Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ত ও দোয়া সমূহ

তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ত ও দোয়া সমূহ Info

তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ত ও দোয়া সমূহ Description

তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ত ও দোয়া সমূহ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ত ও দোয়া সমূহ; সহিহ হাদিস থেকে রাতের সালাত আদায়ের মোট ছয়টি পদ্ধতি পাওয়া যায়; তার যে কোনটিই অবলম্বন করা বৈধ। পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করা হলোঃ

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা

প্রথম পদ্ধতি: ১৩ রাকাত

হালকাভাবে দু’রাকআত পড়ে এর সূচনা করবে। সর্বাগ্রগণ্য মত অনুযায়ী এ দুই রাকআত হল এশার ফরজ সালাত পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নাত অথবা ঐ নির্দিষ্ট দু’রাকাত ছালাত, যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) রাতের সালাত শুরু করতেন। অতঃপর অত্যন্ত দীর্ঘ দু’রাকআত আদায় করবে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর পূর্বের চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর তদপেক্ষা কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দুই রাকাত পড়বে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়বে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি: ১৩ রাকাত

তন্মধ্যে দুই দুই করে আট রাকাত পড়বে এবং প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। অতঃপর পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে। শুধুমাত্র পঞ্চম রাকাতে বসবে এবং সালাম ফিরাবে।

তৃতীয় পদ্ধতি: ১১ রাকাত

প্রত্যেক দুই রাকাতের মাঝখানে সালাম ফিরাবে এবং এক রাকাত বিতর পড়বে।

চতুর্থ পদ্ধতি: ১১ রাকাত

এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত এক সালামে অতঃপর পরের চার রাকাত আরেক সালামে পড়বে। অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই চার ও তিন রাকাত নামাজের দুই রাকাতের পর কি বসতেন? এ ব্যাপারে আমরা কোন সন্তোষজনক জবাব পাই না। তবে তিন রাকাত বিতর সালাতে দুই রাকাত পর বসা শরীআত সম্মত নয়।

পঞ্চম পদ্ধতি: ১১ রাকাত

এর মধ্যে একটানা আট রাকাত আদায় করে ৮ম রাকাতে বসবে এবং তাশাহুদ ও নবী সঃ এর দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল নয় রাকাত। অতঃপর বসে দুই রাকাত আদায় করবে।

ষষ্ঠ পদ্ধতি: ৯ রাকাত

তার মধ্যে ছয় রাকাত একটানা পড়ে ষষ্ঠ রাকাতে বসবে অতঃপর তাশাহুদ ও নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পড়ে পূর্বের মতাে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল সাত রাকআত। অতঃপর বসে দুই রাকাত পড়বে।

এই পদ্ধতি গুলো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সুস্পষ্ট নছ বা দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত পদ্ধতিগুলোর উপর আরো অন্যান্য প্রকার এভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে যে, প্রত্যেক প্রকার থেকে ইচ্ছামতো রাকআত সংখ্যা কমিয়ে এক রাকাত বিতরে সীমাবদ্ধ করবে, রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীর প্রতি আমল করণার্থে। তিনি বলেন, যে চায় সে পাঁচ রাকাত বিতর পড়ুক, যে চায় সে তিন রাকাত বিতর পড়ুক এবং যে চায় সে এক রাকাত বিতর পড়ুক।

তাহাবী, হা/১৬০৩; হাকেম, হা/১১২৮; দারাকুতনী, হা/১৬৬০; বায়হাকী, হা/৪৭৭৬

এই পাঁচ ও তিন রাকআত বিতর চাইলে এক বৈঠকে ও এক সালামে আদায় করবে। যেমনটি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর চাইলে প্রত্যেক দুই রাকআত পর সালাম ফিরাবে। যেমনটি তৃতীয় ও অন্যান্য পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর এটাই সর্বোত্তম।

ইবনু খুযায়মা তার সহীহ গ্রন্থে (২/১৯৪, হা/১১৬৮, ‘ছালাত অধ্যায়) উল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর কোন একটিতে আয়েশা (রাঃ) ও অন্যদের বর্ণিত হাদিস উদ্ধৃত করার পর বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে যত রাকাত রাতের সালাত আদায় করা ও যেভাবে আদায় করা বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে যে সংখ্যাটা পছন্দনীয় তা মানুষের জন্য পড়া জায়েয। উহার যেকোন সংখ্যা আদায় করা কারাে জন্য নিষেধ নেই। (আলবানী বলেন) আমার বক্তব্য হল, রাসূল (ছাঃ) থেকে যত রাকাত আদায় করা সহীহ প্রমাণিত হয়েছে তাকে আবশ্যকীয়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও তার চেয়ে রাকআত সংখ্যা বেশি না করার যে সিদ্ধান্তকে আমরা পছন্দ করেছি, তা সম্পূর্ণরূপে ইবনে খুযায়মার এ মতের অনুকূলে। তাওফীক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা। আমি তার আরো অধিক অনুগ্রহ কামনা করছি।

পক্ষান্তরে পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর সালাতের প্রত্যেক দুই রাকাত অন্তর বসা ও সালাম না ফিরানাের বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) থেকে আমরা প্রমাণিত পাইনি। তবে মূল বিষয়টি জায়েয। কিন্তু যখন নবী (ছাঃ) মাগরিবের ন্যায় তিন রাকাত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন এবং এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তোমরা বিতর সালাতকে মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য প্রদান করাে না।

তাহাবী, হা/১৭৩৮, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; দারাকুতনী, হা/১৬৬৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ।

যে ব্যক্তি তিন রাকাত বিতর পড়বে তাকে অবশ্যই এই সাদৃশ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এটি দুভাবে হতে পারে :

১. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে সালাম ফিরানো। এটাই অধিক শক্তিশালী ও সর্বোত্তম।

২. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে না বসা। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

তারাবির নামাজের নিয়ত

নিয়ত মানে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না। তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই।

মহান আল্লাহ বলেন,

তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।

কুরআন ৯৮/৫

আলক্বামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আমি উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যে জন্য, সে হিজরত করেছে।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ১

জ্ঞাতব্য যে, তারাবির শুরুতেই কেউ যদি সমস্ত নামাযের একবার নিয়ত করে নেয়, তাহলে তাই যথেষ্ট। প্রত্যেক ২ রাকাতে নিয়ত করা জরুরী নয়। অবশ্য নামাজ পড়তে পড়তে কেউ কোন প্রয়োজনে তা ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে লাগলে নতুন নিয়তের দরকার। সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত করা জরুরী; কিন্তু পড়া বিদআত।

নিয়ত প্রসঙ্গে একটি সতর্কতা জরুরী এই যে, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব হল, আল্লাহর প্রতি ঈমান, তার সওয়াবের আশা এবং কেবল তারই সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত করা। কাউকে দেখাবার বা শােনাবার উদ্দেশ্যে, অথবা কেবলমাত্র লোকের দেখাদেখি অন্ধ অনুকরণ করে, অথবা দেশ বা পরিবারের পরিবেশের অনুকরণ করে কোন ইবাদত করা শিরক।

তারাবির নামাজের কিরাআত

মহানবী সঃ রাতের কিয়ামকে খুব লম্বা করতেন। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সঃ ৪ রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করাে না। (অর্থাৎ অত্যন্ত সুন্দর ও দীর্ঘ হত।) অতঃপর তিনি ৪ রাকআত নামায পড়তেন। সুতরাং তুমি সেই নামাজের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করাে না। অতঃপর তিনি ৩ রাকাত (বিতর) নামায পড়তেন।

বুঃ ১১৪৭

হুযাইফা রাঃ বলেন, একদা তিনি এক রাকাতে সূরা বাকারা, আল ইমরান ও নিসা ধীরে ধীরে পাঠ করেন।

মুসলিম ৭৭২, নাসাঈ ১০০৮, ১১৩২

হযরত উমর রাঃ এর যামানায় সালাফগণ তারাবীহর নামাযের কিরাআত লম্বা করে পড়তেন। পূর্ণ নামাজে প্রায় ৩০০টি আয়াত পাঠ করতেন। এমন কি এই দীর্ঘ কিয়ামের কারণে অনেকে লাঠির উপর ভর করে দাঁড়াতেন এবং ফজরের সামান্য পূর্বে তারা নামায শেষ করে বাসায় ফিরতেন। সেই সময় খাদেমরা সেহরি খাওয়া সম্ভব হবে না -এই আশঙ্কায় খাবার নিয়ে তাড়াতাড়ি করত। তারা ৮ রাকাতে সূরা বাকারা পড়ে শেষ করতেন এবং তা ১২ রাকআতে পড়া হলে মনে করা হত যে, নামায হাল্কা হয়ে গেল।

মাঃ ২৪৯, ২৫১, ২৫২, মিঃ ১/৪০৮ আলবানীর টীকা দ্রঃ

ইবনে কুদামাহ বলেন, ইমাম আহমদ বলেছেন, রমজান মাসে (তারাবীর নামাযে) এমন ক্বিরাআত করা উচিত, যাতে লোকদের জন্য তা হাল্কা হয় এবং কাউকে কষ্ট না লাগে। বিশেষ করে (গ্রীষ্মের) ছোট রাতগুলিতে লম্বা ক্বিরাআত করা উচিত নয়। আসলে লোকেরা যতটা বহন করতে পারবে ততটা পরিমাণে নামাজ লম্বা হওয়া উচিত।

মুগনী ২/১৬৯

তারাবির নামাজে কুরআন খতম

তারাবীহর নামাযে কুরআন খতম করার ব্যাপারে শায়খ ইবনে বায (রঃ) বলেন, এ ব্যাপারে প্রশস্ততা আছে। তবে আমার এমন কোন দলিল জানা নেই, যাকে কেন্দ্র করে বলা যায় যে, তারাবীর নামাযে কুরআন খতম উত্তম। অবশ্য কিছু উলামা বলেন যে, ইমামের জন্য পূর্ণ কুরআন শুনানো উত্তম; যাতে করে জামাতের জন্য (অন্ততপক্ষে বছরে একবার) পূর্ণ কুরআন শোনার সৌভাগ্য লাভ হয়। কিন্তু এ যুক্তি স্পষ্ট দলীল নয়।

সুতরাং যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ইমাম তার কিরাআতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করবেন, ধীর ও শান্তভাবে কুরআন তেলাওয়াত করবেন খতম করতে না পারলেও; বরং অর্ধেক বা দুই তৃতীয়াংশ পড়তে না পারলেও মুক্তাদীরা যাতে উপকৃত হয় সেই চেষ্টাই করবেন; যেহেতু কুরআন খতম করা কোন জরুরী কাজ নয়; জরুরী হল লােকদেরকে তাদের নামাজের ভিতরে কিরাআতের মাধ্যমে বিনয়-নম্রতা সৃষ্টি করে উপকৃত করা; যাতে তারা সেই নামায ও কিরাআতে লাভবান ও তৃপ্ত হতে পারে; অবশ্য এর সাথে যদি কুরআন খতম করা সম্ভব হয়, তাহলে আল-হামদু লিল্লাহ; সম্ভব না হলে তিনি যা পড়েছেন তাই যথেষ্ট; যদিও কুরআনের কিছু অংশ বাকী থেকে যায়; কারণ, কুরআন খতম করা অপেক্ষা ইমামের মুক্তাদীগণের প্রতি সবিশেষ যত্ন নেওয়া, তাদেরকে নামাযের ভিতরে বিনয়াবনত হতে সর্বতঃ প্রয়াস রাখা এবং তাদেরকে নামাযে পরিতৃপ্ত করে উপকৃত করা বেশী গুরুত্ব রাখে; এতদসত্ত্বেও যদি কোন প্রকার কষ্ট-অসুবিধা ছাড়াই কুরআন খতম করেন এবং পূর্ণ কুরআন তাদেরকে শোনাতে সক্ষম হন, তাহলে তা অবশ্যই উত্তম।

সালাতা ১১-১২ পৃ

বলা বাহুল্য, ইমামের জন্য জরুরী হল, মুক্তাদীদের অবস্থার খেয়াল রাখা। কেননা, মহানবী সঃ বলেন, যখন তোমাদের কেউ লোকদের নামায পড়াবে, তখন সে যেন হালকা করে পড়ে। কেননা, তাদের মধ্যে রােগী, দুর্বল ও বৃদ্ধ লােক থাকে। অবশ্য যখন তােমাদের কেউ একা নামায পড়ে, তখন সে যত ইচ্ছা লম্বা করতে পারে।

বুঃ ৭০৩, মুঃ ৪৬৭

তাড়াহুড়া না করে সুন্দরভাবে তারাবীহ পড়া

ইমামের জন্য উচিত নয়, নামাযে জলদিবাজি করা এবং কাকের দানা খাওয়ার মত ঠকাঠক নামায শেষ করা। যেহেতু মহানবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম এ নামাজকে খুবই লম্বা করে পড়তেন; যেমন পূর্বে এ কথা আলোচিত হয়েছে। মহানবী সঃ এর রুকু ও সিজদাহ প্রায় তার কিয়ামের মতই দীর্ঘ হত। আর এত লম্বা সময় ধরে তিনি সিজদায় থাকতেন যে, সেই সময়ে প্রায় ৫০টি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে।

বুখারী ১১২৩

সুতরাং এ কথা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যে, আমরা আমাদের তারাবীহর নামাযকে তাদের নামাজের কাছাকাছি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব; আমরাও কিরাআত লম্বা করব, রুকু, সিজদা ও তার মাঝে কওমা ও বৈঠকে তাসবীহ ও দুআ অধিকাধিক পাঠ করব; যাতে আমাদের মনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও যেন বিনয়-নম্রতা অনুভূত হয়; যে বিনয়-নম্রতা হল নামাযের প্রাণ ও মস্তিষ্ক; আমাদের উচিত, এই নামাযের সুন্নতকে তার পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ (কোয়ালিটি ও কোয়ানটিটি) উভয় দিক থেকেই গ্রহণ করা; অতএব আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী নামাজের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য অবলম্বন করব; যেমন গ্রহণ করে থাকি রাকআত সংখ্যা; বলা বাহুল্য, বিনয়-নম্রতা, মনের উপস্থিতি ও ধীর-স্থিরতা ছাড়া কেবল রাকাত আদায়ের কর্তব্য পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।

পক্ষান্তরে নামাযে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া বৈধ নয়। তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যদি নামাযের কোন ওয়াজিব বা রুকন সঠিকরূপে আদায় না হয়, তাহলে তাে নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। পরন্তু ইমাম কেবল নিজের জন্য নামাজ পড়েন না। তিনি তাে নিজের তথা মুক্তাদীদের জন্য নামাজ পড়ে (ইমামতি করে) থাকেন। সুতরাং তিনি হলেন একজন অলী (অভিভাবকের) মত। তাকে তাই করা ওয়াজেব, যা নামাজে ধীর-স্থিরতা বজায় রাখে।

নামাযে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ফরয ও অপরিহার্য; যে তা বর্জন করবে, তার নামায বাতিল গণ্য হবে; যেহেতু একদা মহানবী সঃ এক ব্যক্তিকে অধীর ও অস্থির হয়ে নামায পড়তে দেখে তাকে নামায ফিরিয়ে পড়তে আদেশ করলেন এবং শিক্ষা দিলেন যে, নামাজে রুকু, সিজদা, কওমা ও দুই সিজদার মাঝখানে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজেব।

বুঃ ৭৫৭, মুঃ ৩৯৭

মহানবী সঃ বলেন, সে নামাযীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকু ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।

সুআঃ, আদাঃ ৮৫৫নং, আআঃ, সজাঃ ৭২২৪ নং

রাসুল সঃ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামাজ চুরি করে; লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সঃ নামায কিভাবে চুরি করবে? তিনি বললেন, পূর্ণরূপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।

ইআশাঃ ২৯৬০ নং ত্বাবা, হাঃ ১২২৯, মাঃ, আঃ, সজাঃ ৯৮৬নং

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ সেই বান্দার নামাজের প্রতি তাকিয়েই দেখেন না, যে রুকু ও সিজদায় তার মেরুদন্ড সোজা করে না।

ইআশাঃ ২৯৫৭, ইমাঃ আঃ, সিসঃ ২৫৩৬ নং

তিন রাকাত বিতরের কিরাআত

তিন রাকআত বিতরের প্রথম রাকআতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।

নাসাঈ, হা/১৭২৯-৩১, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৪৭;

হাকেম, হা/১১৪৪ ‘বিতর’ অধ্যায়।

হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

কখনো কখনো এর সাথে সুরা ফালাক ও নাস পড়বে।

তিরমিযী, হা/৪৬৩, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, ‘বিতরের কিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৯;

হাকেম, হা/১১৪৪।

হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার বিতরের এক রাকআতে সূরা নিসার একশত আয়াত পড়েছিলেন।

নাসাঈ, হা/১৭২৮, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, বিতরের কিরাআত অনুচ্ছেদ-৪৬;

আহমাদ, হা/১৯৭৭৫,

সনদ ছহীহ।

তারাবির নামাজের দোয়া

তারাবির প্রত্যেক দুই রাকাত বা চার রাকাতে সালাম ফিরে তসবীহ, ইস্তিগফার বা দুআ পড়া দোষাবহ নয়। তবে এ সময় উচ্চস্বরে সে সব পড়া উচিত নয়। কারণ, তার কোন দলিল নেই।

প্রকাশ থাকে যে, ঐ সকল যিকর বা দোয়া যা ফরয নামাযের পর পড়া হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে এই নামাজের প্রত্যেক ২ রাকাত অথবা চার রাকাত পরপর সালাম ফিরে নির্দিষ্ট যিকর; যেমন “সুবহানা যিল মুলকি অল-মালাকুত, সুবহানা যিল ইয্যাতি অল-আযামাহ” পড়া বিদআত। এ স্থলে মহানবী সঃ অথবা তার কোন সাহাবী কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট দুআ বা যিকর বর্ণিত হয়নি।

তারাবির নামাজ শেষে অথবা প্রত্যেক ২ রাকাত পর পর অথবা প্রত্যেক চার রাকাত পর পর নিয়মিত কোন নির্দিষ্ট জামাআতী জিকির; যেমন সমস্বরে জামাআতী দরুদ পড়া বিদআত। মসজিদে এই শ্রেণীর চিৎকার ঘৃণ্য আচরণ এবং তা মসজিদে অন্যান্য নিষিদ্ধ কথা বলারই শ্রেণীভুক্ত।

প্রত্যেক চার রাকাত পর পর বিশ্রাম করার কথা হাদিস থেকে বুঝা যায় কিন্তু তখন কোন নির্দিষ্ট জিকির করতে হবে এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

তবে বিতর সালাতে দোয়ায়ে কুনুত এবং বিতর সালাতের পরে বেশকিছু দোয়া করার ব্যাপারে হাদিস রয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরামগণ আমল করতেন বলেও প্রমাণ রয়েছে। এখন সে বিষয়ে কিছু বর্ণনা করতে চায়।

দোয়ায়ে কুনূত ও তা পাঠের স্থান

কিরাআত শেষ করে রুকুর পূর্বে কখনো কখনাে ঐ দুআর মাধ্যমে কুনুত পড়বে, যেটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাতি হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। দু’আটি হলঃ

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া আ-ফিনী ফীমান ‘আ ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিকলী ফীমা ‘আত্বায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা ক্বাযায়তা; ফাইন্নাকা তাকৃযী ওয়া লা ইয়ুক্বযা ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিলু মাঁও ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়াইযঝু মান ‘আ-দায়তা, তাবা-রকতা রব্বানা ওয়া তাআ-লায়তা।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও; যাদেরকে তুমি ক্ষমা করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে ক্ষমা করে দাও; তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও; তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও, তুমি যে ফায়সালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হতে আমাকে বাঁচাও; কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না; তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হতে পারে না; আর তুমি যার সাথে শত্রুতা পোষণ কর, সে কোনদিন সম্মানিত হতে পারে না; হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ।

আবু দাউদ, হা/১৪২৫, ছালাত অধ্যায়-২, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;

তিরমিযী, হা/৪৬৪, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১০;

নাসাঈ, হা/১৭৪৫, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, ‘বিতরের দু’আ অনুচ্ছেদ-৫১;

কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে

রুকুর পরে কুনুত পড়া এবং রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কুনুত এর দোয়ার সাথে কাফেরদের প্রতি লানত (অভিসম্পাত), রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ এবং মুসলমানদের জন্য দু’আ বৃদ্ধি করাতে কোন সমস্যা নেই; উমার (রাঃ)-এর যুগে এরূপ করা ইমামগণ থেকে প্রমাণিত রয়েছে; আব্দুর রহমান বিন আব্দুল বারী বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে এসেছে; তারা রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কাফেরদেরকে লানত করতাে এ দোয়া বলেঃ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ক্বাতিলিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা, ওয়া ইয়ুকাযিবনা রুসুলাকা, ওয়ালা ইয়ুমিনূনা বিওয়াদিকা ওয়া খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম, ওয়া আলকি ফী কুবিহিমুর রুবা, ওয়া আলকি আলাইহিম রিজযাকা ওয়া আযাবাকা ইলাহাল হাক।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদেরকে ধ্বংস করুন; যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না; আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন, তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করুন এবং হে সত্যের উপাস্য! তাদের প্রতি আপনার শাস্তিকে অবধারিত করে দিন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতেন এবং সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করতেন। অতঃপর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

বর্ণনাকারী বলেন, কাফেরদের প্রতি লা’নত, নবী (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজের জন্য চাওয়ার পর তিনি (উবাই বিন কাব) বলতেনঃ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়্যা-কা না’বুদু, ওয়ালাকা নুছল্লী ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রহমাতাকা রব্বানা, ওয়া নাখা-ফু ‘আযা-বাকাল জিদ্দা, ইন্না ‘আযা-বাকা লিমান ‘আদায়তা মুলহাক।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, আপনার জন্যই ছালাত আদায় করি ও সিজদাহ করি; আমরা আপনার নিকটে ফিরে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি; হে আমাদের প্রভু! আমরা আপনার রহমত কামনা করি এবং আপনার কঠিন শাস্তি কে ভয় করি; আপনার সাথে যে শত্রুতা পোষণ করেছে, আপনার আযাব তার প্রতি অর্পিত হৌক।

অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় চলে যেতেন।

সহীহ ইবনে খুযায়মা, ২/১৫৫-১৫৬, হা/১১০০।

বিতরের শেষে পঠিতব্য দোয়া

বিতরের শেষে (সালামের পূর্বে বা পরে) এই দু’আটি পড়া সুন্নাতঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা বিরিকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমুআফাতিকা মিন উক্বাতিকা, ওয়া আ’ঊযু বিকা মিন কা, লা উহছী ছানাআন আলায়কা, আনতা কামা আছনায়তা ‘আলা নাফসিকা।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ থেকে এবং আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি; আমি আপনার মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, আমি আপনার প্রশংসাকে গণনা করতে পারব না; আপনি আপনার যেভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনটিই আপনার জন্য প্রযোজ্য।

আবু দাউদ, হা/১৪২৭, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;

ইবনু মাজাহ, হা/১১৭৯, অধ্যায় ৫, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-১১৭;

ইরওয়াউল গালীল, হা/৪৩০, হাদীছ ছহীহ।

বিতরের সালাম ফিরানাের পর (তিনবার) স্বরবে  বলবে سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ এবং তৃতীয়বার দীর্ঘ টানে বলবে।

আবু দাউদ, হা/১৪৩০, ‘বিতরের পরের দুআ অনুচ্ছেদ-৩৪১; নাসাঈ, হা/১৬৯৯,১৭০১, অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৩৭, হাদীছ ছহীহ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।

তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ত ও দোয়া সমূহ

Rate the Post

Latest Book

Latest Post

Latest Post

Scroll to Top