বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে অহি শব্দের অর্থ কি, ওহি কাকে বলে, ওহী কত প্রকার ও কি কি।
সূচিপত্র
Toggleওহি শব্দের অর্থ কি
ওহী শব্দের আভিধানিক অর্থ ইশারা করা, ইংগিত করা, মনের মধ্যে কোন কথা নিক্ষেপ করা, গোপনে কোন কথা বলা। আল্লামা আবু ইসহাকের বর্ণনা অনুযায়ী- সকল অভিধানেই ওহীর আসল অর্থ কাউকে গোপনে কিছু জানিয়ে দেওয়া। ইসলামী পরিভাষায় ওহী হচ্ছে- “কালামুল্লাহিল মুনজাল আলা নাবিয়্যিন।”
আবু ইসহাক লুগাভী বলেনঃ সকল অভিধানেই ‘ওহী’ অর্থ গোপনে কিছু জানাইয়া দেওয়া।
ইমাম রাগেব ইসফাহানী লিখেছেনঃ
‘ওহী’ অর্থ দ্রুত গতিশীল ইশারা, ইঙ্গিত; ইহা ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলা দ্বারাও সম্পন্ন হতে পারে। ইহা এমন শব্দেও হতে পারে যার কোন সঠিক রূপ নাই। আবার ইহা অঙ্গের ইশারা বা লিখনীর সাহায্যেও হতে পারে।
কুরআন মজীদে বলা হয়েছেঃ
তখন আল্লাহ তাদেরকে ইংগিতে বললেন যে, সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ কর।
আল্লাহর যে বাণী নবীগণের মানসপটে নিক্ষেপ করা হয় তাকেও ‘ওহী’ বলা হয়।
ওহি কাকে বলে
শায়খ আবদুল্লাহ সারকাভী লিখেছেনঃ
‘ওহী’ অর্থ জানিয়ে দেওয়া। আর শরীয়াতের পরিভাষায় ওহী হল- আল্লাহ তাঁর নবীগণকে কোন বিষয়ে কথা বলে বা ফেরেশতা পাঠিয়ে কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা ইলহামের সাহায্যে জানিয়ে দেওয়া। এই শব্দটি ‘আদেশ দান’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
বস্তুত ওহীর নিগূঢ় তত্ত্ব ও প্রকৃত রহস্য কি, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেহই সঠিকরূপে জানেন না। আভিধানিক, ধর্ম বিজ্ঞান বিশারদ ও দার্শনিকগণ ইহার সংজ্ঞা দিতে ও ইহার তাৎপর্য ও পরিচয় বর্ণনা করতে চেষ্টা করেছেন। তা থেকে ‘ওহী’ সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ও মোটামুটি ধারণা সহজেই জন্মে। শায়খ বু আলী সিনা এই প্রসংগে যা বলেছেন, তা আল্লামা আবুল বাকার ভাষায় নিম্নে উদ্ধৃত হইলঃ
আমরা ইন্দ্রিয় শক্তির সাহায্যে দ্রব্যাদি দেখে থাকি, নবী অভ্যন্তরীণ ও অন্তর্নিহিত শক্তির সাহায্যে দেখেন। আমরা প্রথমে দেখি, তারপর সে সম্পর্কে জানতে পারি। আর নবী প্রথমেই জানতে পারেন, তারপর দেখেন।
ওহী কত প্রকার ও কি কি
সর্বশেষ প্রেরিত পুরুষ হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর নিকট আল্লাহ তা’য়ালার প্রেরিত বাণীকে ইসলামী চিন্তাবিদগণ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। এর একটি হচ্ছে ওহীয়ে মাতলু এবং অপরটি হচ্ছে ওহীয়ে গায়রে মাতলু।
ওহীয়ে মাতলু
ওহীয়ে মাতলু বা আবৃত বাণী যা হযরত জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহর নিকট আক্ষরিকভাবে আবৃত্তি করে শুনাতেন এবং রাসুল (সা.) তার জীবদ্দশায় প্রতি রমজানে তা আবার জিবরাঈল (আ.) কে পুনরাবৃত্তি করে শুনাতেন। কোরআন পাক এ প্রকার ওহী। আল্লাহর প্রেরিত বাণীর প্রতিটি শব্দ ও বাক্য হুবহু বর্ণিত হয়েছে কোরআন মজিদে এবং তা বহাল রাখা ছিল রাসুল (দ.) এর অবশ্য কর্তব্য। তাই কোরআন হচ্ছে জিবরাঈল (আ.) এর মারফত প্রেরিত আল্লাহ তায়ালার আবৃত বাণী।
“নিশ্চয়ই আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।” (আল হিজর, আয়াত-৯ )
তাকওয়া অর্থ কি? তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা. মুত্তাকী কাকে বলে?
অন্য আয়াতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
“আপনি আপনার জিহ্বা দ্রুত সঞ্চালন করবেন না (কোরআনকে) তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করার জন্য, এর সংরক্ষণ এবং পঠনের দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন পাঠ করি তখন আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন।”
(সূরা আল কিয়ামাহ, আয়াত: ১৬-১৮ )
রাসুলের উপর ওহী নাজিল হওয়ার পর তিনি তা মুখস্ত করার জন্য বারবার দ্রুত পাঠ করতে থাকতেন, তাই আল্লাহ তাকে এ রকম না করার জন্য আহ্বান জানান। কারণ কুরআনের শব্দাবলীর সংরক্ষণ, তার পঠন ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং গ্রহণ করেছেন। কোরআনে বর্ণিত শব্দ ও বাক্যগুলো (আয়াত) যেভাবে রাসুলের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে তা সেভাবেই হুবহু সংরক্ষিত হয়েছে। তাই কোরআন হল আল্লাহ পাকের আবৃত বাণী বা ওহীয়ে মাতলু।
ওহীয়ে গায়রে মাতলু
দ্বিতীয় প্রকার প্রেরিত বাণী হচ্ছে ওহীয়ে গায়রে মাতলু। যেসব প্রেরিত বাণীতে শুধু বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে, শাব্দিক বা আক্ষরিকভাবে বর্ণনা করা হয়নি বা করার কোন প্রকার আয়োজন করা হয়নি। রাসুল (সা.) এ প্রকার প্রেরিত বাণীর শব্দ বা বাক্যের আক্ষরিক বর্ণনায় বাধ্য ছিলেন না। প্রেরিত বাণীর প্রাপ্ত মূল ভাবটি নিজের ভাষায় বর্ণনা করার অধিকার তার ছিল। রাসুল (সা.) এর নবী জীবনের সর্বপ্রকার কর্মতৎপরতা, উক্তি, বক্তব্য এবং তাঁর সম্মুখে অনুষ্ঠিত অন্যের কার্যকলাপ যার প্রতি তার সমর্থন ও মৌন সম্মতি পরিলক্ষিত হয়েছিল।
ইসলামের পরিভাষায় তাকে সুন্নাহ নামে আখ্যায়িত করা হয় এবং এর অপর প্রতিশব্দ হল খবর। রাসুল (সা.) ছিলেন তাঁর উম্মতের জন্য জীবন্ত আদর্শ। তাঁর প্রতিটি কার্যকলাপ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাসুল (সা.) সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন রাসুল (সা.) এর জীবন হচ্ছে কোরআনের মূর্তপ্রতীক বা প্রতিফলন অর্থাৎ কুরআন থিওরী এবং মোহাম্মদ (সা.) এর জীবনাচরণ প্রাকটিক্যাল কোরআন।
রাসুল নিজের ইচ্ছামত কথা বলেন না। তিনি যা বলেন তা আল্লাহর বাণী হিসেবে তাঁর নিকট অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা আন নাজম, আয়াত: ৩-৪)
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল যে রাসুলের ধর্ম সম্বন্ধীয় প্রত্যেকটি বক্তব্য আল্লাহর ওহী বা ওহীয়ে গায়রে মাতলু।
সুবহানাল্লাহ অর্থ কি ও এর ফজিলত কি? Subhanallah meaning Bangla