বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আরিফ আজাদ লিখিত বই প্রত্যাবর্তন এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
প্রত্যেকটা বৃত্তের একটা কেন্দ্র থাকে। পৃথিবীতে জীবনাচরণের সেই কেন্দ্রের নাম হচ্ছে ইসলাম। এটিই আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলার কাছে মনোনীত একমাত্র ধর্ম। চির শাশ্বত ধর্ম। পৃথিবীতে মানুষের আগমন এই ধর্মের হাত ধরেই। তাওহিদের একত্ববাদ, শিরকের বিরুদ্ধে লড়াই, কুফরের বিরুদ্ধাচরণের মাধ্যমেই যুগে যুগে বিকশিত হয়েছে ইসলাম। পবিত্র কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে
“মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত’ [আল আসর ১০৩ : ০২]
সেই মানুষ তার প্রবৃত্তি, তার ইচ্ছা, কামনা-বাসনার বশবর্তী হয়ে সেই ধর্ম এবং তার একমাত্র রবকে ভুলে গিয়ে সেখানে স্থান দিয়েছে মিথ্যাকে। সৃষ্ট বস্তুকে তারা গ্রহণ করেছে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে। যখনই মানুষ তাওহিদের রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখনই জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন ধর্মের।
আমরা যারা জন্মগতভাবে মুসলিম পরিবারে জন্মেছি, বলা চলে আমরা কেন্দ্রের অধিবাসী হয়েই জন্মেছি। তবুও, বেড়ে উঠতে উঠতে, সমাজের নানান সঙ্গতি- অসঙ্গতির ভিতর দিয়ে যেতে যেতে একসময় আমরা পথ হারিয়ে বসি। হয়ে পড়ি কেন্দ্রচ্যুত। আমরা কেবল ‘নামে মুসলিম’ হয়ে জীবনযাপন করি। তখন আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতি আর একজন অমুসলিমের জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। আমাদের ধার্মিক জীবন তখন আবদ্ধ হয়ে যায় জুমুআর সালাত এবং দুই ঈদের সালাতের মধ্যে। যা আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তার প্রতি আমাদের তখন তীব্র আকর্ষণ। আর যা আমাদের করতে বলা হয়েছে, তার প্রতি আমাদের দুর্বার অনীহা। আমরা ঢুকে পড়ি একটি অন্ধকার রাজ্যে। নিকষ কালো অন্ধকার।
সেই অন্ধকার রাজ্যের মায়াপথ থেকে কেউ কি বেরিয়ে আসে? কারও কি হুশ ফিরে? কেউ কি ফিরে আসে তার কেন্দ্রে? হ্যাঁ, আসে। কেউ কেউ আসে। যারা আসে, তারা খুব দুর্দান্তভাবে ফিরে আসে। সেই পথ ফিরে পাওয়া, নীড়ে ফিরে আসা আত্মাগুলোর গল্প নিয়ে লেখা এই বইটি।
শুধু কি তাই? যার জন্মই কেন্দ্রের বাইরে, সে কি কখনো সন্ধান পায় সিরাতুল মুসতাকিমের? সেও কি পারে তার পূর্বপুরুষদের ধর্ম, দেবতা, ইশ্বরকে অস্বীকার করে চিরাচরিত এক মহাসত্যের দিকে ধাবমান হতে? কেউ কেউ পারে। সেই পবিত্রতম আত্মাগুলোর গল্পগুলো কেমন? সেসব নিয়েও আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমরা আশা করছি, এই বই পথহারা হাজারো তরুণ-তরুণীকে পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে, উৎসাহ যোগাবে, ইনশাআল্লাহ। জীবন জাহাজের দিশেহারা নাবিককে বাতলে দিবে পথের দিশা। সিরাতুল মুস্তাক্বীমের অমসৃণ কিন্তু সুখময় পথে হাঁটার জন্য এই বইটি যদি একজনকেও অনুপ্রাণিত করে, তবেই আমাদের শ্রম সার্থক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের কাজগুলোকে কবুল করুন। আমিন।
পথ অনেকগুলো। প্রতিটি পথের রয়েছে অনেক পথিক। কিছু আছে বক্র পথ। এই পথগুলো ধরে ধরে হাঁটতে গিয়ে কেউ কেউ নিজেকে হারিয়ে ফেলে। কিছু পথজুড়ে আছে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার। সেই অন্ধকার আপন করতে গিয়ে কেউ কেউ তার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়।
আবার এসবের বাইরেও একটি পথ আছে। সেই পথটির নাম ‘সিরাতুল মুসতাকিম’।
সিরাতুল মুসতাকিম অর্থ হলো সরল পথ। সোজা, বক্রতাবিহীন একটি পথের নামই সরল পথ। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই পথের পথিক হওয়ার জন্যই। কিন্তু পৃথিবীতে এসে সাময়িক শক্তি, সম্পদ, ঐশ্বর্য, মেধা আর আভিজাত্যের ভিড়ে আমরা ভুলে যাই আমাদের শেকড়ের কথা। আমরা ভুলে যাই আমাদের শেষ গন্তব্যস্থলের কথা। আমরা ঔদ্ধত্য হয়ে পড়ি। অহংকারী হয়ে উঠি। স্রষ্টাপ্রদত্ত বিধান ভুলে গিয়ে আমরা দুনিয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুনিয়ার মোহ আমাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। আমরা আমাদের ‘কামনা’ কে বানিয়ে ফেলি আমাদের নিয়ন্ত্রক। আর ধর্ম? সেটা হয়ে পড়ে নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতার বিষয়।
আলো ভেবে আমরা অন্ধকারকে আপন করে নিই। অন্ধকার গলিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলি নিমিষেই। এক অদ্ভুত রঙিন চশমার ফ্রেমে বন্দি চোখে তখন আমরা দুনিয়া দেখতে থাকি। সেই দুনিয়ায় ধর্ম নেই। থাকলেও তার গুরুত্ব নেই। সেই দুনিয়ায় ধর্মের, ধর্মীয় বাণী আর বিধানের গুরুত্ব কেবল মসজিদের চার দেয়ালের মধ্যেই। সভ্য মনুষ্যসমাজে সেসবের কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না।
এমনভাবেই আমরা কতক বেড়ে উঠি। আগাগোড়া শেকড় ভুলে। কিন্তু, আমাদের কেউ কেউ, যারা ভ্রান্তির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছি ক্রমেই, হঠাৎ করেই সন্ধান পাই সত্যের। খোঁজ পেয়ে বসি আলোর। সেই আলোর ঝলকানি চোখে লাগতেই আমাদের রঙিন চশমার কাঁচ ভেঙে গুঁড়ো হয়ে পড়ে। আমরা জেগে উঠি। হারানো শেকড়ের সন্ধান পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়ি। আমাদের অন্তরাত্মা তখন সত্যের অমৃত সুধা পানের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। আমাদের সেই ফিরে আসার গল্পগুলো কেমন? সেই গল্পগুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে এই বইটি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে লাখো শুকরিয়া যে, আলহামদুলিল্লাহ, কিছু ভাই এবং বোনদের দীনে ফিরে আসার গল্প আছে এখানে। এই গল্পগুলো পড়তে গিয়ে বার বার অশ্রুসিক্ত হয়েছি। নিজের সীমাবদ্ধতা যেন বার বার আমার সামনে ফুটে উঠেছে।
বইটি উঠতি যুবক-যুবতীদের, যারা দীন থেকে দূরে, তাদের জন্য দীনে ফেরার পথে সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে কবুল করুন, আমিন।