হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি বা হজ্জ কখন ফরজ হয়?

হজ্জ-ফরজ-হওয়ার-শর্ত-কয়টি-বা-হজ্জ-কখন-ফরজ-হয়

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি বা হজ্জ কখন ফরজ হয়।

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি

কোন ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। যেগুলো পূরণ হলেই কেবল তার উপর হজ্জ ফরজ হবে। মহিলাদের জন্য ঐ পাঁচটি শর্ত ছাড়াও বিশেষ আরেকটি শর্ত রয়েছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ-

১. মুসলিম হওয়া

আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে ইমানদারগণ, নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক, সুতরাং তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয় তাদের এ বছরের পর।

সূরা তাওবা : ২৮

আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক রা. আমাকে বিদায় হজের পূর্বের বছর, যে হজে তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন- এমন এক দলের সদস্য করে পাঠালেন যারা কুরবানীর দিন মিনায় ঘোষণা দিচ্ছিল, এই বছরের পর আর কোন মুশরিক হজ্জ করবে না এবং কোন উলঙ্গ ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে না।

বুখারী : ১/৩৬৯

২. আকল বা বিবেক সম্পন্ন হওয়া

তাই বিবেক শূন্য ব্যক্তির উপর হজ-উমরা জরুরী নয়। কারণ সে ইসলামের বিধি-বিধান জানা এবং আল্লাহর আদেশ বুঝার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং সে দায়িত্ব পালনে অক্ষম। তাই আল্লাহর নির্দেশ পালনে সে আদিষ্ট নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বাচ্চা, পাগল ও ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়।

ইবনে মাজাহ : ২৪০২

যদি কেউ ইহরাম বাঁধার পূর্বেই বেহুশ বা অজ্ঞান হয়, তার জন্য বেহুশ অবস্থায় ইহরাম বাঁধার অবকাশ নেই। কেননা, হজ বা উমরা আদায়ের জন্য নিয়ত করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি সে ইহরাম বাধার পর বেহুশ হয় তাহলে তার ইহরাম শুদ্ধ হবে। বেহুঁশ হওয়ার কারণে তার ইহরামের কোন ক্ষতি হবে না। এমতাবস্থায় তার সফরসঙ্গীদের উচিত তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া, সে যেন সময়মত আরাফাতে অবস্থান করতে পারে।

৩. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া

অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা-যদিও সে বুঝার মত বা ভালো-মন্দ পার্থক্য করার মত জ্ঞান রাখে- তার জন্য হজ-উমরা আবশ্যক নয়। কেননা তার জ্ঞান ও শক্তি এখনো পূর্ণতা পায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিনজন থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে : (তন্মধ্যে) শিশু থেকে, যতক্ষণ না সে যৌবনে উপনীত হয়।

তিরমিযী : ৩২৪১

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এবং শিশু থেকে যতক্ষণ না সে বালেগ হয়।

আবু দাউদ : ৩০৪

তবে বাচ্চারা যদি হজ বা উমরা আদায় করে, তবে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একজন মহিলা একটি শিশুকে উঁচু করে জানতে চাইল, হে আল্লাহর রাসূল, এর জন্য কি হজ রয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আর সওয়াব হবে তোমার।

মুসলিম : ২/৪৭৯

প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো শিশুও ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সব বিষয় থেকে দূরে থাকবে। তবে তার ইচ্ছাকৃত ভুলগুলোকে অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে গণ্য করা হবে। ভুলের কারণে তার ওপর কিংবা তার অভিভাবকের ওপর ফিদিয়া ওয়াজিব হবে না। এ হজ তার জন্য নফল হবে। সামর্থবান হলে বালেগ হওয়ার পর তাকে ফরজ হজ করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বাচ্চা যদি হজ করে, অতঃপর সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়, তবে পরবর্তীকালে সামর্থবান হলে তাকে আর একটা হজ করতে হবে।

আল-আওসাত : ২৫৭২; মাজমাউজ যাওয়ায়েদ : ৩/৬০২

৪. স্বাধীন হওয়া

ব্যক্তিকে অবশ্যই স্বাধীন হতে হবে। কারন ক্রীতদাসের উপর হজ্জ নেই। যেহেতু ক্রীতদাস তার মনিবের অধিকার আদায়ে ব্যস্ত।

৫. সামর্থবান হওয়া

আল্লাহ তা’আলা বলেন, এবং সামর্থবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহর হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।

আল ইমরান : ৯৭

আপনার কোন ঋণ থেকে থাকলে হজ করার পূর্বেই তা পরিশোধ করে নিন। যাকাত, কাফফারা ও মানত ইত্যাদি পরিশোধ না করে থাকলে তাও আদায় করে নিন। কেননা এগুলো আল্লাহর ঋণ। মানুষের ঋণও পরিশোধ করে নিন। মনে রাখবেন, যাবতীয় ঋণ পরিশোধ ও হজের সফরকালীন সময়ে পরিবারের ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা করে হজের কার্যাদি সম্পন্ন করার মত অর্থ-কড়ি বা সামর্থ যদি আপনার থাকে তাহলে হজে যেতে আপনি আর্থিকভাবে সামর্থবান। আপনার ওপর হজ ফরজ। তবে আপনি যদি এমন ধরনের বড় ব্যবসায়ী হন, বিভিন্ন প্রয়োজনে যার বড় ধরনের ঋণ করতেই হয়, তাহলে আপনার গোটা ঋণের ব্যাপারে একটা আলাদা অসিয়ত নামা তৈরি করুন। আপনার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী যারা হবেন তাদেরকে এ বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করে যান।

আপনি হালাল রিযিক উপার্জন করে হজে যাওয়ার মতো টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করুন। কখনো হারাম টাকায় হজ করার পরিকল্পনা করবেন না। যদি এমন হয় যে, আপনার সমগ্র সম্পদই হারাম, তাহলে আপনি তওবা করুন। হারাম পথ বর্জন করে হালাল পথে সম্পদ উপার্জন শুরু করুন। আর কোনদিন হারাম পথে যাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করুন।

আপনি যদি দৈহিকভাবে সুস্থ হোন। অর্থাৎ শারীরিক দুর্বলতা, বার্ধক্য বা দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে হজের সফর বা হজের রুকন আদায় করতে অক্ষম না হোন, তাহলে আপনি হজে যেতে শারীরিকভাবে সামর্থবান বিবেচিত হবেন।

এবং আপনি যদি আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থবান হোন, তাহলে আপনার উপর সশরীরে হজ করা ফরজ। আর যদি আর্থিকভাবে সামর্থবান কিন্তু শারীরিকভাবে সামর্থবান না হোন, তাহলে আপনি প্রতিনিধি নির্ধারণ করবেন, যিনি আপনার পক্ষ থেকে হজ ও উমরা আদায় করবেন।

৬. মহিলাদের জন্য মাহরাম থাকা

ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে সফরের দূরত্বে গিয়ে হজ করতে হলে মহিলাদের জন্য মাহরাম সাথে থাকা শর্ত। যে মহিলার মাহরাম নেই তার ওপর হজ ফরজ নয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে আর কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে মাহরাম থাকা ছাড়া তার কাছে না যায়। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি অমুক অমুক যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা করেছি। এদিকে আমার স্ত্রী হজের ইচ্ছা করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও।

বুখারী : ১৮৬২

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া কখনো হজ না করে।

দারাকুতনী : ২/৩০

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top