সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪. Sehri o Iftarer Somoy Suchi 2024

সেহরি-ও-ইফতারের-সময়সূচি-২০২৪.-Sehri-o-Iftarer-Somoy-Suchi-2024

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪; সেহরি খাওয়ার সময় হল অর্ধরাত্রির পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত। আর মুস্তাহাব হল, ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না হলে শেষ সময়ে সেহরি খাওয়া।

সেহরির সময়

আনাস রাঃ বলেন, যায়েদ বিন সাবেত তাকে জানিয়েছেন যে, তারা নবী সঃ এর সাথে সেহরি খেয়ে (ফজরের) নামাজ পড়তে উঠে গেছেন। আনাস রাঃ বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সেহরী খাওয়া ও আযান হওয়ার মধ্যে কতটুকু সময় ছিল? উত্তরে যায়দ বললেন, পঞ্চাশ অথবা ষাটটি আয়াত পড়তে যতটুকু সময় লাগে।

বুঃ ৫৭৫, ১৯২১, মুঃ ১০৯৭

এখানে আয়াত বলতে মধ্যম ধরনের আয়াত গণ্য হবে। আর এই শ্রেণীর ৫০/৬০ টি আয়াত পড়তে মোটামুটি ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে। অতএব সুন্নত হল, আযানের ১৫/২০ মিনিট আগে সেহরি খাওয়া।

মহানবী সঃ এর সাহাবীগণ খুব তাড়াতাড়ি (সময় হওয়া মাত্র) ইফতার করতেন এবং খুব দেরী করে সেহরি খেতেন; সুতরাং সেহরী আগে আগে খেয়ে ফেলা উচিত নয়। মধ্য রাতে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া তাে মােটেই উচিত নয়; কারণ, তাতে ফজরের নামাজ ছুটে যায়; ঘুমিয়ে থেকে হয় তার জামাত ছুটে যায়; নচেৎ, নামাজের সময় চলে গিয়ে সূর্য উঠার পর চেতন হলে নামাযটাই কাযা হয়ে যায়; নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক; আর নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় মুসিবত; যাতে বহু রোজাদার ফেঁসে থাকে; আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করুক, আমিন।

ইফতারের সময়

মহানবী সঃ বলেন, রাত যখন এদিক (পূর্ব গগন) থেকে আগত হবে, দিন যখন এদিক (পশ্চিম গগণ) থেকে বিদায় নেবে এবং সূর্য যখন অস্ত যাবে, তখন রোজাদার ইফতার করবে।

বুখারী ১৯৪১, ১৯৫৪, মুঃ ১১০০, ১১০১

অতএব দেখার বিষয় হল সূর্যাস্ত; আযান নয়; সুতরাং রোজাদার যদি স্বচক্ষে দেখে যে, সূর্য ডুবে গেছে কিন্তু মুআযযিন এখনো আযান দেয়নি; তাহলেও তার জন্য ইফতার করা বৈধ; এমনকি তা জরুরি।

পক্ষান্তরে পূর্ব সতর্কতামূলক ভাবে মুয়াযযিনদের দেরী করে আযান দেওয়া বিদআত।

বলা বাহুল্য, স্থানীয়ভাবে সূর্যের বৃত্তের সমস্ত অংশটা অদৃশ্য হয়ে (অস্ত) গেলে রোজাদারের উচিত, সাথে সাথে সেই সময় ইফতার করা। আর এ সময় নিম্ন আকাশে অবশিষ্ট লাল আভা থাকলেও তা দেখার নয়।

জরুরি কথা

এখানে একটি কথা জরুরি ভিত্তিতে বলতে চায় যে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত সেহরি ও ইফতারের সময়সূচিতে পূর্ব সতর্কতা মূলক তিন মিনিট বাড়ানো কমানো হয়েছে। ইফতারের সময় পূর্ব সতর্কতা মূলক এই তিন মিনিট দেরি করা বৈধ নয় কারন আমরা হাদিস থেকে জানতে পারলাম তাড়াতাড়ি ইফতার করা জরুরি। সেখানে তিন মিনিট দেরি করার প্রয়োজন নেই। এই তিন মিনিট থেকে এক মিনিট কমালেও তাড়াহুড়া করা হলো। তাই আমাদের উচিত তিন মিনিট দেরি না করে সেখান থেকে অন্তত এক মিনিট কমিয়ে ইফতার করা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৪

প্রথম ছবিতে ঢাকা জেলার সময়সূচি দেওয়া আছে এবং দ্বিতীয় ছবিতে ঢাকা জেলার সাথে অন্যান্য জেলার সময়ের পার্থক্য দেওয়া আছে।

রাসুল সঃ বলেন, লোকেরা ততক্ষণ মঙ্গলে থাকবে, যতক্ষণ তারা ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করবে।

বুখারী ১৯৫৭, মুসলিম ১০৯৮

তিনি বলেন, দ্বীন ততকাল বিজয়ী থাকবে, যতকাল লোকেরা ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করবে। কারণ, ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানরা দেরি করে ইফতার করে।

আদাঃ, হাঃ ইহিঃ সজাঃ ৭৬৮৯নং

মহানবী সঃ এর আমল ছিল জলদি ইফতার করা। আবু আত্বিয়াহ বলেন, আমি ও মাসরুক আয়েশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! মুহাম্মাদ সঃ এর সাহাবীদের মধ্যে একজন (সময় হওয়া মাত্র) তাড়াতাড়ি ইফতার করে ও তাড়াতাড়ি নামায পড়ে এবং অপর একজন দেরি করে ইফতার করে ও দেরী করে নামায পড়ে। তিনি বললেন, ‘ওদের মধ্যে কে তাড়াতাড়ি ইফতার করে ও তাড়াতাড়ি নামায পড়ে? আমরা বললাম, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ)। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সঃ এ রকমই তাড়াতাড়ি ইফতার ও নামায আদায় করতেন।

মুসলিম ১০৯৯

মহানবী সঃ বলেন, তিনটি কাজ নবুয়তের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত; জলদি ইফতার করা, দেরী করে (শেষ সময়ে) সেহরি খাওয়া এবং নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা।

ত্বাবঃ, মাযাঃ ২/১০৫, সজাঃ ৩০৩৮নং

সূর্যের পুরো বৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে ইফতারের সময় হয়; আর সে সময় হল মাগরিবের নামাজের আগে; ইফতার করে নামাজ পড়ার পর প্রয়োজনীয় আহার ভক্ষণ করবে রোজাদার; অবশ্য যদি আহার প্রস্তুত থাকে, তাহলে প্রথমে আহার খেয়েই নামাজ পড়বে।

যেহেতু আনাস রাঃ বলেন, আল্লাহর রাসূল সঃ বলেছেন, রাতের খাবার উপস্থিত হলে মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তোমরা তা খেয়ে নাও। আর সে খাবার খেতে তাড়াহুড়া করো না।

বুখারী ৬৭২, মুসলিম ৫৫৭

কিন্তু সময় হওয়ার পূর্বে ইফতার করা হতে সাবধান! কারণ, মহানবী সঃ একদল লোককে (স্বপ্নে) দেখলেন যে, তারা তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কশগুলাে কেটে ও ছিড়ে আছে এবং কশ বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী সঃ বলেন, আমি বললাম, ওরা কারা? তারা বললেন, ওরা হল তারা; যারা সময় হওয়ার পূর্বে-পূর্বেই ইফতার করে নিত।

ইখুঃ, ইহিঃ বাঃ ৪/২১৬, হাঃ ১/৪৩০, সতাঃ ৯৯১নং

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top