বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে তাওহীদ অর্থ কি, তাওহীদ কাকে বলে, তাওহীদের বিপরীত কি, তাওহীদের গুরুত্ব এবং তাওহীদ কত প্রকার।
Table of Contents
Toggleতাওহীদ অর্থ কি
তাওহীদ শব্দের আভিধানিক অর্থ একত্ববাদ। পারিভাষিক অর্থে আল্লাহ তায়ালা কোরআন ও সহীহ হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে তার নিজের নাম ও গুণাবলী সমূহের যে বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন সে সমস্ত ব্যাপারে তার এককত্বই হচ্ছে তাওহীদ। তাওহীদ হচ্ছে ইসলামের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান রোকন। আশা করি পাঠকগণ তাওহীদ কি সেটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন। এবারে আমরা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তাওহিদ কাকে বলে
তাওহীদের বিপরীত কি
তাওহীদ এর বিপরীত হচ্ছে শিরক; আল্লাহ পূর্ব থেকেই ছিলেন যখন কোন কিছুই ছিল না; যা কিছু আছে আসমানে ও জমীনে সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোন কিছুকে তার সাথে সামঞ্জস্যশীল মনে করা বা কোন ব্যাপারে তার সাথে অংশীদার করার নামই শিরক।
তাওহীদ একটি বাস্তব ও সত্য অবস্থার নাম। তাওহীদ মেনে চললে হয় ইবাদাত; আর তাওহীদ মেনে না চললে অর্থাৎ শিরক করলে হয় কুফুর।
তাওহীদের গুরুত্ব
তাওহীদের মূল বাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। এটি সর্বউত্তম বাক্য, পবিত্র বাক্য। আল্লাহ তায়ালা যুগেযুগে বহু নবী ও রাসুল গণকে প্রেরণ করেছেন যেন তারা তাওহীদের বাণী মানুষের নিকটে পৌঁছে দেয় । প্রত্যেক নবী রাসুলের মূল বাক্য ছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। মানুষের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক আছে যারা আল্লাহকে স্বীকার করে না। মূলত তারা মনের পূজারী। তাই তারা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। এই অল্প কিছু সংখ্যক নাস্তিক ছাড়া সবাই আল্লাহকে স্বীকার করে। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, তিনি ক্ষমতাবান এসব স্বীকার করে এবং তার ইবাদাতও করে।
কিন্তু মূল সমস্যা এখানে যে, তারা অন্যকে এসব ব্যাপারে আল্লাহর সাথে অংশীদার করে। আবার কখনও আল্লাহর সৃষ্টিকে তার সাথে সামঞ্জস্যশীল মনে করে। মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে স্বীকার করত, কিন্তু তারা মনে করত যে, আমরা অধম গুনাহগার বান্দা, তাই আল্লাহ আমাদের প্রার্থণা কবুল করবেন না। তাই তারা বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করত, যেন তারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তাদের জন্য। আর সেই অসীলায় যেন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেন। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মুসলিমদের মধ্যেও সেই অন্ধত্ব বিরাজমান। একদল মুসলিম যারা পীর ও মাজারকে পূজা করছে। যেন তারা অসীলা হতে পারে, সুপারিশকারী হতে পারে আল্লাহর নিকটে, যেমন মক্কার মুশরিকরা করত।
ইহুদীরা উযায়েরকে (আ:) আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করেছিল এবং খৃস্টানরা ঈসাকে (আ:) আল্লাহর পুত্র ও মারইয়ামকে আল্লাহর স্ত্রী সাব্যস্ত করেছিল।
এর জবাব দিতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে উল্লেখ করেনঃ
বলুন, তিনিই আল্লাহ এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার তার সমতুল্য কেউ নেই। (সূরা ইখলাস।)
মানুষ আল্লাহকে স্বীকার করলেও আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করে না। রবুবিয়্যাতের ব্যাপারে আল্লাহর একত্ববাদ মেনে নিলেও বেশিরভাগ মানুষ ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ মেনে নেয় না। তাওহীদের বিভিন্ন দিক রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ কিছু বিষয়ে আল্লাহকে মান্য করলেও কতক বিষয়ে অমান্য করে। তাই তারা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। মুমিন হতে হলে সমস্ত ব্যাপারেই আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিতে হবে।
তাওহীদ কত প্রকার
তাওহীদকে মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা ঠিক নয়। যেমন রবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত, আসমা ওয়া সেফাত। সব মিলিয়েই তাওহীদ। কারন একটি আরেকটির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। আরেকটি বিষয় এই যে, রবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাত এই দুইটিও মূলত আসমা ওয়া সেফাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলিকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে তাওহীদের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা বোঝানো যাবে না। তাওহীদের মূল বাণী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই, এই বাক্যের মধ্যেই তাওহীদের পরিপূর্ণ জ্ঞান নিহিত।
আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই; এ বাক্যকে বুঝতে হলে আগে আল্লাহর পরিচয় ভালভাবে জানতে হবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ও সহিহ হাদিসে আমাদেরকে তার নিজের যে সকল সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলী শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলোর মাঝেই আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায়। অতএব আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সমূহকে সঠিকভাবে বোঝার মাধ্যমে তার পরিচয় জানতে পারলেই তাওহীদকে সঠিকভাবে বুঝতে পারা যাবে তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই, এ বাক্যের মূল অর্থ বোঝা যাবে।