রমজান মাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ. Romjaner Amol Bangla

রমজান মাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ. Romjaner Amol Bangla

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে রমজান মাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ; রমজান মাস একটি বিশেষ ফজিলত পূর্ণ মাস। যখন আমরা এ মাসের গুরুত্ব অনুধাবন করলাম তখন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় সেই প্রচেষ্টা চালানো। এ মাসে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কুরআন নাযিল হয়েছে। যখন এ মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। একজন ঘোষণাকারী ভালো কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে।

সাথে সাথে এটা হল মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। আমাদের অনেকের ধারণা রমজান মাস সিয়াম পালন ও তারাবীহ আদায়ের মাস। ব্যাস! আর কিসের আমল? দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত থাকছি এটা কম কি? না, ব্যাপারটা শুধু এ টুকুতে সীমিত নয়। রমজান একটি বিশাল বিদ্যাপীঠ।

রমজান মাসের আমল সমূহ

রমজান মাসে আমরা কি কি নেক আমল করতে পারি তা আলোচনা করছি:

১. কিয়ামুল লাইল

কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের সালাত অর্থাৎ সালাতুত তারাবীহ।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

সহীহ মুসলিম ১৬৬৪

২. আল-কুরআন খতম ও তিলাওয়াত

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

সিয়াম ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।

আহমাদ : ৬৬২৬

হাদীসে এসেছে, রমজানে জিবরীল রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কুরআন পাঠ করে শােনাতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জিবরীলের কাছে তুলে ধরতেন। আল-কুরআন তিলাওয়াত হল সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সিয়াম পালনকারী এ যিকির থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন না।  যদি কেউ কুরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ হন, তাহলে বিভিন্ন তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ আদায়ের মাধ্যমে মুখে আল্লাহর জিকির অব্যাহত রাখবেন।

৩. সদকা বা দান

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমাযান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমাযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিবরীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিব্‌রীল (আঃ) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবাহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হতেন।

সহীহ মুসলিমঃ (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬২৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩১)

ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করে তার উম্মতের জন্য উত্তম কাজ হল, রমজান মাসে তারা বেশি করে দান-সদকা করবে। কারণ এ মাসে মানুষের প্রয়োজন বেশি থাকে।

৪. এতেকাফ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর।

সহীহ বুখারী ২০২০

ইতিকাফ প্রসঙ্গে ইমাম যুহরী বলেন, আশ্চর্যজনক হল মুসলমানরা এতেকাফ পরিত্যাগ করে অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আসার পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত কখনো ইতেকাফ পরিত্যাগ করেননি।

৫. ওমরাহ আদায়

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

রমজান মাসে ওমরাহ আদায় আমার সাথে হজ আদায়ের সমতুল্য।

মাজমাউল কাবীর : ৭২২, জামিউল আহাদীস : ১৪৩৭৯

৬. রোজাদারদের ইফতার করানো

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

যে ব্যক্তি কোন সিয়াম পালনকারীকে (রোজাদারকে) ইফতার করাবে সে সিয়াম পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে, তবে সিয়াম পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।

আহমদ : ২২৩০২

৭. দোয়া-প্রার্থনা করা

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সিয়ামের বিধান বর্ণনা করার পর বলেছেন:

আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তাে নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনায় সাড়া দেই।

সূরা আল-বাকারা : ১৮৬

তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া-প্রার্থনা করবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

তিনজনের দোয়া কবুল করা হয়; সিয়াম পালনকারীর দোয়া, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।

বায়হাকী ফি শুয়াবুল ঈমান : ৭২০৫

৮. তওবা করা

সর্বদা তওবা করা ওয়াজিব। বিশেষ করে এ মাসে তাে বটেই। এ মাসে তওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া হয়। এ ছাড়া রমজান মাসের সকল ইবাদত বন্দেগী তওবার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বলেছেন :

যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।

জামেউল উসুল : ১৪১০

তাই রমজান মাসটাকে তওবা ও ক্ষমা পাওয়ার মাস হিসেবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী আমল করা উচিত।

৯. অধিক হারে নেক আমল করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখা বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।

সহীহ বুখারী ২০২৪

১০. ইসলামী শিক্ষা অর্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান

ইসলামী শিক্ষা হল সকল প্রকার শিক্ষার মূল । তা ছাড়া দুটি বিষয় লক্ষ্য করা খুব জরুরি –

এক. ইসলামের সকল ইবাদত-বন্দেগী সঠিকভাবে আদায় করতে হলে ইসলামী শিক্ষা অর্জন করতে হয়। এ ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। সালাতের নিয়ম কানুন, সিয়ামের বিধান, জাকাতের নিয়ম-নীতি, হজের আহকাম না শিখে এগুলো আদায় করা যায় না।

দুই. আল-কুরআনের তাফসীর শেখা ও অধ্যয়ন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে আমরা যে সকল সূরা-কেরাত সালাতের মাঝে পড়ে থাকি, সেগুলোর মর্ম অনুধাবন করে তিলাওয়াত করা দরকার। কাজেই রমজান মাসকে আমরা ইসলামী শিক্ষা অর্জন ও শিক্ষার প্রসারের একটি সুযোগ হিসেবে নিতে পারি। আসলে মূর্খতার অবসান ঘটানো সিয়ামের একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করলো না, আল্লাহর নিকট তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই।

সহীহ বুখারী ৬০৫৭

হাদিসটি দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যদি মূর্খতা পরিহার না করা হয় তবে সিয়াম আল্লাহর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আর মূর্খতা ত্যাগ করা যাবে শুধু শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Book

Scroll to Top