বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে যানবাহনে উঠার দোয়া বা গাড়িতে উঠার সময় কোন দোয়া পড়তে হয়।
Table of Contents
Toggleযানবাহনে উঠার দোয়া
হজরত আলি ইবনে রবিয়াহ রাঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি হজরত আলী রাঃ কে দেখেছি, তার নিকট একটি চতুষ্পদ জন্তু আনা হল; যেন তিনি তাতে আরোহণ করতে পারেন। তিনি যখন-
১. (শুরুতেই) তাঁর (চতুষ্পদ জন্তুর) ওপর নিজের পা রাখলেন (তখন) বললেন-
بِسْمِ اللَّهِ – বিসমিল্লাহ বা আল্লাহর নামে (শুরু করছি);
২. যখন তার বাহনে (সিটে বা আসনে) স্থির হয়ে বসলেন (তখন) বললেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ – আলহামদুলিল্লাহ বা সব প্রশংসা আল্লাহ জন্য;
৩. অতঃপর (এ আয়াত পড়লেন) বললেন-
سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুক্বরিনিন।
অর্থ : পবিত্র সেই মহান সত্তা! যিনি এগুলোকে (সব যানবাহন) আমাদের বশীভূত (নিয়ন্ত্রণাধীন) করে দিয়েছেন। আর আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না। (সুরা যুখরুফ : আয়াত ১৩)
৪. অতঃপর তিনবার বললেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ আল-হামদুলিল্লাহি; সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
৫. অতঃপর তিনবার বললেন-
اللَّهُ أَكْبَر : আল্লাহু আকবার; আল্লাহ মহান।
৬. তারপর (এ দোয়া) বললেন-
سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : সুবহানাকা ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।
অর্থ : আপনি কতই-না পবিত্র সত্তা! নিশ্চয়ই আমি আমার নিজের নফসের উপর জুলুম করেছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
৭. অতঃপর তিনি (হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু) হাসলেন।
বলা হল (জানতে চাওয়া হল)- হে আমিরুল মুমিনিন! (আপনি) কি জন্য হাসলেন?
তিনি বললেন- আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি। তিনি যেরূপ করেছেন; আমিও তদানুরুপ করেছি; অতঃপর (দোয়া ও তাসবিহগুলো পড়ার পর) তিনি হেসেছেন। আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেন-
নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন যখন সে বলে: “(হে আমার রব্ব!) আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন”। আর বান্দা তো জানে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
গাড়িতে চড়ার দোয়া হাদিস
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ الْهَمْدَانِيُّ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيعَةَ، قَالَ شَهِدْتُ عَلِيًّا – رضى الله عنه – وَأُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ قَالَ بِسْمِ اللَّهِ فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ ثُمَّ قَالَ { سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ * وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ } ثُمَّ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ . ثَلاَثَ مَرَّاتٍ . ثُمَّ قَالَ اللَّهُ أَكْبَرُ . ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ . ثُمَّ ضَحِكَ فَقِيلَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَىِّ شَىْءٍ ضَحِكْتَ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَعَلَ كَمَا فَعَلْتُ ثُمَّ ضَحِكَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ أَىِّ شَىْءٍ ضَحِكْتَ قَالَ ” إِنَّ رَبَّكَ يَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهِ إِذَا قَالَ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرِي ” .
আলী ইবনু রবীআহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ‘আলী (রাঃ) এর কাছে আরোহণের একটি পশু আনা হলে তিনি এর পা-দানিতে পা রাখতেই বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’ এবং এর পিঠে চড়ে সোজা হয়ে বসে বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ”। অতঃপর তিনি এ আয়াত পড়লেনঃ “সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুক্বরিনিন।” অর্থাৎ “মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রব্বের নিকট ফিরে যেতে হবে” (সূরা আয-যুখরুফ : আয়াত ১৩-১৪)। পুনরায় তিনি তিনবার ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ এবং তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন।
অতঃপর বললেন, “সুবহানাকা ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।” অর্থাৎ ”(হে আল্লাহ!) আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমিই আমার উপর যুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না”। অতঃপর তিনি হেসে দিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেন, আমি যেরূপ করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও এরুপ করতে দেখেছি। তিনি যখন হেসেছিলেন তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন যখন সে বলে: “(হে আমার রব্ব!) আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন”। আর বান্দা তো জানে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
আবু দাউদ ২৬০২, তিরমিজি ৩৪৪৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস