ছানা দোয়া নামাজের সানা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

ছানা-দোয়া-নামাজের-সানা-বাংলা-উচ্চারণ-ও-অর্থসহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ছানা দোয়া নামাজের সানা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ। ছানা অর্থ প্রশংসা। এটা মূলত দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বা সালাত শুরুর দোয়া। ছানা পড়া সুন্নাত। তাকবীরে তাহরীমার পর বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্র চিত্তে চুপে চুপে নিম্নোক্ত দোয়ার যেকোন একটি পড়ার মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদত সালাতের শুভ সূচনা করবে। তবে নিচের প্রথম দোয়াটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

ছানা দোয়া নং ১

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতামাতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কি পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলি-

اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা আদতা বাইনাল মাশরিক্কি ওয়াল মাগরিবি, আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইউনাক্বক্বাছ সাওবুল আব ইয়াজু মিনাদ দানাস, আল্লা-হুম্মা-গসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিমা-ই ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ্‌ আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

বুখারী ৭৪৪।

ছানা দোয়া নং ২

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শুরু করে বলতেন-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুকা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তোমার নাম চির বরকতময়, সকলের ঊর্ধ্বে, সকলের শীর্ষে তোমার মর্যাদা, তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই।

তিরমিজি ২৪৩, ইবনে মাজাহ ৮০৬, মিশকাত ৮১৫।

ছানা দোয়া নং ৩

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলার পর নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন-

وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلَهَ لِي إِلاَّ أَنْتَ أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

উচ্চারণ: ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাম মুসলিমা ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহী রাব্বিল ‘আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লহুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলাহা লী ইল্লা আনতা, আনতা রাব্বি ওয়া আনা ‘আবদুকা। যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামীআন। লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লি-আহসানীল আখলাক্ব। লা ইয়াহদিনী লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ ‘আন্নী সাইয়্যিআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল- খায়রু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইকা, ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা আনাবিকা ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তা‘আলাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।

অর্থ: আমি সেই মহান সত্তার দিকে আমার মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আর এই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্গত। আল্লাহ তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি আমার নিজের উপর অত্যাচার করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি।

সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অন্য কেউ অপরাধ সমূহ ক্ষমা করতে পারে না। তুমি আমাকে উত্তম চরিত্রের দিকে চালিত কর, তুমি ব্যতীত আর কেউ উত্তম চরিত্রের দিকে চালিত করতে পারে না। আমা হতে মন্দ আচরণকে তুমি দূরে রাখো, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ তা দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! উপস্থিত আছি তোমার নিকট এবং প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে। কল্যাণ সমস্ত তোমার হাতে এবং কোন অকল্যাণ তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করব। তুমি কল্যাণময়, তুমি সুউচ্চ। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরছি।

আবু দাউদ ৭৬০, মিশকাত ৮১৩।

ছানা দোয়া নং ৪

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নবী করীম (ছাঃ) রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন তখন নিম্নের দুআ পড়তেন-

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা লাকাল হাম্‌দু, আনতা ক্বইয়্যিমুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হাম্‌দু, আন্‌তা নূরুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না ওয়ালা কাল হাম্‌দু, আনতা মালিকুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হামদ্, আন্‌তাল হাক্কু, ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু, ওয়ালিক্ব-উক্বা হাক্কুন, ওয়া ক্বওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্‌না-রু হাক্কুন, ওয়ান্ নাবীয়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন, ওয়াস্ সা-‘আতু হাক্কুন, আল্ল-হুম্মা লাকা আস্‌লামতু, ওয়াবিকা আ-মান্‌তু, ওয়া ‘আলায়কা তাওয়াক্কাল্‌তু, ওয়া ইলায়কা আনাব্‌তু, ওয়াবিকা খ-সাম্‌তু, ওয়া ইলায়কা হা-কাম্‌তু, ফাগ্ফিরলী মা- ক্বদ্দাম্‌তু, ওয়ামা- আখ্‌খার্‌তু, ওয়ামা আস্‌রার্‌তু, ওয়ামা আ’লান্‌তু, ওয়ামা- আন্‌তা আ’লামু বিহী মিন্নী, আন্‌তাল মুক্বদ্দিমু, ওয়া আন্‌তাল মুআখ্‌খিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা, আওলা- ইলা-হা গয়রুকা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই আসমান সমূহ ও যমীন এবং এদের মাঝে যা কিছু আছে তার রক্ষাকারী। তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই আসমান সমূহ ও যমীন এবং এদের মাঝে যা কিছু আছে তাদের জ্যোতি। তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই আসমান সমূহ ও যমীন এবং এদের মাঝে যা আছে তাদের বাদশাহ। তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই সত্য, তোমার ওয়াদা সত্য, তোমার সাক্ষাৎ সত্য, তোমার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ (ছাঃ) সত্য এবং কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমার সন্তুষ্টির জন্যই শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, তোমাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই তুমি আমার পূর্বাপর ও প্রকাশ্য-গোপন সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমিই অগ্র-পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং তুমি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই।

বুখারী ১১২০, মিশকাত ১২১১।

ছানা দোয়া নং ৫

আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) রাতে উঠে যখন সালাত শুরু করতেন তখন নিম্নের দো’আ পড়তেন-

اللّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيْلَ وَمِيكَائِيْلَ وَإِسْرَافِيْلَ فَاطِرَ السَّموتِ وَالْأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِىْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍ

উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা, ওয়া ইস্‌রা-ফীলা, ফাত্বিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি, আন্‌তা তাহ্‌কুমু বায়না ‘ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখ্‌তালিফূন, ইহ্‌দিনী লিমাখ্‌তুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বক্বি বিইয্‌নিকা, ইন্নাকা তাহ্‌দি মান তাশা-উ ইলা- সিরাত্বিম মুসতাক্বীম।

অর্থ: হে আল্লাহ! হে জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফিলের রব, হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী! তুমিই তোমার বান্দাদের মতপার্থক্য ফায়সালা করে দিবে। হে আল্লাহ! সত্যের সম্পর্কে যে ইখতিলাফ করা হচ্ছে, এ সম্পর্কে আমাকে সরল সঠিক পথ দেখাও। কারণ তুমি যাকে চাও, সরল পথ দেখাও।

মিশকাত ১২১২।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top