বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও মোনাজাত সমূহ আরবি ও বাংলায়।
Table of Contents
Toggleমৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার সময় পঠিতব্য দোয়া
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আবু সালামার নিকট আসলেন, এমতাবস্থায় তার চক্ষু খোলা ছিল, তিনি তাঁর চক্ষু বন্ধ করলেন। অতঃপর বললেন, রূহ যখন কবয করা হয় তখন চক্ষু তার অনুসরণ করে। এ কথা শুনে আবু সালামার পরিবারের কিছু লোক চিৎকার করে কেঁদে উঠল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা তোমাদের আত্মার জন্য কল্যাণ ছাড়া অমঙ্গল কামনা কর না। তোমরা যা বল ফেরেশতাগণ তার সাথে সাথে আমীন বলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন,
اللّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِىْ سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَه فِي الْمَهْدِيِّيْنَ وَاخْلُفْهُ فِىْ عَقِبِه فِي الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَه يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَأَفْسِحْ لَه فِي قَبْرِه وَنَوِّرْ لَه فِيْهِ
উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মাগফির লিয়াবী সালামাহ, ওয়ারফা’ দারাজতাহূ ফিল মাহ্দীয়্যিন, ওয়াখ্লুফ্হু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গ-বিরীন, ওয়াগ্ফির লানা-ওয়ালাহূ ইয়া-রব্বাল আ’-লামীন, ওয়া আফসিহ লাহূ ফী ক্বব্রিহী, ওয়ানাওয়ির লাহূ ফিহী।
অর্থ : হে আল্লাহ! আবূ সালামাকে মাফ করে দাও। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। তার ছেড়ে যাওয়া লোকদের জন্য তুমি সহায় হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও। তার জন্য ক্ববরকে নূরের আলোতে আলোকিত করে দাও।
মুসলিম ২০১৫, মিশকাত ১৬১৯।
যে কোন মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়াটি সংক্ষিপ্ত করে এভাবে বলা যায়
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ
উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মাগফির লাহু ওয়ারফা দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়ীনা ওয়াফসাহ: লাহু ফী কবরিহী ওয়া ওয়ানাওয়ির লাহু ফীহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও। আর হেদায়েত প্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দাও। তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা কর।
জানাযার সালাতে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন জানাযার সালাত পড়তেন তখন বলতেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبَنَا وَصَغَيْرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اللَّهُمَّ مَنْ أحييته منا فَأَحْبِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوْقَهُ عَلَى الْإِيْمَانِ اللَّهُمُ لَا تَحْرِمْنَا أَخْرَهُ وَلَا تَفْنا بَعْدَهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়িনা- ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা-ওয়া গ-য়িবিনা- ওয়া স্বগীরিনা- ওয়া কাবীরিনা- ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছা-না, আল্লাহুম্মা মান আহ:ইয়াইতাহু মিন্না ফাআহ:য়িহী ‘আলাল ইসলাম, ওয়া মাং তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান, আল্ল-হুম্মা লা- তাহরিমনা আজরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বা’দাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর- নারী সকলকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদের জীবিত রাখবে, তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ। আর যাদের মৃত্যু দান করবে, তাদের ঈমানের সাথে মৃত্যু দান কর। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার নেকী হতে বঞ্চিত কর না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না।
মিশকাত ১৬৭৫।
আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন,
রাসূল (ছাঃ) একবার এক জানাযার সালাত পড়ালেন। আমি তার দোয়ার কিছু অংশ মনে রেখেছি। তিনি বলেছিলেন,
اللّهُمَّ اغْفِرْ لَه وَارْحَمْهُ وَعَافِه وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَه وَوَسِّعْ مُدْخَلَه وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ وَنَقِّه مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِّنْ دَارِه وَأهْلًا خَيْرًا مِّنْ أَهْلِه وَزَوْجًا خَيْرًا مِّنْ زَوْجِه وَأدْخِلْهُ الْجنَّةَ وَأعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়ারহামহু ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহু ওয়া ওয়াসি মাদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমা-এ ওয়াচ্ছালজে ওয়াল বারাদি; ওয়া নাকৃদ্ধৃিহি মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইউনাকুকৃাছ সাওবুল আবইয়ায়ু মিনাদ দানাসি, ওয়া আবদিলহু দা-রান খাইরান মিন দারিহী ওয়া আহলান খায়রাম মিন আহলিহি ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহী; ওয়া আদখিহুল জান্নাতা ওয়া আইযহু মিন ‘আযাবিল কৃাবরে ওয়া মিন ‘আযা-বিন না-র।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর রহম কর, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দান কর, তাকে ক্ষমা কর, মর্যাদার সাথে তার আপ্যায়ন কর, তার বাসস্থান প্রশস্ত কর। তুমি তাকে ধৌত করে দাও পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে তুমি তাকে পাপ হতে এমন ভাবে পরিষ্কার কর যেমন ভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তাকে দুনিয়ার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর প্রদান কর। তাকে দুনিয়ার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার দান কর। তার দুনিয়ার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী দান কর এবং তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও।
মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৫৫, জানাযা অধ্যায়।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার দোয়া
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমরা লাশ কবরে রাখ, তখন বল,
بِسْمِ اللَّهِ، وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
বিসমিল্লা-হি ওয়া আলা মিল্লাতি রসূলিল্লাহ।
আল্লাহর নামে এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর মিল্লাতের উপর (লাশকে কবরে রাখছি)।
আবু দাউদ ৩২১৩, বুলুগুল মারাম ৫৭৫।
মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে কবরে রাখা সুন্নাত। চিৎ করে এবং বুকের উপর হাত রেখে কবরে রাখার কোন প্রমাণ নেই। আর মাটি দেওয়ার সময় বিসমিল্লাহ ছাড়া কোন দোয়া নেই।
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দোয়া
উসমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মুরদাকে দাফন করে অবসর গ্রহণ করতেন তখন বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তোমরা তাঁর জন্য কবরে স্থায়িত্ব চাও (অর্থাৎ সে যেন ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে)। এখন তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে’ (আবু দাউদ, মিশকাত।
উল্লেখ্য যে, দাফনের পর বলা যায়,
আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়া সাব্বিতহু।
হে আল্লাহ! তুমি এই মৃতকে ক্ষমা কর ও তাকে দৃঢ়পদ রাখ।
আর জানাযার দোয়া গুলিও ব্যক্তিগতভাবে পড়া যায় (আবু দাউদ, মিশকাত; হিসনুল মুসলিম, দোয়া নং ১৬৪)।
দাফনের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দোয়া করা বিদ’আত এবং বহুল প্রচলিত মাটি দেয়ার দোয়াটিও নিতান্তই যঈফ, যা পরিত্যাজ্য।
কবর জিয়ারতের দোয়া
বুরাইদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে এ দোয়া শিক্ষা দিতেন, যখন তারা কবর জিয়ারতে বের হতেন,
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ اِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ – نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَ لَكُمُ الْعَافِيْة
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা ওয়া ইন্না ইংশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুনা – নাসআলুল্লাহা লানা ও লাকুমুল আফিয়াহ।
অর্থ : হে কবরবাসী মুমিন মুসলমান! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক; আর যখন আল্লাহ চাইবেন, আমরাও অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো; আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য শান্তি প্রার্থনা করছি।
সহীহ মুসলিম হাদিস নং ২১৪৭, আবু দাউদ হাদীস নং ৩২৩৭।
অন্য বর্ণনায় নিম্নরূপ দোয়াও বর্ণিত হয়েছে,
السَّلَامُ عَلى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ
উচ্চারণ: আসসালা-মু ‘আলা- আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ার্হামুল্ল-হুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না- ওয়াল মুস্তা’খিরীনা, ওয়া ইন্না-ইন্শা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূন।
অর্থ: সালাম বর্ষিত হোক মু’মিন মুসলিমের বাসস্থানের অধিবাসীদের প্রতি! আর আল্লাহ আমাদের রহম করুন যারা প্রথমে চলে গেছে আর যারা পরে আসবে তাদের উপর, ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব।
মিশকাত, হা/১৭৬৭।
উল্লেখ্য যে, কবর জিয়ারতের বহুল প্রচলিত দোয়ার প্রমাণে হাদীছটি যঈফ। দোয়াটি নিম্নরূপ,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنتُمْ سَلَقْنَا وَنَحْنُ بِالْآثر