Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ. Ayatul Kursi Bangla

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ. Ayatul Kursi Bangla

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আয়াতুল কুরসি আরবি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ এবং আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস।

আয়াতুল কুরসি আরবি

اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি। ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিইয়্যুল আ’জিম।

আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ

আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।

(সূরা আল-বাক্বারা আয়াত – ২৫৫)।

আয়াতুল কুরসির ফজিলত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে আয়াতুল কুরসী পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। আয়াতুল কুরসীর মাহাত্মের কারণে হাদীসে তা বেশি বেশি পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে, প্রতিদিন পঠিতব্য দো’আর মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে, যার প্রতি মুসলিম ব্যক্তি যত্নবান হবে এবং দিনে বারবার পড়বে।

১. প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসি পাঠকারী পরবর্তী নামায পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার যিম্মায় থাকে।

ইমাম তাবারানী, হাসান বিন আলী হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসূল (স) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, সে পরবর্তী নামায পর্যন্ত আল্লাহর যিম্মায় থাকবে। কতইনা নির্ভরযােগ্য ও শক্তিশালী এ যিম্মাদারী! অবশ্যই তা হলাে মহান শক্তিধর সকল সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা, মহাবিশ্বের মালিক ও সকল কিছুর পরিচালক আল্লাহর যিম্মা। আর এ যিম্মা হলাে এমন সেই আল্লাহর যিম্মা, যা ধারণ করলে কেউ অপমানিত হয় না এবং শত্রুতা করলে সম্মানিত হয় না। এ হলাে এমন আল্লাহর যিম্মা, যিনি কাউকে সাহায্য করলে কেউ তার উপর বিজয়ী হতে পারে না, আর তিনি যাকে অপমানিত করবেন, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না।

অতএব, যারা এ যিম্মা পেতে আগ্রহী, তারা যেন প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠে সদা আগ্রহী হয়।

ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠকারী ও জান্নাতের মাঝের ব্যবধান শুধুই মৃত্যু

ইমাম নাসায়ী, ইমাম ইবনে হিব্বান ও ত্বাবারানী, আবু উমামা হতে হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের বাধা শুধুই মৃত্যু।

কিতাবুস সুনান আল-কুবরা অধ্যায়, দিবা-রাত্রির আমল অধ্যায়, প্রত্যেক নামাযান্তে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর সওয়াব, হাদীস নং ৯৯২৮/১, ৬/৩০।

ইমাম নাসাঈ আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (স) বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনাে কিছু বাধা হবে না।

আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা, হাদীস নং ১০০; সহীহ আলজামে গ্রন্থে শাইখ আলবানী সহীহ বলেন। হাদীস নং ৬৪৬৪

ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “আমাদের শাইখ আবুল আব্বাস ইবন তাইমিয়াহ (কাদ্দাসাল্লাহু রূহাহু) থেকে জানা গেছে, তিনি বলেন, প্রতি সালাত শেষে আমি তা পাঠ করা ছাড়িনি।

যাদুল মাআদ ১/৩০৪

২. ঘুমাবার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

যে ব্যক্তি বিছানায় আশ্রয় নেওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য এক রক্ষক নির্ধারণ করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার নিকটে আসবে না।

সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানের যাকাতের মাল হিফাযতে নিযুক্ত করেন। রাতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি আসে এবং হাত ভরে ভরে যাকাতের খাদ্য দ্রব্য চুরি করে। আমি তাকে গ্রেফতার করি এবং বলি: আল্লাহর কসম! তােমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পেশ করবাে। সে বলে: আমি দরিদ্র আমার সন্তান-সন্ততি আছে। আমি খুব অভাবী। দুঃখ শুনে আমি তাকে ছেড়ে দেই।

সকাল হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন, আবু হুরায়রা! গত রাতে তােমার বন্দী কী করেছিল? আমি উত্তরে বলি: হে আল্লাহর রাসূল! সে আমার কাছে দুঃখ-দুর্দশার কথা বলে, ছেলে পেলের কথা বলে। আমার মায়া চলে আসে, আমি তাকে ছেড়ে দেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। আমার বিশ্বাস হয়ে যায় যে, সে অবশ্যই আসবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় আসার কথা বললেন। আমি তাক লাগিয়ে থাকি। রাতে আবার হাত ভরে ভরে যাকাতের খাদ্য চুরি করে। আমি তাকে গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পেশ করতে চাইলে সে বলে: ছেড়ে দাও ভাই! আমি দুঃখি মানুষ, বাড়িতে আমার সন্তান-সন্ততি আছে, আমি আর আসব না। কথা শুনে তার প্রতি আমার রহম হয়। আমি ছেড়ে দেই।

সকালে আল্লাহর রাসূল বলেন, আবূ হুরায়রাহ তােমার কয়দীর খবর কী? আমি উত্তরে বলি: হে আল্লাহর রাসূল! সে তার দুঃখের কথা বলে, ছােট ছােট বাচ্চার কথা বলে, শুনে আমার রহম চলে আসে, আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তােমাকে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে।

সাহাবী বলেন,

আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় থাকি! আবার চুরি! পাকড়াও করে বলি, এবার অবশ্যই রাসূলুল্লাহ’র নিকট পেশ করব! এটা শেষবার, তৃতীয়বার! তুমি বলাে: আর আসবে না, কিন্তু আবার আস! সে বলে আমাকে ছেড়ে দাও! বিনিময়ে তােমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দিব! আল্লাহ তা দ্বারা তােমার উপকার করবেন! আমি বলি সেগুলাে কী? সে বলে: যখন তুমি বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে! (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ূম…) শেষ আয়াত পর্যন্ত। এ রকম করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বক্ষণের জন্য এক রক্ষক নির্ধারণ করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তােমার নিকটে আসবে না। এরপর আমি তাকে ছেড়ে দেই।

সকালে আল্লাহর রাসূল আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন: গত রাতে তােমার বন্দী কী করেছে? আমি বলি: সে আমাকে এমন কিছু কথা শিক্ষা দিতে চায় যার দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবে। আমি তাকে ছেড়ে দেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই কথাগুলাে কী? আমি বলি: সে আমাকে বলে: ঘুমানাের উদ্দেশ্যে যখন বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বে (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ আল হাইয়ুল কাইয়ুম…) সে বলে: এরকম করলে, তােমার হিফাযতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বক্ষণের জন্য এক রক্ষক নির্ধারণ করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তােমার নিকটবর্তী হবে না।

(বর্ণনাকারী বলেন, সাহাবায়ে কেরাম কল্যাণের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন) সবকিছু শুনার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে আসলে মিথুক কিন্তু তােমাকে সত্য বলেছে। আবু হুরায়রা! তুমি কি জান, তিন দিন ধরে তুমি কার সাথে কথােপকথন করছিলে? সে বলে: না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে ছিল শয়তান।

সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩১১।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা এ হাদীসের টীকায় বলেন: কোন ব্যক্তি যদি এ আয়াতের উপর বিশ্বাস রেখে সততার সাথে, শয়তানী কাজের সময় পাঠ করে, তবে তা বাঞ্চাল হয়ে যাবে, যেমন শয়তানকে ব্যবহার করে আগুনে প্রবেশ, অথবা শীস দেয়া ও করতালীর মাধ্যমে। শয়তানকে হাজির করে এবং শয়তানের ভাষায় কথা বলে যার অর্থ বুঝা যায় না অথবা শব্দগুলােও বুঝা যায় না। আল্লামা আইনী এ হাদীসের টীকায় বলেন : এতে আয়াতুল কুরসীর ফযীলত প্রতীয়মান হয়।

উমদাতুল কারী ১২/১৪৮, আরাে দেখুন ফাতহুল বারী ৪/৪৮৯।

৩. সকাল সন্ধায় আয়াতুল কুরসি পাঠ করা

যে ব্যক্তি সন্ধায় আয়াতুল কুরসি পড়বে, সকাল পর্যন্ত শয়তান থেকে পরিত্রাণ পাবে! আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধা পর্যন্ত শয়তান থেকে নিরাপদে থাকবে।

উবাই ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল! ক্রমশ খেজুর কমতে থাকত! এক রাতে সে পাহারা দেয়! হঠাৎ যুবকের মতাে যেন এক জন্তু! তিনি তাকে সালাম দেন! সে সালামের উত্তর দেয়! তিনি বলেন, তুমি কী? জিন্ন নাকি মানুষ? সে বলে: জিন্ন! উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তােমার হাত দেখি! সে তার হাত দেয়! তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মতাে আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মতাে! তিনি বলেন, এটা জিন্নের সুরত! সে (জন্তু) বলে: জিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী! তিনি বলেন, তােমার আসার কারণ কী? তখন সে বলে: আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি।

সাহাবী বলেন, তােমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? সে বলে: সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়ুল কাইয়ূম)! যে ব্যক্তি সন্ধায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে! আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে! সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খবীস সত্য বলেছে।

হাদীসটি নাসাঈ এবং ত্বাবারানী বর্ণনা করেছেন। শাইখ আলবানী সহীহুত তারগীবে সহীহ বলেন, ১/৪১৮।

এটি এবং এর পূর্বে বর্ণিত হাদিসটি বান্দার রক্ষার বাপারে এ আয়াতের ক্ষমতা, কোনাে স্থান থেকে শয়তান বিতাড়িত করা এবং শয়তানের ষড়যন্ত্র ও অনিষ্টতা থেকে নিরাপদে থাকার প্রমাণ। আর যদি তা শয়তানী অবস্থানস্থলে পড়া হয় তাহলে তা বাতিল করে দেয়, যেমনটি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর বইসমূহের বিভিন্ন স্থানে প্রমাণ করেছেন। তিনি ‘আল ফুরকান নামক বইয়ে বলেন, “সত্যতার সাথে যদি তুমি আয়াতুল কুরসী সে সময় পড় তাহলে তাদের কর্মকাণ্ড বাতিল হয়ে যায়, কারণ তাওহীদ শয়তানকে তাড়ায়।

আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়াইর রাহমান ওয়া আউলিয়াইশ শায়ত্বান, পৃ. ১৪৬।

তিনি আরাে বলেন, মানুষ যদি শয়তানী চক্রান্তাস্থানে সত্যতার সাথে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তাহলে তা (যাদুমন্ত্র) নষ্ট করে দেয়।

আল-ফুরকান ১৪০।

তিনি ‘কায়েদাহ জালীলাহ ফিত তাওয়াসসুল ওয়াল ওসীলা’ নামক গ্রন্থে আরাে বলেন, “আয়াতুল কুরসী সত্যতার সাথে পড়তে হবে, পড়লে এটি অদৃশ্য হয়ে যাবে নচেৎ যমীনের ভিতরে ঢুকে যাবে অথবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

কায়েদাহ জালীলাহ, পৃ. ২৮।

তিনি আরাে বলেন, “ঈমানদার এবং মুওয়াহহীদ ব্যক্তিদের ওপর শয়তানের কোনাে প্রভাব নেই, সে কারণে তারা সেই ঘর থেকে পালায় যে ঘরে সূরা বাকারাহ পড়া হয়! অনুরূপ আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষাংশ এবং অন্যান্য কুরআনের ভীতি মুক্তকারী আয়াত পড়লেও পালায়! জিন্নদের মধ্যে কিছু জিন্ন এমন আছে যারা জ্যোতিষীদের এবং অন্যদের ভবিষ্যদ্বাণী করে, তারা সেটাই শােনায় যা তারা আকাশ থেকে (ফিরিশতাদের আলােচনার অংশ) চুরি করে শুনে নিয়েছিল! আরব ভূমিতে জ্যোতিষীর বহুল প্রচলন ছিল! তারপর যখন তাওহীদ প্রচার হয়, শয়তান পলায়ন করে! শয়তানী দুর হয় কিংবা হ্রাস পায়! এরপর এটি সেসব স্থানে প্রকাশ পায় যেখানে তাওহীদের প্রভাব ক্ষীণ।

আন-নাবুওয়াত ১/২৮০।

তিনি আরাে বলেন, “এই সমস্ত শয়তানী চক্রান্ত বানচাল হয় বা দুর্বল হয় যখন, আল্লাহ এবং তাঁর তাওহীদের স্মরণ করা হয় এবং করাঘাতকারী কুরআনের আয়াত পাঠ করা হয়, বিশেষ করে আয়াতুল কুরসী। কারণ, তা সমস্ত অস্বাভাবিক শয়তানী যড়যন্ত্র বানচাল করে দেয়।

নাবুওয়াত, ১/২৮৩।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দ্বারা আয়াতুল কুরসী বেশি বেশি পড়তে উদ্বুদ্ধকরণ, মুসলিম ব্যক্তির জন্যে তা এবং তাতে উল্লিখিত তাওহীদ এবং মাহাত্মের অতি প্রয়ােজনীয়তা প্রমাণ করে। যার সামনে কোনাে বাতিল টিকে থাকতে পারে না, বরং তা বাতিলের স্তম্ভ ধ্বংস করে দেয়, বুনিয়াদ নড়বড়ে করে দেয়, ঐক্য বিচ্ছিন্ন করে দেয়, মূলােৎপাটন করে দেয় এবং তার আসল ও আলামত মুছে দেয়।

পূর্বোল্লিখিত দলীলসমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে, দিন-রাতে এই আয়াতটি আটবার পড়া মুস্তাহাব! সকাল সন্ধায় দুইবার! ঘুমাবার সময় একবার! ফরয সালাত শেষে পাঁচবার! মুসলিম ব্যক্তি যখন এটি বারবার পড়তে সক্ষম হবে, অর্থ ও চাহিদার দিক সামনে রেখে এবং পরিণাম ও উদ্দেশ্যের চিন্তার সাথে, তখন তার অন্তরে তাওহীদের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি পাবে, তার মনে তাওহীদের বন্ধন দৃঢ় হবে, হৃদয়ে তাওহীদের অঙ্গিকার শক্ত হবে! এভাবে সে হয়ে যাবে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়ে ধারণকারী যা কখনও ছিন্ন হওয়ার নয়! যেমন আয়াতুল কুরসীর পরের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

৪. আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে ইসমে আজম

আল্লাহ তায়ালার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, আর আমাদেরকে সে নামগুলাের মাধ্যমে তাঁকে ডাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে! সেই বরকতময় নামগুলাের মাঝে রয়েছে ইসমে আজম! যে নামের মাধ্যমে (অসীলায়) চাইলে দেয়া হয়, এবং তার মাধ্যমে প্রার্থনা করলে কবুল করা হয়! এ সম্পর্কে মহা সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত নবী (স) সংবাদ দিয়েছেন নিশ্চয়ই ইসমে আজম কুরআনের কতিপয় আয়াতে রয়েছে! আয়াতুল কুরসী সেই আয়াতগুলাের অন্তর্ভুক্ত।

এ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ, আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রা) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন সত্যিকার মা’বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরপরিচালক। (সূরা বাকারা ২৫৫)” এবং “আলিফ, লাম, মীম, আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্যিকার মা’বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরপরিচালক। (সূরা আলে ইমরান ১-২)” এ আয়াত দুটিতে ইসমে আজম রয়েছে।

ইমাম হাকেম, আল-কাসেম বিন আব্দুর রহমান হতে, তিনি আবু উমামা (রাঃ) হতে, তিনি নবী (স) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন; ইসমে আজম তিনটি সূরাতে রয়েছে; সূরা বাক্বারায়, সূরা আল ইমরানে ও সূরা ত্বহায়।

সহীহ হাদীস সিরিজ : ২/৩৮৩

উপরে উল্লেখিত হাদীসগুলি হতে নিম্নের বিষয়গুলাে জানা যায়

প্রথম: বিছানায় শয়ন করার সময় আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে রক্ষক নিযুক্ত থাকেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার নিকটবর্তী হবে না। এ বিষয়টি প্রথম হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

দ্বিতীয়: কোন গৃহে আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে, তা হতে অনিষ্টকারী জ্বীন ও এ জাতীয় সকল কিছু দূর হয়! এ বিষয় দ্বিতীয় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

তৃতীয়: সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠকারী সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বীন হতে নিরাপদে থাকে, আর সন্ধ্যায় পাঠকারী সকাল পর্যন্ত তাদের হতে নিরাপদে থাকে! এ বিষয়টি তৃতীয় হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

কেউ যদি চায় যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে তার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকুক! এবং শয়তান তার নিকট হতে দূরে অবস্থান করুক! এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের অনিষ্ট হতে তাকে নিরাপদে রাখুক এবং তারা যেন তাকে কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে না পারে! সে যেন অবশ্যই সকালসন্ধায় আয়াতুল কুরসী পাঠ করে।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Post