হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের-গুরুত্ব-ও-ফজিলত

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত কি কি।

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ ও উমরার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল :

১. হজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, কোন আমলটি সর্বোত্তম?

তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। বলা হল, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। বলা হল তারপর কোনটি? তখন তিনি বললেন, কবুল হজ।

বুখারী : ৬২; মুসলিম : ৩৮।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সর্বোত্তম আমল কী- এ ব্যাপারে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন।

উত্তরে তিনি বললেন, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান; অতঃপর মাবরুর হজ, যা সকল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ; সূর্য উদয় ও অস্তের মধ্যে যে পার্থক্য ঠিক তারই মত (অন্যান্য আমলের সাথে তার শ্রেষ্ঠত্বের পার্থক্য)।

আহমদ : ৪/৩৪২।

২. পাপমুক্ত হজের প্রতিদান জান্নাত

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

আর মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।

বুখারী : ৩৭৭১; মুসলিম : ৯৪৩১।

৩. হজ্জ মহিলাদের জন্য জিহাদের সমতূল্য

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, জিহাদকে তো সর্বোত্তম আমল হিসেবে মনে করা হয়, আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে মাবরুর হজ।

বুখারী : ৪৮৭২।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রা. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ’- মাবরুর হজ।

ফাতহুল বারী : ৪/১৮৬১।

আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, বয়োবৃদ্ধ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, দুর্বল ও মহিলার জিহাদ হচ্ছে হজ ও উমরা।

নাসাঈ : ২/৫৫৭

৪. হজ পাপ মোচন করে

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,

যে আল্লাহর জন্য হজ করল, যৌন সম্পর্কযুক্ত অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এল।

বুখারী : ১৫২১; মুসলিম : ১৩৫০।

এ হাদীসের অর্থ আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়, রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁকে বলেন, তুমি কি জান না, কারো ইসলাম গ্রহণ তার পূর্বের সকল গুনাহ বিলুপ্ত করে দেয়, হিজরত তার পূর্বের সকল গুনাহ বিলুপ্ত করে দেয় এবং হজ তার পূর্বের সকল গুনাহ বিলুপ্ত করে দেয়?

মুসলিম : ১২১।

৫. হজের ন্যায় উমরাও পাপ মোচন করে

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি এই ঘরে এলো, অতঃপর যৌন সম্পর্কযুক্ত অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকল, সে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মত (নিষ্পাপ) হয়ে ফিরে গেল।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর মতানুসারে এখানে হজকারী ও উমরাকারী উভয় ব্যক্তিকেই বোঝানো হয়েছে।

ফাতহুল বারী : ৩/৩৮২।

৬. হজ ও উমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটনও দূর করে

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।

তিরমিযী : ৮১০

৭. হজ ও ওমরা পালনকারী গণ আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি

ইবনে উমর রা. কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, আল্লাহর পথে যুদ্ধে বিজয়ী, হজকারী ও উমরাকারী আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। আল্লাহ তাদেরকে আহবান করেছেন, তারা তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আর তারা তাঁর কাছে চেয়েছেন এবং তিনি তাদেরকে দিয়েছেন।

ইবনে মাজাহ : ২৮৯৩; ইবনু হিববান : ৩৪০০; মুসনাদে আহমদ : ১৪৮৯।

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন, হজ ও উমরা পালনকারী গণ আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। তারা আল্লাহকে ডাকলে তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা তাঁর কাছে মাগফিরাত কামনা করলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

ইবনে মাজাহ: ২৮৮৩।

৮. এক উমরা থেকে আরেক উমরা মধ্যবর্তী গুনাহ ও পাপের কাফফারা

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, এক উমরা থেকে অন্য উমরা- এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তা তার জন্য কাফফারা।

বুখারী : ১৭৭৩; মুসলিম : ১৩৯৪।

৯. হজ করার নিয়তে বের হয়ে মারা গেলেও হজের সওয়াব পেতে থাকবে

আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে; অতপর সে মারা গেছে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি উমরার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মারা যাবে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত উমরার নেকী লেখা হতে থাকবে।

সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ১১১৪।

১০. রমযান মাসে উমরা আদায় অনেক মর্যাদাশীল

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, নিশ্চয় রমজানে ওমরা করা হজ করার সমতুল্য অথবা তিনি বলেছেন, আমার সাথে হজ করার সমতুল্য।

বুখারী : ১৮৬৩; মুসলিম : ১২৫৬।

১১. বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে বের হলে প্রতি কদমে নেকি লেখা হয় ও গুনাহ মাফ করা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, তুমি যখন বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে আপন ঘর থেকে বের হবে, তোমার বাহনের প্রত্যেকবার মাটিতে পা রাখা এবং পা তোলার বিনিময়ে তোমার জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।

তাবরানী, মু’জামুল কাবীর : ১১/৫৫।

আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন, যখন তুমি বাইতুল্লাহর উদ্দেশ্যে আপন ঘর থেকে বের হবে, তোমার উটনীর প্রত্যেকবার পায়ের ক্ষুর রাখা এবং ক্ষুর তোলার সাথে সাথে তোমার জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে, তোমার একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।

সহীহুত-তারগীব ওয়াত- তারহীব : ১১১২।

স্মরণ রাখা দরকার, যে কেবল আল্লাহকে রাজী করার জন্য আমল করবে, রাসুলুল্লাহ সাঃ -এর সুন্নাহ মুতাবিক হজ-উমরা সম্পন্ন করবে, সেই এসব ফযীলত অর্জন করবে। যেকোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে, যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

প্রথম শর্ত : একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা। রাসূলুল্লাহ বলেন, সকল কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকে তাই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।

বুখারী : ১/৯; মুসলিম : ৩/১৫১৫।

দ্বিতীয় শর্ত : রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া। কারণ, তিনি বলেছেন, যে এমন আমল করল, যাতে আমাদের অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।

মুসলিম : ৩/৩৪৪।

অতএব, যার আমল কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত মোতাবেক হবে তার আমলই আল্লাহর নিকট কবুল হবে। পক্ষান্তরে যার আমলে উভয় শর্ত অথবা এর যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকবে, তার আমল প্রত্যাখ্যাত হবে। তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

আর তারা যে কাজ করেছে আমি সেদিকে অগ্রসর হব। অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।

ফুরকান : ২৩।

পক্ষান্তরে যার আমলে উভয় শর্ত পূরণ হবে, তার আমল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

আর দীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজেকে পূর্ণ সমর্পণ করল।

নিসা : ১২৫।

আল্লাহ আরো বলেন,

হ্যাঁ, যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও, তবে তার জন্য রয়েছে তার রবের নিকট প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।

বাকারা : ১১২।

সুতরাং উমর রা. বর্ণিত, ‘সকল কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল’ হাদীসটি অন্তরের আমল সমূহের মানদণ্ড এবং আয়েশা রা. বর্ণিত ‘যে এমন আমল করল, যাতে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ হাদীসটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলসমূহের মানদন্ড। হাদীস দু’টি ব্যাপক অর্থবোধক। দীনের মূল বিষয়াদি ও শাখা- প্রশাখা সমূহ এবং অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলের কোনটিই এর বাইরে নয়। এক কথায় সম্পূর্ণ দীন এর আওতাভুক্ত।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top