বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে জিলহজ্জ মাসে তাকবিরে তাশরিক পড়ার নিয়ম ও সময়। আইয়ামে-তাশরীক বলা হয় কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকে। অর্থাৎ জিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামে-তাশরীক বলা হয়। তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানো। মানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম ‘আইয়ামে-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
তাকবিরে তাশরিক পড়ার নিয়ম
জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন সহ ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহত্ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। এ তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে মসজিদ, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, বাজার সহ সর্বত্র পাঠ করা হবে। তবে মেয়েরা নিম্ন-স্বরে পাঠ করবে। তাকবীর হল :
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।
যিলহজ মাসের এ তাকবীরের ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম বলেন : এ তাকবীর আদায়ের পদ্ধতি সাধারণত দু প্রকার।
(এক) আত-তাকবীরুল মুতলাক বা যে তাকবীর সর্বদা পাঠ করা যেতে পারে
এ তাকবীর যিলহজ মাসের শুরু থেকে ১৩ ই যিলহজ পর্যন্ত দিন রাতের যে কোন সময় পাঠ করা যেতে পারে।
আজকে আমাদের সমাজে এ সুন্নতটি পরিত্যাজ্য হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর আমল দেখা যায় না। তাই আমাদের উচিত হবে এ সুন্নত এর প্রচলন করা। এতে তাকবীর বলার সওয়াব অর্জন হবে ও সাথে সাথে একটি মিটে যাওয়া সুন্নত জীবিত করার সওয়াব পাওয়া যাবে। হাদিসে এসেছে :—
রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন : আমার ইন্তেকালের পরে যে সুন্নত এর মৃত্যু হয়েছে তা যে জীবিত করবে সে ব্যক্তি এ সুন্নত আমলকারীদের সওয়াবের পরিমাণ সওয়াব পাবে এবং তাতে আমলকারীদের সওয়াবে কোন অংশে কম হবে না।
তিরমিজি-৬৭৭ ও ইবনে মাজাহ- ২০৯, হাদিসটি সহিহ
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও আবু হুরাইরা রা. জিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন।
বুখারী, ঈদ অধ্যায়
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল স.-এর এই দুই প্রিয় সাহাবী লোকজনকে তাকবীর পাঠের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন।
মনে রাখতে হবে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। কিন্তু সকলে একই আওয়াজে জামাতের সাথে তাকবীর পাঠ করবে না। কারণ এটা বেদআত। যেমন একজন বলল : ‘আল্লাহু আকবার’। সকলে বলল : ‘আল্লাহু আকবার’। কেননা, রাসূলুল্লাহ স. বা সাহাবায়ে কেরাম কখনো এরূপ করেননি। তবে সকলে একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন আওয়াজে তাকবীর পাঠ করতে পারবেন। তবে কাউকে তাকবীর শেখানোর জন্য এ রূপ করা হলে তার কথা আলাদা।
সতর্ক থাকতে হবে যে, আমরা কোন সুন্নত আদায় করতে যেয়ে যেন বিদআতে লিপ্ত হয়ে না পড়ি। আল্লাহর রাসূল স. ও তার সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে সুন্নত সমূহ আদায় করেছেন আমাদের তেমনই করতে হবে। এটাই হল আল্লাহর রাসূলের যথার্থ অনুসরণ। আমরা যদি সে সুন্নত আদায় করতে গিয়ে সামান্যতম ভিন্ন পদ্ধতি চালু করি তাহলে তা বিদআত বলে গণ্য হবে। হাদিসে এসেছে—
রাসূলে কারীম স. বলেছেন : যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।
বুখারী-২৬৯৮, মুসলিম- ১৭১৮
(দুই) আত-তাকবীরুল মুকাইয়াদ বা বিশেষ সময়ের তাকবীর
সেটা হল ঐ তাকবীর যা সালাতের পরে আদায় করা হয়ে থাকে। এ দ্বিতীয় প্রকার তাকবীর যা সালাতের পরে পাঠ করা হয়ে থাকে তা যিলহজ মাসের নবম তারিখ থেকে মিনার শেষ দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করতে হয়।