বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ইফতারের দোয়া, ইফতারের পরের দোয়া এবং সেহরির দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ।
রোজাদারের উচিত, ইফতার করার আগে পর্যন্ত রোজা থাকা অবস্থায় বেশী বেশী করে দুআ করা। কারণ, রোজা থাকা অবস্থায় রোজাদারের দুআ আল্লাহর নিকট মঞ্জুর হয়।
মহানবী সঃ বলেন, তিন ব্যক্তির দুআ অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দুআ, রোযাদারের দুআ এবং মুসাফিরের দুআ।
সিলসিলা সহিহা হাদিস নং ১৭৯৭
Table of Contents
Toggleইফতারের দোয়া
পক্ষান্তরে ইফতার করার সময় দুআ কবুল হওয়ার কথা বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ ব্যাপারে যা কিছু বর্ণনা করা হয়, তা যয়ীফ। অনুরূপ ইফতারের সময় একাকী বা জামাতে হাত তুলে দুআও বিধেয় নয়। কারণ, মহানবী সঃ বা তাঁর সাহাবাগণের তরীকায় এ আমলের বর্ণনা মিলে না। অতএব রোজাদার সতর্ক হন। এ স্থলে পানাহার করার সময় যে সব দুআ সাধারণভাবে পঠনীয় তা নিম্নরূপঃ
১। পানাহারের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা
মহানবী সঃ তা বলতে আদেশ করেছেন।
বুখারী ৫৩৭৬, মুসলিম ২০২২
আর তিনি এ কথাও জানিয়েছেন যে, তা না বললে শয়তান ভোজনকারীর সাথে ভোজনে অংশগ্রহণ করে থাকে।
একদা একটি বালিকা এবং একজন বেদুঈন ‘বিসমিল্লাহ’ না বলেই খেতে শুরু করতে চাইলে মহানবী সঃ তাদের হাত ধরে ফেললেন এবং বললেন যে, শয়তান তাদেরকে এভাবে খেতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তাদের হাতের সাথে শয়তানের হাত তার হাতে ধরা আছে। আসলে শয়তান তাদের সাথে খেতে চাচ্ছিল।
মুসলিম ২০১৭, আদাবুল মুফরাদ ৩৭৬৬
২। খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে এবং খেতে খেতে মনে পড়লে বলতে হয়
উচ্চারণঃ- বিসমিল্লা-হি আউওয়ালাহু অ আ-খিরাহ। অর্থঃ- শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নাম নিয়ে খাচ্ছি।
আদাবুল মুফরাদ ৩৭৬৭, তিঃ ১৮৫৮, ইমঃ ৩২৬৪ ইগঃ ১৯৬৫
৩। খাওয়া শেষ হলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা
যেহেতু কিছু খাওয়া অথবা পান করার পরে বান্দা আল্লাহর প্রশংসা করুক এটা তিনি পছন্দ করেন।
মুসলিম ২৭৩৪, আঃ ৩/১০০, ১১৭, তিঃ ১৮১৬
ইফতারের পরের দোয়া
আর ইফতার করার সময় যে দুআ প্রমাণিত, তা ইফতার করার পর পঠনীয়। ইবনে উমার রাঃ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সঃ ইফতার করলে এই দুআ বলতেন,
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَ ابْتَلَّتِ العُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الأَجْرُ إنْ شَاءَ الله
উচ্চারণঃ- জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থঃ- পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইনশাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল।
আদাঃ ২৩৫৭,সআদাঃ ২০৬৬
ইফতারের সময় এই দোয়া সবচেয়ে সহীহ রূপে নবী সঃ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া ইফতারের অন্যান্য (লাকা সুমতু, ইত্যাদি) দুআ বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত নয়।
সেহরির দোয়া
সেহরির জন্য বিশেষ কোন দোয়া নেই; তবে খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হবে এবং খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে, অন্যান্য সময়ের মতো।
রোজার জন্য নিয়ত করতে হবে সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই। নিয়ত হল, হৃদয়ের কাজ; তার সাথে মুখের কোন সম্পর্ক নেই; তার প্রকৃতত্ব হল, মহান আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যে কোন কাজের সংকল্প করা; বলা বাহুল্য, নাওয়াইতু আন আসূম্মা গাদাম মিন শাহরি রামাযান’ বলে নিয়ত পড়া বিদআত; আসলে যে ব্যক্তি মনে মনে এ কথা জানবে যে, আগামী কাল রোজা, অতঃপর রোযা রাখার উদ্দেশ্যে সে সেহরি খাবে, তার এমনিই নিয়ত হয়ে যাবে। তদনুরূপ যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ চিত্তে দিনের বেলায় (ফজর উদয় কাল থেকে সূর্য অস্ত কাল পর্যন্ত) সকল প্রকার রােযা নষ্টকারী জিনিস থেকে বিরত থাকার সংকল্প করবে, তার নিয়ত হয়ে যাবে, যদিও সে সেহরি খেতে সুযোগ না পেয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলি সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।