বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে মাশাআল্লাহ অর্থ কি, মাশাআল্লাহ কখন বলতে হয়, মাশাআল্লাহ কেন বলতে হয়, মাশাআল্লাহ বললে কি বলতে হয় ইত্যাদি।
Table of Contents
Toggleমাশাআল্লাহ অর্থ কি
مَا شَاءَ الله
উচ্চারণ: মা শা আল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে।
মাশাআল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ অর্থ কি
مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ: মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে, আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।
মাশাআল্লাহ কখন বলতে হয়
কুরআনের বাণী
মহান আল্লাহ বলেন,
আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দু’টিকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দু এর মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র।
উভয় বাগানই ফলদান করে এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস পায় না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নহর প্রবাহিত করেছি।
সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।
নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বললঃ আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।
এবং আমি মনে করি না যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেয়া হয়, তবে সেখানে এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব।
তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর পূর্নাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?
কিন্তু আমি তো একথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরীক মানি না।
যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না;
(“مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ”) “মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” অর্থাৎ “আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে, আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই”।
আশাকরি আমার পালকর্তা আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তার (তোমার বাগানের) উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ করবেন। অতঃপর সকাল বেলায় তা পরিষ্কার ময়দান হয়ে যাবে।
অথবা সকালে তার পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তুমি তা তালাশ করে আনতে পারবে না।
অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল। বাগানটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।
আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোক হল না এবং সে নিজেও প্রতিকার করতে পারল না।
এরূপ ক্ষেত্রে সব অধিকার সত্য আল্লাহর। তারই পুরস্কার উত্তম এবং তারই প্রদত্ত প্রতিদান শ্রেষ্ঠ।
সূরা কাহাফ আয়াত নং ৩২-৪৪
হাদিসের বাণী
হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করেন, চাহে উহা স্ত্রী হোক কিংবা ধন-জন হোক অতঃপর যদি বলে (“مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ”) “মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” অর্থাৎ “আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে, আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই”। তবে উহাতে মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোন বিপদ দেখবে না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত আয়াত দ্বারা ইহা প্রমাণ করতেন।
মুসনাদে আবু ইয়ালা
মাশাআল্লাহ কেন বলতে হয়
উপরিউক্ত কুরআনের আয়াত সমূহ ও হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দাকে নিয়ামত দান করেন, চাই তা স্ত্রী, সন্তান, আপনজন হোক কিংবা ধন-সম্পদ হোক তখন তাকে বলতে হবে (“مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ”) “মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” অর্থাৎ “আল্লাহ যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে, আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই”। তবে সে উহাতে মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোন বিপদ দেখবে না। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তা হেফাজত করবেন।
এখন কথা হচ্ছে, আপনি যে নিয়ামত পেয়েছেন তার জন্য আপনি নিজেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ উক্ত তাসবীহ পাঠ করবেন। অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা আছে, যেমন ধরুন, আপনার বাড়িতে মেহমান আসলো আর আপনার সুন্দর ফুটফুটে সন্তানকে দেখে মাশাআল্লাহ বললো, তবে আপনার সন্তান তার বদনজর থেকে রক্ষা পাবে। আর যদি সে মাশাআল্লাহ না বলে তবে আপনার সন্তানের উপর ঐ ব্যক্তির বদনজর লাগার সম্ভাবনা থাকবে। অথবা ধরুন, আপনি আপনার কোন আত্মীয়ের বাড়িতে গেলেন আর তার সুন্দর ফুটফুটে সন্তানকে দেখে মাশাআল্লাহ বললেন তবে তার সন্তান আপনার বদনজর থেকে রক্ষা পাবে। আর যদি আপনি মাশাআল্লাহ না বলেন তবে তার সন্তানের উপর আপনার বদনজর লাগার সম্ভাবনা থাকবে।
আসলে বিষয়টা এরকম নয়। ঐ ব্যক্তি যদি তার সন্তানকে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ উক্ত তাসবীহ পাঠ করে তবে আল্লাহ তার সন্তানকে হেফাজত করবেন, আপনি যদি উক্ত তাসবীহ পাঠ না করেন তবুও। আবার আপনি যদি আপনার সন্তানকে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ উক্ত তাসবীহ পাঠ করেন তবে আল্লাহ আপনার সন্তানকে হেফাজত করবেন, ঐ ব্যক্তি যদি উক্ত তাসবীহ পাঠ না করে তবুও।
শুধু সন্তানের বিষয়েই এমন নয় বরং সকল নিয়ামতের ক্ষেত্রেই একই রকম। আপনি যে নিয়ামত পেয়েছেন তার জন্য আপনি নিজে আল্লাহর প্রশংসা করবেন অর্থাৎ মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলবেন। তবে আল্লাহ তা হেফাজত করবেন ইনশাআল্লাহ, আপনারটা দেখে অন্য কেউ বলুক বা না বলুক। ঠিক তেমনই অন্যেরটা দেখে আপনাকে বলতেই হবে বিষয়টা এরকম নয়। তবে যদি আপনি বলেন সেটা আপনার জন্য ভালো।
এখানে একটা কথা বলা দরকার তা হলো; যখন বিষয়টা এরকম হয় যে, আপনি আপনার কোন আপনজনের প্রাপ্ত নিয়ামতকে দেখে খুশি হন, তখন আপনি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় স্বরূপ “মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলবেন। কেননা উক্ত নিয়ামত এক দৃষ্টিতে আপনিই পেয়েছেন। এছাড়াও যে কারও যে কোন ভাল কিছু দেখলে আপনি যদি তা বলেন তাহলে তা আপনার জন্য ভালো।
মাশাআল্লাহ বললে কি বলতে হয়
যখন কেউ তার প্রাপ্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় স্বরূপ “মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলে তখন শ্রবণকারী ব্যক্তি এর প্রতিউত্তরে কিছু বলবে বা তাকে কিছু বলতে হবে বিষয়টা এরকম নয়। কেননা কথাটি তার উদ্দেশ্যে বলা হয়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো কুরআন বা হাদিসে এরকম কিছু বর্ণিত হয়নি।
তবে একটা বিষয় বলা দরকার তা হলো, যখন কেউ আপনার প্রাপ্ত নিয়ামতকে দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ “মা শা আল্লাহ, লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলে তখন আপনিও তা বলেন; যদিও আপনি পূর্বে তা বলেছেন। অথবা আপনি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলেন। আবার আপনি ঐ ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে “জাজাকাল্লাহু খাইরান” অর্থাৎ “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান কান করুক” বলতে পারেন; যেহেতু সে উক্ত তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে আপনার কল্যাণ কামনা করেছে।
মাশাআল্লাহ আরবি
مَا شَاءَ الله
মাশাআল্লাহ সঠিক বানান
মা শা আল্লাহ
মাশাআল্লাহ ইংরেজি বানান
Ma Sha Allah