বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি, গোসলের সুন্নত কয়টি ও কি কি, গোসল কাকে বলে, মুস্তাহাব গোসল সমূহ।
সূচিপত্র
Toggleগোসল কাকে বলে
গোসল অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসল অর্থ পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওযু করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা। গোসল দুই প্রকার: ফরজ ও মুস্তাহাব।
(১) ফরয : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে গোসল ফরয হয়। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। (মায়েদা: ৬)।
(২) মুস্তাহাব : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুমআর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযু করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন। (ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪১)।
গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি
গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:
১. গড়গড়া সহ কুলি করা
২. নাকে পানি দেয়া
৩. সমস্ত শরীর ধৌত করা।
গোসলের সুন্নত কয়টি ও কি কি
১. গোসল শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা।
২. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
৩. দুই হাত কব্জিসহ ওযুর মতো তিনবার ধৌত করা।
৪. কাপড় অথবা শরীরের কোথাও নাপাকি থাকলে গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা।
৫. গোসলের পূর্বে অজু করা। গোসলের স্থান নিচু হলে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা।
৬. ডান দিকে তিনবার, বাম দিকে তিনবার ও মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।
গোসলের পদ্ধতি
ফরজ গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযুর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালোভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে।
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫।
জ্ঞাতব্য
(১) গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৮)।
(২) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯; চার মুদ্দে এক ছা’ হয়। ইরওয়া, উক্ত হাদীছের টীকা ১/১৭০ পৃঃ; আবুদাউদ হা/৯৬)।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।
(৩) নারী হৌক পুরুষ হোক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭)।
(৪) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই। (মুসলিম হা/৩৩৯; বুখারী হা/২৭৮; মিশকাত হা/৫৭০৬-০৭; ফিকহুস সুন্নাহ ১/৫৮)।
(৫) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হলে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই। (আবুদাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫)।
(৬) ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না! তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে। (ফিকহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২)।
সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে। (ফিক্হুস সুন্নাহ ১/৪৩)।
মুস্তাহাব গোসল সমূহ
(১) জুমআর ছালাতের পূর্বে গোসল করা। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩৭-৩৯, পবিত্রতা অধ্যায়-৩, ‘মাসনূন গোসল’ অনুচ্ছেদ-১১)।
(২) মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা। (ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫৪১)।
(৩) ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা। (তিরমিযী, আবুদাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৪৩)।
(৪) হজ্জ বা ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা। (দারাকুতনী, হাকেম, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৯, ১/১৭৯ পৃঃ)।
(৫) আরাফার দিন গোসল করা। (বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭)।
(৬) দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা। (বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭)।