Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

কসর নামাজের নিয়ম. Kosor Namaz er niyom

কসর-নামাজের-নিয়ম.-Kosor-Namaz-er-niyom

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে কসর নামাজের নিয়ম, কসর শব্দের অর্থ কি, সফরের দূরত্ব, কসর নামাজ কতদিন, কসর নামাজের বিধান, কসর নামাজের নিয়ত ইত্যাদি।

সফর অথবা ভীতির সময়ে সালাতে কসর করার অনুমতি রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, যখন তোমরা সফর কর, তখন তোমাদের সালাতে কসর করায় কোন দোষ নেই; যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে; নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (নিসা ৪/১০১)

কসর শব্দের অর্থ কি

কসর শব্দের অর্থ কমানো; পারিভাষিক অর্থে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ সালাতকে কমিয়ে দুই রাকাত পড়াকে কসর বলে। মক্কা বিজয়ের সফরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কসরের সাথে সালাত আদায় করেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৩৬)

শান্তিপূর্ণ সফরে কসর করতে হবে কি-না এ সম্পর্কে ওমর ফারুক (রাঃ)-এর এক প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন; আল্লাহ এটিকে তোমাদের জন্য সাদাকা (উপঢৌকন) হিসাবে প্রদান করেছেন; অতএব তোমরা তা গ্রহণ কর। (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৩৫)

সফর অবশ্যই আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের সফর হতে হবে, গুনাহের সফর নয়।

সফরের দূরত্ব

সফরের দূরত্বের ব্যাপারে বিদ্বান গণের মধ্যে এক মাইল হতে ৪৮ মাইলের বিশ প্রকার বক্তব্য রয়েছে। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৬৩) পবিত্র কুরআনে দূরত্বের কোন ব্যাখ্যা নেই। কেবল সফরের কথা আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকেও এর কোন সীমা নির্দেশ করা হয়নি। অতএব সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হলে নিজ বাসস্থান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গেলেই কসর করা যায়। কোন কোন বিদ্বানের নিকটে সফরের নিয়ত করলে ঘর থেকেই ‘কসর’ শুরু করা যায়।

তবে ইবনুল মুনযির বলেন যে, সফরের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনা শহর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে কসর করেছেন বলে আমি জানতে পারিনি। তিনি বলেন, বিদ্বানগণ একমত হয়েছেন যে, সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ গ্রাম বা মহল্লার বাড়ি সমূহ অতিক্রম করলেই তিনি কসর করতে পারেন। আমরা মনে করি যে, মতভেদ এড়ানোর জন্য ঘর থেকেই দু’ওয়াক্তের ফরয ছালাত কসর ও সুন্নাত ছাড়াই পৃথক দুই ইকামতের মাধ্যমে জমা করে আদায় করে সফরে বের হওয়া ভাল। তাবুক অভিযানে রাসূল (সা) ও সাহাবীগণ এটা করেছিলেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৪৪)

কসর নামাজ কতদিন

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সফরে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ঊনিশ দিন (মক্কা বিজয়্কালে) অবস্থান করেছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমরা সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত কসর করতাম। এর চেয়ে অধিক দিন থাকলে আমরা পূর্ণ সালাত আদায় করতাম। (বুখারী হা/৪২৯৯)

যদি কারো সফরের মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে তবে তিনি কসর করবেন, যতক্ষণ না তিনি সেখানে স্থায়ী বসবাসের সংকল্প করেন।

সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় ১৯ দিনের বেশি অবস্থান করলেও কসর করা যায়; রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবুক অভিযানের সময় সেখানে ২০ দিন যাবত কসর করেন; আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) আজারবাইজান সফরে গেলে পুরা বরফের মৌসুমে সেখানে আটকে যান ও ছয় মাস যাবৎ কসরের সাথে সালাত আদায় করেন; অনুরূপভাবে হযরত আনাস (রাঃ) শাম বা সিরিয়া সফরে এসে দু’বছর সেখানে থাকেন ও কসর করেন।

অতএব স্থায়ী মুসাফির যেমন জাহাজ, বিমান, ট্রেন, বাস ইত্যাদি চালক ও কর্মচারীগণ সফর অবস্থায় সর্বদা সালাতে কসর করতে পারেন; এবং তারা দুই ওয়াক্তের সালাত জমা ও কসর করতে পারেন।

কসর নামাজের বিধান

ভীতি ও সফর অবস্থায় কসর করা উত্তম; রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সফরে সর্বদা কসর করতেন; হযরত ওমর, আলী, ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ সফরে কসর করাকেই অগ্রাধিকার দিতেন।

হযরত ওসমান ও হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রথম দিকে কসর করতেন ও পরে পুরা পড়তেন; আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) জামাতে পুরা পড়তেন ও একাকী কসর করতেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৪৭-৪৮)

কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, সফর অবস্থায় সালাতে কসর করলে তোমাদের জন্য কোন গােনাহ নেই। (নিসা ৪/১০১)।

কসর নামাজের নিয়ম

সফরে থাকা অবস্থায় যোহর-আছর (২+২=৪ রাকাত) ও মাগরিব-এশা (৩+২=৫ রাকাত) পৃথক ইকামতের মাধ্যমে সুন্নত ও নফল ছাড়াই জমা ও কসর করে তাকদীম ও তাখীর দু’ভাবে পড়ার নিয়ম রয়েছে। (বুখারী, মিশকাত হা/১৩৩৯)

অর্থাৎ শেষের ওয়াক্তের সালাত আগের ওয়াক্তের সাথে ‘তাকদীম’ করে অথবা আগের ওয়াক্তের সালাত শেষের ওয়াক্তের সাথে তাখির’ করে একত্রে পড়বে; ভীতি ও ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও অন্য কোন বিশেষ শারঈ ওজর বশত মুক্বীম অবস্থায় দু’ওয়াক্তের ছালাত কসর ও সুন্নাত ছাড়াই একত্রে জমা করে পড়া যায়। যেমন যোহর ও আছর পৃথক একামতের মাধ্যমে ৪+৪=৮ রাকাত এবং মাগরিব ও এশা অনুরূপভাবে ৩+৪=৭ রাকাত। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল এটা কেন? তিনি বললেন, যাতে উম্মতের কষ্ট না হয়। (বুখারী হা/১১৭৪)

ইস্তিহাযা বা প্রদর রোগগ্রস্ত মহিলা ও বহুমূত্র রোগী বা অন্যান্য কঠিন রোগী, বাবুর্চি এবং কর্মব্যস্ত ভাই-বোনেরা মাঝে-মধ্যে বিশেষ ওজর বশত সাময়িকভাবে এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। হজ্জের সফরে আরাফাতের ময়দানে কোনরূপ সুন্নত-নফল ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে (২+২) জোহরের আউয়াল ওয়াক্তে পৃথক ইকামতে জমা তাকদীম করে এবং মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে (৩+২) এশার সময় পৃথক ইকামতে জমা তাখীর করে জামাতের সাথে অথবা একাকী পড়তে হয়। (বুখারী, মিশকাত হা/২৬১৭, ২৬০৭)

সফরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সুন্নাত সমূহ পড়তেন না; (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৩৮) অবশ্য বিতর, তাহাজ্জুদ ও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ছাড়তেন না; তবে সাধারণ নফল সালাত যেমন তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায়ে তিনি কাউকে নিষেধ করতেন না। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৪০; বুখারী হা/১১৫৯)

কসর নামাজ একাকী ও মুসাফির ইমামের সাথে জামাতে দুভাবেই পড়া যায়।

মুসাফির ব্যক্তি স্থানীয় ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে।

এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয় তবে সে যেন তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮৪৯)

কসর নামাজের নিয়ত

ইবাদাতের একটি শর্ত হলো শুদ্ধ নিয়ত। মহান আল্লাহ বলেন, তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে; এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা আল বাইয়্যিনাহ আয়াত নং ৫)

নিয়ত মানে হচ্ছে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই নিয়তের জন্য কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই; যেকোন ইবাদাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। মুখে কিছু উচ্চারণের প্রয়োজন নেই। আর শুদ্ধ নিয়ত হচ্ছে এই যে, মনে মনে সংকল্প করা যে আমি এখন এই কাজটি করছি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। অতএব কসর সালাতের নিয়ত হবে এমন যে, অন্তরে সংকল্প করতে হবে যে আমি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই ওয়াক্তের ৪ রাকাত সালাতকে কসর করে অর্থাৎ কমিয়ে ২ রাকাত পড়ছি। মুখে কিছু বলতে হবে না কেবল অন্তরে এই সংকল্প করে সালাত শুরু করতে হবে।

কোন সালাতের কসর নেই

ফজর, মাগরিব ও বিতর নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজেরও কসর হয় না। তাই সুন্নত পড়লে পুরোটাই পড়বে।

মেয়েদের কসর নামাজ

পুরুষ ও নারীর সালাতের নিয়মে কোন পার্থক্য নেই। তেমনি কসর সালাতের ক্ষেত্রেও পুরুষ ও নারী একই নিয়ম অনুসরণ করবে। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে, বিবাহের পর মেয়েদের স্থায়ী ঠিকানা কোনটি? স্বামীর বাড়ি নাকি বাবার বাড়ি? আসলে বিবাহের পর মেয়েদের জন্য স্থায়ী ঠিকানা হলো তার স্বামীর বাড়ি তথা শশুর বাড়ি। কোন বিবাহিত মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান তখন তিনি সেখানে মুসাফির হিসাবে গন্য হবেন এবং তিনি সেখানে সালাতকে কসর করবেন।

Share the Post

Rate the Post

Rating Summary

0.0
0.0 out of 5 stars (based on 0 reviews)
Excellent0%
Very good0%
Average0%
Poor0%
Terrible0%

Latest Reviews

There are no reviews yet. Be the first one to write one.

Latest Post