বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন এর লেখা বই বয়ান ও খুতবা ১ম ২য় ও ৩য় খন্ড এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া বইয়ের নামের উপর ক্লিক করুন।
বয়ান ও খুতবা ১ম খন্ড – মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন
বয়ান ও খুতবা ২য় খন্ড – মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন
বয়ান ও খুতবা ৩য় খন্ড – মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন
ইলম বা দ্বীনী জ্ঞান হচ্ছে আমলের বুনিয়াদ। সহীহ ইলম ছাড়া সহীহ আমল সম্ভব নয়। এজন্য ইলম শিক্ষা করাকে ফরয করে দেয়া হয়েছে। একজন মানুষের সারা জীবনের সব কিছু- নামায, রোযা, ধনী হলে হজ্জ, যাকাত, কুরবানী সহ উঠা-বসা চলা-ফেরা, আহার-নিদ্রা, শয়ন-স্বপন ইত্যাদি যা কিছু তার জীবনের অংশ এই সব কিছুর মাসআলা-মাসায়েল ও তরীকা শিক্ষা করা জরুরী। মানুষ এই শিক্ষা অর্জন করতে পারে দ্বীনী কিতাবাদি পাঠ করে কিংবা উস্তাদ এবং ওয়ায়েজ ও মুবাল্লিগগণের মুখে শুনে।
তবে আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিতাবাদি পাঠ করে বা ওয়াজের মজলিসে গিয়ে ওয়াজ শুনে শিক্ষা অর্জন করার লোকের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষ দ্বীনী কথা-বার্তা যা শোনে বা শেখে তা প্রায়শঃই মসজিদ থেকেই শোনে বা শেখে। জুমুআ, ঈদ ইত্যাদিতে ইমাম সাহেবান মসজিদে যে বয়ান পেশ করেন তা থেকেই তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এ হিসেবে আমাদের সমাজে মসজিদ হল সাধারণ মানুষের জন্য দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের একটি অন্যতম মারকাজ। তাই দেখা যায় আইম্মা হ্যারাত যে রকম বয়ান করেন, তাদের মুসল্লিদের ধ্যান-ধারণা এবং তাদের মন-মানসিকতাও সেভাবেই গড়ে ওঠে।
যে মসজিদের ইমাম যেমন, সে মসজিদের মুসল্লিদের দ্বীনী রংও তেমন হয়ে ওঠে। ইমাম যদি বেদআত, কুসংস্কার ও গলত তরীকা থেকে পরহেয করনেওয়ালা হন এবং সেভাবে মানুষকে বোঝান, তাহলে তার মুসল্লিগণও ক্রমান্বয়ে সেরকমভাবেই গড়ে ওঠে। ইমাম বেদআতী হলে মহল্লাও বেদআতী হয়ে যায়। ইমাম ভন্ড হলে মহল্লাও ভন্ড হয়ে যায়। মোটকথা আইম্মায়ে কেরাম যেমন দ্বীনী রূহানী খোরাক দেন, তাদের মুসল্লীগণের দ্বীনী রূহানী শাস্থা সেভাবেই গড়ে ওঠে। এদিক থেকে গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় সমাজের মন-মানসিকতা ও মেজায গঠনের ক্ষেত্রে ইমামগণের যে আছর, তার কোন বিকল্প নেই।
এই পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ইমাম সাহেবগণ গোটা সমাজকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনী মেজাযে গড়ে তুলতে পারেন, গোটা সমাজকে পূর্ণ দ্বীনী ছাঁচে ঢেলে সাজাতে পারেন। আইম্মায়ে কেরাম হলেন সমাজ সংস্কারকের আসনে সমাসীন। তাঁরা পারেন গোটা সমাজের সংস্কার সাধন করতে। এর জন্য প্রয়োজন বয়ান ও বক্তব্যকে সেভাবে প্রস্তুত করা। তাদের বয়ান বক্তব্য ঈমান-আকিদা ইবাদত-বন্দেগী, মু’আমালা, মু’আশারাত, আমল-আখলাক ইত্যাদি জীবনের সব দিকের দিক নির্দেশনা থাকতে হবে। যাতে মানুষ তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের দেয়া পূর্ণাঙ্গ দিক-নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাদের পূর্ণ জীবন ইসলামের আলোকে ঢেলে সাজাতে পারে। কিন্তু দেশের বহু মসজিদেই এমনটা হচ্ছে না। অনেক মসজিদে নাম মাত্র বয়ান হচ্ছে, যাতে কিছু কিচ্ছা-কাহিনী বলে সময় পার করে দেয়া হচ্ছে। কোথাও বা প্রচলিত খুতবার বঙ্গানুবাদ পাঠ করে শোনানো হয়, যাতে তেমন কোন বিষয় ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জিত হয় না। ফলে মুসল্লীগণ দ্বীনী ইলম অর্জনের সম্ভাব্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ প্রয়োজনকে সামনে রেখেই ‘বয়ান ও খুতবা’ নামক এ গ্রন্থখানা রচনা করা হয়েছে। এ গ্রন্থে একজন ইমামের জন্য সারা বৎসর বয়ান করার মত সব ধরনের বয়ান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ঈদুল ফিত্র ঈদুল আযহা, কুরবানী, আশুরা, শবে বরাত, শবে কদর, মেরাজ ইত্যাদি বৎসরের নির্ধারিত বয়ানসহ নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ঈমান-আকীদা, আমল-আখলাক এবং মুআমালাত ও মুআশারাত সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের বয়ান সমৃদ্ধ এ গ্রন্থখানা বিশেষ ভাবে ইমাম সাহেবের ওয়াজ ও বয়ান কর্মে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে রচনা করা হয়েছে।
একজন ইমাম যেন মসজিদের মিম্বর থেকেই মুসল্লীদেরকে জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের দেয়া বিধি-বিধান ও নীতিমালা সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করতে পারেন, যাতে মানুষ ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারেন এবং তাদের পূর্ণ জীবন ইসলামের আলোকে ঢেলে সাজাতে পারে- এ আঙ্গিকেই বর্তমানে গ্রন্থখানা রচনা করা হয়েছে।
এ গ্রন্থের প্রত্যেকটা বয়ানের সাথে রয়েছে এক একটি আরবী খুতবা, যেটি পাঠ করা যেতে পারবে। ওয়ায়েজ ও মুবাল্লিগগণও এ গ্রন্থ থেকে সহযোগিতা নিতে পারবেন। দ্বীনি জ্ঞান ও উপদেশ অর্জনের উদ্দেশ্যে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের জন্যও গ্রন্থখানার পাঠ উপকার হবে ইনশাআল্লাহ। গ্রন্থের ১ম খণ্ডটি পাঠকদের সামনে পেশ করা হল। ইনশাআল্লাহ যথাসম্ভব শীঘ্র এর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় খণ্ডণ্ড প্রকাশ করা হবে। আরবী বৎসরে সাধারণত ৫১ জুমুআ হয়ে থাকে। এ হিসেবে এ গ্রন্থে জুমআর জন্য মোট ৫১টি বয়ান পেশ করা হয়েছে। প্রতি মাসের জন্য ৪টি হিসেবে মোট ৪৮টি বয়ান এবং শেষে আরও ৩টি অতিরিক্ত বয়ান রাখা হয়েছে, প্রয়োজনে উক্ত ৩টি বয়ান থেকে যে কোন একটি যে কোন মাসের পঞ্চম জুমুআয় সংযোজন করা যাবে।
এই গ্রন্থের বয়ানগুলো ওয়াজ ও বয়ানের ভঙ্গিতে রচনা করা হয়েছে। অতএব কেউ এ বয়ানগুলো পাঠ করে শোনাতে চাইলে বয়ান ও ওয়াজের ভঙ্গীতেই পাঠ করতে হবে। গ্রন্থের বয়ানগুলো তৈরী করা হয়েছে কুরআন, হাদীছ, বুযুর্গানে দ্বীনের (কবিতা) ও নির্ভরযোগ্য ঘটনা এবং কাহিনীর সমন্বয়ে। ঈমান, আমল, ফাযায়েল, মাসায়েল এবং তারগীব ও তারহীব- এই সব ধরনের বিষয়ের সমন্বয়ে এক একটি বয়ান সাজানো হয়েছে। আলোচনা বিষয় ভিত্তিক করা হয়েছে। তবে আলোচনার ফাকে ফাকে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদির উপরও আলোকপাত করা হয়েছে। এতে করে একই বয়ানের মধ্যে বহু বিষয়ের তথ্যের সমাবেশ ঘটেছে। মুবাল্লিগীন, ওয়ায়েজীন ও আইম্মায়ে কেরাম খেয়াল করলে এ সব তথ্য থেকে প্রয়োজন ও ইচ্ছা মোতাবেক বিষয় ভিত্তিক আরও বয়ান প্রস্তুত করে নিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
এ গ্রন্থখানা রচনা কালে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ-এর আমীর ও জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদীস, দেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও দ্বীনী রাহ্বর, আমার শায়খ মুরব্বী ও মুহিব্বি হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান দামাত বারাকাতুহুম-এর দিক নির্দেশনা গ্রহণ করা হয় এবং পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হওয়ার পর তিনি এর আদ্যোপান্ত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেন ও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী কাজ করা হয়। বিশেষ করে তিনি নিজ হাতে আরবি খুতবা গুলো আদ্যোপান্ত তাসহীহ করে দেন। এবং সবশেষে মজলিসে দাওয়াতুল হকের পক্ষ থেকে এটি প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি তাঁর প্রত্যেকটি কাজের জাযায়ে খায়ের নিজ হাতে তাকে দান করুন, এই গ্রন্থখানা দ্বারা সমাজের সংস্কার সাধন করুন এবং এই পাপী গ্রন্থকারের জন্য এটিকে নাজাতের ওছীলা করুন। আমীন!