বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে আশুরা শব্দের অর্থ কি, আশুরা কাকে বলে, আশুরার ইতিহাস।
Table of Contents
Toggleআশুরা অর্থ কি
আশুরা শব্দটি আরবি; যার অর্থ দশম। এটি আশারা শব্দমূল থেকে নির্গত; যার অর্থ দশ। আশুরা শব্দটি শুনতেই সাধারণ মানুষের যেন গা শিউরে ওঠে; কারণ আশুরা বলতে তাদের ধারণা কারবালা। আর কারবালা অর্থ নবী সাঃ-এর নাতি ইমাম হুসাইন ইবনে আলী রাঃ এর স্বপরিবারে মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনা। কিন্তু আসলে আশুরা হচ্ছে চন্দ্র বছরের প্রথম মাস মহররমের দশ তারিখ। আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাসের মধ্যে ৪টি মাস যথা: জিলক্বদ, জিলহজ্ব, মুহররম, ও রজবকে হারাম তথা সম্মানিত মাস করেছেন। মুহররম মাসের দশম দিন অর্থাৎ আশুরায়ে মুহাররম বিশেষ ফজিলত পূর্ণ দিন।
আল্লাহ তায়ালার বাণী:
নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তার মধ্যে চারটি হারাম অর্থাৎ সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করাে না।
সূরা তাওবা:আয়াত নং ৩৬
আর গুরুত্বপূর্ণ দশটি জিনিস এ দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আশুরা নামকরণ হয়েছে বলে মানুষের ধারণা। কিন্তু এর কোন সঠিক প্রমাণ নেই।
আশুরার ইতিহাস
হিজরি সালের ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। আরবরা মহররম মাসকে “স্বফরুল আওয়াল” তথা প্রথম সফর নাম রেখে যুদ্ধকে তাদের ইচ্ছামত হালাল ও হারাম করতাে। আল্লাহ তায়ালা ইহা বাতিল করে দিয়ে তার ইসলামী নামকরণ করেন আল-মুহাররম। তাই গুরুত্বের জন্য মহররম মাসকে শাহরুল্লাহিল মুহাররাম তথা আল্লাহর মহররম মাস বলা হয়েছে। আশুরার দিন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিন আমাদেরকে এক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দ্বীন হেফাজতের উদ্দেশ্যে হিজরত ও হক প্রতিষ্ঠার জন্য এক মহান দিন। আর এ জন্যই দিনটিকে বিশেষ এক ইবাদত রােজার সাথে স্মরণ করা প্রতিটি মুসলিমের উচিত।
এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর বনী ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোনো মাবুদ নেই তাকে ছাড়া যার ওপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাঈলরা। বস্তুত আমি তারই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। এখন একথা বলছ। অথচ তুমি ইতোপূর্বে নাফরমানি করেছিলে এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে। অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।’ -সূরা ইউনুস: ৯০-৯২
একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট যে, মূসা আঃ ও তাঁর জাতি বনি ইসরাঈল ফেরাউনের অন্যায়-অত্যাচার, নিষ্পেষণের জাঁতাকল ও গােলামী থেকে মিশর ছেড়ে সাগর পার হয়ে এ দিনে নাজাত পেয়েছিলেন। তাই মূসা আঃ আল্লাহর শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞার্থে এ দিনে রোজা রেখেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে বনি ইসরাঈলরাও রোজা রাখত।
উক্ত ঘটনা ছাড়াও আশুরার দিনে অনেক ঘটনার কথা শোনা যায়, কিন্তু সেগুলোর কোন সহিহ দলিল পাওয়া যায় না।