বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি এবং কি কি।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত চারটি। নিচে তা আলোচনা করা হলোঃ-
১ম শর্ত: ব্যক্তি স্বাধীন হওয়া
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে স্বাধীন হতে হবে। কোন দাসের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কেননা দাস সম্পদের মালিক হতে পারে না। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছাদাক্বাতুল ফিতর ব্যতীত ক্রীতদাসের উপর কোন ছাদাক্বা (যাকাত) নেই।
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
যদি কেউ গোলাম (দাস) বিক্রয় করে এবং তার (দাসের) সম্পদ থাকে, তবে সে সম্পদ হবে বিক্রেতার। কিন্তু যদি ক্রেতা শর্ত করে তাহলে তা হবে তার (ক্রেতার)। বুখারী হা/২৩৭৯, বঙ্গানুবাদ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) ২/৫৬৪ পৃঃ।
অতএব দাস যেহেতু সম্পদের মালিক নয় সেহেতু তার উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। যেমনিভাবে ফকিরের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়।
২য় শর্ত: ব্যক্তি মুসলিম হওয়া
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। কোন কাফেরের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কেননা যাকাত হল পবিত্রকারী। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
উহাদের সম্পদ হতে ছাদাক্বা গ্রহণ করবে। এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে এবং পরিশোধিত করবে। (তওবা ৯/১০৩)।
পক্ষান্তরে কাফেরগণ বাহ্যিকভাবে পবিত্র হলেও শিরক ও কুফরীর কারণে তাদের অন্তর অপবিত্র। যদি তারা পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণ দান করে তবুও তারা পবিত্র হতে পারবে না। এছাড়াও যাকাত হল ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদত। আর কাফেরদের কোন ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। তিনি বলেন,
আমি তাদের (কাফেরদের) কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ্য করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’ (ফুরকান ২৫/২৩)।
জ্ঞাতব্য যে, যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ব্যক্তির সাবালিগ ও বিবেক সম্পন্ন হওয়া জরুরি নয়। এটিই আলেমদের বিশুদ্ধ মত। অতএব, নাবালক ও পাগলের সম্পদে যাকাত ফরয। অভিভাবকগণ তাদের সম্পদ থেকে যাকাত বের করবেন। [আশ-শারহুল মুমতি: (৬/২০২-৩)]
৩য় শর্ত: সম্পদ নিসাব পরিমাণ হওয়া
শরী’আত কর্তৃক সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণকে নিসাব বলা হয়। সম্পদ নির্দিষ্ট পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হলে তাতে যাকাত ফরজ।
৪র্থ শর্ত: নিসাব পরিমাণ সম্পদে এক চন্দ্র বছর পূর্ণ হওয়া
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“কোনো সম্পদেই যাকাত নেই, যতক্ষণ না তার ওপর এক বছর পূর্ণ হবে”।
সহীহুল জামে: হাদীস নং ৭৪৯৭।
সম্পদ যেদিন নিসাব পরিমাণ হবে সেদিন থেকে হিজরী বছর বা চন্দ্র বছর গণনা শুরু করবে, তবে শর্ত হচ্ছে বছর শেষ পর্যন্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ স্থির থাকা অথবা ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হওয়া। যদি বছরের মধ্যবর্তী সময়ে সম্পদ নিসাব থেকে কমে যায়, অতঃপর একই বছর পুনরায় নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে বিশুদ্ধ মতে দ্বিতীয়বার যখন সম্পদ নিসাব পরিমাণ হবে, তখন থেকে বছর গণনা শুরু করবে, প্রথম তারিখ গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ নিসাব থেকে সম্পদ কমে যাওয়ার কারণে বছর শেষ হয়ে গেছে। অধিকাংশ আলিমের মাযহাব এটি।
তবে কতক সম্পদ রয়েছে, যার যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়। যেমন, জমি থেকে উৎপন্ন ফল ও ফসল।
কারণ জমি থেকে যে দিন উৎপন্ন ফল ও ফসল কাটা হয় সেদিন তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
“আর তার (অর্থাৎ ফল ও ফসলের) হক দিয়ে দাও, যে দিন তা কাটা হয়”। [সূরা আল-আন’আম, আয়াত: ১৪১]
অনুরূপ জতুষ্পদ প্রাণীর বাচ্চার যাকাত, অর্থাৎ হিজরী বছরের মধ্যবর্তী যদি কোন পশু বাচ্চা জন্ম দেয়, সেই বাচ্চা নিসাবের সাথে যোগ হবে। অনুরূপ ব্যবসায়ী পণ্যের মুনাফা, অর্থাৎ বছরের মাঝখানে অর্জিত মুনাফা মূলধনের সাথে যোগ হবে, যদিও মুনাফার ওপর এক বছর পূর্ণ না হয়। অনুরূপ গুপ্তধন, তার ওপরও হিজরী এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়।