বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আখলাক শব্দের অর্থ কি, আখলাক কাকে বলে, আখলাক কত প্রকার ও কি কি, আখলাকে হামিদাহ কাকে বলে, আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি, আখলাকে হামিদার গুরুত্ব, আখলাকে যামিমাহ অর্থ কি, আখলাকে যামিমাহ বর্জনীয় কেন, আখলাকে যামিমাহর কুফল।
সূচিপত্র
Toggleআখলাক শব্দের অর্থ কি
(أخلاق) আখলাক শব্দটি আরবি, এটি (خلق) খুলুক শব্দের বহুবচন। এর অর্থ স্বভাব, চরিত্র, আচরণ, নীতি। ইংরেজিতে একে Character বলা হয়।
আখলাক কাকে বলে
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, মানুষের মানবিক ও নৈতিক গুণাবলীর সমষ্টিকে আখলাক বলা হয়।
আখলাক কত প্রকার ও কি কি
আখলাক দুই প্রকার। যথাঃ
১. আখলাকে হাসানাহ (উত্তম চরিত্র) বা আখলাকে হামিদাহ (প্রসংশনীয় চরিত্র)
২. আখলাকে সায়্যিআহ (মন্দ চরিত্র) বা আখলাকে যামিমাহ (নিন্দনীয় চরিত্র)
আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি
আখলাক শব্দের অর্থ চরিত্র বা স্বভাব। আর হামিদা শব্দের অর্থ প্রশংসনীয়। আখলাকে হামিদা-এর অর্থ প্রশংসনীয় চরিত্র। মানুষের স্বভাব যখন সামগ্রিকভাবে সুন্দর ও মার্জিত হয় তখন তাকে আখলাকে হামিদা বা সচ্চরিত্র বলে। আখলাকে হামিদার অপর নাম হলো আখলাকে হাসানাহ।
সহজ কথায় বলা যায়, যে স্বভাব বা চারিত্রিক গুণাবলি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর কাছে পছন্দনীয় তাকে আখলাকে হামিদা বলে। আখলাকে হামিদার মধ্যে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন- তাকওয়া, সততা, আমানতদারি, ওয়াদা পালন, ন্যায়বিচার, সত্য কথা বলা, মিথ্যা পরিত্যাগ করা ইত্যাদি।
আখলাকে হামিদার গুরুত্ব
মানবচরিত্রের দু’টি দিক আছে। একটি মানুষকে ধ্বংস করে এবং অপরটি মুক্তি দেয়। মানবচরিত্র ধ্বংসকারি অসৎ স্বভাবসমূহ থেকে বিরত থেকে মহৎ গুণাবলি পালনের মাধ্যমে চরিত্রকে পরিশীলিত করা যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) কে আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেছিলেন চরিত্রের পরিপূর্ণতা দানের জন্য। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, “উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতাদানের জন্যই আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।” (বায়হাকি)
আখলাকে হাসানা বা উত্তম চরিত্র মানুষের এমন কতগুলো গুণ, যেগুলো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব, তার প্রমাণ উপস্থাপন করে। ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ জীবনে মানুষের সম্মান, মর্যাদা ও মহত্ত্বের প্রধান উপকরণ উত্তম চরিত্র।
এজন্যই প্রিয়নবি (সাঃ) ইরশাদ করেন-
উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ ইমানের অধিকারী তারাই, যারা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। (সুনানু আবি দাউদ)
মানুষ শিক্ষিত হতে পারে, ধনী হতে পারে, নেতা হতে পারে, মেধাবী ছাত্র হতে পারে, কিন্তু সে যদি উত্তম চরিত্রের অধিকারী না হয়ে মিথ্যাবাদী, প্রতারক, কৃপণ, বদমেজাজী হয়, তাহলে পরিবার ও সমাজে তার কোনো মূল্য থাকে না। সে হয় মানবকুলের অমানুষ।
শিক্ষা, সম্পদ ও মেধায় কম হলেও চারিত্রিক দিক থেকে উত্তম হলে সমাজের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। তাই প্রকৃত মানুষ হতে হলে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।
ধন-সম্পদ মানুষকে ধনী বানায়; তা শ্রেষ্ঠত্বের স্থানে আসীন করে না। বরং মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয়, তার উত্তম চরিত্রের গুণে।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, “কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারি যে জিনিসটি রাখা হবে তা হচ্ছে উত্তম চরিত্র।” (কানযুল উম্মাল)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে ঐ সকল ব্যক্তি উত্তম, যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্র বিচারে সুন্দরতম।” (সহিহ বুখারি)
মহানবী (স.) মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন ধারা জগতবাসীকে দেখিয়েছেন। শুধু তিনি নন, তাঁর পূর্বে যত নবী-রাসুল দুনিয়াতে মানবজাতির মুক্তির বাণী নিয়ে আগমন করেছিলেন, তারা কেউ মানব স্বভাবের চাহিদা ও প্রয়োজনকে উপেক্ষা করেননি। তাঁরা সকলেই ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারি। তাই আমাদেরকে অবশ্য সচ্চরিত্রের অধিকারি হতে হবে।
আখলাকে যামিমাহ অর্থ কি
আখলাক শব্দের অর্থ চরিত্র বা স্বভাব। আর যামিমা শব্দের অর্থ নিন্দনীয়। আখলাকে যামিমা-এর অর্থ নিন্দনীয় চরিত্র। মানুষের স্বভাব যখন সামগ্রিকভাবে অসুন্দর ও অমার্জিত হয় তখন তাকে আখলাকে যামিমা বা দুশ্চরিত্র বলে। আখলাকে যামিমা আখলাকে হামিদার বিপরীত। আখলাকে যামিমার অপর নাম হলো আখলাকে সায়্যিআহ।
সহজ কথায় বলা যায়, যে স্বভাব বা চারিত্রিক গুণাবলি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.)-এর কাছে অপছন্দনীয় তাকে আখলাকে যামিমা বলে। যে স্বভাব বা আচরণ নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য, তাই আখলাকে যামিমা। আখলাকে যামিমার মধ্যে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন- প্রতারণা, গিবত, হিংসা-বিদ্বেষ, ফিতনা-ফাসাদ, সুদ-ঘুষ, ওজনে কম দেওয়া, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চোগলখুরি, খুন- খারাবি, যিনা-ব্যভিচার ইত্যাদি।
আখলাকে যামিমাহ বর্জনীয় কেন
প্রবৃত্তির তাড়নায় ইসলামি রীতি-নীতি ভুলে বেপরোয়া চলাফেরা আখলাকে যামিমা বা অসচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। অসচ্চরিত্র মানুষকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে দেয়। ফলে মানুষ বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলে। বর্তমান সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে অসৎস্বভাবের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটায় মানুষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। তাই ইসলাম সকল অসৎ স্বভাবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকর্মের নির্দেশ দিবে এবং অসৎকর্মে নিষেধ করবে; এরাই সফলকাম।” (সুরা আলে ইমরান ৩: ১০৪ )
কাজেই কারও অসচ্চরিত্রের কারণে যাতে পরিবেশ কলুষিত না হয়, সে লক্ষ্যে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন,
‘তোমাদের কেউ যখন কোনো খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখবে; তখন সে যেন তা হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়; যদি সে এতে সামর্থ্য না রাখে, তাহলে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করবে। যদি এ সামর্থ্যও না থাকে তাহলে অন্তর দিয়ে চেষ্টা করবে। আর এটা হচ্ছে ইমানের দুর্বলতম স্তর।” (সহিহ মুসলিম)
মন্দ চরিত্রের মানুষ সমাজে ঘৃণার পাত্র। কেউ তাকে ভালোবাসে না। সকলেই তাকে এড়িয়ে চলে। সে আল্লাহর অবাধ্য। এ কারণে অসচ্চরিত্রের মানুষ পরকালীন জীবনে শোচনীয় পরিণতি ভোগ করবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন,
“দুশ্চরিত্র ও রূঢ় স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (আবু দাউদ)
আখলাকে যামিমার কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে। অসচ্চরিত্রের অধিকারি ব্যক্তি পশুর চেয়েও অধম। সে শুধু নামে মাত্র মানুষ কিন্তু তার স্বভাব চরিত্র পশুর ন্যায়। নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সকল আদর্শকে সে বিসর্জন দিতেও পিছপা হয় না। আখলাকে যামিমার কারণে সে সকল প্রকার অশ্লীল কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আর এ কারণেই সমাজে অরাজকতা বিস্তার লাভ করে।