জীবন যেখানে যেমন pdf, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ pdf download, jibon jekhane jemon pdf arif azad free download google drive
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আরিফ আজাদ এর লেখা জীবন যেখানে যেমন বই এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে ”download” লেখার উপর ক্লিক করুন; তারপর গুগল ড্রাইভে ডাউনলোড চিহ্নের উপর ক্লিক করুন।
জোছনা প্লাবিত রাতের ধবধবে সাদা আকাশ। কোথাও যেন ডাহুক ডাকছে। বুনো ফুলের গন্ধে বাতাস আশ্চর্যরকম ভারী। চাঁদের আলোতে নদীর পাড়ের বালি গুলো রূপাে চূর্ণের মতো ঝিকমিক ঝিকমিক করছে। থেকে থেকে কানে আসছে কিছু পাতি শিয়ালের ডাক। এসবের বাইরে পুরো দুনিয়াজুড়ে যেন গা ছমছমে নীরবতা। কোথাও কোনো সাড়াশব্দের বালাই নেই।
জোছনার জোয়ার ভেদ করে, গ্রামীণ মেঠো পথের ধুলো উড়িয়ে, বুনো ফুলের বুনাে গন্ধকে পাশ কাটিয়ে দুজন মানুষ গন্তব্যে ফিরছে। দুজন বলা কি ঠিক? ওদের সাথে তো আরও একজন আছে। চাদরে মোড়ানো বরফ-শীতল আস্ত একখানা শরীর—নড়চডুবিহীন। তাকেও কি গোনায় ধরা যায়? জীবনের সম্ভাব্য সকল পাঠ চুকিয়ে যে পাড়ি জমিয়েছে অন্য জগতে, এই জগতের বাসিন্দাদের তালিকায় তার নাম উঠানো উচিত হবে?
মাঝে মাঝে বলদগুলাে চেঁচিয়ে উঠছে। গোঙানি উঠলেই তাদের পিঠে বসে যাচ্ছে শানু মিয়ার বেতের বাড়ি। এই জোছনা মুখরিত রাতে, অরণ্যের এই সরু পথ চিনে চলতে বলদ গুলোর বিশেষ অসুবিধা হবার কথা নয়। তবু পথ চলতে আজ তাদের রাজ্যের অনীয়। কে জানে, চাদরে মোড়ানো ওই যে নিথর শরীর, তার ভারে হয়তাে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে বারবার। এ ভার বয়ে নিয়ে যাওয়া কি এতই সোজা?
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
সত্যিই কি সোজা নয়? যদি নাই বা হবে, শহিদুলের কোলের ওপর ওই নিন শরীরখানা, ওৰে নিশ্চিন্তে পড়ে আছে, কীভাবে? যে পাথরে শরীরের ভার বইতে বলদের অপারগ, তার ভার কতাে সহজেই বয়ে নিয়ে যাচ্ছে শহিদুল। তার কোলে কেমন নিবিড় নিশ্চিন্তে পড়ে আছে ওই দেহখানা। শহিদুলেরও যেন কোনো ক্লান্তি নেই। সেও নিরাবেগ, নিশ্চল, নিশ্চল।
কথা শুরু করে শাদু মিয়া। এই ঘন গহীন অরণ্যের মাঝে, যেখানে বন্য জন্তুরাও বেঘোর ঘুমে অচেতন, সেখানে কতক্ষণই বা আর চুপচাপ পথ চলা যায়? অন্তত শানু মিয়ার মতো মুখরা মানুষের পক্ষে এতােক্ষণ মুখ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়।
‘তা ভাইজান, পােলাড়া মরলাে কেমন কইরা?’
মরে গেছে? সংবিৎ ফিরে পায় শহীদুল। সত্যিই মরে গেছে? তার ফুটফুটে আদরের সস্তান, যার মাত্র চার মাস হলাে বয়স, সে কি মরে গেছে? তুলতুলে হাতখানা ধরে। কতাে আদরই না করতাে শহিদুল! দেখতে ভারি সুন্দর হয়েছিলাে ছেলেটা! সেদিন ডাক্তার কললাে, আপনার ছেলের বয়স কতো?”
‘চার মাস’, অস্ফুটে জবাব দিয়েছিলাে শহিদুল।
ড্রাত্তার যেন বিশ্বাস করলো না তার কথা। মুখ তুলে, চশমার পাতলা কারে ভেতর দিয়ে ভালাে করে আরেকবার দেখল বাচ্চাটাকে। এরপর বললাে, “বাচ্চার ডেভলপমেন্ট তো খুবই ভালাে। দেখে মনে হচ্ছে, এক বছর বয়স।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
অমন আদুরে চেহারা ছিলো যে, কেউ কোলে না নিয়ে থাকতে পারতাে না। তুলতুলে শরীর। সবটা ছাড়িয়ে, তার মুখের হাসিটা হিলে ভবনভােলানাে। চোখে চোখ রেখে, মুখখানা খানিক বাঁকিয়ে যখন সে হাসতাে, শহিদুলের মনে হতাে, জগতের সকল সরুলতা, মুগ্ধতা আর বিস্ময় যেন তার চেহারায় এসে মাখামাখি করছে। তার নিটোল চাহনির দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়া যায় একটা মানবনম। কিন্তু, একেবারে হঠাৎ করে, সেদিন প্রচণ্ড জ উঠলাে তার। চোখমুখ ফুলে বিপন্ন অবস্থা। ট্রান্তার জানাল তার ‘আমাশয় হয়ে গেছে। সাধারণ আমাশয় না, রক্ত আমাশয়। তা যত্ন-খেয়াল, কত আদর আর আলিঙ্গনের কাড়াকাড়িতার মাঝেও ছেলেটার এমন একটা রােগ হয়ে গেলাে? তারপর, তারপর একদিন অকথা, একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে শরীরে যিনি এসে কাহিল করে দিলো তাকে। হাসপাতালে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, ততােক্ষণে সে আর নেচে নেই।
বেঁচে নেই! কতাে সহজেই হয়ে গেলাে বলা! অথচ, শহিদুলের কাছে সে ছিলাে তারা ঝলমলে এক পৃথিবী। যেদিন তার জন্ম হয়, যে ভােরবেলায়, কতাে কাণ্ডই না। সেদিন করেছিলাে শহিদুল। তার পাগলামােতে হাসপাতালের সকলে অতিষ্ঠ হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেছিলাে, ‘পাগল!” হ্যাঁ, পাগলই তাে। কতাে বছর, ঠিক কতাে বছর পরে শহিদুলের ঘর আলাে করে এই রত্নখানি এসেছে, তা কি এই মানুষগুলো জানে? আল্লাহর কাছে কতাে করজোড় মিনতি, কতাে আকুল প্রার্থনা, ব্যাকুল আকাক্ষার বহিঃপ্রকাশ এই ফল, তা কি কেউ বুঝবে?
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
হেলেপুলে এগিয়ে চলছে শাদু মিয়ার বলদ-গাড়ি। শহিদুল নিরুত্তর। শাদু মিয়া শহিদুলের মনের অবস্থা বােঝার চেষ্টা করে। তার বুকের ভেতর কালনকাশেখির যে তাণ্ডব বয়ে যাচ্ছে—সেটা শানু মিয়ার অজানা নয়। সন্তান হারানাের শােকের সাথে শাদু মিয়াও সবিশেষ পরিচিত। তার ছােটো মেয়ে পারুল, সবে হটিতে শিখেছিল কেবল। এক দুপুরে, কোন ফাঁকে যে সে পুকুরতলায় চলে গিয়েছিল, তা আজও রহস্য। অতটুকুন মেয়ে, গুটিগুটি পায়ে অতটুকু পথ পাড়ি দিয়ে সােজা পুকুরে গিয়ে পড়বে আর সারাবাড়ির কেউ তাকে একটিবারের জন্যও দেখবে না—তা কি কম আশ্চর্যের ব্যাপার। সারাদিন খুঁজে খুঁটেও পারুলের হদিস মিললাে না। পরে, সন্ধ্যের আগে আগে আস্ত পারুল ভেসে উঠলাে পুকুরের মাঝে। পারুলের মৃত্যু নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা, অনেক লােক-গল্পের অবতারণা হয় মানুষের মুখে মুখে। সময় গড়িয়ে যায়, কেবল নেভে না শানু মিয়ার বুকের দহন। ছােট্ট পারুলের সােনাবরণ চাহনিটা যেন আজও সমস্ত সৌন্দর্য, সমস্ত ঐশ্বর্য নিয়ে শালু। মিয়ার চোখের সামনে ভাস্বর হয়ে আছে। অতএব, শানু মিয়া বােঝে সন্তানহারা পিতৃহৃদয়ের যাতনা।
যাত্রী হিশেবে শহিদুলের সাথে আরও একজন আছে। মিনু; শহিদুলের স্ত্রী। সেও নিরুত্তর। নিস্পলক। তার চোখের দৃষ্টি কোথায়, কোন দিগন্তে গিয়ে যে স্থির হয়ে গেলাে, তা কেউ জানে না। যে জঠর ভেদ করে একদিন এসেছিল প্রাণের ফোয়ারা, সেই ফোয়ারা আজ ফুরিয়ে গেছে। নিঃশেষে মিলিয়ে গেছে শূন্য দিগন্তে। মিনুর বুক ফেটে কান্না আসে, কিন্তু সে কাঁদতে পারে না। অশ্রুরাও আজ পলাতক চোখ থেকে। নিদারুণ অবসাদে ভেঙে আসে শরীর, বিপন্ন বিষাদে ক্ষতবিক্ষত সে, কাতর আর্তনাদে গুঙিয়ে ওঠে মন, তবু আজ যেন কাঁদতে মানা। আজ কি কাবার দিন?
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
পাথরের মূর্তির মতন বসে থাকে সেও। জোছনা রাঙানাে রাতের আকাশ, বুনাে ফুলের মনােহর গন্ধ, মাঝে মাঝে ডাহুকের ডাক—এ সবকিছু জুড়ে মিনুর কতো মুগ্ধতা! কিন্তু, শােক আর শখের লড়াইয়ে আজ শােকটাই জীী। এই তারাভরা রাত, অরণ্যের অসামান্য সৌন্দর্য—কোনােকিছুতেই আজ মিনুর মুগ্ধতা নেই। শদু মিয়ার বলদের গাড়ি যখন জালাল মাস্টারের উঠোনে এসে পৌঁছােয়, তথন আকশ ধবধবে ফর্সা হয়ে গেছে। ভোরের সোনারঙা রােদ এসে পাতায় পাতায় জাগিয়ে তুলেছে শিহরণ। ঘুম ভেঙেছে পাখ-পাখালির। তাদের মুখরিত কলরব চারদিকে তৈরি করেছে ব্যস্ততার আবহ। সবুজ ঘাসের মাথায় জমে থাকা। শিশিরবিন্দুর ওপর রােলের ছোঁয়া এসে লাগায় সেগুলাে স্বর্ণরেণুর মতন ঝলমল করে উঠলাে। ভোর হয়েছে।
জালাল মাস্টারের বাড়িতে শােক যাপনের একটা আগাম প্রস্তুতি নেওয়া ছিলাে, কেবল আনুষ্ঠানিক যাত্রা পর্বটাই বাকি। শহিদুলদের আগমনে যেন সমস্ত শােক আছড়ে পড়লাে বাড়িটার প্রশস্ত উঠোনে। বাড়ির মহিলারা ডুকরে কেঁদে উঠলাে। হায় হায় রব উঠলাে আকাশে-বাতাসে। শহিদুলের মা, পাথর হয়ে বসেছিলেন উঠোনের এক কোণে। শহিদুলের কোলে চাদরে মুড়ানো নিথর শরীরটার দিকে দৃষ্টি পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনিও। বুক চাপড়ে কান্না-বিজড়িত গলায় বলতে লাগলেন, ‘এ কী হলাে রে টিা তাে! এ কী হলাে!”
শােকের মাতমে জালাল মাস্টারের বাড়ি তখন আচ্ছন্ন। শােকে মুহ্যমান মানুষগুলাের চেহারায় ভর করেছে ঘন বিষাদের কুয়াশা। রােদের ঐীব্রতাও এই কর্মশা কাটাতে পারে না। একখানা মানুরে আলতাে করে শহিদুল শুইয়ে দিলাে তার কোলে থাকা নিথর শরীরটাকে। তারপর, আস্তে আস্তে ‘অনাবৃত করলাে তার চেহারা। যখন চালরের আবরণ ভেদ করে প্রস্ফুটিত হলাে সন্তানের অবয়ব, শহিদুল, আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। জমানাে শোকের ভার আর সইতে পারল না সে। সন্তানের অনড় দেহটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাে। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুলল সারা দেহ।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
এখনাে পাথর মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিনু। মালুরে শােয়ানাে সন্তানের দিকে তার দৃষ্টি নিখ। চেহারায় নেমে এসেছে কালবােশেখির সমস্থ ঘন কালাে মেঘ। তার অসহায় চাহনি, ব্যথাতুর চোখে সে যেন শেষ বারের মতন দেখে নিচ্ছে বুকের মানিককে।
“রাক্ষসী! বিপুল জনতার স্রোতে একটা রব উঠেছে বটে! ও-বাড়ির আলেয়ার মা, যাকে সবাই রাঙা মা বলে ডাকে, তার মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে এই শব্দ। মুহূর্তে জনতার সকল মনােযােগ, সকল আকর্ষণ যেন এই একটি শব্দকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে শুর করে। এ-কনি ও-কান থেকে সাত-পাঁচ-দশ কান হয়ে গেলাে। সবার তীক্ষ তীর্যক দৃষ্টি এসে পড়লাে উঠোনের অন্য পাশে, জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেচারি মিনুর পর।
ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলাে শহিদুলের মা। আলেয়ার মায়ের মুখােচ্চারিত শব্দটাকে দ্বিগুণ উৎসাহের সাথে লুফে নিয়ে, সেই শব্দটাকে পুনরায় বাতাসে গুঞ্জরিত করে দেওয়ার কাজটা খুব ভালােমতোই কন্নতে পারলেন তিনি। আর বহুগুণ শােকে যেন ভেঙে পড়লেন আলেয়ার মায়ের আঁচলে। কান্না আর ক্ষোভের দারুণ সংমিশ্রণে তিনি বলতে লাগলেন, ঠিক কইছেন, বুজান। বউ নয়, এ সাক্ষাৎ রাক্ষী । আমার ছেলেভার জীবনটারে তামা তুমি কইরে দিলাে এই পােড়ামুখী। আমার ছেলে, সংসার সব তছনছ কইরা দিলাে গাে, বু। আমার সব শেষ। শেষমেশ আমার নাতিডারেও খাইলাে এই জলানী।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
অপলক তাকিয়ে আছে মিনু। কোন শােক সামাল দেবে সে? পুত্ৰ-বিয়ােগের শােকে করি হবে, নাকি অসহায় আর্তনাদে আর্তচিৎকার করে উঠবে তার দিকে ধেয়ে আসা অপবাদের অপমানে? মুহূর্তে এই অপবাদের সুর বাতাসের গতিতে হুড়মুড় করে ছড়িয়ে পড়লাে বাড়িময়। সবার কাছে একটি ছােট্ট শিশুর মৃত্যু ঘটনার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শহিদুলের বউয়ের রাক্ষসী হয়ে ওঠার গল্পটাই। চারিদিক থেকে ভেসে আসতে লাগলাে চি-চিক্কার! মহিলারা মুখে কাপড় দিয়ে বলছে, ‘রাক্ষসীই বটে!’ পুরুষেরা ধি-ধিক্কার করছে শহিদুলকে। এমন অপয়া, অলক্ষুণে মেয়ের সাথে কেন সে ঘর সংসার করছে, তা-ই উপস্থিত জনতা বুঝে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
কাহিনির নেপথ্য কারণ আরও পেছনে, আরও গভীরে। ছেলের বউ হিশেবে মিনু কখনােই শহিদুলের মায়ের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারেনি। নেহাত শহিদুল এবং তার বাবার পছন্দের বলেই মিনু এ বাড়ির বউ হয়ে উঠতে পেরেছিল। কিন্তু মিনুর কপালের লিখন যে অন্য! যে সন্ধ্যায় শহিদুল মিনুকে ঘরে তুলে আনে, ঠিক ওই রাতেই শহিদুলের বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। একেবারে হঠাৎ মৃত্যু যাকে বলে! সে রাতেও বেশ কানাকানি, বেশ কথা চালাচালি হয়েছিলাে কারও কারও মাঝে। আইজকার দিনেই এমন ঘটলাে?’ বলে শিয়ায় প্রকাশ করেছিলাে আশপাশের চাচি-জেঠিরা। সভ্যতার সম্ভাব্য সকল আলো থেকে দূরে, এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঝে এমন একটা ঘটনা থেকে যে নানান ডালপালা গজাবে, তা তো জানা কথাহি। জালাল মাস্টারের বাড়িতে তা-ই হলাে।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
তবে শহিঙ্গুলের অপ্রতিরােধ্য ভালােবাসা, অপরিসীম প্রেম আর সুষম শিক্ষার কারণে সেদিন সেই গুঞ্জন খুব বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু ঘটনার সেখানেই সরল সমাপ্তি ছিলো না। তাদের বিয়ের এক মাসের মধ্যে একটা দুধেল গাভি হঠাৎ বিকারে ধড়ফড়াতে ধড়ফড়াতে মারা গেলো। বর্ষার ভারী বর্ষণে সেবার শহিদুলদের চাষের দু-বিঘা জমি ফসল সমেত অথৈ পানির তলায় তলিয়ে গেলাে। ঘটনা যখন এই, তখন কি আর পড়শিদের বুঝতে বাকি থাকে কিছু? সন্দেহের সকল সংঘবদ্ধ ত্রির ধেয়ে এলাে মিনুর দিকেই। ও মেয়েটাই অপয়া। ওর জন্যই এমন গেরস্তু ঘরের আজ এই দুর্গতি।
শহিদুল বাধ্য হয়ে মিনুকে শহরে তুলে আনে। মাকে কতো অনুনয়-বিনয় করেছিলো। তার সাথে শহরে এসে থাকতে; কিন্তু তিনি রাজি হননি। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটে-মাটি ছেড়ে তিনি দূর প্রবাসে গিয়ে থাকবেন, এ তাে সুগেরও অতীত। কল্পনারও বাইরে। অতএব, শহিদুল মিনাকে নিয়েই শহরে সংসার পেতেছিলাে। “মিনু অপা’—এমন কুসংস্কারে শহিদুল কখনােই কর্ণপাত করেনি। ধর্মীয় শিক্ষা তরি থটই আছে। মিনুরও ধর্মীয় শিক্ষার কমতি নেই। তাই গ্রামের সরল মানুষের গরুল ভাবনা তাদের দূরত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারেনি কখনােই।
শহিদুলের মা মিনুকে উদ্দেশ্য করে বললো, “দাখ দ্যাখ, রাক্ষসীর দিকে তাকাতে দ্যাখ। এক ফোঁটা জল নাই চোক্ষে। এক ফোঁটা কান্দনের আলামত নাই। শ্বশুররে খাওনের পর নিজের পােলাভাবেও খাইলাে ডাইনিটা। ও আল্লাহ, তুমি আমার বাপটারে বীচাও। এই রাক্ষসীর কবল থেইকা তুমি আমাদের মুক্তি দাও গো, মাবুদ।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
মিনু তার সেই ক্লান্ত-ভারাক্রান্ত, অসহায় চাহনি নিয়ে শহিদুলের মুখের দিকে তাকায়। আশা করে, শহিদুল হয়তাে এখনই ফেস করে উঠবে। ভেস্তে দেবে অপবাদের সমস্ত পসরা। কিন্তু আজ! আহ শহিদুলও যেন পরাজিত। কিংবা সকলের সংঘব তিরস্কারের কাছে, অপায়ে । আজ পাড়া-পড়শির দিন। আজ দিনটাই শহিদলের মায়ের। দীর্ঘ দিনের জমানাে কেদ, জিঘাংসা এবং ব্রেষের সমস্তটাই যেন আজ প্রবল উৎসাহে বেরিয়ে আসতে চাইছে। জনতার যৌথ জনরােষের কাছে আজ শহিদুল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। অথচ তাকেই আজ খুব বেশি দরকার মিনুর। খুব বেশি প্রয়োজন।
সে রাতে পরপর দুটো ঘটনা ঘটে গেলাে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে, শহিদুল তালাক দেয় মিনুকে এবং ওই রাতেই পাশের বাড়ির তরফদারের মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় শহিদুল। শােকসন্তপ্ত বাড়িটাতে শােকের আবহকে পাশ কাটিয়ে, প্রতিশােধের চরম জিঘাংসাই যেন প্রথম এবং প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াল। আর মিনুশাদু মিয়ার বলদ-গাড়ি তাে ছিলই। শু’ রাতেই সে জালাল মাস্টারের ভিটে মাড়িয়ে পাড়ি জমায় দূরের পথে। তারাভরা রাত… সম পত্র-পল্লবে যেন জোছনার মেলা বসেছে। দূরে কোথাও ডাহুক ডাকছে। বুনাে ফুলের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে মাঝে মাঝে। থেমে থেমে শেয়ালের আওয়াজ আসছে কানে। এ সবকিছুকে ঘিরে মিনুর একরাশ মুগ্ধতা, আবার কোনাে মুগ্ধতাই যেন নেই।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
ঠিক এক সপ্তাহ পরে শহিদুল শহরে ফিরবে। খুব বেশি ছুটি নেই তার। নতুন বউকে এ বাড়িতেই রেখে যেতে হবে। শহিদলের মায়ের সাথে তার গড়ে উঠেছে দারুণ সখ্য। শাশুড়ি তাকে চোখে হারায় যেন। বেনাের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শহিদুল দেখল, মিনু তার লাগেজখানা ফেলে গেছে। যা গায়ে ছিলাে, ওটুকুতেই প্রস্থান কছে মেয়েটা। শশব্যস্ত হয়ে শহিদুল লাগেনা খুলে বসল। লাগজের ভেতরে ছােট্ট একখানা প্যাঁচানাে চিরকুট। দ্বিগুণ উৎসাহ এবং কৌতূহলী হয়ে সেটা মুখের ওপর ধরে পড়তে লাগলাে শহিদুল—
ভাববেন না আবেগ দিয়ে আপনার কাছে নিজের ‘ভুলের ফিরিস্তি লিখতে বসেছি। আপনার কাছে জবাবদিহির আর কোনাে অধিকার কিংবা দরকার, কোনােটাই আর অবশিষ্ট নেই। কারণ, এই চিঠি যখন লিখছি, তখন আপনার সাথে আমার জাগতিক সকল সম্পর্কই ছিন্ন হয়ে গেছে। তবু, নিজের অবস্থানটা বলে যেতে না পারলে শান্তি পাচ্ছিলাম না। একটা অপবাদ মাথায় নিয়ে এভাবে প্রস্থান করবে, তা কোনােভাবেই মানতে পারছিলাম বলেই এই লেখাটুকুর অবতারণা।
ছেলেটা আমার ছিলাে। আপনারও। দুজনের। তাকে তাে আমিই দীর্ঘ নয় মাস পেটে ধারণ করেছি। আমার রক্ত-মাংস চুষে সে বেড়ে উঠেছিল। আস্তে আস্তে। সে যখন অস্তিত্বে এলাে, যেদিন তার আগমনের সংবাদ আমরা গেলাম, মনে পড়ে কতাে বিচিত্র উল্লাসে, কতাে সুখ আর সুপ্নের মাঝে আমরা ডুব দিয়েছিলাম? আমার নাড়ি ছিড়ে যখন সে বেরােয়, জানেন, একটিবারের জন্য আমার মনে হয়েছিলাে, বােধকরি আমি আর বাঁচব না। তখন আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। মায়ের মুখটা না দেখেই মলি মরে যাই, কেমন যেন একটা অতৃপ্তি রয়ে যাবে মনে। কিন্তু, পরক্ষণে যখন আমাদের সন্তানের কথা মনে এলাে, যখন মনে হলাে যে আমার শরীরে বেড়ে উঠছে অন্য আরেক আমি, সে বেঁচে থাকলেই আমার বেঁচে থাকা হবে, তখন মনে হলাে—না! এমন মৃত্যুতে ‘ভয় কীসের? এ যে বীরাঙ্গনার মত!
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
যখন বাবুটা এলাে পৃথিবীতে, আমাদের সেই দিনগুলাের কথা মনে পড়ে? তাকে ঘিরে কতাে যত্ন, কতো খেয়াল আমাদের। গভীর রাতে যখন সে কান্না করে উঠতাে, আমি মুহুর্তে জেগে যেতাম। তাকে শান্ত করতে আমার সে কী কসরত! কখনাে আপনাকে ডেকে তুলিনি। জাগাইনি। বিরক্ত করিনি। আমিই সামলেছি। যখন তার আমাশয় ধরা পড়ে, একেবারে কাহিল হয়ে ওঠে সে, সেই স্মৃতিগুলাে আমি কখনোই ভুলবাে না।
আপনি, আপনার মা এবং আপনার আশপাশে সবার অভিযোগ, সন্তানের মৃত্যুতে কেন আমার চোখে একফোঁটা পানি নেই। প্রশ্নটা নিজের প্রতি আমারও। পরে মনে হলো, ওর জন্য যা কাঁদার, তা তাে আমি জায়নামাযেই কেঁদেছি। আর কোনাে জল যে আমার চক্ষু-কোটরে অবশিষ্ট নেই। কোত্থেকে আসবে?
আমি কাঁদিনি। বিলাপ করিনি। বুক চাপড়াইনি। কেবল পাথর হয়ে ছিলাম। আমার এরূপ কাণ্ডকারখানা দেখে আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন দানা বেঁধেছে, অনেক কৌতূহল জেগে উঠেছে, অনেক সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। আপনাদের প্রাণােন্মুখ চেহাৱা, কৌতুহলােদ্দীপক অভিমূর্তি আমাকে কাঁদাতে পারেনি। কেন জানেন? অনেকদিন আগে আমি একটি হাদিস জেনেছিলাম। সম্ভবত এমন দিনের জন্যই এটা। আমার চোখে পড়েছিলাে এবং আমি ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে সেটা পড়েছিলাম সেদিন। হাদিসটি শুনুন—
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
যখন আল্লাহর কোনাে বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, “তােমরা কি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করে ফেললে?’ ফেরেশতারা বলে, “জি।” তখন আল্লাহ আবার বলেন, “তােমরা আমার বান্দার প্রাণ-কণাটকে ছিনিয়ে আনলে?” ফেরেশতারা আবার বলে, ‘জি। আল্লাহ বলেন, “তখন আমার বান্দা কেমন আচরণ করেছে? ফেরেশতারা বলে, আপনার বান্দা ধৈর্য ধরেছে আর বলেছে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছি এবং তার কাছেই পুনরায় ফিরে যাবাে। ফেরেশতাদের কাছ থেকে বান্দার ধৈর্যের এমন চমৎকার বর্ণনা শুনে মহামহিম আল্লাহ তখন বলেন, ‘আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করাে, এবং সেই বাড়ির নাম দাও—প্রশংসিত বাড়ি।
(আমি বিশ্বাস করি, আমার সন্তান আমাকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। তার সাথে আমার সাময়িক একটা বিচ্ছেদ ঘটেছে বটে, কিন্তু জান্নাতে, সেই প্রশংসিত বাড়ির উঠোনে, সবুজ দূর্বাঘাসের ওপর শিশির আচ্ছাদিত পথে আমি তার হাত ধরে হটিবাে, ইন শা আল্লাহ। অামার মানিকের সাথে এমন সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে হলে, এই আমাকে যতই রাক্ষসী, অপয়া, অলক্ষুণে বলুক, তাতে কি আমার বিচলিত হওয়া চলে? ভালাে থাকুন আপনি। আপনার আগামীর দিনগুলাে সুন্দর হােক। আপনার জন্য অমির অফুরন্ত দুআ।
রাত নেমে এসেছে। বাইরে ঝিঝিপােকার অবিশ্রান্ত চিৎকার। তারও দূরে, কোথাও থেকে যেন বুনাে শেয়ালের আর্তচিৎকার ভেসে আসছে বাতাসে। আর, প্রকৃতির কোথাও যেন এক গভীর গােঙানি। কোথা থেকে ধেয়ে আসছে এই গােঙানির সুর? শহিদুলের বুকের গহিন থেকে?
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
[এক] দুপুর থেকে বাইরে কয়লা-পোড়া রােদ। রােদের তেজ আর তাপে ঘরের ভেতরটাও উনুনের মতাে গরম হয়ে আছে। মাথার ওপর অবিরাম, অবিশ্রান্তভাবে ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের হাওয়াগুলোও যেন বিদ্রোহ করে বসেছে। গায়ে হাওয়া লাগছে না আগ্নেয়গিরির তাপ লাগছে বােঝা মুশকিল। এরই মাঝে রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে হস্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো রেবেকা। এসেই আমাকে বললাে, ‘শুনছে, মাছের তরকারিতে না লবণ একটু বেশি হয়ে গেছে। পানি দিলেই কমে যেতাে, কিন্তু তুমি তাে অতাে ঝােল পছন্দ করে না, তাই দিতে চাচ্ছি না। কোনাে সমস্যা হবে তােমার?
‘আমি দেখলাম, কথাগুলো বলার সময় দেবেকার কপাল বেয়ে নরনাধারার মতো। ঘাম ঝরছে। সে অভিন্ন অভিনেত্রীর মতাে, ওড়নার একটা অংশ দিয়ে। চট করে । মুছে নিয়ে আমার উত্তরের অপেক্ষায় দরজার কিনারে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি হাঁসফাঁস করতে করতে বললাম, “দরকার কী বলাে তাে এতাে নষ্ট করার? সাধারণ কিছু একটা হলেই বেশ চলে যেতো। এই গরমের মাঝে চুলাের পাড়ে বসে। হরেক পদের তরকারি রান্না করার কোনাে মানে আছে?
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
আমার এই কথাকে খুব একটা আমলে নিলো না রেবেকা। নিজের ওড়না দিয়ে দ্বিতীয়বার কপাল বেয়ে নামা ঘাম মুছতে মুছতে বললো, “সপ্তাহে এই একটা দিনই তাে দুপুরে বাসায় খেতে পারে। অন্যসব দিন তাে সেই বাইরেই ছুটোছুটি। কী যে খাওঁ আল্লাহ মালুম! এই একদিনই যদি তােমাকে ভালাে-মন্দ কিছু গেঁথে খাওয়াতে পারি, তাহলে আর আমার স্ত্রী হওয়ার সার্থকতা কোথায়?
বেশ প্যাঁচাল পড়া শিখে গেছেন আপনি! এই যে লম্বা লম্বা লেকচার শােনাচ্ছেন, নিজের চেহারাটার দিকে একবার তাকিয়েছেন ‘আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে?”
“ও আমার দেখে আর কী হবে, বলাে? নতুন করে তাে আর বিয়ে হবে না আমার! তােমার যদি আমাকে আর পছন্দ না হয় বলবে, আমি সােজা বাপের বাড়ি চলে যাবাে।
“হয়েছে বাবা হয়েছে! কান ধরছি! যার জন্যে চুরি করি সে-ই বলে চোর! বলতে গেলাম ভালাে, হয়ে গেলাম খারাপ!
‘আমার অতাে ভালাে চাওয়া লাগবে না তােমার। এখন বলাে তাড়াতাড়ি, খানিকটা লবণ বেশি হলে ঝামেলা হবে?
‘ঝামেলা মিটে যেতাে যদি তুমি ওই গরম চুল্লি থেকে বেরােতে। বাইরে খেতে খেতে লবণ কম আর বেশি—দুটোই আমার মুখ-সওয়া হয়ে গেছে।’
রেবেকা আর কোনাে জবাব দিলাে না। এক ভোঁ-দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলাে।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
রেবেকা আসলে সত্যিই বলেছে। কাজের সুবাদে আমাকে ছুটে বেড়াতে হয় দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। আমার কাজ হলাে ফিচার লেখার উপাদান সংগ্রহ, এবং তা দিয়ে পত্রিকার জন্য ফিচার তৈরি করা। সাঁওতাল পল্লি থেকে শাপলার বন—কোথায় যাই না আমি গল্পের উপকরণ খুঁজতে? নিরন্তর ছুটতে গিয়ে দিন যে কখন রাত হয়ে যায়, রাত কেটে ভাের আসে—টেরই পাই না।
যেমন বুনো ওল তেমন বাঘা তেঁতুল—প্রবাদ বাক্যকে সত্যি প্রমাণ করে, কটমর্টে সূর্যটাকে একদল দস্যি মেঘ এসে ঢেকে ফেলল। মুহূর্তকাল পরেই নেমে এলাে অঝাের ধারার বৃষ্টি। অবিরাম ধারার বর্ষণ প্রকৃতিজুড়ে। বৃষ্টির এমন একাধিপত্য দেখে কে বুঝবে—একটু আগেও এখানে কাঠফাটা লোম ছিলো? আকাশের বর্ষণে সবকিছু যেন এক অনুপম মিখ আর শীতলতায় ভরে গেলাে।
আমি দেখলাম, আমার জানালার কিনারে দুটো চভূই ঝাড়া দিয়ে বসেছে। হঠাহ, এমন ঝড়ো বৃষ্টিতে তারা সম্ভবত বিভ্রান্ত। এমন গা-শীতল করা আবহাওয়া নিজেকে চাঙা করে নিতে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম। আকাশ থেকে প্রকা আকারের বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়ছে। প্রচণ্ড গরমে হাহাকার করে ওঠা প্রকৃতিতে এই বৃষ্টি-জল একফালি সুন্তি হয়ে ধরা দিলো।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
বৃষ্টি আমার বরাবরই পছন্দের। এই একটা জিনিসকে নিয়েই সম্ভবত পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সাহিত্য রচিত হয়েছে। আর, সেই সাহিত্যের তিনভাগের দুইভাগ হয়েছে কেবল ভারতীয় উপমহাদেশে। বৃষ্টি নিয়েও যে এতো চমৎকার সাহিত্য রচনা করা যায়—এই কথা অনেক ইউরােপীয়রা বিশ্বাস করতাে না। তাদের কাছে বৃষ্টি ছিলো নিছক বিরক্তি আর বিড়ম্বনার কারণ। অবশ্য, উত্তর-আনিক ইউরােপ যখন দালান আর ইমারতে ভরে গেলাে, প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে একপ্রকার দরেই ছিটকে পড়লাে ইউরােপিয়ানরা। বৃষ্টির সময় প্রতি যে মানেহিরা রূপ ধারণ করে তা অবলােকনের সুযোগ আর থাকলই বা কই তাদের? এ জন্যে বােধকরি তারা ভাবতে পারতো না যে—বৃষ্টি নিয়েও চমৎকার সাহিত্য তৈরি করা যায় এবং দুর্দান্ত সাহিত্য তৈরি হয়ে আছে।
বৃষ্টি নিয়ে আমার এমন ভাবালুতার মায়ে ছেদ ঘটালাে রেবেকা। সে বেলকনিতে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললাে, “কী সুন্দর বৃষ্টি, তাই না গাে?
“মানুষের দুআ যে এতাে দ্রুত কবুল হয়, তা দেখে আমি তাজ্জব বনে গেলাম,
আমি কৌতূহলী দৃষ্টিতে রেবেকার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘বুঝিনি। “ওই যে, গরমে তুমি বেশ হাঁসফাঁস করছিলে না? তখন রান্নাঘর থেকে মনে মনে দুআ করছিলাম। বলছিলাম, আল্লাহ, একটা ঝুম বৃষ্টি দিয়ে চারপাশটা ঠান্ডা করে দাও। আমার জামাইটার অসুন্তি লাগছে অনেক। এমন বৃষ্টি দাও যেন আমার জামাই বৃষ্টি নিয়ে একটা গল্পও লিখে ফেলতে পারে। হি হি হি।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
“তুমি কি সত্যিই এমন দুআ করেছিলে? “হ্যাঁ। এমনটাই তাে আপছিলাম রান্নাঘরে। কিন্তু বিশ্বাস করাে, সত্যি সত্যিই যে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে—তা আমার ধারণাতেই ছিলাে না। আল্লাহ মাঝে মাঝে কতো দ্রুত দুআ কবুল করে ফেলেন, দেখলে? আমি জানি রেবেকা মিথ্যে বলেনি। ও কখনোই মিথ্যে বলে না। আমাদের পাঁচ বছরের দাম্পত্য ঐীবনে কোনােদিন একটিবারের জন্য তাকে আমি মিথ্যে বলতে দেখিনি। ও যখন এই দুল্লা করেছে বললো, ‘তাহলে সেটা অবশ্যই সত্যি।
ম্যানের নিচে বসে হাওয়া গিলতে থাকা আমার অস্বস্তি কাটাতে বৃষ্টির জন্য দুআ করেছে জ্বলন্ত চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রমণী! কী অবিশ্বাস্য ভালােবাসা! কী অনুপম মায়ার বন্ধন!
রেবেকা আবার বললাে, “বৃষ্টির সময় দুআ করলে ওই দুআ কবুল হয়। চলাে, আমরা দুআ করি।’
“কী দুআ করবাে?’ “যা মন চায় কর।
জানালা গলে, রেবেকার হাত চলে গেলাে বাইরে। রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে তার হাত। আমি দেখলাম, সে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। আমি জানি, তার এই কলার অনেকটা জুড়ে আমি আছি। ও আমাকে রাখবেই।
[তিন] রাত নেমে গেছে অনেক আগেই। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে এখন। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি লাপটপ খুলে বসে পড়লাম। কালকেই আমাকে একটা ফিচার জমা দিতে হবে অফিসে। পত্রিকার ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশের সময় আর বেশি নেই হাতে।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
অনেকটুকু লেখার পরে খেয়াল করলাম, বাইরে আবার ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। বাতাসে জানালার কাচগুলাে রিনিঝিনি শব্দ তুলছে। আমি পড়ার ঘর থেকে শােবার ঘরে এলাম। আলাে জ্বালিয়ে দেখি রেবেকা ঘুমিয়ে পড়েছে। সারাদিনের সাংসারিক ব্যস্ততার পরে এক শাস্তির ঘুমে বেঘাের সে। তার নিন্দাপ, মামিনা চেহারা, তাতে কোথাও কোনো অভিযােগের রেখা ফুটে নেই। এই মেয়েটা সারাটা দিন আমাকে নিয়ে ভাবে। আমার ভালাে থাকা, আমার ভালাে-লাগা নিয়ে ‘তার কতাে ভাবনা-চিন্তা মাঝে মাঝে মনে হয়—মেয়েরা বােধকরি অন্য ধাতুতে গড়া। একেবারে অপরিচিত একটা মানুষ, একটা পরিবার, একটা পরিবেশকে তারা কতো নিবিড়াবে আপন করে নেয়! কতাে সুন্দর করে তাতে এঁকে দেয়। ভালােবাসার আল্পনা!
বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম আমি। বৃষ্টির সময়ে দুআ করলে সেই দুখা কবুল হয়। বাইরে হাত বাড়াতেই বৃষ্টির ফোঁটাগুলাে আমার হাতে লেগে ছিভি হয়ে যাচ্ছে। চোখ বুজে, হৃদয়ের গভীর থেকে ভাষা টেনে নিয়ে, বিড়বিড় করে বললাম, ‘পরওয়ারদিগার, রেবেকাকে আমি অসম্ভব ভালােবাসি। এই দুনিয়ার মতাে, জান্নাতেও আমরা এভাবে কাছাকাছি, পাশাপাশি থাকতে চাই।
জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ. Jibon Jekhane Jemon
জীবন যেখানে যেমন, জীবন যেখানে যেমন pdf, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ pdf, জীবন যেখানে যেমন pdf google drive, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ pdf download, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ, জীবন যেখানে যেমন বই আরিফ আজাদ, জীবন যেখানে যেমন pdf বই, জীবন যেখানে যেমন pdf free download, জীবন যেখানে যেমন pdf link, জীবন যেখানে যেমন বই pdf, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ pdf free download, জীবন যেখানে যেমন পিডিএফ, জীবন যেখানে যেমন গল্পের লিংক, জীবন যেখানে যেমন পিডিএফ ডাউনলোড, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ pdf file, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ পিডিএফ, জীবন যেখানে যেমন বই pdf download, জীবন যেখানে যেমন pdf আরিফ আজাদ, জীবন যেখানে যেমন pdf download, জীবন যেখানে যেমন আরিফ আজাদ free pdf
jibon jekhane jemon pdf, jibon jekhane jemon, jibon jekhane jemon pdf drive, jibon jekhane jemon pdf download, jibon jekhane jemon pdf free download, jibon jekhane jemon arif azad pdf, jibon jekhane jemon book pdf, jibon jekhane jemon free pdf download, jibon jekhane jemon pdf book download, jibon jekhane jemon arif azad, jibon jekhane jemon arif azad pdf download
মুক্ত বাতাসের খোঁজে pdf book download
বেলা ফুরাবার আগে pdf download আরিফ আজাদ
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ pdf download. paradoxical sajid
জীবন যেখানে যেমন: আরিফ আজাদ – Jibon Jekhane Jemon: Arif Azad
জীবন যেখানে যেমন – আরিফ আজাদ | Jibon Jekhane Jemon – Wafilife