Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

আখিরাত শব্দের অর্থ কি? আখিরাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য কেন?

আখিরাত-শব্দের-অর্থ-কি-আখিরাতে-বিশ্বাস-করা-অপরিহার্য-কেন

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আখিরাত শব্দের অর্থ কি, আখিরাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য কেন, আখিরাতের স্তর কয়টি এবং আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি।

আখিরাত শব্দের অর্থ কি

আখিরাত (آخرة‎‎) শব্দটি এসেছে আখির (آخر‎‎) শব্দ থেকে। যার অর্থ শেষ, সমাপ্তি, পরবর্তী ইত্যাদি। আখিরাত শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে পরকাল। মানুষের জীবনের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে দুনিয়ার জীবন আরেকটি হচ্ছে আখিরাতের জীবন। দুনিয়ার জীবন শেষ হলে আখিরাতের জীবন শুরু হয়।

ইসলামী পরিভাষায় মৃত্যুর পর হতে অনন্ত অসীম জীবনে মানুষ মহাবিশ্বের যে অংশে অবস্থান করে তাকে আখিরাত বা পরলোক বলে।

আখিরাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য কেন

আল্লাহ তাআলা ইহকালের পর পরকাল নির্ধারিত করে সেখানকার পরিস্থিতি মানুষকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে উপদেশ করেছেন। তাতে বিশ্বাস রাখা আবশ্যক করেছেন। এর জন্য সঠিক ও যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণে মনোনিবেশ করতে জোর তাগিদ করেছেন।

আখিরাত স্মরণ সৎ ও কল্যাণকর কাজে উৎসাহ দেয়। অন্তর থেকে সন্দেহ-সংশয় দূর করে। অত্যাচার থেকে বারণ করে এবং দুর্বলের উপর আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত রাখে। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট।” (সূরা আম্বিয়া-৪৭)

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,

“সেই চিরঞ্জীব চিরস্থায়ীর সামনে সব মুখমণ্ডল অবনমিত হবে এবং সে ব্যর্থ হবে যে জুলুমের বোঝা বহন করবে।” (সূরা ত্বাহা-১১১)

নবী করীম সা. বলেন,

“কেউ যদি কারো উপর অত্যাচার করে থাকে বা কারো মানহানি করে থাকে, আজই যেন সে তার থেকে দাবি ছুটিয়ে নেয় সেদিন আসার পূর্বেই, যেদিন কোনো দীনার-দিরহাম (মুদ্রা) থাকবে না। সৎকর্ম থাকলে অত্যাচার পরিমাণ কেটে নেয়া হবে। না থাকলে অত্যাচারিতের কৃত পাপের বোঝা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।” (বুখারী-২৩১৭)।

পরকালে বিশ্বাস মানুষকে বিশৃঙ্খলা ও নাস্তিকতা থেকে বিরত রাখে। পক্ষান্তরে যে কাফের, সে ভালো মন্দ যাচাইয়ের যোগ্যতা রাখে না। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।” (সূরা মুমিনুন-৭৪)

পরকালে বিশ্বাস মানুষের চরিত্র সংশোধন করে, বিপদে ধৈর্যের শিক্ষা দেয়, অনর্জিত বস্তুর লোভ থেকে নিবৃত্ত রাখে। কারণ, পরকালের পুরস্কার তো বিশাল ও অসীম। নবী করীম সা. বলেন,

“কোনো মুসলিম বিপদগ্রস্ত হলে বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করেন, এমনকি যদি একটা কাঁটাও বিঁধে।” (বুখারী- ৫৩১৭)

পরকালে বিশ্বাস মানুষকে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করে, তাকে পরিত্রাণ দিতে সহায়তা করে। যার ফলে সাহাবায়ে কেরাম আত্মশুদ্ধি অর্জনে আদর্শ স্থাপন করে গেছেন।

একটি ঘটনা

মায়িয বিন মালিক রা. একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী। একদা শয়তান তাকে প্ররোচনা দিয়ে এক আনসারী সাহাবীর কৃতদাসীর প্রেমে জড়িয়ে দেয়। অতঃপর তারা উভয়ে নির্জনে গমন করলে শয়তান তাদের উভয়কে পরস্পরের জন্য সুন্দর করে উপস্থাপন করে, ফলে তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর যখন মায়িয তার মনোবৃত্তি পূরণ করে নেয় এবং শয়তান তাদের থেকে দূরে সরে যায়, তখন সে কাঁদতে থাকে। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। নিজেকে তিরস্কার করতে থাকে। আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করতে থাকে। দুশ্চিন্তায় ইহজীবন তার বিস্বাদ হয়ে উঠে। অপরাধবোধ তাকে বেষ্টন করে ফেলে।

ঠিক তখনই সে মহা-চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। নবীজীর সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, হে আল্লাহর রাসূল, অধম ব্যভিচার করেছে! আমাকে পবিত্র করুন! নবীজী তাকে এড়িয়ে যান। সে অপর-পাশে এসে পুনরাবৃত্তি করে, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ব্যভিচার করেছি, আমাকে পবিত্র করুন! নবীজী বলেন, ধিক তোমার! ফিরে যাও! আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও! তওবা কর!

অতঃপর কিছুদূর গিয়ে সে আবার ফিরে এসে বলতে থাকে, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে পবিত্র করুন! নবীজী উচ্চস্বরে বললেন, ধিক তোমার! তুমি কি জান- ব্যভিচার কী? দূরে সরানোর আদেশ করা হলে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হলো। দ্বিতীয়বার আবার ফিরে এসে বলতে থাকে, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে পবিত্র করুন! নবীজী উচ্চস্বরে বললেন, ধিক তোমার! তুমি কি জান- ব্যভিচার কী? দূরে সরানোর আদেশ করা হলে তাকে সরিয়ে দেয়া হলো। এরপর তৃতীয়বার.. চতুর্থ বারও এমন করল। অতিরিক্ত জোরাজোরির ফলে নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, সে কি পাগল? সবাই বলল, না! তার ব্যাপারে তো কোনো সমস্যা শুনিনি আমরা।

নবীজী বললেন,

সে কি মদপান করেছে? একজন দাঁড়িয়ে তার মুখের গন্ধ শোঁকে মদের কোনো ঘ্রাণ পেল না। নবীজী বললেন, তুমি কি জান- ব্যভিচার কী? সে বলল, জি, আমি অন্যায়ভাবে এক নারীর সাথে এমন কাজ করেছি, যা হালাল রূপে কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে করে থাকে। নবীজী বললেন, একথার মাধ্যমে তুমি কী চাও? সে বলল, আমি চাই আপনি আমাকে পবিত্র করে দিন। নবীজী বললেন, আচ্ছা! অতঃপর তাকে প্রস্তর নিক্ষেপের আদেশ করলেন। প্রস্তর নিক্ষেপ করা হলে সে মৃত্যুবরণ করল।

জানাজা ও দাফন শেষে নবীজি সাথীদের নিয়ে ফিরছিলেন, এমন সময় শুনতে পেলেন জনৈক ব্যক্তি অপরকে বলছে, “দেখ এই ব্যক্তিকে; আল্লাহ তার অপরাধ গোপন করেছিলেন, কিন্তু তার হৃদয় তাকে তা গোপন করতে দেয়নি। ফলে কুকুরের মতো প্রস্তরাঘাতে তাকে হত্যা করা হলো।” নবীজী সেখানে তাদেরকে কিছু না বলে অল্প-সময় চললেন। পথিমধ্যে পড়ে থাকা একটি গাধার মৃতদেহের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, প্রখর রোদে গাধার চেহারা ফুলে উঠেছিল, পা স্ফীত হয়ে গিয়েছিল। বলতে লাগলেন, অমুক অমুক ব্যক্তি কোথায়? উভয়ে বলল, আমরা এখানে হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমরা অবতরণ কর এবং গাধার এই মৃতদেহ ভক্ষণ কর! উভয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন, কোনো মানুষ কি এই মৃতদেহ খেতে পারে?

তখন নবীজী বলতে লাগলেন,

“কিছুক্ষণ পূর্বে তোমাদের ভাই সম্পর্কে তোমরা যে কথা উচ্চারণ করেছ, তা এই মৃতদেহ ভক্ষণ অপেক্ষা নিকৃষ্ট। অবশ্যই মায়িয এমন তাওবা করেছে, যদি তার তাওবা পুরো জাতির মাঝে বণ্টন করা হয়, তবে সকলের মুক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় এ মুহূর্তে সে জান্নাতের নদীসমূহে সাঁতার কাটছে!”

সাধুবাদ হে মায়িয বিন মালিক! হ্যাঁ, সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করেছে। কিন্তু যখন সে তার কৃত পাপ সমাধা করেছে, তখন সকল স্বাদ উধাও হয়ে কেবল দুঃখই তার রয়ে গেছে। তবে সে এমন তওবা করেছে, তা যদি পুরো জাতির মাঝে বণ্টন করা হয়, তবে সবার মুক্তির জন্য সেটি যথেষ্ট হয়ে যাবে।

পরকালে বিশ্বাস মানুষকে বিশ্বস্ততা রক্ষায় অভ্যস্ত করে। আত্ম- প্রদর্শন থেকে বিরত রাখে। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন,

“নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা তাওবা-১৮)

মনে রাখবেন, পরকালে বিশ্বাসই হচ্ছে দুনিয়ায় শান্তি এবং আখেরাতে সুখের একমাত্র উপায়।

আখিরাতের স্তর কয়টি

আখিরাতের স্তর তিনটি। যথাঃ

১. কবর

২. কিয়ামত

৩. জান্নাত অথবা জাহান্নাম।

আখিরাত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কি কি

১. কবর

২. কিয়ামত

   ২.১. পুনরুত্থান

   ২.২. আমলনামা

   ২.৩. মিযান

   ২.৪. হাউযে কাউসার

   ২.৫. শাফায়াত

   ২.৬. পুলসিরাত

৩. জান্নাত অথবা জাহান্নাম।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Post