দুই ঈদের রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তরের মৃত্যু হবে না যে দিন সকল অন্তর মরে যাবে।

এ হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী উপযুক্ত ঈসা ইবনে ইবরাহীম ইবনে তাহমান বাতিল হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে সুপরিচিত। ইমাম বুখারী, নাসাঈ, ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আবু হাতিম রাযী ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস একবাক্যে তাকে পরিত্যক্ত ও মিথ্যাবাদী রাবী বলে উল্লেখ করেছেন। এ পর্যায়ের রাবী থেকে এককভাবে বর্ণিত হাদীস ভিত্তিহীন বা বানোয়াট হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া ঈসা ইবনে ইব্রাহীম নামক এ ব্যক্তি তার উস্তাদ হিসেবে যার নাম উল্লেখ করেছেন সেই সালামা বিন সুলাইমান দুর্বল রাবী বলে পরিচিত। আর তার উস্তাদ হিসেবে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেই ‘মারওয়ান বিন সালিম মিথ্যা হাদিস বর্ণনার অভিযোগে অভিযুক্ত। এভাবে আমরা দেখছি যে, এ হাদীসটির সনদের রাবীগণ অধিকাংশই মিথ্যাবাদি বা অত্যন্ত দুর্বল। এরা ছাড়া কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেননি। কাজেই হাদীসটি বানোয়াট পর্যায়ের।

এখানে উল্লেখ্য যে, আবু উমামা (রা) ও অন্যান্য সাহাবী থেকে একাধিক দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি দু ঈদের রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তরের মৃত্যু হবে না যে দিন সকল অন্তর মরে যাবে। এ সকল বর্ণনায় দু ঈদের রাতের সাথে মধ্য শাবানের রাতকে কেউ যুক্ত করেন নি।

হাদীস নং ২৪: 

পাঁচ রাত্রি ইবাদতে জাগ্রত থাকার ফযীলত 

মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নামে বর্ণিত হয়েছে:

যে ব্যক্তি পাঁচ রাত (ইবাদতে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত প্রাপ্য হবে: যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখের রাত, ৯ তারিখের (আরাফার) রাত্রি, ১০ তারিখের (ঈদুল আযহার) রাত্রি, ঈদুল ফিতরের রাত্রি ও মধ্য শাবানের রাত্রি।

হাদীসটি ইস্পাহানী তারগীব গ্রন্থে সোয়াইদ ইবনে সাঈদ-এর সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন। সুওয়াইদ আব্দুর রহিম আল আম্মী থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াহ ইবনে মুনাব্বিহ থেকে, তিনি মুয়ায (রা) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

হাদীসটির রাবী আব্দুর রহিম ইবনু যায়দ আল-আম্মী (১৮৪ হি) জাল-হাদীস বর্ণনাকারী বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। ইমাম বুখারী, নাসাঈ, ইয়াহিয়া ইবনে মায়ীন, আহমাদ ইবনু হাম্বাল, আবু হাতিম রাযী, আবু দাউদ ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস এ ব্যক্তির মিথ্যাবাদিতার বিষয় উল্লেখ করেছেন। এজন্য এ হাদীসটি মওযু বা জাল হাদীস বলে গণ্য। ইবনুল জাওযী, ইবনু হাজার আসকালানী, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দিস এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

হাদীস নং ২৫: 

এ রাত্রিতে রহমতের দরজা গুলো খোলা হয়।

আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনু ইরাক আল-কিনানী (৯৬৩ হি) তার জাল ও ভিত্তিহীন হাদীস সংকলনের গ্রন্থে ইবনে আসাকির এর বরাত দিয়ে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদীস হিসেবে নিমের হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) এর সূত্রে কথিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,

মধ্য শাবানের রাত্রে জিবরাঈল (আ) আমার নিকট আগমন করে বলেন, আপনি দাঁড়িয়ে নামায পড়ুন এবং আপনার মাথা ও হস্তদ্বয় উপরে উঠান। আমি বললাম, হে জিবরাঈল, এটি কোন রাত? তিনি বলেন, হে মুহাম্মাদ, এ রাতে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং রহমতের ৩০০ দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাকী গোরস্থানে গমন করেন। তিনি যখন সেখানে সেজদারত অবস্থায় দোয়া করছিলেন, তখন জিবরাঈল সেখানে অবতরণ করে বলেন, হে মুহাম্মদ, আপনি আকাশের দিকে মাথা তুলুন। তিনি তখন তার মস্তক উত্তোলন করে দেখেন যে, রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক দরজায় একজন ফেরেশতা ডেকে বলছেন, এই রাত্রিতে যে সিজদা করে তার জন্য মহা সুসংবাদ।

হাদীসটি উল্লেখ করে ইবনু ইরাক বলেন, এ হাদীস একটি মাত্র সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে সূত্রে উল্লিখিত বর্ণনাকারীগণ সকলেই অজ্ঞাত পরিচয়। ফলে হাদীসটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হিসেবে বিবেচিত। 

উক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, শবে বরাতের সালাত ও দোয়া সংক্রান্ত সমস্ত হাদিসই দুর্বল।

৬. শবে বরাতের নামাজ সংক্রান্ত হাদীস নির্ধারিত পদ্ধতিতে

শবে বরাতের ফযীলত বিষয়ে বর্ণিত অন্য কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকআত সালাত আদায়ের বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাদ্দিস ও আলিমগণের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী এ অর্থে বর্ণিত সকল হাদীস বানোয়াট ও ভিত্তিহীন, যা হিজরী চতুর্থ শতকের পর রাসুলুল্লাহ সা এর নামে রচনা করে বানোয়াট সনদ তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। মুহাদ্দিসগণ নিরীক্ষার মাধ্যমে জালিয়াতি নিশ্চিত করেছেন। তারা একমত যে, শবে বরাতের রাত্রিতে নির্দিষ্ট রাকাত নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে পাঠ করার অর্থে বর্ণিত সকল হাদীসই বানোয়াট এবং গল্পকার ওয়ায়েজদের মস্তিষ্কপ্রসূত কথা। নিম্নে হাদিস গুলো আলোচনা করা হল। যেহেতু এগুলো সবই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নামে প্রচারিত বানােয়াট কথা যা তিনি কখনোই বলেন নি বলে মুহাদ্দিসগণ একমত।

হাদীস নং ২৬: 

৩০০ রাকাত, প্রতি রাকাতে ৩০ বার ইখলাস

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার সুরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাকাত সালাত আদায় করবে জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।

হাদীসটি আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম বাতিল বা ভিত্তিহীন হাদীস সমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

হাদীস নং ২৭: 

১০০ রাকাত, প্রতি রাকাতে ১০ বার ইখলাস

মধ্য শাবানের রজনীতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী চতুর্থ শতকের পরে মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এ রাতে এ পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়।

এ সময়ে বিভিন্ন মিথ্যাবাদী গল্পকার ওয়ায়েজ এ অর্থে কিছু হাদীস বানিয়ে বলেন। এ অর্থে ৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার প্রত্যেকটিই বানােয়াট ও ভিওিহীন। প্রথমটি আলী (রা) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (আঃ) -এর নামে প্রচারিত: 

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা ও ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে সে উক্ত রাতে যত প্রয়োজনের কথা বলবে আল্লাহ তার সকল প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। লাওহে মাহফুজে তাকে দুর্ভাগা লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন করে সৌভাগ্যবান হিসেবে তার নিয়তি নির্ধারণ করা হবে, আল্লাহ তার কাছে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার পাপ রাশি মুছে দেবে, বছরের শেষ পর্যন্ত তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন রাখবে, এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা ‘আদন’ জান্নাতে ৭০ হাজার বা ৭ লক্ষ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা জান্নাতের মধ্যে তার জন্য শহর ও প্রাসাদ নির্মাণ করবে এবং তার জন্য বৃক্ষরাজি রোপণ করবে। যে ব্যক্তি এ সালাত আদায় করবে এবং পরকালের শান্তি কামনা করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য তার অংশ প্রদান করবেন।

হাদীসটি সর্বসম্মতভাবে বানোয়াট ও জাল। এর বর্ণনাকারীগণ কেউ অজ্ঞাত পরিচয় এবং কেউ মিথ্যাবাদী জালিয়াত হিসেবে পরিচিত।

হাদীস নং ২৮: 

১০০ রাকাতের, প্রতি রাকাতে ১০ বার ইখলাস

এটি ১০০ রাকাত সংক্রান্ত ২য় হাদিস। ইবনে ওমর (রা) এর সূত্রে রাসুল সঃ এর নামে বর্ণনা করা হয়েছে:

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে এক শত রাকাত সালাতে এক হাজার বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তায়ালা তার কাছে ১০০ জন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন, তার মধ্যে ত্রিশ জন তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবে, ত্রিশজন তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপত্তার সুসংবাদ প্রদান করবে, ত্রিশজন তাকে ভুলের মধ্যে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং দশজন তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের জবাব দিবে।

হাদীসটি বানোয়াট। সনদের অধিকাংশ রাবী অজ্ঞাত পরিচয়। বাকীরা মিথ্যাবাদী হিসেবে সুপরিচিত।

হাদীস নং ২৯: 

১০০ রাকাতের, প্রতি রাকাতে ১০ বার ইখলাস

এটি ১০০ রাকাত সংক্রান্ত ৩য় হাদীস। জাল হাদীস বর্ণনাকারী মিথ্যাবাদীগণ এ হাদীসটি বিশিষ্ট তাবেয়ী ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ আল বাকের (১১৫ হি) থেকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বরাতে বর্ণনা করেছে:

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকআত সালাতে ১০০০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তার কাছে ১০০ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। ৩০ জন তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবে, ৩০ জন তাকে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দিবে, ৩০ জন তার ভুল সংশোধন করবে এবং ১০ জন তার শত্রুদের নাম লিপিবদ্ধ করবে।

এ হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের কিছু রাবী অজ্ঞাত পরিচয় এবং কিছু রাবী মিথ্যাবাদী হিসেবে সুপরিচিত।

হাদীস নং ৩০: 

১০০ রাকাতের, প্রতি রাকাতে ১০ বার ইখলাস।

এটি ১০০ রাকাত সংক্রান্ত ৪র্থ হাদীস। আমরা দেখেছি যে, ১০০ রাকাত সংক্রান্ত এ বিশেষ পদ্ধতিটি হিজরি চতুর্থ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন গল্পকার ওয়াযেযের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং যুগে যুগে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে ভারতীয় ওয়ায়েজগণ এ পদ্ধতির মধ্যে প্রত্যেক দুই রাকাতের পরে “তাসবিহাত তারাবীহ”র প্রচলন করেন এবং ১০০ রাকাত পূর্ণ হওয়ার পর কতিপয় সাজদা, সিজদার ভিতরে ও বাইরে কতিপয় দোয়া সংযুক্ত করেছেন।

আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (১৩০৬ হি) বানোয়াট হাদীস সমূহের মধ্যে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। যার সারমর্ম হলো, 

মধ্য শাবানের রাতে পঞ্চাশ সালামে ১০০ রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। প্রত্যেক দুই রাকাত পর তাসবীহুত তারাবীহ পাঠ করবে, এর পর সিজদা করবে। সিজদার মধ্যে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর সিজদা থেকে মাথা তুলবে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করবে ও কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় সাজদা করবে এবং তাতে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে।

হাদীস নং ৩১: 

৫০ রাকাত সালাত

ইমাম যাহাবী এ হাদীসটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদীস হিসেবে হাদীসটির বর্ণনাকারী অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মাদ বিন সাঈদ আল-মীলী আত তাবারীর জীবনীতে উলেখ করেছেন। উক্ত মুহাম্মদ বিন সাঈদ এ হাদীসটি তার মতই অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মাদ বিন আমর আল-বাজালীর সনদে আনাস (রা) থেকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন: 

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ৫০ রাকাত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার কাছে যত প্রকার প্রয়োজনের কথা বলবে তার সবই পূরণ করে দেয়া হবে। এমনকি লাওহে মাহফুজে তাকে দুর্ভাগ্যবান হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন করে তাকে সৌভাগ্যবান করা হবে। এবং আল্লাহ তা’আলা তার কাছে ৭ লক্ষ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার নেকী লিপিবদ্ধ করবে, অপর ৭লক্ষ ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার জন্য বেহেশতে প্রাসাদ নির্মাণ করবে এবং ৭০ হাজার একত্ববাদীর জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।

ইমাম যাহাবী এ জাল হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, যে ব্যক্তি এ হাদীসটি বানিয়েছে আল্লাহ তাআলা তাকে লাঞ্ছিত করুন।

হাদীস নং ৩২: 

১৪ রাকাত সালাত

ইমাম বায়হাক্বী তাঁর সনদে আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

আমি রাসুলুল্লাহ সঃ কে মধ্য-শাবানের রাতে ১৪ রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি। সালাত শেষে বসে তিনি ১৪ বার সূরা ফাতিহা, ১৪ বার সূরা ইখলাস, ১৪ বার সূরা ফালাক, ১৪ বার সূরা নাস, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করেছেন, এ সব কাজের সমাপ্তির পর আমি তাকে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি সা বললেন: তুমি আমাকে যে ভাবে করতে দেখেছ এভাবে যে করবে তার আমল নামায় ২০টি কবুল হজ্বের সাওয়াব লিখা হবে এবং ২০ বছরের কুবুল সিয়ামের সওয়াব লেখা হবে। পরদিন যদি সে সিয়াম পালন করে তবে দু বছরের সিয়ামের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।

হাদীসটি উল্লেখ করার পর ইমাম বায়হাক্বী বলেন: ইমাম আহমদ বলেছেন যে, এ হাদীসটি আপত্তিকর, পরিত্যক্ত, জাল ও বানোয়াট বলে প্রতীয়মান হয়। হাদীসটির সনদে অজ্ঞাত পরিচয় বর্ণনাকারীগণ রয়েছে।

অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করার বিষয়ে ইমাম বায়হাকীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ইবনুল জাওযী ও জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন: হাদীসটি বানোয়াট, এর সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন। সনদের মধ্যে মুহাম্মদ বিন মুহাজির রয়েছেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেন মুহাম্মাদ বিন মুহাজিরের হাদীস বানােয়াটকারী।

হাদীস নং ৩৩: 

১২ রাকাত, প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার ইখলাস

জালিয়াতি গণ আবু হুরায়রা (রা) পর্যন্ত একটি জাল সনদ তৈরি করে তার সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেছে :

যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১২ রাকআত সালাত আদায় করবে এবং প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, সালাত শেষ হওয়ার পূর্বেই বেহেশতের মধ্যে তার অবস্থান সে অবলোকন করবে। এবং তার পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত হয়েছে এমন দশ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।

এ হাদীসের সনদের অধিকাংশ বর্ণনাকারীই অজ্ঞাত। এছাড়াও সনদের মধ্যে কতিপয় দুর্বল ও পরিত্যাজ্য বর্ণনাকারী রয়েছে।

এভাবে আমরা দেখছি যে, মধ্য শাবানের রাতে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট রাকাত সালাত আদায় সংক্রান্ত হাদিসগুলি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে সকলেই একমত। কিন্তু কতিপয় নেককার ও সরলপ্রাণ ফকীহ ও মুফাসসির তাদের রচনাবলিতে এগুলির জালিয়াতি ও অসারতা উল্লেখ ব্যতীতই এসকল ভিত্তিহীন এগুলি উল্লেখ করেছেন। এমনকি কেউ কেউ এগুলোর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া প্রদান করেছেন ও তদানুযায়ী আমল করেছেন, যা পরবর্তীতে এ রীতি প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম. শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে হাদিস

আল্লামা ইবনুল জাওযী বলেন, মসজিদের অজ্ঞ ইমামগন জনসাধারণকে একত্র করা ও নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ফাঁদ হিসেবে এ সকল সালাত, সালাতুর রাগায়েব ও অনুরূপ অন্যান্য বানোয়াট পদ্ধতির সালাতকে ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন গল্পকার বর্ণনাকারী তাদের মাহফিল জমানোর জন্য এগুলো বর্ণনা করেন যার সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই।

মোল্লা আলী ক্বারী (১০১৪ হি) শবে বরাতের সালাতের ফযীলত সংক্রান্ত হাদিসগুলির অসারতা উল্লেখ পূর্বক বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে, যারা সুন্নতের ইলমের সন্ধান পেয়েছেন তারা এগুলাে দ্বারা প্রতারিত হন কি করে! এ সালাত চতুর্থ হিজরী শতকের পর ইসলামের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে যার উৎপত্তি হয়েছে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে। এ ব্যাপারে অসংখ্য জাল হাদীস তৈরী করা হয়েছে যার একটিও সঠিক বা নির্ভরযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন, হে পাঠক, এ সকল ভিত্তিহীন মিথ্যা হাদীস কুতুল কুলুব’, ‘ইহইয়াউ- উলুমিদ্দীন’ ও সালাবীর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ থাকার কারণে আপনারা প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হবেন না। ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ আজলুনীও (১১৬২ হি) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।