মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (আরবের তৎকালীন অবস্থা)

মহানবী সাঃ এর জীবনী, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, রাসুল (সাঃ) এর জীবনী, নবীজির জীবনী, রাসুল সাঃ এর জীবনী, মোহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

মহানবী-হযরত-মুহাম্মদ-সাঃ-এর-জীবনী-আরবের-তৎকালীন-অবস্থা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (আরবের তৎকালীন অবস্থা)

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী অর্থাৎ সীরাত আলোচনার ২য় পর্ব এটি। প্রথম পর্বে সীরাত শাস্ত্রের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। এই পর্বে আরবের তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করব। তারপর ধাপে ধাপে সীরাত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

আরব জাতি

মধ্যপ্রাচ্যের মূল অধিবাসী হলেন আরব জাতি। সে কারনে একে আরব উপদ্বীপ বলা হয়। আরবরা মূলত তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত। ১. আদি আরব, যারা আদ, ছামূদ, আমালেকা প্রভৃতি আদি বংশের লোক। যাদের বিস্তৃত ইতিহাস পাওয়া যায় না। ২. ক্বাহত্বানী আরব, যারা ইয়েমেনের অধিবাসী। এরা ইয়া‘রাব বিন ইয়াশজাব বিন ক্বাহত্বানের বংশধর। ৩. আদনানী আরব, এরা ইরাক থেকে আগত ইবরাহীম-পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশোদ্ভূত আদনান-এর বংশধর। এদের বংশেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্ম হয়।

আরবের অবস্থানস্থল

তিন দিকে সাগর বেষ্টিত প্রায় ১৩ লক্ষ বর্গমাইল ব্যাপী বিশ্বের সেরা আরব উপদ্বীপ কেবল পৃথিবীর মধ্যস্থলেই অবস্থিত নয়, বরং এটি তখন ছিল চতুর্দিকের সহজ যোগাযোগ স্থল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রভূমি। বর্তমান ফ্রান্সের প্রায় দ্বিগুণ এই বিশাল ভূখণ্ডের অধিকাংশ এলাকা মরুময়। অথচ এই ধূসর মরুর নিচে রয়েছে আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারা বিশ্বের মধ্যে মূল্যবান তরল সোনার সর্বোচ্চ রিজার্ভ। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, পূর্বে আরব উপসাগর। যা গ্রীকদের নিকট পারস্য উপসাগর নামে খ্যাত। দক্ষিণে আরব সাগর (যা ভারত মহাসাগরের বিস্তৃত অংশ) এবং উত্তরে সিরিয়া ও ইরাকের ভূখণ্ড। পানিপথ ও স্থলপথে আরব উপদ্বীপ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ তিনটি মহাদেশের সাথে যুক্ত।

নবুয়তের কেন্দ্রস্থল

আদি পিতা আদম, নূহ, ইদরীস, হুদ, সালেহ, ইবরাহীম, লূত, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, শোয়ায়েব, মুসা, দাউদ, সুলায়মান, ইলিয়াস, যাকারিয়া, ইয়াহিয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সহ সকল নবী ও রাসূলের আবির্ভাব ও কর্মস্থল ছিল মধ্যপ্রাচ্যের এই পবিত্র ভূখণ্ড।

এর নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। তবে আমাদের ধারণায় প্রথম কারণ ছিল অনুর্বর এলাকা হওয়ায় এখানকার অধিবাসীগণ ব্যবসায়ে অভ্যস্ত ছিল। ফলে পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার সঙ্গে আরবদের নিয়মিত বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। সেকারণ খুব সহজেই এখান থেকে নবুওয়াতের দাওয়াত সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত।

দ্বিতীয় কারণ হল এই ভূখণ্ডে ছিল দু’টি পবিত্র স্থানের অবস্থান। প্রথমটি ছিল মক্কায় বায়তুল্লাহ বা কাবা গৃহ। যা হযরত আদম (আঃ) কর্তৃক প্রথম নির্মিত হয়। অতঃপর ইবরাহীম ও তৎপুত্র ইসমাইলের হাতে পুনর্নির্মিত হয়। দ্বিতীয়টি ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস, যা কাবাগৃহের চল্লিশ বছর পর আদম-পুত্রগণের কারু হাতে প্রথম নির্মিত হয়, যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পৌত্র ইয়াকুব বিন ইসহাক (আঃ) কর্তৃক নির্মিত হয়। অতঃপর দাউদ ও সুলাইমান (আঃ) কর্তৃক পুনর্নির্মিত হয়। ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাঈল-এর বংশধরগণ মক্কা এলাকা আবাদ করেন।

তারাই বংশ পরম্পরায় বাইতুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণ, হাজী সাহেবদের জান-মালের হেফাজত এবং তাদের পানি সরবরাহ, আপ্যায়ন ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে ইবরাহীম (আঃ)-এর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর বংশধরগণ বায়তুল মুকাদ্দাস তথা আজকের ফিলিস্তীন এলাকায় বসবাস করেন। ইসহাক-পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-এর অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ বা ‘আল্লাহর দাস’। সেকারণ তাঁর বংশধরগণ ‘বনু ইস্রাঈল’ নামে পরিচিত। এভাবে আরব উপদ্বীপের দুই প্রধান এলাকা সহ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর বনু ইসমাঈল ও বনু ইস্রাঈল কর্তৃক তাওহীদের দাওয়াত প্রসার লাভ করে। সাথে সাথে তাদের সম্মান ও প্রতিপত্তি সর্বত্র বিস্তৃত হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

নিশ্চয়ই আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীম পরিবার ও ইমরান পরিবারকে জগদ্বাসীর মধ্য হতে। তারা একে অপরের সন্তান। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (আল ইমরান ৩/৩৩-৩৪; আনকাবূত ২৯/২৭)। ইমরান ছিলেন মূসা (আঃ)-এর পিতা অথবা মারিয়াম-এর পিতা। সকলের মূল পিতা হলেন আবুল আম্বিয়া ইবরাহীম (আঃ)। পৃথকভাবে ‘আল ইমরান’ বলার মাধ্যমে মূসা ও ঈসা (আঃ)-এর বিশাল সংখ্যক উম্মতকে বুঝানো হয়েছে। আর ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)- এর আগমন ঘটেছে। যার উম্মত সংখ্যা দুনিয়া ও আখেরাতে সৰ্বাধিক।

রাজনৈতিক অবস্থা

আরব ভূমি মরুবেষ্টিত হওয়ায় তা সর্বদা বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে নিরাপদ ছিল। ফলে এরা জন্মগতভাবে স্বাধীন ছিল। এই সময় আরবের দক্ষিণাংশে ছিল হাবশা সাম্রাজ্য, পূর্বাংশে ছিল পারসিক সাম্রাজ্য এবং উত্তরাংশের ভূখণ্ড সমূহ ছিল রোমক সাম্রাজ্যের করতলগত। সম্রাট শাসিত এসব অঞ্চলের অধিবাসীরা সবাই ছিল ধর্মের দিক দিয়ে খ্রিস্টান। যদিও প্রকৃত ধর্ম বলতে সেখানে কিছুই ছিল না। মক্কা ও ইয়াসরিব (মদিনা) সহ আরবের বাকী ভূখণ্ডের লোকেরা স্বাধীন ছিল। তাদের কোন কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল না। তবে তারা গোত্রপতি শাসিত ছিল।

ধর্মীয় অবস্থা

এ ব্যাপারে জানার জন্য কুরআনই বড় উৎস। সে বর্ণনা অনুযায়ী জাহেলী যুগের আরবরা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য মনগড়া উপাস্য সমূহ নির্ধারণ করেছিল (ইউনুস ১০/১৮)। তারা আল্লাহকে স্বীকার করত। সেই সাথে সুপারিশকারী হিসাবে অন্যদের উপাস্য মানত (আন’আম ৬/১৯)। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী তারা মূর্তিগুলোকে তাদের পূজিত ব্যক্তির ‘রূহের অবতরণ স্থল সমূহ’ বলে মনে করত। মূর্তিপূজা তাদের আকিদা ও সমাজ-সংস্কৃতিতে মিশে গিয়েছিল। যুগ পরম্পরায় তারা এই আক্বীদায় বিশ্বাসী ও রীতি-নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল (যুখরুফ ৪৩/২২)।

তারা কাবা গৃহে মূর্তি স্থাপন করেছিল এবং হজ্জের অনুষ্ঠান সমূহের পরিবর্তন এনেছিল। তাওয়াফের জন্য ‘হারামের পোশাক’ নামে তারা নতুন পোশাক পরিধানের রীতি চালু করেছিল। নইলে লোকদের নগ্ন হয়ে তাওয়াফ করতে হত। কুরাইশরা মূর্তি পূজা করত। সেই সাথে নিজেদেরকে ইবরাহীম (আঃ)-এর একান্ত অনুসারী হিসাবে ‘হানীফ’ বা ‘একনিষ্ঠ একত্ববাদী’ বলত। এছাড়া তারা নিজেদেরকে ‘হুম্‌স’, ‘কাত্বীনুল্লাহ’, ‘আহলু বায়তুল্লাহ’, ‘আহলুল্লাহ’ বলে দাবী করত।

তিরমিযী হা/৮৮৪; ইবনে হিশাম ১/৫৭; বায়হাকী, দালায়েলুন নবুওয়াত ২/১২৬; ‘হুম্‌স’ অর্থ কঠোর ধার্মিক। ‘ক্বাত্বীনুল্লাহ’ ও ‘আহলু বায়তুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর ঘরের বাসিন্দা। ‘আহলুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহওয়ালা।

সেকারণ তারা মুযদালিফায় হজ্জ করত, আরাফাতের ময়দানে নয়। কেননা মুযদালিফা ছিল হারামের অন্তর্ভুক্ত এবং আরাফাত ছিল হারাম এলাকার বাইরে। যেখানে বহিরাগত হাজীরা অবস্থান করত। ইসলাম আসার পর এই প্রথা নিষিদ্ধ করা হয় এবং সকলকে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে বলা হয় (বাক্বারাহ ২/১৯৯)।

তারা হজ্জের মাস সমূহে ওমরা করাকে ‘সবচাইতে নিকৃষ্ট কাজ’ বলে ধারণা করত। তারা কাবাগৃহে ইবাদতের সময় শিস দিত ও তালি বাজাতো (আনফাল ৮/৩৫)। তারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে পরিবর্তন এনেছিল (আরাফ ৭/১৮০)। তারা জিনদেরকে আল্লাহর শরীক নির্ধারণ করেছিল (আন’আম ৬/১০০) এবং ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলত (নাহল ১৬/৫৭)। তারা তাকদীরকে এবং কিয়ামতকে অস্বীকার করত (আন’আম ৬/১৪৮; নাহল ১৬/৩৮)।

তারা ইবাদত করত, কুরবানী করত বা মানত করত আখেরাতে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের জন্য। তারা মৃত্যু ও অন্য বিপদাপদকে আল্লাহর দিকে নয় বরং প্রকৃতির দিকে সম্বন্ধ করত (জাসিয়াহ ৪৫/২৩)। তারা মূর্তির সম্মানে কুরবানী চালু করেছিল (মায়েদা ৫/৩)। লাত ও উযযার নামে কসম করত এবং নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করত (বুখারী হা/৩৮৫০)।

আরবদের বিশ্বাস ছিল যে, প্রতি ১৩ দিন পর একটি নক্ষত্র পশ্চিমে অস্ত যায় এবং একই সাথে পূর্ব দিকে একটি নক্ষত্র উদিত হয়। তাদের বিশ্বাস মতে উক্ত নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার সময় অবশ্যই বৃষ্টি হয় অথবা ঠাণ্ডা হাওয়া প্রবাহিত হয়। সে কারণ বৃষ্টি হলে তারা উক্ত ৩ নক্ষত্রের দিকে সম্বন্ধ করে বলত, ‘আমরা উক্ত নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি প্রাপ্ত হয়েছি’।

মুসলিম হা/৭১; বুখারী হা/৮৪৬; মিশকাত হা/৪৫৯৬।

আল্লাহর হুকুমে যে বৃষ্টি হয় এটা তারা বিশ্বাস করত না। এভাবে তারা তাওহীদ বিশ্বাস থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিল। অথচ এটাই ছিল তাদের পিতা ইবরাহীমের মূল দাওয়াত।

তাদের চরিত্রে ও রীতি-নীতিতে এমন বহু কিছু ছিল যা ইসলামকে ধসিয়ে দিত। যেমন বংশ গৌরব করা ও অন্য বংশকে তাচ্ছিল্য করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আমার উম্মতের মধ্যে চারটি বস্তু রয়েছে জাহেলিয়াতের অংশ, যা তারা ছাড়েনি। আভিজাত্য গৌরব, বংশের নামে তাচ্ছিল্য করা, নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং শোক করা।

বুখারী, ফৎহসহ হা/৩৮৫০, ৭/১৫৬; মুসলিম হা/৯৩৪।

জাহেলী যুগের অন্যতম রীতি ছিল, পিতা-মাতার কাজের উপর বড়াই করা, মসজিদুল হারামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে গর্ব করা (তাওবা ৯/১৯, ৫৫)। ধনশালী ব্যক্তিদের সম্মানিত মনে করা (যুখরুফ ৪৩/৩১) এবং দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীকে হীন মনে করা (আন’আম ৬/৫২)। যেকোন কাজে শুভাশুভ নির্ধারণ করা ও ভাগ্য গণনা করা (জিন ৭২/৬) ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে অনেক জাহেলী কবিদের মধ্যে তাওহীদের আকিদা ছিল। যেমন মুআল্লাক্বা খ্যাত কবি জুহায়ের বিন আবি সুলমা ও কবি লাবীদ বিন রাবীয়াহ প্রমুখ।

কবি জুহায়ের বলেন,

অতএব (হে পরস্পরে সন্ধিকারী বনু আবাস ও যুবিয়ান!) তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে তা আল্লাহ থেকে অবশ্যই গোপন করো না। কেননা যখনই তোমরা আল্লাহ থেকে গোপন করবে, তখনই তিনি তা জেনে যাবেন। অতঃপর তিনি সেটাকে পিছিয়ে দিবেন এবং আমলনামায় রেখে বিচার দিবসের জন্য জমা রাখবেন। অথবা দ্রুত করা হবে এবং প্রতিশোধ নেওয়া হবে (মুআল্লাক্বা যুহায়ের বিন আবি সুলমা ২৭ ও ২৮ লাইন)। কবি লাবীদ বলেন, মনে রেখো, আল্লাহ ব্যতীত সকল বস্তুই বাতিল এবং সকল নেয়ামত অবশ্যই বিদূরিত হবে। তবে লাইনের দ্বিতীয় অংশটি লাবীদের নয় বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন (দিওয়ানে লাবীদ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৫০০; প্রথমাংশটি বুখারী হা/৩৮৪১; মুসলিম হা/২২৫৬; মিশকাত হা/৪৭৮৬)।

কাবাগৃহে হজ্জ জারি ছিল। হারামের মাসগুলির পবিত্রতা বজায় ছিল। অদৃষ্টবাদের আধিক্য থাকলেও তাদের মধ্যে কাযা ও কদরের আক্বীদা মওজুদ ছিল। ইবরাহীমী দ্বীনের শিক্ষা ও ইবাদতের কিছু নমুনা মক্কা ও তার আশপাশে জাগরুক ছিল। তাদের মধ্যে সততা, বিশ্বস্ততা, সাহসিকতা, আতিথেয়তা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা প্রভৃতি অনন্য গুণাবলী অক্ষুণ্ণ ছিল।

সামাজিক অবস্থা

(ক) গোত্রীয় সমাজ ব্যবস্থা

আরবদের সামাজিক ব্যবস্থা ছিল গোত্রপ্রধান। যার কারণে বংশীয় ও আত্মীয়তার সম্পর্ককে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হত। মারামারি ও হানাহানিতে জর্জরিত উক্ত সমাজে কেবল গোত্রীয় ঐক্যের সুদৃঢ় বন্ধনের উপর নির্ভর করেই তাদের টিকে থাকতে হত। ন্যায়-অন্যায় সবকিছু নির্ণীত হত গোত্রীয় স্বার্থের নিরিখে। আজকালকের কথিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থায় যে উৎকট দলতন্ত্র আমরা লক্ষ্য করছি, তা জাহেলী আরবের গোত্রীয় সমাজব্যবস্থার সঙ্গে অনেকটা তুলনীয়।

বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাইতে নিম্নতর অবস্থায় পৌছে গেছে। গোত্র সমূহের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে থাকত। সেকারণ তারা অধিক সংখ্যায় পুত্র সন্তান কামনা করত। অধিক সংখ্যক ভাই ও পুত্র সন্তানের মালিককে সবাই সমীহ করত। যুদ্ধে পরাজিত হলে অন্যান্য সম্পদের সাথে নারীদের লুট করে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে অথবা দরিদ্রতার কারণে অনেকে তাদের কন্যাসন্তানকে শিশুকালেই হত্যা করে ফেলত। তাদের কোন গোত্রীয় আর্থিক রিজার্ভ ছিল না। যুদ্ধ শুরু হলে সবাই প্রয়োজনীয় ফাণ্ড গোত্রনেতার কাছে জমা দিত ও তা দিয়ে যুদ্ধের খরচ মেটাত।

তবে পূর্ব থেকে ধর্মীয় রীতি চলে আসার কারণে তারা বছরে চারটি সম্মানিত মাসে (যুল-ক্বা’দাহ, যুলহিজ্জাহ, মুহাররম ও রজব) যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ রাখতো। এটা ছিল তাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় রক্ষাকবচ। গোত্রনেতাগণ একত্রে বসে সামাজিক শান্তি ও শৃংখলা রক্ষা করা, কোন গোত্রের সাথে যুদ্ধ শুরু বা শেষ করা কিংবা সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করত। মক্কার ‘দারুন নাদওয়া’ ছিল এজন্য বিখ্যাত।

‘দারুন নাদওয়া’ ছিল হারাম সংলগ্ন কুছাই বিন কেলাবের বাড়ি। বর্তমানে এটি মসজিদুল হারামের মধ্যে শামিল হয়ে গেছে।

তাদের মধ্যে মদ্যপানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। যুদ্ধ ও পেশীশক্তিই ছিল বিজয় লাভের মানদণ্ড। আরবের সামাজিক অবস্থাকে এক কথায় বলতে গেলে Might is Right তথা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে পরিচালিত হত। আজকের বিশ্ব ব্যবস্থা তার চাইতে মোটেও উন্নত নয়। পাঁচটি ‘ভেটো’ ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রই বলতে গেলে বিশ্ব শাসন করছে।

(খ) অর্থনৈতিক অবস্থা

ব্যবসা ছিল তাদের প্রধান অবলম্বন। তায়েফ, সিরিয়া, ইয়ামান প্রভৃতি উর্বর ও উন্নত এলাকা ছাড়াও সর্বত্র পশু-পালন জনগণের অন্যতম প্রধান অবলম্বন ছিল। উট ছিল বিশেষ করে দূরপাল্লার সফরের জন্য একমাত্র স্থল পরিবহন। গাধা, খচ্চর মূলতঃ স্থানীয় পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হত। ঘোড়া ছিল যুদ্ধের বাহন। মক্কার ব্যবসায়ীরা শীতকালে ইয়ামনে ও গ্রীষ্মকালে সিরিয়ায় দূরপাল্লার ব্যবসায়িক সফর করত। আর্থিক লেনদেনে সূদের প্রচলন ছিল। তারা চক্রবৃদ্ধি হারে পরস্পরকে সূদভিত্তিক ঋণ দিত। রাস্তা-ঘাটে প্রায়ই ব্যবসায়ী কাফেলা লুট হত। সেজন্য সশস্ত্র যোদ্ধাদল নিয়ে তারা রওয়ানা হত। তবে কাবাগৃহের খাদেম হওয়ার সুবাদে মক্কার ব্যবসায়ী কাফেলা বিশেষভাবে সম্মানিত ছিল এবং সর্বত্র নিরাপদ থাকত।

বছরের আট মাস লুটতরাজের ভয় থাকলেও হারামের চার মাসে তারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করত। এই সময় ওকায, যুল-মাজায, যুল-মাজান্নাহ প্রভৃতি বড় বড় বাজারে বাণিজ্যমেলা ছাড়াও আরবের বিভিন্ন প্রান্তে আরও অনেকগুলি বড় বড় মেলা বসত। এইসব বাণিজ্য মেলায় প্রচুর বেচাকেনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা লাভবান হত। তাদের মধ্যে বস্ত্র, চর্ম ও ধাতব শিল্পের প্রচলন ছিল। ইয়ামন, হীরা, সিরিয়া প্রভৃতি অঞ্চল এইসব শিল্পে সমৃদ্ধ ছিল। তবে গৃহের আঙিনায় বসে সূতা কাটার কাজে অধিকাংশ আরব মহিলা নিয়োজিত থাকতেন। কোন কোন এলাকায় কৃষিকাজ হত। ছোলা, ভুট্টা, যব ও আঙ্গুরের চাষ হত। মক্কা-মদীনায় গমের আবাদ ছিল না। মুআবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফতকালে প্রথম সিরিয়া থেকে মদীনায় গম রফতানী হয়। খেজুর বাগান ব্যাপক হারে দেখা যেত। খেজুর ছিল তাদের অন্যতম প্রধান উপজীবিকা।

তাদের কোন গোত্রীয় অর্থনৈতিক ফান্ড ছিল না। সেকারণ সমাজের লোকদের দারিদ্র্য ও রোগ-ব্যধি দূরীকরণে ও স্বাস্থ্যসেবার কোন সমন্বিত কর্মসূচী ও কর্মপরিকল্পনা তাদের ছিল না। ফলে পারস্পরিক দান ও বদান্যতার উপরেই তাদের নির্ভর করতে হত। নিখাদ পুঁজিবাদী অর্থনীতি চালু ছিল। যার ফলে সমাজে একদল উচ্চবিত্ত থাকলেও অধিকাংশ লোক ছিল বিত্তহীন। সাধারণ অবস্থা ছিল এই যে, আরবদের সহায়-সম্পদ তাদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয়িত না হয়ে সিংহভাগই ব্যয়িত হত যুদ্ধ-বিগ্রহের পিছনে। ফলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। আরবীয় সমাজে উচ্চবিত্ত লোকদের মধ্যে মদ-জুয়া ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন ছিল। সেখানে বিত্তহীনরা দাস ও দাসীরূপে বিক্রয় হত ও মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হত।

কুরায়েশরা পরস্পরে ব্যবসায়ে জড়িত ছিল। হাশেম বিন ‘আব্দে মানাফ গোত্রনেতাদের মধ্যে এই পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবকালীন সময় পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। যাকে ‘ঈলাফ’ (৩৬১) বলা হয়। যারা শীতকালে ইয়ামনে ও গ্রীষ্মকালে শামে ব্যবসায়িক সফর করত। একথাটিই কুরআনে এসেছে সূরা কুরায়েশ-এ। তারা সমুদ্র পথে চীন ও হিন্দুস্থানেও ব্যবসা করত।

হাশেম বিন ‘আবদে মানাফ তৎকালীন দুই বিশ্বশক্তি রোম ও পারস্য সম্রাটদের সাথে চুক্তিক্রমে তাদের দেশেও ব্যবসা পরিচালনা করেন। এভাবে মক্কার অর্থনীতির ভিত গড়ে ওঠে ব্যবসার উপরে। অস্ত্র শিল্প ও আসবাবপত্র শিল্প ব্যতীত তেমন কোন শিল্প তাদের মধ্যে ছিল না। অর্থনীতির অন্য একটি ভিত্তি ছিল পশু পালন। যা ছিল আপামর জনসাধারণের নাগালের মধ্যে। ব্যবসায়ী নেতারা সুদের ভিত্তিতে ঋণদান করত। ফলে সেখানে ধনী ও গরীবের মধ্যে পাহাড় প্রমাণ বৈষম্য সৃষ্টি হয়। মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণী বিলাস-ব্যসনের মধ্যে বসবাস করলেও মক্কায় অধিকাংশ অধিবাসী ছিল নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন। মক্কার নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীগণ সারা আরবে সম্মানিত ছিলেন। কা’বাগৃহের কারণে তাদের মর্যাদা সর্বত্র সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই সাথে মক্কা ছিল সর্বদা বহিঃশক্তির হামলা থেকে সুরক্ষিত।

(গ) নারীদের অবস্থা

তৎকালীন আরবে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন বসবাস করত। সেখানকার অভিজাত শ্রেণীর লোকদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে খুবই উন্নত ছিল। পরিবারের পুরুষ ও মহিলাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল মর্যাদা ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থার উপরে প্রতিষ্ঠিত। অভিজাত পরিবারের মহিলাদের মান-সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা হত। তাদের মর্যাদা হানিকর কোন অবস্থার উদ্ভব ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে তরবারি কোষ মুক্ত হয়ে যেত। মহিলাদের মর্যাদা এতই উঁচুতে ছিল যে, বিবদমান গোত্রগুলোকে একত্রিত করে সন্ধি চুক্তি সম্পাদনেও তারা সক্ষম হত। পক্ষান্তরে তাদের উত্তেজিত বক্তব্যে ও কাব্য-গাথায় যেকোন সময় দুই গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারত। ওহোদের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা তার সাথী মহিলাদের নিয়ে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে একাজটিই করেছিলেন। তাদের মধ্যে বিবাহ পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত উঁচু মানের। উভয় পক্ষের অভিভাবকগণের সম্মতি ও কনের স্বীকৃতি লাভের পর বর কনেকে নির্ধারিত মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে করতে পারত। বিয়েতে ও সন্তানের আকীকাতে সমাজনেতাদের দাওয়াত দিয়ে ধুমধামের সাথে অনুষ্ঠান করা তাদের সামাজিক রেওয়াজ ছিল।

সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর আরবদের মধ্যে চার ধরনের বিবাহ চালু ছিল। এক ধরনের ছিল অভিজাত শ্রেণীর মত পারস্পরিক সম্মতি ও মোহরানার বিনিময়ে বিবাহ পদ্ধতি। কিন্তু বাকী তিনটি পদ্ধতিকে বিবাহ না বলে স্পষ্ট ব্যভিচার বলা উচিত। যা ভারতীয় হিন্দু সমাজে রাক্ষস বিবাহ, গান্ধর্ব বিবাহ ইত্যাদি নামে আধুনিক যুগেও চালু আছে বলে জানা যায়। আরবীয় সমাজে স্বাধীন ও দাসী দু’ধরনের নারী ছিল। স্বাধীন গণ ছিলেন সম্মানিত। কিন্তু দাসীরা বাজার-ঘাটে বিক্রয় হত। মনিবের দাসীবৃত্তিই ছিল তাদের প্রধান কাজ।

(ঘ) নৈতিক অবস্থা

উদার মরুচারী আরবদের মধ্যে নৈতিকতার ক্ষেত্রে দু’টি ধারা একত্রে পরিলক্ষিত হত। একদিকে যেমন তাদের মধ্যে মদ্যপান, ব্যভিচার, মারামারি ও হানাহানি লেগে থাকত। অন্যদিকে তেমনি দয়া, উদারতা, সততা, পৌরুষ, সৎসাহস, ব্যক্তিত্ববোধ, সরলতা ও অনাড়ম্বরতা, দানশীলতা, আমানতদারী, মেহমানদারী, প্রতিজ্ঞা পরায়ণতা ইত্যাদি সদগুণাবলীর সমাবেশ দেখা যেত। তাদের মধ্যে দুঃসাহসিকতা ও বেপরোয়া ভাবটা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। তাদের মধ্যে যেমন অসংখ্য দোষ-ত্রুটি ছিল, তেমনি ছিল অনন্যসাধারন গুণাবলী, যা অন্যত্র কদাচিৎ পাওয়া যেত। তাদের সৎসাহস, আমানতদারী, সত্যবাদিতা, কাব্য প্রতিভা, স্মৃতিশক্তি, অতিথিপরায়ণতা ছিল কিংবদন্তির মত।

তাদের কাব্য প্রিয়তা এবং উন্নত কাব্যালংকারের কাছে আধুনিক যুগের আরবী কবি-সাহিত্যিকরা বলতে গেলে কিছুই নয়। তাদের স্মৃতিশক্তি এত প্রখর ছিল যে, একবার শুনলেই হুবহু মুখস্থ বলে দিত। বড় বড় ক্বাছীদা বা দীর্ঘ কবিতাগুলি তাদের মুখে মুখেই চালু ছিল। লেখাকে এজন্য তারা নিজেদের জন্য হীনকর মনে করত। দুর্বল স্মৃতির কারণে আজকের বিশ্ব লেখাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। অথচ লেখায় ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তৎকালীন আরবদের স্মৃতিতে ভুল কদাচিৎ হত। সম্ভবতঃ এই সব সদগুণাবলীর কারণেই বিশ্বনবীকে আল্লাহ মক্কাতে প্রেরণ করেন। যাদের প্রখর স্মৃতিতে কুরআন ও হাদীছ অবিকৃত অবস্থায় নিরাপদ থাকে এবং পরবর্তীতে তা লিখিত আকারে সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়। যদিও কুরআন ও হাদীছ লিখিতভাবেও তখন সংকলিত হয়েছিল।

উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল আরব ভূখণ্ডের মরুচারী মানুষেরা বিভিন্ন দুর্বলতার অধিকারী হলেও তাদের মধ্যে উন্নত মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঈর্ষণীয়ভাবে পরিদৃষ্ট হত। আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়ার অবতরণ স্থল হওয়ার কারণে এই ভূখণ্ড থেকেই মানব সভ্যতা ক্রমে পৃথিবীর অন্যান্য ভূখণ্ডে বিস্তার লাভ করেছে। এই ভূখণ্ডে আরাফাত-এর না‘মান উপত্যকায় সৃষ্টির সূচনায় আল্লাহ পাক সমস্ত মানবকুলের নিকট হতে তাঁর প্রভুত্বের স্বীকৃতি ও তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন।

আ’রাফ ৭/১৭২-১৭৩; আহমাদ হা/২৪৫৫; মিশকাত হা/১২১ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

যা ‘আহদে আলাস্তু’ নামে খ্যাত। একই সাথে তিনি সকল নবীর কাছ থেকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর ঈমান আনা ও তাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতার অঙ্গীকার নেন (আলে ইমরান ৩/৮১)।

এই ভূখণ্ডেই হাযার হাযার নবী ও রাসূলের আগমন ঘটেছে। এই ভূখণ্ডেই আল্লাহর ঘর কাবা গৃহ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত। এই ভূখণ্ড বাণিজ্যিক কারণে সারা বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। জান্নাতের ভাষা আরবী এই ভূখণ্ডের কথিত ও প্রচলিত ভাষা ছিল। সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা, প্রখর স্মৃতিশক্তি এবং সততা ও আমানতদারীর অনুপম গুণাবলীর প্রেক্ষাপটে আরবভূমির কেন্দ্রবিন্দু মক্কা ভূমির অভিজাত বংশ কা’বাগৃহের তত্ত্বাবধায়ক ও রক্ষণাবেক্ষণকারীদের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটেই আল্লাহ মানবজাতির কল্যাণে প্রেরিত সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠতম নে‘মত কুরআন ও সুন্নাহ পবিত্র আমানত সমর্পণ করেন। ফালিল্লাহিল হামদ ওয়াল মিন্নাহ

শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ

(১) বিশ্বনবী ও শেষ নবী হওয়ার কারণেই বিশ্ব কেন্দ্র মক্কাতে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করা হয়।

(২) সারা বিশ্বে তাওহীদের দাওয়াত দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৎকালীন বিশ্বের সেরা বাণিজ্য কেন্দ্র ও যোগাযোগ কেন্দ্র আরব ভূখণ্ডে শেষ নবী প্রেরিত হন।

(৩) জান্নাতের ভাষা আরবী। আর সেই ভাষাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তাই আল্লাহর ঘরের তত্ত্বাবধায়ক শুদ্ধভাষী আরব তথা কুরাইশ বংশে শেষ নবীর আগমন ঘটে। যাতে তিনি জান্নাতি ভাষায় মানবজাতিকে তার মূল আবাস জান্নাতের পথে আহ্বান জানাতে পারেন।

(৪) আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র সেই যুগে ছিল না। তাই প্রখর স্মৃতিধর আরবদের নিকটেই কুরআন ও সুন্নাহ অমূল্য নে‘মত সংরক্ষণের আমানত সোপর্দ করা হয়।

(৫) আরবরা ছিল আজন্ম স্বাধীন ও বীরের জাতি। সেকারণ বলা চলে যে, তৎকালীন রোমক ও পারসিক পরাশক্তির মোকাবেলায় ইসলামী খেলাফতের সফল বাস্তবায়নের জন্য শেষ নবীর আগমন স্থল ও কর্মস্থল হিসেবে আরব ভূখণ্ডকে বেছে নেওয়া হয়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (আরবের তৎকালীন অবস্থা)

মহানবী সাঃ এর জীবনী, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, রাসুল (সাঃ) এর জীবনী, নবীজির জীবনী, রাসুল সাঃ এর জীবনী, মোহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, বিশ্ব নবীর জীবনী, রাসূল সাঃ এর জীবনী, হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবনী, হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী, নবী করিম সাঃ এর জীবনী, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী, মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী বাংলা

hojrot muhammad ar jiboni, nobijir jiboni, mohanobir jiboni, nobir jiboni, rasuler jiboni, nobijir jiboni bangla, mohanobi hazrat muhammad jiboni, mohanobir jiboni bangla

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (আরবের তৎকালীন অবস্থা)

মুহাম্মাদ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জীবনী রচনার হাজার বছর

আল কোরআন বাংলা অনুবাদ. 30 পারা কোরআন শরীফ বাংলা অর্থসহ

হাদিস আরবি বাংলা. হাদীস শরীফ বাংলা. Bangla Hadis

ইসলামিক বই pdf download. Islamic Book pdf Bangla

সহীহ বুখারী শরীফ সব খন্ড pdf. Bukhari Sharif Bangla

সহীহ মুসলিম শরীফ সব খন্ড pdf. Sahih Muslim Sharif Bangla

সুনানে আবু দাউদ pdf. Abu daud sharif bangla pdf

তিরমিজি শরীফ pdf. Tirmizi sharif bangla pdf

সীরাত বিশ্বকোষ pdf

সীরাতে ইবনে হিশাম pdf download. Sirat ibn hisham bangla

সীরাতুল মুস্তফা সাঃ ইদ্রিস কান্ধলভী

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী pdf. রাসুল (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থ pdf

জীবনী

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী