বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আকাইদ শব্দের অর্থ কি, আকাইদ কাকে বলে, আকিদা অর্থ কি, আকাইদের মৌলিক বিষয়গুলো কি কি, আকিদা শব্দের ইতিহাস।
সূচিপত্র
Toggleআকিদা ও আকাইদ শব্দের অর্থ কি
ধর্ম-বিশ্বাস বিষয়ক প্রসিদ্ধতম একটি পরিভাষা ‘আকীদাহ’ (عقيدة), যার বহুবচন হচ্ছে ‘আকাইদ’ (عقائد)। হিজরী চতুর্থ শতকের আগে এ শব্দটির প্রয়োগ তত প্রসিদ্ধ ছিল না। চতুর্থ হিজরী শতক থেকে এ পরিভাষাটি প্রচলন লাভ করে। পরবর্তী যুগে এটিই একমাত্র পরিভাষায় পরিণত হয়।
আকীদা ও ইতিকাদ শব্দদ্বয় আরবী ‘আক্দ’ (عقد) ধাতু থেকে গৃহীত। এর অর্থ বন্ধন করা, গিরা দেওয়া, চুক্তি করা, শক্ত হওয়া ইত্যাদি। ভাষাবিদ ইবনু ফারিস এ শব্দের অর্থ বর্ণনা করে বলেন: “আইন, ক্বাফ ও দাল: ধাতুটির মূল অর্থ একটিই: দৃঢ় করণ, দৃঢ়ভাবে বন্ধন, ধারণ বা নির্ভর করা। শব্দটি যত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা সবই এই অর্থ থেকে গৃহীত।” সূতরাং আকিদা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অন্তরের বিশ্বাস এবং এর বহুবচন আকাইদ শব্দের অর্থ হচ্ছে অন্তরের বিশ্বাস সমূহ।
আকাইদ কাকে বলে
পারিভাষিক অর্থে আকিদা বা আকাইদ হচ্ছে ইসলামের মৌলিক ৬টি বিষয়ে অন্তরের বিশ্বাস।
আকাইদের মৌলিক বিষয়গুলো কি কি
এক. একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
দুই. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
তিন. সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস।
চার. সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
পাঁচ.তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
ছয়. আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
আকিদা শব্দের ইতিহাস
“ধর্মবিশ্বাস’ বুঝাতে আকীদা শব্দের ব্যবহার পরবর্তী যুগগুলিতে ব্যাপক হলেও প্রাচীন আরবী ভাষায় এর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় না। ‘বিশ্বাস’ বা ধর্মবিশ্বাস অর্থে ‘আকীদা’ ও ‘ই’তিকাদ’ শব্দের ব্যবহার কুরআন ও হাদীসে দেখা যায় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে বা তাঁর পূর্বের যুগে আরবী ভাষায় ‘বিশ্বাস’ অর্থে বা অন্য কোনো অর্থে ‘আকীদা’ শব্দের ব্যবহার ছিল বলে জানা যায় না। তবে ‘দৃঢ় হওয়া’ বা ‘জমাট হওয়া’ অর্থে ‘ই’তিকাদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া অন্তরের বিশ্বাস অর্থেও ‘ইতিকাদ’ শব্দটির প্রচলন ছিল। প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ ইসমাঈল ইবনু হাম্মাদ জাওহারী (৩৯৩ হি) বলেন:
“সম্পত্তি বা সম্পদ ই’তিকাদ’ করেছে, অর্থাৎ তা অর্জন করেছে বা সঞ্চয় করেছে। কোনো কিছু ই’তিকাদ’ হয়েছে অর্থ তা শক্ত, কঠিন বা জমাটবদ্ধ হয়েছে। অন্তর দিয়ে অমুক বিষয় ই’তিকাদ করেছে। তার কোনো মা’কুদ নেই, অর্থাৎ তার মতামতের স্থিরতা বা দৃঢ়তা নেই।”
কুরআন-হাদীসে কোথাও আকীদা শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায় না। ‘ইতিকাদ’ শব্দটি দু একটি হাদীসে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে ‘বিশ্বাস’ অর্থে নয়, বরং সম্পদ, পতাকা ইত্যাদি দ্রব্য দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, বন্ধন করা বা গ্রহণ করা অর্থে।
দ্বিতীয় শতাব্দীর কোনো কোনো ইমাম ও আলিমের কথায় ‘ই’তিকাদ’ বা ‘আকীদা’ শব্দ সুদৃঢ় ধর্ম বিশ্বাস অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে দেখা যায়। পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে ‘আকীদা’ শব্দের ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে।
৮ম শতকের প্রসিদ্ধ অভিধানবেত্তা আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-ফাইউমী (৭৭০হি) তাঁর আল-মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থে লিখেছেন: “মানুষ ধর্ম হিসেবে যা গ্রহণ করে তাকে ‘আকীদা’ বলা হয়। বলা হয় ‘তার ভাল আকীদা আছে’, অর্থাৎ তার সন্দেহমুক্ত বিশ্বাস আছে।”
আধুনিক ভাষাবিদ ড. ইবরাহীম আনীস ও তাঁর সঙ্গিগণ সম্পাদিত ‘আল-মু’জামুল ওয়াসীত’ গ্রন্থে বলা হয়েছে: “আকীদা অর্থ এমন বিধান বা নির্দেশ যা বিশ্বাসীর বিশ্বাস অনুসারে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ রাখে না। ধর্মীয় বিশ্বাস যা কর্ম থেকে পৃথক।