Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

জুমার দিনের ১১ টি আমল. জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

জুমার-দিনের-১১-টি-আমল.-জুম্মার-দিনের-শ্রেষ্ঠ-আমল

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জুমার দিনের ওয়াজিব বা ফরজ সমূহ, জুমার দিনের ১১ টি আমল বা জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এবং জুম্মার দিনের দোয়া।

জুমার দিনের ওয়াজিব বা ফরজ সমূহ

১. খুতবার সময় চুপ থাকা, কথা না বলা ও কোনো অযথা কাজ না করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি জুমার দিন ইমামের খুৎবা রত অবস্থায় তোমার সাথীকে (কাউকে) বল: চুপ কর, তাহলে তুমি নিরর্থক কথা বললে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

২. মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা, যদিও তা ইমামের খুতবার অবস্থায় হয়

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুৎবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাকে বললেন, “তুমি সালাত আদায় করেছ?” সে বলল: না, তিনি বললেন, “দাড়াও! দুই রাকাত সালাত আদায় কর”।

বুখারী ও মুসলিম

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে: জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুত্বরত অবস্থায় সুলাইক আল-গাতফান রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে বসে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে সুলাইক! দাড়াও, দুই রাকাত হালকা সালাত পড়। অতঃপর তিনি বললেন, “জুমার দিন ইমামের খুতবা রত অবস্থায় তোমাদের কেউ আসলে হালকা করে দুই রাকাত সালাত পড়।

সহীহ মুসলিম

৩. জুমার সালাত আদায় করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জামাতের সাথে জুমার সালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয, তবে চারজন এর ব্যতিক্রম, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালক বালক এবং অসুস্থ ব্যক্তি।

সুনানে আবু দাউদ

জুমার দিনের ১১ টি আমল

১. জুমার দিনে ফজরের সালাতে বিশেষ কিরাত পাঠ করা

জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে প্রথম রাকাতে সূরা আস-সাজদাহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আদ-দাহর (ইনসান) পড়তেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

২. বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিঃসন্দেহে জুমার দিন তোমাদের সর্বোত্তম দিনসমূহের মধ্যে অন্যতম। সেই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তার জান কবজ করা হয়েছে, শিঙ্গায় ফুৎকার হবে এবং (আসমান ও যমীন বাসী) ধ্বংস অথবা বেহুশ হবে। সুতরাং সে দিনে বেশি বেশি করে আমার উপর সালাত পাঠ কর; কেননা তোমাদের সালাত আমার নিকট পেশ করা হয়।” তারা (সাহাবায়ে কেরাম) জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সালাম আপনার নিকটে কিভাবে পেশ করা হবে অথচ তখন আপনি (অর্থাৎ তাঁর হাড্ডি) পুরাতন হয়ে যাবেন? তিনি বললেন, আল্লাহ নবীগণের শরীর মাটির জন্য খাওয়া হারাম করে দিয়েছেন।

সুনানে নাসাঈ

৩. সূরা কাহাফ পাঠ করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে অপর জুমা পর্যন্ত একটি নূর তাকে আলোকিত করবে।

হাকেম, শাইখ আলবানী ইরওয়াতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

৪. গোসল করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ জুমু’আর সালাতে আস্তে তাহলে সে যেন অবশ্যই গোসল করে আসে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

এ হাদীসে উল্লেখিত আদেশ থেকে গোসল ফরয সাব্যস্ত হবে না; বরং তার অর্থ হলো গােসল উত্তম; কেননা অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি ওযু করে জুমআর সালাতে আসে তা যথেষ্ট হবে। তবে গোসল করা উত্তম।

সুনান তিরমিযী

৫. মেসওয়াক করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমআর দিন প্রত্যেক বালেগ (বয়স প্রাপ্ত) ব্যক্তি গোসল ও মেসওয়াক করবে এবং সামর্থ্য অনুসারে সুগন্ধি লাগাবে।

সহীহ মুসলিম

৬. সামর্থ্য অনুসারে সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল ও সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে এবং সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরিধান করে, অতঃপর শান্তভাবে মসজিদে আসে, মনে চাইলে সালাত পড়ে, কাউকে কষ্ট না দেয়, ইমাম আসার পর থেকে নিয়ে সালাত আদায় পর্যন্ত চুপ থাকে তার জন্য এটা উভয় জুমু’আর মাঝের কাফফারা হবে।

আহমাদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তোমাদের কারো যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে সে কাজের দুটি পোশাক ব্যতীত জুমার জন্য দুটো আলাদা পোশাক রাখতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই।

সুনানে আবু দাউদ

৭. সকাল সকাল সালাতের জন্য যাওয়া

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে (সহবাসের পর) ফরজ গোসল করে অতঃপর (জুমুআর উদ্দেশ্যে) গমন করে সে যেন একটি উট সদকা করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় ভাগে গমন করে সে যেন একটি গরু সদকা করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় ভাগে গমন করে সে যেন একটি মেষ সদকা করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ ভাগে গমন করে সে যেন একটি মুরগী সদকা করল। যে ব্যক্তি পঞ্চম ভাগে গমন করে সে যেন একটি ডিম সদকা করল। যখন ইমাম (খুতবার উদ্দেশ্যে) বের হয়ে আসে তখন ফেরেশতাগণ হাজির হয়ে জিকির (খুতবা) শ্রবণ করতে থাকে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম

৮. ইমাম সাহেব খুতবার জন্য বের হওয়ার আগ পর্যন্ত (নফল) সালাত ও জিকিরে লিপ্ত থাকা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার সালাতে আসবে অতঃপর ইমাম খুৎবা শেষ করা পর্যন্ত তাওফিক অনুসারে সালাত পড়বে ও চুপ থাকবে তারপর ইমামের সঙ্গে জুমু’আর সালাত আদায় করবে তাকে (তার গুনাহ) সামনের জুমু’আ এবং তার পরের তিন দিন পর্যন্ত ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

সহীহ মুসলিম

৯. দ্বিপ্রহরের সঙ্গে সঙ্গে যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি জুমার সালাত কায়েম করা

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢালার পর জুমু’আর সালাত আদায় করতেন। তিনি আরো বলেন: আমরা জুমার সালাত আগেভাগে পড়ে নিতাম এবং জুম্মার পর (দুপুরের খানা খেয়ে) আরাম করতাম।

সহীহ বুখারী

সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সূর্য ঢালার পর জুমার সালাত আদায় করতাম এবং সালাতের পর (সূর্যের অত্যাধিক তাপের কারণে) ছায়ায় ফিরে আসতাম।

সহীহ মুসলিম

১০. জুমার সালাতের জন্য বিশেষ সূরা নির্দিষ্ট করা

জুমার সালাতের দুই রাকাতে সূরা আল-আ’লা ও সূরা আল-গাশিয়া পাঠ করা অথবা সূরা আল-জুমুআ ও সূরা আল-মুনাফিকুন পাঠ করা। নুমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই ঈদ এবং জুমার সালাতে সূরা আল আ’লা ও সূরা আল-গাশিয়াহ পড়তেন।

সহীহ মুসলিম

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার সালাতে সূরা আল-জুমুআ ও সূরা আল-মুনাফিকুন পাঠ করতেন।

সহীহ মুসলিম

১১. জুমার পরে বাড়ীতে দুই রাকাত অথবা মসজিদে চার রাকাত সালাত আদায় করা

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পর (বাড়ি) না ফেরা পর্যন্ত কোন সালাত পড়তেন না! (বাড়ী ফেরার) পরে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন।

সহীহ বুখারী

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা যখন জুমার সালাত আদায় করবে তখন জুমার পর চার রাকাত সালাত পড়বে।

সহীহ মুসলিম

জুমার দিনের দোয়া

জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে মুহূর্তে দুআ করলে, আল্লাহ তাআলা দুআ কবুল করেন! তবে মুহূর্তটি অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ পুরো জুমার দিনের গুরুত্ব দেয় এবং মুহূর্তটির অনুসন্ধান করতে থাকে! আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

জুম’আর দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় রত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করেন আল্লাহ তা’আলা তাকে তা অবশ্যই দেবেন।

বুখারি, হাদিস: ৯৩৫ মুসলিম, হাদিস: ৮৫২

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. জুমার দিন দুআ কবুলের সময় এর ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরার পর বলেন, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হল দুটি মত, যে দুটি মতামত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত।

১- ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত মুহূর্তটি।

কারণ, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত।

মুসলিম, হাদিস: ৮৫৩; সহীহ ইবনে খুজাইমা, ১৭৩৯; বাইহাকী, হাদিস: ৫৯৯৯

২- মুহুর্তটি হল, জুমার দিন আসরের সালাত আদায়ের পর।

যাদুল মা’আদ: ৩৯০, ৩৮৯/১

তিরমিযীর ভাষ্যকার আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (রহঃ) বলেন, হাদীসের রাবী আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) এখানে রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য (সালাতের অবস্থা)- কে (সালাতের অপেক্ষারত) বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

তিরমিযী হা/৪৯১; আবুদাউদ হা/১০৪৬; মুয়াত্তা, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৩৫৯ জুমা অনুচ্ছেদ-৪২।

এতেই বুঝা যায় যে, তিনি এটা সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে শুনেছেন বলে বর্ণনা করেননি! পক্ষান্তরে আমর বিন আউফ (রাঃ) বর্ণিত তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ এর হাদিসটি মারফু! যা ইমাম বুখারী ও তিরমিযী হাসান বলেছেন! সেটি রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য (ছালাতরত অবস্থা)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল! আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত অপর একটি হাদীছ একে শক্তিশালী করে! সেখানে এই সময়কালকে খত্বীব মিম্বরে বসা হতে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত বলা হয়েছে।

মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৫৮, ‘জুম’আ অনুচ্ছেদ-৪২।

ইবনুল আরাবী বলেন, এই বক্তব্যটিই অধিকতর সঠিক! কেননা এ সময়ের সম্পূর্ণটাই সালাতের অবস্থা! এতে হাদীসে বর্ণিত ‘ছালাতরত অবস্থায় বক্তব্যের সাথে শব্দগত ও অর্থগত উভয় দিক দিয়ে মিল হয়! বায়হাক্বী, ইবনুল আরাবী, কুরতুবী, নববী প্রমুখ এ বক্তব্য সমর্থন করেন।

আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির, শরহে তিরমিযী ২/৩৬৩-৬৪, হাঃ ৪৯০-৪৯১।

অতএব খতিব মিম্বরে বসা হতে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ছালাতরত অবস্থায় দোয়া কবুলের মতটিই সহীহ হাদীসের অধিকতর নিকটবর্তী।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Post