বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে মনের আশা পূরণের দোয়া ও আমল সমূহ।
মনের আশা পূরণের দোয়া ও আমল
মনের যে কোন নেক আশা পূরণের জন্য ইসমে আজম সহ আল্লাহর নিকটে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সালাতের সালাম ফিরানোর পর আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা সহকারে ইসমে আজম বা আল্লাহর সুমহান নাম ধরে ডেকে তার নিকটে দোয়া করতে হয়। ইসমে আজম সম্বলিত কয়েকটি দোয়া হাদিসে উল্লেখ আছে। যা থেকে তিনটি দোয়া নিচে উল্লেখ করছি।
দোয়া নং ১
আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান এবং হাকীম হযরত বুরাইদা (রাঃ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে এই দুআ করতে শুনলেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ আমি সুদৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি এক, অমুখাপেক্ষী। যার কোনো সন্তান নেই, তিনিও কারো সন্তান নন এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই।
তার এই দুআ শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করলেন-
এই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ঐ নামের মাধ্যমে দুআ করেছে, যার উছিলায় কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা দিয়ে থাকেন আর কোন দুআ করলে তা কবুল করেন।
সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস: ১৪৯৩। জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৪৭৫ ।
আবু দাউদের শব্দ- তুমি আল্লাহ তাআলার ইসমে আযমের দ্বারা দুআ করেছ।
দোয়া নং ২
ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান এবং হাকীম হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি একবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর মজলিসে বসা ছিলেন। এক ব্যক্তি নামায পড়লো এবং নামাযের পর দুআ করলো-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لك الْمَنَّانُ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা’মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা ওয়াহ’দাকা লা-শারিকা লাকাল মান্না-ন, ইয়া বাদিআ’স্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ তুমিই প্রশংসার যোগ্য। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি হান্নান ও মান্নান (দয়ালু ও দাতা)। তুমিই আসমান-যমীনের স্রষ্টা। হে শ্রেষ্ঠত্ব ও বদান্যতার অধিকারী। হে চিরঞ্জীব। হে বিশ্ব জাহানের ব্যবস্থাপক।
এই দুআ শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ইসমে আযমের মাধ্যমে দুআ করেছে! যার দ্বারা দুআ করলে তা কবুল করা হয় এবং কিছু প্রার্থনা করলে তা প্রদান করা হয়।
জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ৩৫৪৪। সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস: ১৪৯৫।
দোয়া নং ৩
হযরত সাদ ইবনে ওয়াক্কাস (রা) বলেন, রাসুল সাঃ বলেন যে- আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর ইসমে আযম জানিয়ে দিব না? হযরত ইউনূস (আ) এর দুআই হলো ইসমে আযম। তখন এক ব্যক্তি বলল, এটা কি হযরত ইউনূস (আ) এর জন্যই নির্ধারিত? তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তুমি কি শোন নাই এরপর আল্লাহ তাআলা কি বলেছেন-
এরপর তাকে আমি উদ্ধার করলাম দুঃখ-দুশ্চিন্তা হতে। এমনিভাবে আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া: ৮৮)
আল মুস্তাদরাক হাকীম, দুআ অধ্যায়, হাদিস: ১৮৬৫।
নাসাঈ ও হাকীম হযরত ফাযালা ইবনে উবাইদ (রাঃ) থেকে মারফুরুপে বর্ণনা করেন যে, হযরত ইউনুস (আ) মাছের পেটে এই দুআ করেন-
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যলিমীন। (সূরা আম্বিয়া: ৮৭)
অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।
নাসাঈ আস সুনানুল কুবরা, কিতাব আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলি, হাদীস: ১০৪১৭। আল মুস্তাদরাক হাকিম, দুআ অধ্যায়, হাদীস: ১৮৬৩।