বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকে আলোচনা করার বিষয় হচ্ছে কোরবানি শব্দের অর্থ কি এবং কুরবানীর ফজিলত কি।
Table of Contents
Toggleকোরবানি অর্থ কি
আরবী কুরবান শব্দটি ফারসী বা উর্দুতে কুরবানী রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ নৈকট্য। আর কুরবান শব্দটি কুরবাতুন শব্দ থেকে উৎপন্ন। আরবী কুরবাতুন এবং কুরবান উভয় শব্দের শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কারো নৈকট্য লাভ করা প্রভৃতি। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যে পশু যবেহ করা হয় তার নামই কুরবান বা কুরবানী।
আল কোরআনে কুরবান শব্দটি তিন জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। আর হাদিসে কুরবান শব্দের পরিবর্তে উযহিয়্যাহ এবং যাহিয়্যাহ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। উযহিয়্যাহ কুরবানীর দিনসমূহে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে যবেহযোগ্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়াকে বলা হয়। এ শব্দটি যুহা শব্দ থেকে গৃহীত যার অর্থ পূর্বাহ্ন। যেহেতু কুরবানী যবেহ করার উত্তম সময় হল ১০ যিলহজ্জের অর্থাৎ ঈদের দিনের পূর্বাহ্নকাল তাই ঐ সামঞ্জস্যের জন্য তাকে উযহিয়্যাহ বলা হয়েছে। এটিকে আবার যাহিয়্যাহ বা আযহাহও বলা হয়। আর আযহাহ এর বহুবচন আযহা যার সাথে সম্পর্ক জুড়ে ঈদের নাম হয়েছে ঈদুল আযহা।
কোরবানির ফজিলত
১. কুরবানী দাতা কুরবানীর পশু জবাই এর মাধ্যমে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের বাস্তবায়ন করতে পারে। আল কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আর আমরা মহা কুরবানীর বিনিময়ে তাকে মুক্ত করেছি।
[সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০৭]
এ আয়াতের তাফসীরে তাফসীর বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন, সকল কুরবানী এ মহা কুরবানীর অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদ ইবনে আরকাম বর্ণিত হাদীসেও কুরবানীকে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সুন্নত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২. কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।
[সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত : ৩৭]
৩. কুরবানী আল্লাহ তাআলার অন্যতম নিদর্শন। সূরা আল-হাজ এর ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি। তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় এগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো আর যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন সেগুলো হতে খাও। আর আহার করাও ধৈর্য্যশীল অভাবী ও ভিক্ষাকারী অভাবগ্রস্তকে। এভাবে আমরা তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
[সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩৬]
এ আয়াতে কুরবানীর ফযীলত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং কুরবানীর পশুকে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
৪. পশু দ্বারা কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর যিকির বা স্মরণের বাস্তবায়ন করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে:
আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে।
[সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩৪]
৫. পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবানীর গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হতো না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কুরবানী আদায় হবে না।
কুরবানীর ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত কোন হাদীসই বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়; বরং এ সম্পর্কে বর্ণিত সবগুলো হাদীসই যঈফ ও জাল। তারপরও কুরবানীর সময় নিকটবর্তী হলে ব্যাপক আকারে এ হাদীসগুলোর ছড়াছড়ি দেখা যায়। বক্তা, লেখক, প্রবন্ধকার সমানভাবে ঐ যঈফ ও জাল হাদিস গুলো চর্চা করেন। কেউ সেগুলো জুমার খুতবায় মধুর সুরে পাঠ করেন, কেউ তা নিজ প্রবন্ধে পরিবেশন করে প্রবন্ধের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। আবার কেউ বক্তৃতার মঞ্চে পাঠ করে মঞ্চ গরম করেন। আর কুরবানীর ঈদের খুতবার সময় তো শতকরা ৯৫ ভাগ খত্বীবই ঐ হাদীসগুলোকে খুতবার মূল পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এর একমাত্র কারণ হলো চরম উদাসীনতা ও অজ্ঞতা। ইমাম মুসলিম (রহ.)- এর ভাষায়, ‘যারা যঈফ ও জাল হাদীস জেনে শুনে (সতর্কীকরণ ছাড়াই) বলে বেড়ান তারা আলেম উপাধি পাবার চেয়ে জাহেল উপাধি পাবার অধিক হকদার এবং তারা সাধারণ মুসলিম সমাজকে ধোঁকা দানকারী বলে গণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম শরীফের ভূমিকা প্র.)।