Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ত ও ফজিলত. Tahajjud Namaz er Niyom

তাহাজ্জুদ-নামাজের-নিয়ম-নিয়ত-সময়-ফজিলত-ও-দোয়া

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, সময়, দোয়া, রাকাত ও নিয়ত এবং তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কিত আরো অনেক কিছু। আরবী তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে সালাতে দণ্ডায়মান ব্যক্তি; তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ ফজিলত পূর্ণ সালাত যা মুমিনের ঈমানকে আরো দৃঢ় করে দেয়। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ; কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা তা প্রমাণিত; আল্লাহ তা’আলা রহমানের বান্দাদের গুণাগুণ সম্পর্কে বলেন, আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে। তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে পড়া উত্তম। দিনে অথবা রাতে নফল নামায এক সালামে দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম, যদিও চার রাকাত, এমনকি আট রাকাতও এক সালামে পড়া যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের জন্য খুব পরিশ্রম করতেন

এমনকি তার কদম মোবারক ফেটে যেত; তিনি রাতের কিয়ামে প্রচুর কষ্ট করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত কিয়াম করতেন যে, তার দুই পা ফেটে যেত; আয়েশা তাকে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাঃ আপনি কেন এরূপ করেন, অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন: আমি কি আল্লাহর শোকর গুজার বান্দা হতে পছন্দ করব না!

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮২০

মুগিরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়াম করলেন, ফলে তার দুই পা ফুলে গিয়েছিল, তাকে বলা হলাে: আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন? তিনি বললেন: আমি কি শোকর গুজার বান্দা হবাে না।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১৯

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী খুব সুন্দর বলেছেন:

আমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন, যিনি তার কিতাব তিলাওয়াত করনে যখন উজ্জ্বল ফজর উদিত হয়। তিনি বিছানা থেকে পার্শ্বদেশ পৃথক রেখে রাত যাপন করেন, যখন কাফেররা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত থাকে।

২. জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায় রাতের সালাত

আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেন, তখন লোকেরা তার দিকে ছুটে গেল। আর চারদিকে ধ্বনিত হল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করেছেন তিনবার। আমি মানুষের সাথে তাকে দেখতে গেলাম। আমি যখন তার চেহারা ভালোভাবে দেখলাম, পরিষ্কার বুঝলাম তার চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। আমি সর্বপ্রথম তাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন:

হে লোকেরা, তোমরা সালামের প্রসার কর, খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ ও রাতে সালাত আদায় কর যখন মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৫১, ১৩৩৪; তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৮৫, ১৯৮৪

৩. রাতে সালাত আদায়কারীদের জন্য জান্নাতের উঁচু প্রাসাদসমূহ তৈরি করা হয়েছে

আবু মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

নিশ্চয় জান্নাতে কতক বালাখানা রয়েছে, যার বাহির ভেতর থেকে ও ভেতর বাহির থেকে দেখা যাবে। যা আল্লাহ তৈরি করেছেন তাদের জন্য যারা খাদ্য দান করে, বিনয়াবনত কথা বলে, সিয়ামের পর সিয়াম পালন করে, সালামের প্রসার করে এবং রাতে সালাত আদায় করে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে।

আহমদ: (৫/৩৪৩); ইবন হিব্বান হাদীস নং ৬৪১; তিরমিযী হাদীস নং ২৫২৭

৪. রাতে নিয়মিত সালাত আদায়কারী গণ আল্লাহর মুহসিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের হকদার

আল্লাহ তাআলা বলেন, রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত।

সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮

৫. আল্লাহ তাআলা নেককার ও রহমানের বান্দাদের প্রশংসার মধ্যে রাতে সালাত আদায়কারীদেরও প্রশংসা করেছেন

তিনি বলেছেন: আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে।

সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৪

৬. আল্লাহ তাআলা সাক্ষ্য দিয়েছেন রাতে সালাত আদায়কারী গণ পূর্ণ ইমানদার

তিনি বলেছেন: আমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহংকার করে না। তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।

সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৫-১৬

৭. যারা রাতে সালাত আদায় করে ও যারা করে না তারা উভয় সমান নয়

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে সে কি তার সমান যে এরূপ করে না বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।

সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯

৮. রাতের সালাত গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনকারী

আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমরা রাতের সালাত আঁকড়ে ধর, কারণ এটা তোমাদের পূর্বের নেককার লোকদের অভ্যাস এবং তোমাদের রবের নৈকট্য দানকারী, গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনকারী।

তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৯; হাকেম: (১/৩০৮); বায়হাকি: (২/৫০২)

৯. ফরয সালাতের পর রাতের সালাত সর্বোত্তম সালাত

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু হাদীসে এসেছে: রমযানের পর সর্বোত্তম সিয়াম মহররম মাসের সিয়াম এবং ফরয। সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত রাতের সালাত।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৩

১০. কিয়ামুল লাইল মুমিনদের সম্মান

সাহল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করলেন, অতঃপর বললেন:

হে মুহাম্মাদ যত দিন পার বেঁচে নেও, অতঃপর অবশ্যই তুমি মারা যাবে। যাকে ইচ্ছা মহব্বত কর, অবশ্যই তার থেকে তুমি বিচ্ছেদ হবে। যা ইচ্ছা আমল কর, তার প্রতিদান অবশ্যই তোমাকে দেওয়া হবে। অতঃপর বলেন, হে মুহাম্মাদ মুমিনের সম্মান হচ্ছে রাতের সালাত, আর তার ইজ্জত হচ্ছে মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতা।

হাকেম: (৪/৩২৫)

১১. রাতে সালাত আদায়কারী ঈর্ষার পাত্র

কারণ এর সাওয়াব অধিক। এ সালাত দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

দুজন ব্যতীত কোন ঈর্ষা নেই: এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআন দান করেছেন, সে কুরআন নিয়ে রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় কিয়াম করে। অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, সে তা রাত ও দিনের বিভিন্ন সময় খরচ করে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৫

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

দুজন ব্যতীত কোন ঈর্ষা নেই: এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, সে তা সত্য পথে খুব খরচ করে। অপর ব্যক্তি যাকে আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, সে তার মাধ্যমে ফয়সালা করে ও মানুষকে তা শিক্ষা দেয়।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮১৬

১২. রাতের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত করা বড় গণিমত ও সৌভাগ্যের বিষয়

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যে ব্যক্তি দশ আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে না। আর যে একশত আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে কানেতিনদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে। আর যে এক হাজার আয়াত দ্বারা কিয়াম করল, তাকে মুকানতিরিনদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হবে।

আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৮; সহীহ ইবন খুজাইমা: (২/১৮১), হাদিস নং (১১৪২)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে, যখন সে বাড়িতে যাবে সেখানে সে তিনটি মোটাতাজা গাভীন উট (তার মালিকানাধীন) দেখবে? আমরা বললাম: হ্যাঁ, তিনি বললেন: তােমাদের কারাে নিজ সালাতে তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা তিনটি মোটা তাজা উট হতে উত্তম।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮০২

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন খতমের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন; আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন খতম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি বলেন, চল্লিশ দিনে, অতঃপর বলেন, এক মাসে, অতঃপর বলেন, পনেরো দিনে, অতঃপর বলেন, দশ দিনে, অতঃপর বলেন, সাত দিনে তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে অধিক সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন: তিন দিনের কমে যে খতম করবে, সে কুরআন বুঝবে না।

আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯০

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

কিয়ামুল লাইলের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

রাতের সালাত দুই রাকাত, দুই রাকাত, যখন তােমাদের কেউ ভাের হওয়ার আশংকা করবে, সে এক রাকাত সালাত আদায় করবে, যা তার পূর্বের সালাতগুলো বেজোড় করে দিবে।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯

কিন্তু এগারো বা তেরাে রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকাই উত্তম, যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাকাত সংখ্যা ছিল অনুরূপ যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল এশা শেষ করে ফজর পর্যন্ত এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন, প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকাত দ্বারা বিতর আদায় করতেন।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৬

তার থেকে অপর হাদীসে এসেছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও গায়রে রমযানে এগারো রাকাতের অধিক পড়তেন না।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮

নফল নামাজ দুই রাকাত করে পড়া উত্তম। দিনে অথবা রাতে নফল নামায এক সালামে দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম, যদিও চার রাকাত, এমনকি আট রাকাতও এক সালামে পড়া যায়।

ইবনে উমর (রা) বলেন,

মহানবী (সাঃ) মিম্বারে অবস্থানকালে এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো, রাতের (নফল) নামায সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেনঃ দুই দুই রাকাত করে পড়বে। ভাের হয়ে যাওয়ার আশংকা করলে আরো এক রাকাত (বিতর) পড়বে। তা তার আদায়কৃত নামাযকে বেজোড় করে দেবে।

বুখারী, মুসলিম

রাকাত সংখ্যা বিবেচনায় সহিহ হাদিসে রাতের সালাত আদায়ের মোট ছয়টি পদ্ধতি পাওয়া যায়; তার যে কোনটিই অবলম্বন করা বৈধ। পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

প্রথম পদ্ধতি: ১৩ রাকাত

হালকাভাবে দু’রাকআত পড়ে এর সূচনা করবে। সর্বাগ্রগণ্য মত অনুযায়ী এ দুই রাকআত হল এশার ফরজ সালাত পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নাত অথবা ঐ নির্দিষ্ট দু’রাকাত ছালাত, যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) রাতের সালাত শুরু করতেন। যেমনটি গত হয়েছে। অতঃপর অত্যন্ত দীর্ঘ দু’রাকআত আদায় করবে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর পূর্বের চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর তদপেক্ষা কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দুই রাকাত পড়বে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়বে।

দ্বিতীয় পদ্ধতি : ১৩ রাকাত

তন্মধ্যে দুই দুই করে আট রাকাত পড়বো এবং প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। অতঃপর পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে। শুধুমাত্র পঞ্চম রাকাতে বসবে এবং সালাম ফিরাবে।

তৃতীয় পদ্ধতি : ১১ রাকাত

প্রত্যেক দুই রাকাতের মাঝখানে সালাম ফিরাবে এবং এক রাকাত বিতর পড়বে।

চতুর্থ পদ্ধতি : ১১ রাকাত

এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত এক সালামে অতঃপর পরের চার রাকাত আরেক সালামে পড়বে। অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই চার ও তিন রাকাতের দুই রাকাতের মাঝখানে কি বসতেন? এ ব্যাপারে আমরা কোন সন্তোষজনক জবাব পাই না। তবে তিন রাকাত বিতর সালাতে দুই রাকাত পর বসা শরীআত সম্মত নয়।

পঞ্চম পদ্ধতি : ১১ রাকাত

এর মধ্যে একটানা আট রাকাত আদায় করে ৮ম রাকাতে বসবে এবং তাশাহুদ ও নবী সঃ এর দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকআত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল নয় রাকাত। অতঃপর বসে দুই রাকাত আদায় করবে।

ষষ্ঠ পদ্ধতি : ৯ রাকাত

তার মধ্যে ছয় রাকাত একটানা পড়ে ষষ্ঠ রাকাতে বসবে অতঃপর তাশাহুদ ও নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পড়ে পূর্বের মতাে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল সাত রাকআত। অতঃপর বসে দুই রাকাত পড়বে।

এই পদ্ধতি গুলো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সুস্পষ্ট নছ বা দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত পদ্ধতিগুলোর উপর আরো অন্যান্য প্রকার এভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে যে, প্রত্যেক প্রকার থেকে ইচ্ছামতো রাকআত সংখ্যা কমিয়ে এক রাকাত বিতরে সীমাবদ্ধ করবে। রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীর প্রতি আমল করণার্থে। তিনি বলেন, যে চায় সে পাঁচ রাকাত বিতর পড়ুক, যে চায় সে তিন রাকাত বিতর পড়ুক এবং যে চায় সে এক রাকাত বিতর পড়ুক।

তাহাবী, হা/১৬০৩; হাকেম, হা/১১২৮; দারাকুতনী, হা/১৬৬০; বায়হাকী, হা/৪৭৭৬

এই পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর চাইলে এক বৈঠকে ও এক সালামে আদায় করবে। যেমনটি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর চাইলে প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। যেমনটি তৃতীয় ও অন্যান্য পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর এটাই সর্বোত্তম।

পক্ষান্তরে পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর সালাতের প্রত্যেক দুই রাকাত অন্তর বসা ও সালাম না ফিরানাের বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) থেকে আমরা প্রমাণিত পাইনি। তবে মূল বিষয়টি জায়েয। কিন্তু যখন নবী (ছাঃ) মাগরিবের ন্যায় তিন রাকাত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন এবং এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তোমরা বিতর সালাতকে মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য প্রদান করাে না।

তাহাবী, হা/১৭৩৮, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; দারাকুতনী, হা/১৬৬৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ।

যে ব্যক্তি তিন রাকাত বিতর পড়বে তাকে অবশ্যই এই সাদৃশ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এটা দুভাবে হতে পারে :

১. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে সালাম ফিরানো। এটাই অধিক শক্তিশালী ও সর্বোত্তম।

২. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে না বসা। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক ইবাদাতের জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না। তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই। যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

আলক্বামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আমি উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ১

জ্ঞাতব্য যে, তাহাজ্জুদের শুরুতেই কেউ যদি সমস্ত নামাজের একবার নিয়ত করে নেয়, তাহলে তাই যথেষ্ট। প্রত্যেক ২ রাকাতে নিয়ত করা জরুরী নয়। অবশ্য নামাজ পড়তে পড়তে কেউ কোন প্রয়োজনে তা ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে লাগলে নতুন নিয়তের দরকার। সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত করা জরুরী; কিন্তু পড়া বিদআত।

তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়

ফরয নামায ব্যতীত অন্যান্য (ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল) নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা আল-ফাতিহা পড়ার পর যে কোন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ পড়া ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক)। নফল নামাজের জন্য কোন সূরা নির্দিষ্ট নেই। কুরআন মজীদের যে স্থান থেকে পড়া নামাযী নিজের জন্য সহজ মনে করেন সেখান থেকে পড়বেন।

আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রাঃ বলেন,

তিনি একদা আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রমজানের রাতের সালাত কেমন ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান মাসে এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি (আবু সালামা) তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।

হুযাইফা রাঃ বলেন, একদা রাসূল সাঃ এক রাকাতে সূরা বাকারা, আল ইমরান ও নিসা ধীরে ধীরে পাঠ করেন।

মুসলিম ৭৭২, নাসাঈ ১০০৮, ১১৩২

তাড়াহুড়া না করে সুন্দরভাবে নামাজ পড়া

মহানবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাতের নামাজকে খুবই লম্বা করে পড়তেন; যেমন পূর্বে এ কথা আলোচিত হয়েছে। মহানবী সঃ এর রুকু ও সিজদাহ প্রায় তার কিয়ামের মতই দীর্ঘ হত; আর এত লম্বা সময় ধরে তিনি সিজদায় থাকতেন যে, সেই সময়ে প্রায় ৫০টি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে।

বুখারী ১১২৩

সুতরাং এ কথা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যে, আমরা আমাদের রাতের নামাযকে তাদের নামাজের কাছাকাছি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব; আমরাও কেরাত লম্বা করব, রুকু, সিজদা ও তার মাঝে কওমা ও বৈঠকে তাসবীহ ও দুআ অধিকাধিক পাঠ করব; যাতে আমাদের মনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও যেন বিনয়-নম্রতা অনুভূত হয়; যে বিনয়-নম্রতা হল নামাযের প্রাণ ও মস্তিষ্ক; আমাদের উচিত, এই নামাযের সুন্নতকে তার পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ (কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি) উভয় দিক থেকেই গ্রহণ করা; অতএব আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী নামাজের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য অবলম্বন করব; যেমন গ্রহণ করে থাকি রাকআত সংখ্যা। বলা বাহুল্য, বিনয়-নম্রতা, মনের উপস্থিতি ও ধীর-স্থিরতা ছাড়া কেবল রাকাত আদায়ের কর্তব্য পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।

পক্ষান্তরে নামাযে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া বৈধ নয়। তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যদি নামাযের কোন ওয়াজিব বা রুকন সঠিকরূপে আদায় না হয়, তাহলে তাে নামাযই বাতিল হয়ে যাবে।

নামাযে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ফরয ও অপরিহার্য; যে তা বর্জন করবে, তার নামায বাতিল গণ্য হবে; যেহেতু একদা মহানবী সঃ এক ব্যক্তিকে অধীর ও অস্থির হয়ে নামায পড়তে দেখে তাকে নামায ফিরিয়ে পড়তে আদেশ করলেন এবং শিক্ষা দিলেন যে, নামাজে রুকু, সিজদা, কওমা ও দুই সিজদার মাঝখানে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজিব।

বুঃ ৭৫৭, মুঃ ৩৯৭

মহানবী সঃ বলেন, সে নামাযীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকু ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।

আদাবুল মুফরাদ ৮৫৫

রাসুল সঃ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামাজ চুরি করে; লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সঃ নামায কিভাবে চুরি করবে? তিনি বললেন, পূর্ণরূপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।

ইবনে আবী শায়বা ২৯৬০, ত্বাবারানী ১২২৯

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ সেই বান্দার নামাজের প্রতি তাকিয়েই দেখেন না, যে রুকু ও সিজদায় তার মেরুদন্ড সোজা করে না।

ইআশাঃ ২৯৫৭, ইমাঃ আঃ, সিসঃ ২৫৩৬ নং

তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন পড়তে হয়

তাহাজ্জুদ নামাজ কখনাে ত্যাগ না করে প্রতিদিন বা নিয়মিত আদায় করা উত্তম। নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নিয়মিত পড়া মুস্তাহাব; যদি শরীর চাঙ্গা ও মন প্রফুল্ল থাকে, তাহলে দীর্ঘ কিরাত করবে, অন্যথায় হালকা কিরাতে সালাত আদায় করবে, আর কখনো ছুটে গেলে কাযা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমরা সে পরিমাণ আমল কর, যার সাধ্য তােমাদের রয়েছে, কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও। তিনি বলতেন: আল্লাহর নিকট সেই আমলই অধিক পছন্দনীয়, বান্দা যার ওপর নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখে, যদিও তার পরিমাণ কম হয়।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২

আব্দুল্লাহ ইবন আমর আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:

হে আব্দুল্লাহ তুমি অমুকের মতো হয়াে না, সে রাতে কিয়াম করত, কিন্তু সে তা ত্যাগ করেছে।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১১৯

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সালাত আদায় করতেন, তা তিনি নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন। যদি তার ওপর ঘুম প্রবল হত অথবা দাঁড়াতে কষ্ট হত, তাহলে তিনি দিনে বারো রাকাত সালাত আদায় করতেন।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬

উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যে ব্যক্তি তার অজিফা থেকে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা তার কতক অবশিষ্ট রইল, সে যদি তা ফজর ও যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য লেখা হবে যেন সে তা রাতেই পড়েছে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৭

তাহাজ্জুদ নামাজ কি অন্ধকারে পড়তে হয়

রাতের সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য হলো বেশি বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা; তাই সালাতে একাগ্রতা ও নম্রতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি; বেশি আলোতে তাহাজ্জুদ পড়লে যদি একাগ্রতায় বিঘ্নতা ঘটে তবে হালকা আলোতে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম সময় রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। রাতের সালাত রাতের শুরু, শেষ ও মধ্যখানে আদায় করা বৈধ, তবে উত্তম হচ্ছে শেষ তৃতীয়াংশ। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মাসে পানাহার করতেন, এক সময় আমরা মনে করতাম তিনি এ মাসে সিয়াম পালন করবেন না। আবার কোন মাসে সিয়াম পালন করতেন, এক সময় আমরা মনে করতাম এ মাসে তিনি পানাহার করবেন না। তিনি এমন ছিলেন, যদি তুমি তাকে রাতে সালাত আদায়কারী দেখতে চাও দেখতে পাবে, আর যদি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে চাও, তাও দেখতে পাবে।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪১

এ থেকে রাতের সালাতের সহজ নিয়ম বুঝে আসে, যার যখন সুবিধা উঠে সালাত আদায় করবে; হ্যাঁ রাতের শেষ অংশে সালাত আদায় করা উত্তম। আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:

রাতের শেষ ভাগে বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, যদি তুমি সে সময়ে আল্লাহর যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার, তাহলে তাদের অন্তর্ভুক্ত হও।

তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৭৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৭৭

এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি। ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

আমাদের রব প্রতি রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, কে আমাকে আহ্বান করবে, আমি যার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার নিকট প্রার্থনা করবে, আমি যাকে প্রদান করব? কে আমার নিকট ইস্তেগফার করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব? ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ বলতে থাকেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৫৮

তাহাজ্জুদ নামাজের আদব

১. ঘুমের সময় কিয়ামুল লাইল এর নিয়ত করা

আর ঘুমের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ ইবাদাতে শক্তি অর্জন করা, তাহলে ঘুমেও সওয়াব হবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার রাতে সালাত আদায়ের অভ্যাস ছিল, অতঃপর তার ওপর ঘুম প্রবল হল, আল্লাহ তার জন্য অবশ্যই সালাতের সওয়াব লিখবেন, আর তার ঘুম হবে তার জন্য সদকা।

নাসাঈ, হাদীস নং ১৭৮৪; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩১৪

আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যে ব্যক্তি তার বিছানায় আসল, যার নিয়ত ছিল রাতে উঠে সালাত আদায় করা, কিন্তু তার ওপর ঘুম প্রবল হল, অতঃপর ভাের করল, তার নিয়ত অনুযায়ী তার জন্য লেখা হবে। আর তার ঘুম হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য সদকা স্বরূপ।

নাসাঈ, হাদীস নং ৬৮৭

২. জাগ্রত হয়ে হাত মলে চেহারা থেকে ঘুম দূর করা, আল্লাহর যিকির করা ও মিসওয়াক করা, এবং দোয়া পাঠ করা

উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে বলল: হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, তার দুআ কবুল করা হবে।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫৪

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে হাত দ্বারা চেহারা থেকে ঘুম মুছতে ছিলেন, অতঃপর সূরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮২-৭৬৩

হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন ঘুম থেকে উঠতেন, মিসওয়াক দ্বারা তার মুখ দাঁতন করতেন।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪

অতঃপর জাগ্রত হওয়ার অন্যান্য যিকির পড়া এবং আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক অযু করা।

৩. হালকা দুরাকাত সালাত দ্বারা তাহাজ্জুদ আরম্ভ করা

কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কর্ম দ্বারা অনুরূপ প্রমাণিত হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাত আদায়ের জন্য উঠতেন, তিনি হালকা দুই রাকাত সালাত দ্বারা তার সালাত আরম্ভ করতেন।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৭

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যখন তােমাদের কেউ রাতে সালাতের জন্য উঠে, সে যেন তার সালাত হালকা দু’রাকাত দ্বারা আরম্ভ করে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮

৪. ঘরে তাহাজ্জুদ আদায় করা

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। যায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমরা ঘরে সালাত আদায় কর, কারণ ব্যক্তির উত্তম সালাত হচ্ছে তার ঘরে ফরয ব্যতীত।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮১

৫. নিয়মিত কিয়ামুল লাইল আদায় করা

কখনাে ত্যাগ না করা। নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নিয়মিত পড়া মুস্তাহাব যদি শরীর চাঙ্গা ও মন প্রফুল্ল থাকে, তাহলে দীর্ঘ কিরাত করবে, অন্যথায় হালকা কিরাতে সালাত আদায় করবে, আর কখনো ছুটে গেলে কাযা করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমরা সে পরিমাণ আমল কর, যার সাধ্য তােমাদের রয়েছে, কারণ আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও। তিনি বলতেন: আল্লাহর নিকট সেই আমলই অধিক পছন্দনীয়, বান্দা যার ওপর নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখে, যদিও তার পরিমাণ কম হয়।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮২

৬. যদি তন্দ্রা চলে আসে, তাহলে সালাত ত্যাগ করে ঘুমানো

এটা উত্তম, যেন ঘুম পূর্ণ হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যখন তোমাদের কেউ সালাতে ঝিমায়, তার উচিৎ শুয়ে পড়া, যেন তার থেকে ঘুম চলে যায়। কারণ, ঘুমানো অবস্থায় যখন তােমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন হয়তো সে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে গিয়ে নিজেকে গালি দেবে।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৬

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মারফু’ সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন:

যখন তােমাদের কেউ রাতে দন্ডায়মান হয়, অতঃপর তার জন্য যদি কুরআন পড়া কষ্টকর হয়, কী বলে বলতে পারে না, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৮৭

৭. রাতের সালাতের জন্য স্ত্রীকে জাগ্রত করা মুস্তাহাব

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

আল্লাহ সে ব্যক্তিকে রহম করুন, সে রাতে উঠে সালাত আদায় করল, অতঃপর তার স্ত্রীকে জাগ্রত করল; যদি সে উঠতে না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল; আল্লাহ সে নারীর ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে সালাত আদায় করল, অতঃপর তার স্বামীকে জাগ্রত করল, যদি সে উঠতে না চায় তার চেহারায় পানির ছিটা দিল।

নাসাঈ, হাদীস নং ১৬১০; ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৬

আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

যখন ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে ও তার স্ত্রীকে জাগ্রত করে, অতঃপর উভয়ে সালাত আদায় করে, তাদেরকে অধিক যিকরকারী নারী ও অধিক যিকরকারী পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত লেখা হয়।

ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩৩৫; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩০৯

নবী পত্নী উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে ঘাবড়ে ওঠেন, অতঃপর তিনি বলেন,

সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ কত খাজানা নাযিল করেছেন? কত ফিতনা নাযিল করা হয়েছে? হে ইউসুফের সাথীগণ (তার স্ত্রীগণ উদ্দেশ্য) তোমরা সালাত আদায়ের জন্য জাগ্রত হও। দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিতা আখিরাতে নগ্ন থাকবে। অপর বর্ণনায় এসেছে: আজ রাতে কী নাযিল করা হয়েছে?

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৫, ১১২৬, ২৬১৮, ৭০৭৯

৮. মনোযোগ ও বুঝে বুঝে যে পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করা যায়, তাহাজ্জুদে সে পরিমাণ পাঠ করা

এক পারা বা তার চেয়ে অধিক বা তার চেয়ে কম উচ্চ-অনুচ্চ যেভাবে ইচ্ছা পড়ার অনুমতি রয়েছে; হ্যাঁ যদি উচ্চ স্বরে তিলাওয়াত করলে পড়াতে প্রাণ আসে অথবা উপস্থিত লোকেরা শ্রবণ করতে পারে, অথবা অন্য কোনো ফায়দা রয়েছে, তাহলে উচ্চ স্বরে পড়া উত্তম। আর যদি নিকটে কেউ তাহাজ্জুদ পড়ে, অথবা তার উচ্চ স্বরের কারণে কারাে কষ্ট হয়, তাহলে আস্তে পড়া উত্তম। আর যদি অগ্রাধিকারের কোনো কারণ না থাকে, তাহলে যেভাবে ইচ্ছা পড়বে।

উপরে বর্ণিত সব অবস্থা সম্পর্কে হাদীস রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোন এক রাতে সালাত আদায় করেছি, তিনি এত লম্বা করলেন যে আমি খারাপ ইচ্ছা করে ছিলাম, বলা হল: কি ইচ্ছা করে ছিলেন? তিনি বললেন: আমি ইচ্ছা করে ছিলাম তাকে ত্যাগ করে আমি বসে যাব।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭৩

তিন রাকাত বিতরের কেরাত

তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।

নাসাঈ, হা/১৭২৯-৩১, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৪৭; হাকেম, হা/১১৪৪ ‘বিতর’ অধ্যায়। হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

কখনো কখনো এর সাথে সুরা ফালাক ও নাস পড়বে।

তিরমিযী, হা/৪৬৩, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, ‘বিতরের কিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৯; হাকেম, হা/১১৪৪। হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার বিতরের এক রাকাতে সূরা নিসার একশত আয়াত পড়েছিলেন।

নাসাঈ, হা/১৭২৮, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, বিতরের ক্বিরাআত অনুচ্ছেদ-৪৬; আহমাদ, হা/১৯৭৭৫, সনদ ছহীহ।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া

তাহাজ্জুদের শুরুতে পাঠের দোয়া

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাহাজ্জুদের সালাতে দাঁড়াতেন, তখন বলতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ، وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ ـ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা। লা ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ : হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্য, আপনি রক্ষক আসমান ও যমীনের এবং যা কিছু এগুলোর মধ্যে আছে, আপনিই তাদের নূর; আর যাবতীয় প্রশংসা শুধু আপনারই; আসমান যমীন এবং এ দু’এর মধ্যে যা আছে, এসব কিছুকে সুদৃঢ় ও কায়িম রাখার একমাত্র মালিক আপনিই; আর সমূহ প্রশংসা একমাত্র আপনারই; আপনিই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আখিরাতে আপনার সাক্ষাৎ লাভ করা সত্য, বেহেশ্‌ত সত্য, দোযখ সত্য, ক্বিয়ামাত সত্য, পয়গম্বরগণ সত্য এবং মুহাম্মাদ সত্য; হে আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পণ করেছি; আমি একমাত্র আপনারই উপর ভরসা রাখি। একমাত্র আপনারই উপর ঈমান এনেছি। আপনারই দিকে ফিরে চলছি। শত্রুদের সঙ্গে আপনারই সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা করি। আপনারই নিকট বিচার চাই। অতএব আমার আগের পরের এবং লুক্কায়িত প্রকাশ্য গুনাহসমূহ আপনি ক্ষমা করে দিন। আপনি কোন ব্যক্তিকে অগ্রসরমান করেন, আর কোন ব্যক্তিকে পশ্চাদপদ করেন, আপনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন মাবূদ নেই।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ৬৩১৭

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মাইমূনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটান; তিনি ছিলেন ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর খালা; ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমি বিছানায় প্রশস্ত দিকে শুলাম এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- ও তাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শুলেন; আর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তাঁর কিছু পূর্বে কিংবা কিছু পরে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। অতঃপর সূরা আল-‘ইমরানের শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক হতে সুন্দরভাবে উযূ করলেন।

অতঃপর সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে তিনি যেরূপ করেছেন তদ্রুপ করলাম; তারপর গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম; তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু নাড়া দিয়ে ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন; অতঃপর তিনি দু’রাক’আত সালাত আদায় করলেন; তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর দু’রাক’আত, তারপর বিতর আদায় করলেন; তারপর শুয়ে পড়লেন; কিছুক্ষণ পর তাঁর নিকট মুয়ায্‌যিন এলে তিনি দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে দু’রাক’আত সালাত আদায় করলেন; তারপর বেরিয়ে গিয়ে ফাজরের সালাত আদায় করলেন।

সহিহ বুখারী হাদিস নং ১৮৩

বিতরের দোয়া কুনূত ও তা পাঠের স্থান

শেষ রাকাতে কেরাত শেষ করে রুকুর পূর্বে কখনো কখনাে ঐ দুআর মাধ্যমে কুনুত পড়বে, যেটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাতি হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। দু’আটি হলঃ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া আ-ফিনী ফীমান ‘আ ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিকলী ফীমা ‘আত্বায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা ক্বাযায়তা; ফাইন্নাকা তাকৃযী ওয়া লা ইয়ুকৃযা ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিলু মাঁও ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়াইযঝ মান ‘আ-দায়তা, তাবা-রকতা রব্বানা ওয়া তাআ-লায়তা।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি ক্ষমা করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে ক্ষমা করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়সালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হতে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হতে পারে না। আর তুমি যার সাথে শত্রুতা পোষণ কর, সে কোনদিন সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ।

আবু দাউদ, হা/১৪২৫, ছালাত অধ্যায়-২, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০; তিরমিযী, হা/৪৬৪, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১০; নাসাঈ, হা/১৭৪৫, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, ‘বিতরের দু’আ অনুচ্ছেদ-৫১।

কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে।

রুকুর পরে কুনুত পড়া এবং রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কুনুত এর দোয়ার সাথে কাফেরদের প্রতি লানত (অভিসম্পাত), রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ এবং মুসলমানদের জন্য দু’আ বৃদ্ধি করাতে কোন সমস্যা নেই। উমার (রাঃ)-এর যুগে এরূপ করা ইমামগণ থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আব্দুর রহমান বিন আব্দুল কারী বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে এসেছে। তারা রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কাফেরদেরকে লানত করতাে এ দোয়া বলেঃ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা কৃাতিলিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা, ওয়া ইয়ুকাযিবৃনা রুসুলাকা, ওয়ালা ইয়ুমিনূনা বিওয়াদিকা ওয়া খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম, ওয়া আলকি ফী কুবিহিমুর রুবা, ওয়া আলকি আলাইহিম রিজযাকা ওয়া আযাবাকা ইলাহাল হাক।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদেরকে ধ্বংস করুন। যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন, তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করুন এবং হে সত্যের উপাস্য! তাদের প্রতি আপনার শাস্তিকে অবধারিত করে দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতেন এবং সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করতেন। অতঃপর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

বর্ণনাকারী বলেন, কাফেরদের প্রতি লা’নত, নবী (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজের জন্য চাওয়ার পর তিনি (উবাই বিন কাব) বলতেনঃ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইয়্যা-কা না’বুদু, ওয়ালাকা নুছল্লী ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রহমাতাকা রব্বানা, ওয়া নাখা-ফু ‘আযা-বাকাল জিদ্দা, ইন্না ‘আযা-বাকা লিমান ‘আদায়তা মুলহাক।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, আপনার জন্যই ছালাত আদায় করি ও সিজদাহ করি। আমরা আপনার নিকটে ফিরে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি। হে আমাদের প্রভু! আমরা আপনার রহমত কামনা করি এবং আপনার কঠিন শাস্তি কে ভয় করি। আপনার সাথে যে শত্রুতা পোষণ করেছে, আপনার আযাব তার প্রতি অর্পিত হৌক। অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় চলে যেতেন।

সহীহ ইবনে খুযায়মা, ২/১৫৫-১৫৬, হা/১১০০।

বিতর নামাজ শেষে পঠিতব্য দোয়া

বিতরের শেষে (সালামের পূর্বে বা পরে) এই দুআটি পড়া সুন্নাতঃ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা বিরিকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমুআফাতিকা মিন উক্বাতিকা, ওয়া আ’ঊযু বিকা মিন কা, লা উহছী ছানাআন আলাইকা, আনতা কামা আছনায়তা আলা নাফসিকা।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ থেকে এবং আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি; আমি আপনার মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার প্রশংসাকে গণনা করতে পারব না; আপনি আপনার যেভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনটিই আপনার জন্য প্রযোজ্য।

আবু দাউদ, হা/১৪২৭, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;

বিতরের সালাম ফিরানোর পর তিনবার স্বরবে বলবে ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ এবং তৃতীয়বার দীর্ঘ টানে বলবে।

আবু দাউদ, হা/১৪৩০, ‘বিতরের পরের দুআ অনুচ্ছেদ-৩৪১; নাসাঈ, হা/১৬৯৯,১৭০১, অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৩৭, হাদীছ ছহীহ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

নামাজের নিয়মে পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, শুধুমাত্র জামাতের ক্ষেত্রে মহিলা যদি ইমাম হয় তবে পুরুষদের মতো সামনে এগিয়ে দাড়াবে না বরং একই কাতারে দাড়াবে। উল্লেখ্য যে মহিলার ইমামতিতে পুরুষ নামাজ পড়তে পারবে না।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Post